পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের সহযোগিতায় ‘ফোকাস গ্রুপ’ গঠন
Published: 26th, January 2025 GMT
পুঁজিবাজারের সার্বিক উন্নয়ন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিকমানের সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এবার ‘পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপ’ গঠন করা হয়েছে। এ গ্রুপটিতে ১০ জন সদস্য রয়েছেন। পুঁজিবাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত ক্লিন ইমেজের অধিকারী ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে ‘পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপ’ গঠিত হয়েছে।
ইতিপূর্বে গঠিত ‘পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স’ এর পরামর্শে এবং তাদের কাজের সহযোগিতায় এই ফোকাস গ্রুপ গঠন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
সম্প্রতি বিএসইসির এক আদেশে এ ‘পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপ’ গঠন করা হয়েছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
আরো পড়ুন:
১৬ লাখ শেয়ার কিনবেন এসিআইয়ের চেয়ারম্যান
পুঁজিবাজার: সূচকের পতন দিয়ে সপ্তাহ শুরু
চলতি মাসে অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় পুঁজিবাজারের সার্বিক উন্নয়ন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক মানের পুঁজিবাজারের সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গঠিত ‘পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স’ কর্তৃক ‘পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপ’ গঠন করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপের সদস্যরা হলেন-ভিআইপিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম, সিএফএ, প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের এমডি এবং সিইও মো.
বিএসইসির সিদ্ধান্তে উল্লেখ করা হয়, আলোচনা ও সার্বিক বিবেচনাপূর্বক কমিশন কর্তৃক গঠিত ‘পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স’ এর পরামর্শে উল্লিখিত ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে গঠিত ‘পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপ’ এর আদেশ জারির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পাশাপাশি ‘পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপ’ এর সদস্যদের সম্মানী হিসাবে সভায় উপস্থিতির ভিত্তিতে প্রত্যেক সদস্যকে সভাপ্রতি ৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ বিষয়ে বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এর আগে গত বছরের ৭ অক্টোবর বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ স্বাক্ষরিত আদেশে ‘পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স’ গঠন করা হয়। গঠিত টাস্কফোর্সের সদস্যরা হলেন-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এ এম মাজেদুর রহমান, হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোং এর সিনিয়র পার্টনার এ এফ এম নেসার উদ্দীন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মোস্তফা আকবর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন।
