নতুন বছরে মেয়ে আমার স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে। মর্নিং শিফটের জন্য সকাল ৭টায় মেয়েকে নিয়ে বের হতে গিয়ে বেশ ঠান্ডা অনুভব করি। রাজধানীতে তাপমাত্রা ১৫-১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যেও শীত থেকে রেহাই পেতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে বের হয়ে বেগ পেতে হয়। এর মধ্যে দুই দিন শৈত্যপ্রবাহের মধ্যে দেখলাম, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিশুদের সাধারণ সমাবেশের বাইরে রাখা হয়েছে। এ বছর শীতের প্রকোপ এখনও সে অর্থে পড়েনি। তারপরও আমার মনে হয়েছে, এর চেয়ে তাপমাত্রা কমে গেলে মেয়েকে স্কুলে নেওয়া কঠিন হবে। 

গত বছর জানুয়ারির মাঝামাঝি যখন দেশজুড়ে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয় তখন শিক্ষা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়– যেসব অঞ্চলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামবে, সেখানে শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। সে অনুযায়ী তাপমাত্রা অনুসারে বিভিন্ন এলাকায় শীতের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়।   

একইভাবে গত বছরের এপ্রিল ও মে মাসে দেশজুড়ে তাপপ্রবাহের কারণে স্কুলে ছুটি ঘোষণা করে শিক্ষা প্রশাসন। বন্যার সময় শিক্ষার ক্ষতি হয় আরও বেশি। শুক্রবার প্রকাশিত জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের প্রতিবেদনে সে বাস্তবতাই উঠে এসেছে। ইউনিসেফ বলছে, বাংলাদেশে ২০২৪ সালে বিরূপ আবহাওয়া তথা জলবায়ু সংকটে ৩ কোটি ৩০ লাখ শিশুর শিক্ষা ব্যাহত হয়েছে। 
গত বছরের মে মাসের শেষ সপ্তাহে ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে উপকূলীয় এলাকায় শিশুদের স্কুলশিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়। তার আগে এপ্রিলের শুরু থেকেই বারবার ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এপ্রিলজুড়ে টানা এক মাস তাপপ্রবাহের বিপজ্জনক রেকর্ড আমরা দেখেছিলাম। ওই সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায় এবং দুই সপ্তাহ বন্ধ ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর পর এলো জুনের বন্যা, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে শিশুদের শিক্ষার ওপর। গত বছরের বন্যায় সারাদেশে প্রায় ১ কোটি ৮৪ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়; এর মধ্যে শিশুর সংখ্যা ছিল ৭০ লাখ। বন্যার সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে সিলেট জেলায়। সেপ্টেম্বরে এসে ফেনীতে দেখা দেয় তীব্র বন্যা। ফেনীর পাশাপাশি কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চলও বন্যায় ভেসে যায়। সেখানকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এতে দীর্ঘসময় বন্ধ রাখতে হয়।

চব্বিশের জুলাই-আগস্টের আন্দোলন দমাতেও তৎকালীন সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন থামেনি। এমনকি অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরও শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক হতে সময় লাগে। সব মিলিয়ে গত বছরে শিক্ষা কার্যক্রমে নানাদিক থেকে শূন্যতা তৈরি হয়।     
তবে শঙ্কার বিষয়, অক্সফামের প্রতিবেদন বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট আরও বাড়বে। নতুন বছরের জানুয়ারিতে যদিও আমরা গত বছরের মতো শৈত্যপ্রবাহ দেখিনি। কিন্তু ভবিষ্যতে কেমন বিরূপ পরিবেশ অপেক্ষা করছে, আমরা জানি না। তাপপ্রবাহ, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়– কোনোটির শঙ্কাই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বিরূপ আবহাওয়ায় সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কিন্তু শিশুদের ওপর এর প্রভাব বেশি পড়ে। শিক্ষায় শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকার কারণে শিখনশূন্যতা তৈরি হয়। আবহাওয়ার তীব্রতায় শিশুর সুরক্ষার বিষয়ও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। 

