‘হামলা-ভাঙচুর, লুটপাট, দখলবাজি, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম করছে বিএনপির কিছু নেতাকর্মী। আওয়ামী লীগ তো ১৬ বছর ক্ষমতায় টিকে ছিল, এভাবে চলতে থাকলে আমাগো বিএনপি পাঁচ বছরও টিকতে পারবে না।’ এসব কথা বললেন কুয়াকাটার লতাচাপলী ইউনিয়ন বিএনপির ৯ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি আব্দুল লতিফ মুসুল্লী।    
তিনি বলেন, ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সেলিম হাওলাদার অপকর্মে জড়িত থাকায় তাঁর সঙ্গে অন্য নেতাদের বিরোধ। আওয়ামী লীগ যা করেছে, সেই একই কাজ করলে একদিন আমাদেরও একই পরিণতি হবে। তখন তো আমরা কেউই রেহাই পাব না। চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করায় মৎস্যজীবী দলের সভাপতি রুহুল আমিনকে ইট দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমাদুল। গুরুতর আহত রুহুল ঢাকায় চিকিৎসাধীন। 
একই ধরনের অভিযোগ করেন বিএনপির ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি মাওলানা মো.

হানিফ। তিনি বলেন, ‘সেলিম হাওলাদারের অরাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে আমরা সবাই অতিষ্ঠ। লতাচাপলী ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের ১৮ জন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে ১৫ জনই অনাস্থা দিয়েছি তাঁর বিরুদ্ধে। বাকি তিনজনের মধ্যে একজন তাঁর শ্যালক ও আরেকজন ভগ্নিপতি। তিনি নিজের কয়েকজন সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়েই থাকেন। আমরা নেতাদের হুকুমের গোলাম হয়ে কলাগাছের মতো দাঁড়িয়ে আছি। এই হচ্ছে বিএনপির অবস্থা।’ 
লতাচাপলী ইউনিয়নের পাশেই খাপড়াভাঙা নদীর তীরে আছে তিনটি ইটভাটা। এর মধ্যে একটি বন্ধ। অন্য দুটির মালিক আওয়ামী লীগ নেতা। এসব ইটভাটার মাটি সংগ্রহ করা হয় নদীর তীর থেকে। গত অক্টোবরে উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে দুটি ইটভাটাকে ৬ লাখ টাকা জরিমানা করে। ইউনিয়ন বিএনপির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন ডাক্তার বলেন, সেলিম হাওলাদার তাঁর ভগ্নিপতি সোহরাব খাঁ ও ভাগনে মেহেদী খাঁকে দিয়ে মাটি কাটাচ্ছেন। 
গত ৫ আগস্ট থেকে হামলা-দখলবাজি-চাঁদাবাজি করছে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের অনেক নেতাকর্মী। কোনো কিছুই তোয়াক্কা করছে না তারা। তাদের আচরণে অতিষ্ঠ লোকজন। এমনকি তাদের হামলা থেকে রেহাই পাননি নিজ দলের নেতাকর্মী, সাংবাদিক, প্রশাসনের কর্তাকর্তারা। এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে সেলিম হাওলাদার বলেন, ‘একটি মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। যারা দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল না, তারাই এসব করছে।’

গত ৪ জানুয়ারি সৈকতের কাছে মসজিদের সামনে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ শুরু করেন পৌর শ্রমিক দলের সহসভাপতি জসিম মৃধার নেতৃত্বে বিএনপির কয়েক নেতাকর্মী। এ সময় পৌর প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কৌশিক আহমেদ বাধা দিলে তাদের গালাগাল করা হয় ও হুমকি দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে জেলা প্রশাসন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু করলে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা অভিযানে বাধা দেয়। পিটিয়ে গুরুতর জখম করে ভেকু চালককে। এমনকি ইউএনও, এসিল্যান্ড, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশকে অবরুদ্ধ করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে তারা। এ ঘটনায় মহিপুর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা আ ন ম মুরাদুল ইসলাম বাদী হয়ে বিএনপির ১৯ জনের নামসহ এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। 
এ ব্যাপারে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে গেলে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির নেতৃত্বে লাঠিসোটা নিয়ে আমিসহ এসিল্যান্ড, জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের ওপর হামলা চালানো হয়। সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। কিন্তু পুলিশ এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।’  
৫ আগস্টের পর কুয়াকাটায় হোটেল সানরাইজসহ বেশ কয়েকটি দোকানপাট দখল করার অভিযোগ উঠেছে কৃষক দলের সভাপতি আলী হোসেন খন্দকারের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া গত ১২ জানুয়ারি রাতে কুয়াকাটা চৌরাস্তা এলাকায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাংবাদিক কে এম বাচ্চু খলিফা ও তাঁর বাবা ইউনুছ খলিফাকে পিটিয়ে জখম করে আলী হোসেন খন্দকার, তাঁর ছেলে ছাত্রলীগ কর্মী সম্রাট, শ্রমিক দলের সহসভাপতি জসিম মৃধা ও তাদের সহযোগীরা। 