ওই আদেশে উল্লেখ করা হয়, গঠিত টাস্কফোর্সের অধীনে বিভিন্ন ইস্যুভিত্তিক ফোকাস গ্রুপ থাকবে। প্রতিটি ফোকাস গ্রুপ নির্দিষ্ট বিষয়ে কাজ করবে এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে টাস্কফোর্সকে সুপারিশ করবে। উল্লেখ্য, কমিশনকে অবহিত করে ‘পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স’ উপযুক্ত ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের সমন্বয়ে ‘পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপ’ গঠন করবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “আমরা একটি ফোকাস গ্রুপ তৈরি করেছি। বিশেষ করে মিউচুয়াল ফান্ড বা মার্চেন্ট ব্যাংক বা ব্রোকারেজ হাউজ বা রিপোটিং ও গভর্নেন্স নিয়ে কাজ করা ক্লিন ইমেজের ব্যক্তির নিয়ে আমরা এ গ্রুপটি গঠন করেছি। আমরা তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী মতামত নিয়েছি। যাতে করে কেউ বলতে না পারে যে, আমরা প্রাক্টিক্যালি লোকদের নেইনি। যারা প্রকৃতই প্রাকটিশনার, ক্লিন ইমেজ রয়েছে-এ ধরনের ব্যক্তিদের সমন্বয়ে আমরা ফোকাস গ্রুপ গঠন করেছি। এছাড়া আমরা কনসালটেশর গ্রুপও তৈরি করেছি। অর্থাৎ আমরা পুঁজিবাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রাকটিক্যাল ও থিউরিটিক্যাল ব্যক্তিদের নিয়ে গ্রুপ করেছি।”
পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের আরেক সদস্য হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোং এর সিনিয়র পার্টনার এ এফ এম নেসার উদ্দীন রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “আমাদের কাজের সহযোগিতার জন্যই বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী ফোকাস গ্রুপ গঠন করা হয়েছে। তারা আমাদের গ্রুপভিত্তিক বিভিন্ন কাজে পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করবেন। বিশেষ করে পুঁজিবাজার সম্পর্কিত বিভিন্ন আইন-কানুনের ব্যবহার, আন্তর্জাতিক প্রাকটিস, রিসার্চ ও অ্যানালাইসিস করার কাজে সহায়তা করবেন। তবে তারা আমাদের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করবেন। আমরা পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স ১৭টি বিষয়বস্তু নিয়ে কাজ করছে। এর মধ্যে প্রত্যেক বিষয়বস্তুকে নিয়ে গ্রুপ করে কাজ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রত্যেক বিষয়বস্তু কেন্দ্রিক ফোকাস গ্রুপ থেকে একজনকে টিম লিডার করে বাকি দুই-একজনকে নিয়ে গ্রুপ করা হচ্ছে। আমরা যেহেতু বিএসইসির কোনো কর্মকর্তার সহায়তা নিচ্ছি না, সেহেতু ফোকাস গ্রুপের পূর্ণ সহযোগিতা নিচ্ছি।”
পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপের সদস্য ভিআইপিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি। আমাদের বেশ কয়েকটি মিটিংও হয়েছে। তবে ফোকাস গ্রুপের সদস্যরা সবাই একই মিটিংয়ে থাকেন না। কারণ এই গ্রুপের সদস্যরা বিভিন্ন বিষয়বস্তুর ওপর বিভিন্ন গ্রুপে কাজ করছেন।”
পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপের আরেক সদস্য মিডওয়ে সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশিকুর রহমান রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “আমরা কাজ শুরু করেছি। তবে এই মুহূর্তে এরচেয়ে বেশি কিছু বলার সুযোগ নাই।”
পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের কার্যপরিধি
এই টাস্কফোর্সের মূল দায়িত্ব হবে পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য নিম্নলিখিত কার্যক্রম পরিচালনা করা। বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের আকার তথা ‘জিডিপি ও বাজার মূলধন’-এর অনুপাত কম হওয়ার প্রধান কারণগুলো চিহ্নিত করে উত্তরণের জন্য সরকারের আর্থিক খাতের নীতি প্রণয়নের প্রস্তাবনা।
দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে ব্যাংক ঋণের পরিবর্তে পুঁজিবাজার থেকে অর্থায়নের জন্য সরকারের আর্থিক নীতি প্রণয়ন ও নীতি-নির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কমিশনের উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার জন্য সুপারিশ প্রণয়ন করা।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী পুঁজিবাজারের সুশাসন উন্নীত করার লক্ষ্যে পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি এবং প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো বিশ্লেষণ করা ও সমাধানের সুপারিশমালা প্রণয়ন।