ইউনিসেফের পর্যবেক্ষণে যথার্থই এসেছে, শিশুর সুরক্ষার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও পরিকল্পনায় আমাদের ব্যাপক ঘাটতি আছে। শিক্ষায় জলবায়ুকেন্দ্রিক বিনিয়োগও যথেষ্ট নয়। আমরা জানি, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য তেমন দায়ী না হলেও ব্যাপকভাবে ভুক্তভোগী। জলবায়ু পরির্তনের কারণে বিরূপ আবহাওয়ার প্রভাব শিশু ও শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর কতটা বিস্তৃত– ইউনিসেফের প্রতিবেদনই তার প্রমাণ। এ অবস্থায় জলবায়ু খাতে অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান, দাতা গোষ্ঠী, বেসরকারি খাত ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। আমাদের জন্য জরুরি হলো, শিক্ষা খাতকে জলবায়ু-সহনশীল করে তোলা। এ জন্য অর্থায়ন প্রয়োজন, যাতে জলবায়ুর অভিঘাত সামলে নিতে সক্ষম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। ইউনিসেফ এর সঙ্গে জাতীয় জলবায়ু পরিকল্পনাকে যুক্ত করার কথা বলেছে এবং জলবায়ুকেন্দ্রিক নীতি প্রণয়ন প্রক্রিয়ার সব পর্যায়ে শিশু ও তরুণদের অংশীদারিত্ব নিশ্চিতকরণের ওপর তাগিদ দিয়েছে।

এটা বলা জরুরি যে, ইউনিসেফের প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমরা কেবল একটা পরিসংখ্যান দেখলাম যে, কত শিশু প্রভাবিত হলো। মানে ২০২৪ সালে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ আবহাওয়ায় প্রায় সাড়ে তিন কোটি শিশুর শিক্ষা ব্যাহত হয়েছে। এই পরিসংখ্যান যেমন গুরুত্বপূর্ণ, পাশাপাশি শিক্ষা কতটা ব্যাহত এবং কেমন শিখনশূন্যতা তৈরি হয়েছে, তাও জানা জরুরি। সংস্থাটির প্রতিবেদনে বিশ্বচিত্রের অংশ হিসেবেই বাংলাদেশ এসেছে। কিন্তু বাংলাদেশকে ফোকাস করে শিখনশূন্যতা নিরূপণের দায়িত্ব আমাদের শিক্ষা প্রশাসনের। অথচ বরাবরই এ দিকটি উপেক্ষিত। এমনকি করোনাকালে দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর যে সশরীরে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ছিল, তারপরও শিক্ষার্থীদের শিখনশূন্যতা পরিমাপে জাতীয়ভাবে আনুষ্ঠানিক তেমন উদ্যোগ চোখে পড়েনি। 

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ আবহাওয়ার কারণে শিক্ষা ও শিশুর ক্ষতি এড়াতে বিস্তৃত অভিযোজন পরিকল্পনা করা দরকার। এ লক্ষ্যে শিক্ষার একটি জাতীয় কৌশল গ্রহণ করতে হবে। যেখানে জলবায়ুসহিষ্ণু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ থেকে শুরু করে শিশুর সুরক্ষার বিষয়ও উপেক্ষিত হবে না। সেখানে উল্লেখ থাকবে আবহাওয়ার কোন কোন মুহূর্তে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে; শীত-গরমের তাপমাত্রার হিসাবও আসতে পারে। আবার বন্যা, জ্বলোচ্ছাস হলে করণীয়, কভিডের মতো পরিস্থিতি হলে করণীয় কী ইত্যাদি আসতে পারে। অন্যান্য 
দেশে এমনকি বায়ুদূষণেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়। শিশুর নিরাপত্তা ও সুরক্ষাকে ফোকাস করে এ কৌশলে শিখনশূন্যতা পরিমাপ বিষয়েও সমান নজর দিতে হবে।

মাহফুজুর রহমান মানিক: জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, সমকাল
mahfuz.

