পঞ্চগড় জেলা ও দায়রা জজসহ চার বিচারকের অপসারণ দাবিতে আদালতের মূল ফটকে তালা ও সড়ক অবরোধ করে কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

রবিবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুর থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত আদালত চত্ত্বরে এই কর্মসূচি পালন করেন তারা। পরে পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক অভিযুক্ত বিচারকদের প্রত্যাহারের আশ্বাস দিলে ঘরে ফিরে যান আন্দোলনকারীরা।

আরো পড়ুন: বিচারক অপসারণ না হওয়ায় আদালতের ফটকে তালা, সড়ক অবরোধ

আরো পড়ুন:

বিচারক অপসারণ না হওয়ায় আদালতের ফটকে তালা, সড়ক অবরোধ

খুবির অর্ণবের মা, ‘বুকে ফিরে আয় আমার বাবা’

জেলা প্রশাসক সাবেত আলী ছাত্র-জনতার উদ্দেশ্যে বলেন, “সোমবার থেকে এই বিচারকরা পঞ্চগড়ে দায়িত্ব পালন করবেন না। তাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আছে, তা লিখিত আকার দিলে আমি প্রধান বিচারপতি বরাবর পাঠাতে পারব।”

এর আগে, আজ দুপুরে পঞ্চগড় জেলা ও দায়রা জজ গোলাম ফারুক এবং চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান মন্ডলসহ চার বিচারকের অপসারণে দাবিতে কর্মসূচি পালন শুরু করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এসময় তারা আদালত ফটকে তালা দিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। দাবি পূরণ না হওয়ায় সন্ধ্যার পর তারা আদালত চত্ত্বরে প্রবেশ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।

আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন পঞ্চগড়ের সমন্বয়ক ফজলে রাব্বী ও মোকাদ্দেসুর রহমান সান। 

গত বুধবার (২২ জানুয়ারি) বিক্ষোভ মিছিল থেকে চার বিচারক অপসারণে আল্টিমেটাম দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা। তারা সেদিন জজ আদালত ও চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম, ঘুষ বাণিজ্য এবং বিচারকদের মধ্যে এখনো ফ্যাসিস্ট আওয়ামী প্রীতি মনোভাব বিরাজমান বলে অভিযোগ করেন।

আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, সম্প্রতি জেলা জজ আদালত এবং চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে কর্মচারী নিয়োগে পরীক্ষা হয়। চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়ম হওয়ায় পরীক্ষা কেন্দ্রেই হট্টগোল শুরু হয়। পরীক্ষার্থীদের বৃহৎ অংশ নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের দাবি তোলেন। পরে নিয়োগ বোর্ড সেই পরীক্ষা বাতিল করে। পরবর্তীতে আবারো পরীক্ষা হয়। সেই পরীক্ষাতেও অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। 

নিয়োগ প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের জন্য সাধারণ পরীক্ষার্থীদের পক্ষে নিয়োগ বোর্ডের সঙ্গে সমন্বয়করা কথা বলেন। জেলা জজ গোলাম ফারুক এবং চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান মন্ডল সমন্বয়কদের দাবির কোনো তোয়াক্কা না করেই নিজেদের নির্ধারণ করা ব্যক্তিদের নিয়োগ প্রদানের পাঁয়তারা করেন। এতে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ তোলা হয়।

সমন্বয়ক ফজলে রাব্বী বলেন, “বিগত দিনে কর্মচারি নিয়োগে আনিসুল হকের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লোকদের পঞ্চগড়ের আদালতে অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়েছেন জেলা ও দায়রা জজ গোলাম ফারুক। এবারও অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন। আমরা মেধার ভিত্তিতে সুষ্ঠু নিয়োগের দাবি জানালে এই জজ এবং চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমাদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। আমরা পুলিশের গুলির সামনে বুক পেতে দিয়ে আন্দোলন করে ফ্যাসিস্ট হটিয়েছি, তারা একথা ভুলে গেছেন। আজকে একটি সফল আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা পঞ্চগড়ের আদালতকে ফ্যাসিস্ট মুক্ত করতে পেরেছি। সারাদেশের বিচারকদের জন্য এটা দৃষ্টান্ত।” 

অপর সমন্বয়ক মোকাদ্দেসুর রহমান সান বলেন, “তারা শহীদদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলাকারী আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দেদারছে জামিন দিয়েছেন। এরা পতিত সরকারের সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের মদদপুষ্ট। আজকে ফ্যাসিস্ট হাসিনার সরকার নেই, আনিসুল হকও নেই। গোলাম ফারুক, মেহেদী হাসানরাও থাকতে পারবে না। আমরা ইতোমধ্যে আশ্বস্ত হয়েছি, তাদেরকে আজকের মধ্যেই এখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হবে।”

ঢাকা/নাঈম/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সড়ক অবর ধ পর ক ষ হওয় য়

এছাড়াও পড়ুন:

‘অবৈধ অভিবাসন ও মানবপাচার দমনে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করবে ইতালি’

অবৈধ অভিবাসন ও মানবপাচার প্রতিরোধ এবং আন্তঃদেশীয় অপরাধ দমনসহ বাংলাদেশ পুলিশের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ইতালি সহায়তা করবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিজ কার্যালয়ে ঢাকায় নিযুক্ত ইতালির রাষ্ট্রদূত আন্তোনিও আলেসান্দ্রোর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এ কথা জানান।

সাক্ষাতে আসন্ন ৫-৬ মে ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাতেও পিয়ান্তেদোসির বাংলাদেশ সফর, অবৈধ অভিবাসন ও মানবপাচার প্রতিরোধ, নিরাপত্তা খাতে পারস্পরিক সহায়তা; পুলিশ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদান এবং জনশৃঙ্খলা রক্ষা ও আন্তঃদেশীয় অপরাধ দমনে পুলিশের দক্ষতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠকের শুরুতে রাষ্ট্রদূতকে স্বাগত জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “ইতালি বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু।” তিনি উল্লেখ করেন, ইতালিতে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার বাংলাদেশি দক্ষ কর্মী কর্মরত আছেন, যারা রেমিট্যান্স প্রেরণের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের মাধ্যমে এই সংখ্যাটি আরো বাড়বে এবং দুদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরো দৃঢ় হবে।

রাষ্ট্রদূত জানান, সফরকালে ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক ও প্রবাসী কল্যাণ এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।

এ সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, ৫ মে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সম্মানে ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করা হবে এবং একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এতে উভয় দেশের সম্মতিক্রমে অবৈধ অভিবাসন রোধ, আন্তঃদেশীয় অপরাধ দমন এবং পুলিশ বিভাগের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা নিয়ে ঘোষণা, সমঝোতা স্মারক বা চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে।

তিনি আরো বলেন, “বাংলাদেশ সব সময় আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে বৈধ চ্যানেলে জনশক্তি রপ্তানিতে আগ্রহী। আমরা অবৈধ অভিবাসনের বিপক্ষে এবং যারা দালালের মাধ্যমে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (নিরাপত্তা ও বহিরাগমন) মো. শামীম খান, জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্মসচিব (রাজনৈতিক-১) মো. জসীম উদ্দিন খান এবং ঢাকাস্থ ইতালি দূতাবাসের অভিবাসন সংযুক্ত কর্মকর্তা জিউসেপ্পে দি জিওভান্নি উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এনএইচ

সম্পর্কিত নিবন্ধ