বিএসইসির প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা শক্তিশালীকরণ, অভ্যন্তরীণ সুশাসন, অভ্যন্তরীণ কার্যক্রমে প্রযুক্তি ও অটোমেশনের প্রয়োগ, তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অন্যান্য উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রশাসনিক কাঠামোর সুপারিশ, মানবসম্পদের দক্ষতা বৃদ্ধি, কমিশনের কর্মকর্তাদের দক্ষতা উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক মানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, শিক্ষা, সেমিনার, কর্মশালায় অংশগ্রহণসহ অভ্যন্তরীণ অন্যান্য বিষয়ে সুপারিশ প্রদান।
ডিএসই, সিএসই, সিডিবিএল, সিসিবিএলের তদারকি কার্যক্রম বিশ্বমানে উন্নীত করাসহ উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানসমূহের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যুগোপযোগী করার সুপারিশ প্রণয়ন।
প্রাইভেট প্লেসমেন্ট/অফারের মাধ্যমে ইক্যুইটি সিকিউরিটিজ ইস্যু সংক্রান্ত সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (ইস্যু অব ক্যাপিটাল) রুলস, ২০০১ যুগোপযোগী করার সুপারিশ প্রণয়ন।
তালিকাভুক্ত কোম্পানির স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন, কর্পোরেট ডিজক্লোজার, নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের সঠিকতা নিশ্চিত করাসহ কর্পোরেট গভর্ন্যান্স, বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা এবং বাজারের গভীরতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় নীতি প্রণয়ন।
ডেট ও ইক্যুইটি সিকিউরিটিজ ইস্যুর আবেদনের ক্ষেত্রে দাখিলকৃত তথ্য-উপাত্ত, দলিল-দস্তাবেজ, সম্পদ পুনঃমূল্যায়ন প্রতিবেদন, নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে প্রস্তুতকারী পক্ষসমূহ, যেমন: ইস্যুয়ার কোম্পানি, ইস্যু ম্যানেজার ও আন্ডার রাইটার (মার্চেন্ট ব্যাংকার), ডেল্যুয়ার এবং অডিটরসহ অন্যান্য পক্ষসমূহের দায়-দায়িত্ব ও সুনির্দিষ্ট শাস্তির বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়ন।
বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এ সংশ্লিষ্ট বিধিমালা, যেমন: সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (মার্চেন্ট ব্যাংকার ও পোর্টফোলিও ম্যানেজার) বিধিমালা ১৯৯৬, সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (স্টক-ডিলার, স্টক-ব্রোকার ও অনুমোদিত প্রতিনিধি) বিধিমালা ২০০০, সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (মিউচ্যুয়াল ফান্ড) বিধিমালা-২০০১ সহ সংশ্লিষ্ট বিধিমালা যুগোপযোগী করার সুপারিশ প্রণয়ন।
ডেট ও ইক্যুইটি সিকিউরিটিজ ইস্যু সংক্রান্ত বিধি-বিধান, যেমন: বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (পাবলিক ইস্যু) রুলস ২০১৫, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (রাইট ইস্যু) রুলস ২০০৬, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (ডেট সিকিউরিটিজ) রুলস ২০২১, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (ইনভেস্টমেন্ট সুকুক) রুলস ২০১৯, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (সম্পদভিত্তিক সিকিউরিটি ইস্যু) বিধিমালা-২০০৪ সংশ্লিষ্ট বিধিমালা যুগোপযোগী করার সুপারিশ প্রণয়ন।
বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও আস্থা বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্টেকহোল্ডারদের সাথে নিয়মিত পরামর্শ ও সমন্বয়ের গাইডলাইন এবং প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়ন।
বাজারে কারসাজি, সুবিধাভোগী ব্যবসায় লেনদেন ও অন্যান্য অনিয়মের বিচার ও জরিমানায় সমতা আনয়নের জন্য বিদ্যমান আইনের শাস্তির ধারার অধীনে একটি সুনির্দিষ্ট পেনাল কোড বা শান্তির বিধিমালা প্রণয়ন করা।