manik@gmail.com

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইউন স ফ র প শ ন যত র ওপর সরক র জলব য়

এছাড়াও পড়ুন:

রোজার চাঁদ দেখলে কী দোয়া পড়বেন

রহমতের মাস রমজানের নতুন চাঁদ দেখলে; বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) পড়া সেই দোয়া পড়বেন। যেখানে শান্তি ও নিরাপত্তার প্রার্থনা রয়েছে। হাদিসে আছে-হজরত তালহা ইবনে ওবায়দুল্লাহ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন নতুন চাঁদ দেখতেন তখন বলতেন-

উচ্চারণ: আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল আমনি ওয়াল ঈমানি ওয়াসসালামাতি ওয়াল ইসলামি ওয়াত্তাওফিকি লিমা তুহিব্বু ওয়া তারদা রাব্বুনা ওয়া রাব্বুকাল্লাহ।

অর্থ: আল্লাহ মহান, হে আল্লাহ! এ নতুন চাঁদকে আমাদের নিরাপত্তা, ইমান, শান্তি ও ইসলামের সঙ্গে উদয় কর। আর তুমি যা ভালোবাস এবং যাতে তুমি সন্তুষ্ট হও, সেটাই আমাদের তৌফিক দাও। আল্লাহ তোমাদের এবং আমাদের প্রতিপালক।’ (তিরমিজি, মিশকাত)

রাসুলুল্লাহ (সা.) শাবান মাসের ২৯ তারিখ সন্ধ্যায় রমজানের চাঁদের অনুসন্ধান করতেন। এমনকি সাহাবিদের চাঁদ দেখতে বলতেন। রমজানের নতুন চাঁদ দেখলে প্রিয় নবী (সা.) কল্যাণ ও বরকতের দোয়া করতেন।

আরও পড়ুনইফতারের দোয়া২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

নতুন চাঁদকে আরবিতে বলে ‘হিলাল’। ‘হিলাল’ হচ্ছে এক থেকে তিন তারিখের চাঁদ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখো, চাঁদ দেখে রোজা ছাড়ো, ইফতার করো বা ঈদ করো।’ যে সন্ধ্যায় আকাশে চাঁদ দেখা যায়, সে রাত হলো ‘চাঁদরাত’। আরবি চান্দ্র বছরের নবম মাস রমজান এবং দশম মাস শাওয়াল।

যে কোনো মাসের নতুন চাঁদ, এমনকি রোজা ও ঈদের চাঁদ দেখার দোয়া একটিই। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) নতুন চাঁদ দেখলে এই দোয়া পড়তেন—

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল-য়ুমনি ওয়াল ঈমানি, ওয়াসসালামাতি ওয়াল ইসলামি- রাব্বি ওয়া রাব্বুকাল্লাহ।

অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমাদের জন্য এই চাঁদকে সৌভাগ্য ও ইমান, শান্তি ও ইসলামের সঙ্গে উদিত করুন।আল্লাহই আমার ও তোমার রব। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৫১)

এ ছাড়াও রমজানের চাঁদ দেখার খবর শুনে দোয়া করা হয়।

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাল্লিমনি লিরমাদান, ওয়া সাল্লিম রামাদানা লি, ওয়া তাসলিমাহু মিন্নি মুতাক্বাব্বিলা। (তাবারানি)

অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে শান্তিময় রমজান দান করুন। রমজানকে আমার জন্য শান্তিময় করুন। রমজানের শান্তিও আমার জন্য কবুল করুন।

আরও পড়ুনরোজার কাজা, কাফফারা ও ফিদিয়া কী০২ মার্চ ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ছিলেন স্থপতি, বানাতে চেয়েছিলেন সিনেমা, এখন ক্রিকেটে ভারতের জয়ের নায়ক
  • আমেরিকার জন্য ভয়ংকর এক শুক্রবার
  • মাইক্রোসফটের এআই–সেবায় হ্যাকিং
  • রোজার চাঁদ দেখলে কী দোয়া পড়বেন