কুয়াকাটায় আওয়ামী লীগের পথেই হাঁটছে বিএনপি
Published: 26th, January 2025 GMT
‘হামলা-ভাঙচুর, লুটপাট, দখলবাজি, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম করছে বিএনপির কিছু নেতাকর্মী। আওয়ামী লীগ তো ১৬ বছর ক্ষমতায় টিকে ছিল, এভাবে চলতে থাকলে আমাগো বিএনপি পাঁচ বছরও টিকতে পারবে না।’ এসব কথা বললেন কুয়াকাটার লতাচাপলী ইউনিয়ন বিএনপির ৯ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি আব্দুল লতিফ মুসুল্লী।
তিনি বলেন, ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সেলিম হাওলাদার অপকর্মে জড়িত থাকায় তাঁর সঙ্গে অন্য নেতাদের বিরোধ। আওয়ামী লীগ যা করেছে, সেই একই কাজ করলে একদিন আমাদেরও একই পরিণতি হবে। তখন তো আমরা কেউই রেহাই পাব না। চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করায় মৎস্যজীবী দলের সভাপতি রুহুল আমিনকে ইট দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমাদুল। গুরুতর আহত রুহুল ঢাকায় চিকিৎসাধীন।
একই ধরনের অভিযোগ করেন বিএনপির ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি মাওলানা মো.
লতাচাপলী ইউনিয়নের পাশেই খাপড়াভাঙা নদীর তীরে আছে তিনটি ইটভাটা। এর মধ্যে একটি বন্ধ। অন্য দুটির মালিক আওয়ামী লীগ নেতা। এসব ইটভাটার মাটি সংগ্রহ করা হয় নদীর তীর থেকে। গত অক্টোবরে উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে দুটি ইটভাটাকে ৬ লাখ টাকা জরিমানা করে। ইউনিয়ন বিএনপির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন ডাক্তার বলেন, সেলিম হাওলাদার তাঁর ভগ্নিপতি সোহরাব খাঁ ও ভাগনে মেহেদী খাঁকে দিয়ে মাটি কাটাচ্ছেন।
গত ৫ আগস্ট থেকে হামলা-দখলবাজি-চাঁদাবাজি করছে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের অনেক নেতাকর্মী। কোনো কিছুই তোয়াক্কা করছে না তারা। তাদের আচরণে অতিষ্ঠ লোকজন। এমনকি তাদের হামলা থেকে রেহাই পাননি নিজ দলের নেতাকর্মী, সাংবাদিক, প্রশাসনের কর্তাকর্তারা। এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে সেলিম হাওলাদার বলেন, ‘একটি মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। যারা দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল না, তারাই এসব করছে।’
গত ৪ জানুয়ারি সৈকতের কাছে মসজিদের সামনে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ শুরু করেন পৌর শ্রমিক দলের সহসভাপতি জসিম মৃধার নেতৃত্বে বিএনপির কয়েক নেতাকর্মী। এ সময় পৌর প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কৌশিক আহমেদ বাধা দিলে তাদের গালাগাল করা হয় ও হুমকি দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে জেলা প্রশাসন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু করলে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা অভিযানে বাধা দেয়। পিটিয়ে গুরুতর জখম করে ভেকু চালককে। এমনকি ইউএনও, এসিল্যান্ড, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশকে অবরুদ্ধ করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে তারা। এ ঘটনায় মহিপুর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা আ ন ম মুরাদুল ইসলাম বাদী হয়ে বিএনপির ১৯ জনের নামসহ এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
এ ব্যাপারে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে গেলে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির নেতৃত্বে লাঠিসোটা নিয়ে আমিসহ এসিল্যান্ড, জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের ওপর হামলা চালানো হয়। সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। কিন্তু পুলিশ এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।’
৫ আগস্টের পর কুয়াকাটায় হোটেল সানরাইজসহ বেশ কয়েকটি দোকানপাট দখল করার অভিযোগ উঠেছে কৃষক দলের সভাপতি আলী হোসেন খন্দকারের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া গত ১২ জানুয়ারি রাতে কুয়াকাটা চৌরাস্তা এলাকায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাংবাদিক কে এম বাচ্চু খলিফা ও তাঁর বাবা ইউনুছ খলিফাকে পিটিয়ে জখম করে আলী হোসেন খন্দকার, তাঁর ছেলে ছাত্রলীগ কর্মী সম্রাট, শ্রমিক দলের সহসভাপতি জসিম মৃধা ও তাদের সহযোগীরা।
৫ আগস্টের পর পারিবারিক শত্রুতার জেরে সাংবাদিক নাসিরউদ্দিন বিপ্লবের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর করা হয়। পরে তাঁর গ্রামের বাড়ির একটি ঘর ভেঙে নেয় এবং অপরটি দখল করে দুর্বৃত্তরা। ওই হামলায় নেতৃত্ব দেন কুয়াকাটা পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান ও তাঁর ভাই মহিপুর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আতিকুর রহমান মিলন ও লতাচাপলী ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি মিজানুর রহমান। নাসির উদ্দিন বিপ্লব তাঁর পরিবার নিয়ে এখনও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