মার্জিন রুলস, ১৯৯৯ যুগোপযোগী করাসহ বিদ্যমান ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কৌশল এবং আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও বিজনেস ইন্টেলিজেন্স মডিউল-সমৃদ্ধ বিশ্বমানের অনলাইন ও অফলাইন সার্ভেইল্যান্স সিস্টেম বা বাজার তদারকি বাবস্থার কার্যকারিতা নিরুপণ ও প্রয়োজনীয় সংস্কারের সুপারিশ প্রণয়ন।
বর্তমান বাজার কাঠামোর মূল্যায়ন, বাজারের গভীরতা, তারল্য ও পণ্য বৈচিত্র্যকে বিবেচনাপূর্বক দেশীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কিভাবে আরো আকৃষ্ট করা যায়, সেই কৌশল প্রণয়নে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রদান।
পুঁজিবাজারের কার্যক্রমে অটোমেশন বৃদ্ধির মাধ্যমে পুঁজিবাজারের সুশাসন এবং বিনিযোগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধার করার লক্ষ্যে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও উন্নয়ন এবং পুঁজিবাজার উপযোগী ফিনটেক টেকনোলজি প্রচলন এবং পুঁজিবাজারের প্রযুক্তিগত সংবেদনশীলতা বিবেচনায় নিয়ে সাইবার সিকিউরিটি নিশ্চিত করার জন্য সুপারিশ প্রণয়ন।
নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর (বিএসইসি, বাংলাদেশ ব্যাংক, আইডিআরএ, এমআরএ, এনবিআর, আরজেএসসি ইত্যাদি) সঙ্গে সমন্বয়ের উপায় নির্ধারণে একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতি বা নির্দেশিকা প্রণয়ন।
তালিকাভুক্ত কোম্পানির সাথে অতালিকাভুক্ত কোম্পানি বা তালিকাভুক্ত কোম্পানির মার্জার, অ্যামালগামেশন, একুইজেশনের মাধ্যমে কোনো শেয়ার ইস্যু সংক্রান্ত বিষয়ে মহামান্য হাইকোর্টে এ সংক্রান্ত স্কিম অনুমোদনের পূর্বে বিএসইসি থেকে অনাপত্তিপত্র গ্রহণ বিষয়ে সুপারিশমালা প্রণয়ন।
এছাড়া টাস্কফোর্সের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি কার্যপরিধিতে সংযোজন করা যাবে।
ঢাকা/এনটি/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র র স প র শ প রণয়ন গ র প র সদস য ব এসইস র র জন য স প র টন র সহয গ ত ব যবস থ র সহয গ আর থ ক ক জ কর গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
শেয়ার কারসাজি: সাকিব-হিরুদের ৩১.৩৮ কোটি অর্থদণ্ড
পুঁজিবাজারে পেপার ও প্রিন্টিং খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস লিমিটেডের শেয়ার কারসাজিতে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। এ কাজে সাকিবকে সহযোগিতা ও নেতৃত্ব দেন সমবায় অধিদপ্তরে উপ-নিবন্ধক ও শেয়ার ব্যবসায়ী আবুল খায়ের হিরু।
শেয়ার কারসাজিতে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সাকিব, হিরু, তার পরিবারের সদস্য, সাকিব-হিরুর প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়িক পার্টনার রয়েছে এমন ১০ ব্যক্তি এবং ৪ প্রতিষ্ঠানকে মোট ৩১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলসের শেয়ার কারসাজি করে দাম বাড়ানো হয়। কোম্পানিরর শেয়ার কারসাজিতে সাকিব-হিরুরা বিভিন্ন নামে একাধিক বিও হিসাব খুলে কোম্পানির শেয়ার সিরিজ ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে অস্বাভাবিকভাবে দাম বাড়িয়ে মুনাফা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে বিএসইসির তদন্তে উঠে এসেছে।
আরো পড়ুন:
বাংলাদেশের বিপক্ষে নামছেন সাকিব!
সাকিবের ‘ইউটার্ন’
পুঁজিবাজারে কয়েক বছর ধরে গুঞ্জন ছিল সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলসের শেয়ার নিয়ে কারসাজি চলছে। অবশেষে তদন্ত সাপেক্ষে কোম্পানির শেয়ার কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায়ে এনেছে বিএসইসি।