৫ আগস্টের পর পারিবারিক শত্রুতার জেরে সাংবাদিক নাসিরউদ্দিন বিপ্লবের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর করা হয়। পরে তাঁর গ্রামের বাড়ির একটি ঘর ভেঙে নেয় এবং অপরটি দখল করে দুর্বৃত্তরা। ওই হামলায় নেতৃত্ব দেন কুয়াকাটা পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান ও তাঁর ভাই মহিপুর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আতিকুর রহমান মিলন ও লতাচাপলী ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি মিজানুর রহমান। নাসির উদ্দিন বিপ্লব তাঁর পরিবার নিয়ে এখনও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
এদিকে গত ৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় কুয়াকাটা পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমানের মোবাইল ফোনে বাস কাউন্টার দখলে নেওয়ার কথোপকথনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ৫০ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন মিইল্লা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হইছে, এইখানে বিআরটিসি বাসের কুয়াকাটা ও তুলাতলীর কাউন্টার ৯ ওয়ার্ডের বিএনপির কমিটি মিইল্লা ভোগ করবে।’ এ প্রসঙ্গে মতিউর রহমান বলেন, তাঁর বক্তব এডিট করা হয়েছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ ন ব এনপ র ন ত কর ম র রহম ন ক দল র আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

ইউক্রেনে জেলেনস্কির বিকল্প নেতা খুঁজছে যুক্তরাষ্ট্র!

ইউক্রেনে শান্তিচুক্তির জন্য দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির পদত্যাগ করা লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎস। তিনি বলেছেন, ‘ইউক্রেনের একজন নেতা প্রয়োজন, তিনি আমাদের সঙ্গে কাজ করতে পারবেন। তিনি শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার সঙ্গে কাজ করতে পারবেন এবং এই যুদ্ধ থামাতে পারবেন।’ খবর- সিএনএন

গণমাধ্যমের সামনেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির নজিরবিহীন বাগবিতণ্ডার পর এ কথা বললেন তিনি। বাগবিতণ্ডার এ ঘটনাটি নিয়ে নানা আলোচনা চলছে বিশ্বজুড়ে। ওই ঘটনার পর ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে ঐতিহাসিক চুক্তি হওয়ার কথা ছিল, সেটিও বাতিল হয়ে যায়। আর এর পরই ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ কোন পথে, তা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা।

এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। শুক্রবারের ওই ঘটনায় সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গড়া ওয়াশিংটন-কিয়েভ সম্পর্ক ভেঙে পড়েছে। এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে। 

যদিও ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে আবারও এক টেবিলে বসার ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তিনি বলেছেন, ইউক্রেন ও রাশিয়া-দুই পক্ষই আলোচনায় না বসলে যুদ্ধ থামবে না। হোয়াইট হাউসে শুক্রবার ট্রাম্প-জেলেনস্কি বিতণ্ডার পর থেকে ইউক্রেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আর কথা হয়নি। যুদ্ধ থামানোর জন্য রাশিয়াকে আলোচনার টেবিলে আনতে হবে। তবে তাদের প্রতি বৈরী মনোভাব রাখলে, মস্কোকে আলোচনায় যুক্ত করা সম্ভব হবে না। কোনো চুক্তি করার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই মনোভাবই দেখিয়ে আসছেন।

তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, সবকিছু আবার শুরু হতে পারে। আশা করি, তিনি (জেলেনস্কি) এটা বুঝতে পারবেন যে আমরা আসলে আরও হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর আগে, তাঁর দেশকে সাহায্যের চেষ্টা করছি।’
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