এদিকে গত ৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় কুয়াকাটা পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমানের মোবাইল ফোনে বাস কাউন্টার দখলে নেওয়ার কথোপকথনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ৫০ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন মিইল্লা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হইছে, এইখানে বিআরটিসি বাসের কুয়াকাটা ও তুলাতলীর কাউন্টার ৯ ওয়ার্ডের বিএনপির কমিটি মিইল্লা ভোগ করবে।’ এ প্রসঙ্গে মতিউর রহমান বলেন, তাঁর বক্তব এডিট করা হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ ন ব এনপ র ন ত কর ম র রহম ন ক দল র আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
সরস্বতি পূজা উপলক্ষে গোপালগঞ্জে জমজমাট প্রতিমার হাট
আগামী ২ ও ৩ ফেব্রুয়ারি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজা। এ উপলক্ষে গোপালগঞ্জ জেলার বিভিন্নস্থানে বসেছে প্রতিমার হাট। এখন চলছে প্রতিমার বেচাকেনা। এবার প্রতিমার দাম নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রীয়া থাকলেও কারিগররা বলছেন, জিনিস পত্রের দাম বাড়ায় প্রতিমার দামও কিছুটা বাড়তি।
পঞ্জিকা মতে মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে আশীর্বাদ লাভের আশায় বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজা করে থাকেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। শুধু বাড়িতেই নয় বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজার আয়োজন করা হবে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। দেবীর পায়ে অঞ্জলী দিয়ে অনেক শিশুর শিক্ষাজীবন শুরু হবে।
এ পূজার প্রধান অনুসঙ্গ হলো প্রতিমা। ফলে জেলা শহরের গোহাট সার্বজনীন কালীবাড়ী, সদর উপজেলার সাতপাড়, বৌলতলী, কোটালীপাড়া উপজেলার রাধাগঞ্জ, ভাঙ্গারহাট, ঘাঘর বাজারসহ অনেক স্থানে বসেছে প্রতিমার হাট। এসব হাটে আনা এক একটি প্রতিমা প্রকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত দামে।
আরো পড়ুন:
লক্ষ্মীপুরে রাসপূর্ণিমা উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু
পুটিয়ার কৃষ্ণপুরে চলছে কাত্যায়নী পূজা
এ বছর ক্রেতাদের মধ্যে প্রতিমার দাম নিয়ে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। ক্রেতাদের অনেকেই বলছেন, দাম সাধ্যের মধ্যে আবার কেউবা বলছেন দাম আগের চেয়ে বেশি নিচ্ছেন বিক্রেতারা। তবে, এর মধ্যেও বিভিন্ন বয়সের মানুষ এসব হাট থেকে কিনে নিচ্ছেন পছন্দমতো প্রতিমা। হাটে শুধু প্রতিমাই নয় বিক্রি হচ্ছে ফুল, মালা, মিষ্টিসহ পূজার অন্যান্য উপকরণও।
রীতি অনুযায়ী বিদ্যার দেবী সরস্বতি পূজার পাশাপশি বসন্ত পঞ্চমীতে গণেশ, লক্ষ্মী, নবগ্রহ, বই, খাতা, কলম ও বাদ্যযন্ত্রের পূজা করার রীতি প্রচলিত রয়েছে। এর মধ্য দিয়ে শীত ঋতুর অবসান হয়ে বসন্ত ঋতুর আগমন বার্তা ঘটবে।
প্রতিমা কিনতে আসা উত্তম সাহা বলেন, “শহরের গোহাট সার্বজনীন কালীবাড়ীতে সরস্বতী প্রতিমার হাট বসেছে। এবার বাড়িতে পূজা করাব। ছেলেকে নিয়ে হাটে প্রতিমা কিনতে এসেছি। ঘুরে ফিরে পছন্দমত প্রতিমা কিনেছি। আমি মনে করি, পূজা নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত হবে।”
অপর ক্রেতা নারু গোপাল বলেন, “প্রতিবছর এখানে প্রতিমার হাট বসে। এবে এবার প্রতিমার আমদানি একটু কম। তারপরেও দেখে বুঝে দরদাম করে একটি প্রতিমা কিনেছি। এবার আমাদের বাড়িতে সরস্বতী পূজা হবে।”
অপর ক্রেতা পরিমল চন্দ্র ঢালী বলেন, “এক একটি প্রতিমা ২০০ তেকে ১০ হাজার টাকা পযর্ন্ত বিক্রি হচ্ছে। হাটে এসে প্রতিমা দেখছি। পছন্দ হলে কিনে নিয়ে যাব। গত বছরের তুলনায় এবার প্রতিমার দাম একটু বেশি।”
গোপালগঞ্জ শহরের গোহাট সার্বজনীন কালীবাড়ীর হাটে প্রতিমা বিক্রি করতে আসা উত্তম পাল বলেন, “এবার ২০টি প্রতিমা নিয়ে এসেছি। ইতোমধ্যে ১০টি বিক্রি করা হয়েছে। তবে এবার ক্রেতার সংখ্যা একটু কম। আশা করি, বাকি দুই দিনও বেচাকেনা হবে।”
কার্ত্তিক পাল বলেন, “কোটালীপাড়া উপজেলার হিরণ গ্রাম থেকে ৩০টি প্রতিমা নিয়ে এসেছি বিক্রির জন্য। চার থেকে পাঁচটি প্রতিমা বিক্রি করেছি। ক্রেতারা যে দাম বলছেন, তাতে প্রতিমা বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ প্রতিমা তৈরির অনুসঙ্গের যে দাম তাতে খরচও উঠছে না।”
স্বপন পাল নামে এক বিক্রেতা বলেন, “প্রতিমা তৈরিতে ব্যবহৃত ছোন, রংসহ বিভিন্ন সরঞ্জামের দাম প্রতিবছর বেড়েই চলছে। ক্রেতারা যে দাম বলছেন, সেই দামে বিক্রি করলে লোকসানের মুখে পড়তে হবে। তারপরেও বাব-দাদার পেশা আমরা ধরে রেখেছি।”
ঢাকা/বাদল/মাসুদ