বিগত সরকারের আমলে আইন লঙ্ঘন করা শেয়ার কারসাজিকারীদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন যেকোনো ধরনের কারসাজির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলসের শেয়ার কারসাজির দায়ে সিকিউরিটির অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ১৭(ই)(২) এর ক্ষমতাবলে আবুল খায়েরকে ৫০ লাখ টাকা, ডিআইটি কো-অপারেটিভকে ৫০ লাখ টাকা, আবুল কালাম মাতবরকে ৫০ লাখ টাকা এবং কাজী সাদিয়া হাসানকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সে হিসেবে মোট ২ কোটি টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়েছে।
আর সিকিউরিটির অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ১৭(ই)(৫) এর ক্ষমতাবলে আবুল খায়েরকে ২৫ লাখ টাকা, ডিআইটি কো-অপারেটিভকে ২৫ লাখ টাকা, আবুল কালাম মাতবরকে ২৫ লাখ টাকা, কাজী সাদিয়া হাসানকে ২৫ লাখ টাকা, কাজী ফরিদ হাসানকে ২৫ লাখ টাকা, কাজী ফুয়াদ হাসানকে ২৫ লাখ টাকা, কনিকা আফরোজকে ২৫ লাখ টাকা, সাজিদ মাতবরকে ২৫ লাখ টাকা, মোহাম্মদ বাশারকে ২৫ লাখ টাকা, মোনার্ক হোল্ডিংসকে ২৫ লাখ টাকা, মোনার্ক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টকে ২৫ লাখ টাকা, সাকিব আল হাসানকে ২৫ লাখ টাকা ও সফটভাসন লিমিটেডকে ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সে হিসেবে মোট ৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়েছে।
একইসঙ্গে সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ১৭(ই)(৫) এর ক্ষমতাবলে আবুল খায়েরকে ২ কোটি টাকা, আবুল কালাম মাতবরকে ২ কোটি টাকা, কাজী সাদিয়া হাসানকে ২ কোটি টাকা, সাজিদ মাতবরকে ২ কোটি টাকা, মোহাম্মদ বাশারকে ২ কোটি টাকা, কনিকা আফরোজকে ২ কোটি টাকা, কাজী ফরিদ হাসানকে ২ কোটি টাকা, ডিআইটি কো-অপারেটিভকে ২ কোটি টাকা, মোনার্ক হোল্ডিংসকে ২ কোটি টাকা, মোনার্ক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টকে ২ কোটি টাকা, সফটভাসন লিমিটেডকে ২ কোটি টাকা, সাকিব আল হাসানকে ২ কোটি টাকা এবং জাভেদ এ মতিনকে ২ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সে হিসেবে মোট ২৬ কোটি টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়েছে।
এছাড়া সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি করায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শেয়ার অর্জন, অধিগ্রহণ ও কর্তৃত্ব গ্রহণ) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৪(১) এর ক্ষমতাবলে আবুল খায়েরকে ১ লাখ টাকা, আবুল কালাম মাতবরকে ১ লাখ টাকা, কাজী সাদিয়া হাসানকে ১ লাখ টাকা, সাজিদ মাতবরকে ১ লাখ টাকা, মোহাম্মদ বাশারকে ১ লাখ টাকা, কনিকা আফরোজকে ১ লাখ টাকা, কাজী ফরিদ হাসানকে ১ লাখ টাকা, ডিআইটি কো-অপারেটিভকে ১ লাখ টাকা, মোনার্ক হোল্ডিংসকে ১ লাখ টাকা, মোনার্ক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টকে ১ লাখ টাকা, সফটভাসন লিমিটেডকে ১ লাখ টাকা, সাকিব আল হাসানকে ১ লাখ টাকা এবং জাভেদ এ মতিনকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সে হিসেবে মোট ১৩ লাখ টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়েছে।
জড়িতদের পরিচিতি
শেয়ার কারসাজি করে সাকিব আল হাসান, আবুল খায়ের হিরু, তার পরিবারের সদস্য ও সুবিধাভোগী প্রতিষ্ঠান বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। এ কাজের হোতা ছিলেন হিরু নিজেই। আর কারসাজিতে সহযোগী হিসেবে ছিলেন হিরুর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান, বাবা আবুল কালাম মাতবর, বোন কনিকা আফরোজ, ভাই মোহাম্মদ বাসার ও সাজিদ মাতবর, সাদিয়া হাসানের ভাই কাজী ফুয়াদ হাসান ও কাজী ফরিদ হাসান, হিরুর প্রতিষ্ঠান ডিআইটি কো-অপারেটিভ, মোনার্ক হোল্ডিংস, মোনার্ক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট ও সফটভাসন এবং ব্যবসায়িক পার্টনার সাকিব আল হাসান ও জাভেদ এ মতিন। এর আগে শেয়ার কারসাজি করার দায়ে এদেরকে বড় অংকের জরিমানা করা হয়।
