Samakal:
2025-04-23@11:56:38 GMT

সেতুর পাশেই সেতু, মাঠেও সেতু

Published: 26th, January 2025 GMT

সেতুর পাশেই সেতু, মাঠেও সেতু

চারপাশে ফসলি জমি। আশপাশে কোনো সড়ক নেই। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে এমন স্থানে সেতু নির্মাণ করার অভিযোগ উঠেছে। জমি দখল করে এ কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ এক কৃষকের। পরে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন বিশ্বনাথপুর গ্রামে জমির মালিকানা দাবি করা মুনছুর আলীর ছেলে মাজহারুল ইসলাম পলাশ।
উপজেলার শাখাহার ইউনিয়নের দুদাহারা গ্রামের রাস্তায় প্রায় ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে আরও একটি নির্মাণের অনুমোদন নিয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস। অথচ এর মাত্র ৫০ ফুট দূরে আরেকটি সেতু রয়েছে। একই স্থানে আরেকটি নির্মাণ করায় তা মানুষের কাজে লাগবে না বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এতে সরকারের টাকার অপচয় হচ্ছে বলে তারা অভিযোগ তুলেছেন। তবে কাজ না করলে টাকা ফেরত যাওয়ার শঙ্কা থাকায় সেতু দুটি নির্মাণ করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা।
পলাশের অভিযোগে জানা গেছে, বিশ্বনাথপুর গ্রামের মুনছুর আলী একটি জমি দীর্ঘদিন ধরে ভোগদখলসহ চাষাবাদ করে আসছেন। হঠাৎ জমিটিতে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা। এতে বাধা দিলেও তা উপেক্ষা করে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিলেও এর প্রতিকার না পেয়ে আদালতে মামলা করেন তিনি। বর্তমানে বিষয়টি বিচারাধীন রয়েছে।    
জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন গ্রামীণ রাস্তায় ১২ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতু নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। কোটি টাকার কাজটি পান গোবিন্দগঞ্জের ঠিকাদার রফিকুল ইসলাম রফিক। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, বিশ্বনাথপুর ও তালুক রহিমাপুরের মাঝামাঝি ফাঁকা জমিতে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এটি কাজে আসবে না। সেতু যথাস্থানে নির্মাণ না করে কোটি টাকা পানিতে ফেলা হয়েছে। 
স্থানীয় বিএনপি নেতা মোস্তাফিজুর রহমান দুলু জমি দখল করে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করে দিয়েছে বলে তারা অভিযোগ করেছেন। যদিও জমিটি খাস খতিয়ানের দাবি করে গোবিন্দগঞ্জ থানা বিএনপির সদস্য দুলু বলেন, প্রকল্প কর্মকর্তা ব্রিজের সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে পারছিলেন না। তাই জনস্বার্থে এ কাজে সহযোগিতা করেছেন বলে দাবি তাঁর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক যুবকের ভাষ্য, তারা সেতু নির্মাণের ভিডিও করে রেখেছেন। এতে দেখা গেছে, সেতুর উইন ওয়ালে রড কম দেওয়া হয়েছে। ফলে ফাটল দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া ছাদ ও রেলিংয়েও রড কম। নিম্নমানের কাজ হয়েছে। এতে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে সেতুটি। এভাবে অনিয়ম করে কোটি টাকার বড় অংশই আত্মসাৎ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। 
নির্মাণকাজের একটি ভিডিও সম্প্রতি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নির্মাণকাজে যুক্ত এক শ্রমিকের ভাষ্য, নির্মাণের শেষ দিকে কিছু রড কম পড়েছিল। সেদিন কাজের সময় কয়েকজন যুবক ভিডিও করেন। রড কমের বিষয়টি ঠিকাদারকে জানানো হয়েছিল।
প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা যেখানে জায়গা নির্ধারণ করে দিয়েছেন, সেখানেই সেতু নির্মাণ করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন ঠিকাদার রফিকুল ইসলাম রফিক। তিনি বলেন, নির্মাণকাজের শুরু থেকে তিনি সেখানে যাননি। ‘মিস্ত্রি’কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। মিস্ত্রি কাজে ফাঁকি দিয়ে রড 
কম দিতে পারে।
এদিকে উপজেলার শাখাহার ইউনিয়নের দুদাহারা গ্রামের রাস্তায় প্রায় ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে এর ৫০ ফুটের মধ্যে রয়েছে আরেকটি সেতু। ফলে এটিও মানুষের কাজে লাগবে না বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে এলাকায় আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় বিধবা নারী ইয়াসমিন আক্তারের জমি দখল করে সেতুটি নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে তিনি জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এ সেতু নির্মাণে যুক্ত ঠিকাদারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
কাজ না করলে প্রকল্প ফেরত যাবে জানিয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জিন্দার আলী বলেন, জমিটি খাস। যদি রাস্তা না থাকে, তবে বিএনপির লোকজন সেটি করে দেওয়ার চুক্তি নিয়েছে। আরেক সেতুর বিষয়ে জানান, ‘এসব সেতু তো আপনাদেরই কাজে লাগবে। আমি কি টাকা মেরে বাসায় নিয়ে যাচ্ছি? এখন না হলেও এক সময় কাজে লাগবে।’
ইউএনও সৈয়দা ইয়াসমিন সুলতানা বলেন, ‘প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার এখতিয়ার নেই ভূমি অধিগ্রহণ করে সড়ক নির্মাণ করার। দুটি সেতু নির্মাণের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’  