সর্বশেষ প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ার লেনদেনে কারসাজির অভিযোগে বিশ্বসেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানসহ চার ব্যক্তি এবং তিন প্রতিষ্ঠানকে ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এর মধ্যে সাকিবকে জরিমানা করা হয়েছে ৫০ লাখ টাকা।
২০১৭ সালে সাকিব আল হাসানকে শুভেচ্ছাদূত হিসেবে যুক্ত করেন তৎকালীন বিএসইসির চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেন। ২০২০ সালে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়ত-উল-ইসলামের নেতৃত্বে পুনর্গঠন করা হয় বিএসইসিকে। তবে শুভেচ্ছাদূত হিসেবে বহাল রাখা হয় সাকিবকে। এ সময়ে পুঁজিবাজারে আলোচিত বিনিয়োগকারী হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে তার। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন গত ২৮ আগস্ট শুভেচ্ছাদূতের পদ থেকে সাকিবকে বাদ দেওয়া হয়। পুঁজিবাজারের আলোচিত কারসাজিকারক আবুল খায়ের হিরুর সঙ্গে একত্রে বড় বিনিয়োগ করেন ক্রিকেটার। অভিযোগ রয়েছে গত চার-পাঁচ বছরে পুঁজিবাজারে যেসব শেয়ার নিয়ে আবুল খায়ের হিরু সবচেয়ে বেশি কারসাজির ঘটনা ঘটিয়েছেন, এসব কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ ছিল সাকিবেরও।
বিএসইসির তদন্ত কার্যক্রম
সমবায় অধিদপ্তরে উপ-নিবন্ধক ও শেয়ার ব্যবসায়ী আবুল খায়ের হিরু, তার পরিবারের সদস্য, তার প্রতিষ্ঠানে এবং ব্যবসায়িক পার্টনাররা যোগসাজস করে সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলসের শেয়ার লেনদেন করে। কারসাজিকারীরা ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে কোম্পানিটি শেয়ার কারসাজি করে দাম বাড়ায়। এ সময়ের মধ্যে কোম্পানির শেয়ারের দাম ৩৭৮.২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৭৯.৪০ টাকায় নিয়ে যাওয়া যায়। আলোচ্য সময়ে কোম্পানির শেয়ারের দাম ৩০১.১৫ টাকা বা ৭৯.৬১ শতাংশ বেড়ে যায়।
কারসাজির পরিপ্রেক্ষিতে বিএসইসির সিদ্ধান্ত
অভিযুক্তদের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব থেকে সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলসের বিপুলসংখ্যক শেয়ার লেনদেন করে। এ কর্মকাণ্ডের মাধ্যেমে তারা একটি কৃত্রিম বাজার সৃষ্টি ও পুঁজিবাজারের সাধারণ বিদনিয়োগকারীদের শেয়ার ক্রয়ের জন্য প্রভাবিত করার অপপ্রয়াস চালিয়েছেন। যার ফলে শেয়ারটির বাজার মূল্য অযৌক্তিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা সুস্পষ্ট সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন।
শেয়ার কারসাজিতে জড়িতদের বক্তব্য এবং তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা থেকে প্রতীয়মান হয়, উপস্থাপিত অভিযোগসমূহ সঠিক ও ইচ্ছাকৃত এবং কর্মকাণ্ডের ফলে পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন যা পুঁজিবাজার উন্নয়নের পরিপন্থী, সেহেতু এক্ষেত্রে অভিযুক্তদের ব্যাখ্যা কমিশনের নিকট গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়নি। যেহেতু অভিযুক্তদের কর্মকাণ্ড সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ১৭(ই)(৫) এবং সেকশন ১৭(ই)(২) লংঘন করেছে, যা সিকিউরিটিজ আইনের পরিপন্থী। যেহেতু অভিযুক্তরা উপর্যুক্ত কর্মকাণ্ড সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ২২ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ: যেহেতু, কমিশনের বিবেচনায়, সিকিউরিটিজ আইন ও বিধি-বিধান পরিপালনে আলোচ্য ব্যর্থতার জন্য, পুঁজিবাজারের শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা এবং জনস্বার্থে আলোচ্য ব্যক্তিদের জরিমানা করা হলো।
ঢাকা/এনটি/এসবি