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন র ম ণ কর কর ছ ন সড়ক ন উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

জোর করে পদত্যাগ করানো প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে গিয়ে মারধরের শিকার

পদত্যাগপত্রে জোর করে স্বাক্ষর নেওয়ার পর আবার বিদ্যালয়ে যাওয়ায় নোয়াখালীর একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মারধরের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় তাঁর পরনের জামা-কাপড় ছিঁড়ে ফেলা হয় বলে শিক্ষকের অভিযোগ। আজ বুধবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে বেগমগঞ্জ উপজেলার নরোত্তমপুর ইউনিয়ন উচ্চবিদ্যালয়ে এই ঘটনা ঘটে। মারধরের শিকার ওই শিক্ষকের নাম ইউনুস নবী।

নরোত্তমপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইউনুস নবী প্রথম আলোকে বলেন, গত ২৪ অক্টোবর তাঁর কাছ থেকে জোর করে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর আদায় করেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি ও তাঁর সঙ্গীরা। যদিও সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনার কারণে ওই পদত্যাগপত্রটি গৃহীত হয়নি। তবে ওই ঘটনার পর থেকে তিনি বিদ্যালয়ে যাচ্ছিলেন না।

প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, তিনি দীর্ঘ ১১ বছর ধরে ওই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ২৪ অক্টোবর বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ মুক্তার হোসেনের নেতৃত্বে একদল লোক জোর করে তাঁর কাছ থেকে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর নেন। বেগমগঞ্জ উপজেলার তৎকালীন মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোতাসিম বিল্লার সামনেই এ ঘটনা ঘটে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

বিষয়টি সেই সময় লিখিতভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানিয়েছিলেন প্রধান শিক্ষক ইউনুস নবী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ওই ঘটনার পর সাবেক সভাপতি মুক্তার হোসেন তাঁর পছন্দের একজনকে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেন। এরপর আর বিদ্যালয়ে যাননি তিনি।

ইউনুস নবী আরও জানান, ওই ঘটনার পর তিনি বেগমগঞ্জ সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা করেন। আদালত চলতি বছরের ২০ মে পর্যন্ত ওই পদত্যাগপত্রের কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি আজ সকাল সোয়া ১০টার দিকে বিদ্যালয়ে যান। তিনি অফিসকক্ষে প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসেন। বেলা আনুমানিক সোয়া ১১টার দিকে সাবেক সভাপতি মুক্তার হোসেনের ছোট ভাই একরাম হোসেনসহ একদল লোক অফিসকক্ষে ঢুকে অতর্কিতে তাঁর ওপর হামলা চালান। হামলাকারীরা তাঁর পরনের জামা-কাপড় ছিঁড়ে ফেলেন এবং মারধর করে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ মুক্তার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ওই প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের ৫৯ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষায় তাঁর ওই অনিয়ম ধরা পড়েছে। যার দরুন তাঁকে পদত্যাগ করতে বলা হলে তিনি পদত্যাগ করেন। আজ তিনি সন্ত্রাসী নিয়ে বিদ্যালয়ে গেলে এলাকার লোকজন তাঁদের প্রতিরোধে এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। তবে প্রধান শিক্ষকের ওপর হামলা কিংবা তাঁর জামা-কাপড় ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ ভিত্তিহীন। তাঁর (মুক্তার) ভাই কিংবা অন্য কেউ এমন কোনো ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন।

বিদ্যালয়ের বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রধান শিক্ষক তাঁকে মারধর ও জামা-কাপড় ছিঁড়ে ফেলার ঘটনার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, যাঁরা তাঁকে মারধর করেছেন, তাঁরাই তাঁকে বিদ্যালয়ে ঢুকতে দেন না। ইতিপূর্বে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষরও নিয়েছেন। কিন্তু সেটি গৃহীত হয়নি। প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে না গিয়েও বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। তাঁকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, বিষয়টি যেহেতু রাজনৈতিক, তাই রাজনৈতিকভাবে সমঝোতায় যেতে। তিনি সেটি করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

ইউএনও আরিফুর রহমান আরও বলেন, ওই প্রধান শিক্ষক আদালতে মামলা করেছেন। আদালত কী রায় দেন, তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তবে ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে একটি পক্ষের অভিযোগ আছে, সেটির তদন্ত চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