মিজানুর রহমান নিজেকে ভাগ্যবান ভাবতেই পারেন! দুর্বার রাজশাহী তাকে প্লেয়ার্স ড্রাফট থেকে দলে নিলেও দশ ম্যাচে ডাগ আউটে বসিয়ে রেখেছিল। নিয়মিত মাঠে আসছিলেন, অনুশীলন করছিলেন, সিলেট-চট্টগ্রামও ঘুরে এসেছেন। যাক এগারতম ম্যাচে অন্তত তার সুযোগ হলো।
এজন্য সতীর্থ রায়ান বার্ল, মার্ক ডেয়াল, মিগুয়েল কামিন্স ও মোহাম্মদ হারিসকে ধন্যবাদ দিতে পারেন। তারা আজ বিপিএল বয়কট করেছেন বলেই মিজানুরের সুযোগ হয়েছে। এরই মধ্যে জেনে গেছেন, রাজশাহীর বিদেশি ক্রিকেটাররা পারিশ্রমিক পাননি বলে বিপিএল না খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আরো পড়ুন:
বিদেশি ছাড়া ব্যাটিংয়ে ধুকল রাজশাহী, পেল মামুলি সংগ্রহ
বেতন সংকট, বিদেশি ছাড়া নজিরবিহীন ম্যাচ খেলছে রাজশাহী
এর আগে স্থানীয় ক্রিকেটাররাও বয়কটের হুঁমকি দিয়েছিলন। পরবর্তীতে তারা চেক পেয়ে মাঠে নেমেছেন। বিদেশিরা ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকের মুখের কথায় বিশ্বাস রাখতে পারেননি।
বিপিএলে পারিশ্রমিক জটিলতার বিষয়টি সবার আগে সামনে আসে রাজশাহীর। এরপর চিটাগং কিংস সেই আলোচনায় যোগ দেয়। পারিশ্রমিকের নিয়ম চুক্তি অনুযায়ী অনুসরণ করেনি আরো দুয়েকটি দল। ফলে বিপিএল অতীত কেলেঙ্কারি থেকে এবারও বের হতে পারেনি।
নতুন করে বিপিএল শুরুর ঘোষণা দিয়েছিলেন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিপিএল আয়োজন করা ছিল চ্যালেঞ্জিং। সেখানে বিসিবির বিপিএল আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত হয় প্রধান উপদেষ্টার পরিকল্পনা।
বিপিএল শুরুর আগে তিনটি কনসার্ট আয়োজন করে সেসব পরিকল্পনার ছাপ দেখাচ্ছিল আয়োজকরা। মুগ্ধ পানি কর্নার, জিরো ওয়েস্ট জোন, গ্রাফিতি, থিম সং, মাসকট রেখে নজর কাড়ার চেষ্টা করেছে বিপিএল। এসব আয়োজন সবই সরকারের ‘তারুণ্যের উৎসবের’ অংশ। কিন্তু যে জন্য এই আয়োজন, সেখানেই গণ্ডগোল।
মাঠের খেলার চেয়ে ‘ধূলাই’ বেশি। ‘ধূলো’ এখানে নিশ্চিতভাবেই সবচেয়ে বাজে ইঙ্গিতটাই দিচ্ছে। মাঠের খেলায় যতটুকুই উত্তাপ ছড়াচ্ছে তাতে খুশি আয়োজকরা। যারা খেলছেন তারাও খুশি।
তবে সেই উত্তাপের ভেতরে কিছু ম্যাচ নিয়ে সন্দেহও তৈরি হয়েছে। বিসিবির অ্যান্টি করাপশন ইউনিটের জেরার খড়গের নিচে পড়েছেন একাধিক স্থানীয় ক্রিকেটার। বেশ কিছু নো বল, ওয়াইড বল নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সঙ্গে নির্দিষ্ট কয়েকটি ওভার নিয়েও আছে অভিযোগ। সেসব ওভারে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি রান হওয়া নিয়ে আপত্তি তোলা হয়েছে। আবার সরাসরি খেলোয়াড় নয়, ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়েও আছে অভিযোগ। সেসব অভিযোগ করেছেন খোদ ক্রিকেটাররা।
বিদেশি খেলোয়াড় নিয়েও আছে আপত্তি। এমন কিছু খেলোয়াড় বিপিএলে খেলছেন যাদের অন্য কোনো প্রতিষ্ঠিত লিগে দেখা যায় না। ক্যারিয়ার তো শেষ-ই…অনেকে লিজেন্ডস লিগেও খেলে ফেলেছেন। কেউ কেউ ঠাট্টা করে বিপিএলকে বিদেশি ‘বুড়ো’ ক্রিকেটারদের পুনর্বাসন কেন্দ্রও বলছন! আনকোড়া, বুড়িয়ে যাওয়া বিদেশি ক্রিকেটাররা আসায় ব্র্যান্ড ভ্যালুও দিনকে দিনকে কমেই যাচ্ছে বিপিএলের।
অতীতে যে ঘটনা ঘটেনি এবার সেটাও ঘটেছে। ফ্র্যাঞ্চাইজির দেওয়া পারিশ্রমিকের চেক বাউন্স করেছে। শুধু ক্রিকেটারদেরই নয়, হোটেল বিল হিসেবে যে চেক দিয়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজি তা-ও বাউন্স হয়েছে। পরবর্তীতে দলের মালিককে নজরে রাখতে বাধ্য হয়েছে হোটেল কর্তৃপক্ষ। ঢাকায় আজ সকালে হোটেল পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছেন ক্রিকেটাররা। আগের হোটেলের বিল বকেয়া থাকায় নতুন হোটেলে উঠেছেন ক্রিকেটাররা।
‘নতুন বাংলাদেশ, নতুন বিপিএলের আশা’ নিয়ে দশম আসরের যাত্রা শুরু হয়েছিল। ৪৬ ম্যাচের বিপিএলের ৩৪ ম্যাচ শেষ হয়েছে। রাউন্ড রবিন লিগের আট ম্যাচের পর দুটি কোয়ালিফায়ার, একটি এলিমিনেটের ও ফাইনাল শেষে বিপিএলের পর্দা নামবে ৭ ফেব্রুয়ারি। এর আগ পর্যন্ত বিপিএল আর কত সমালোচনার কালি গায়ে মাখায় সেটাই দেখার।
ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব প এল ব প এল র
এছাড়াও পড়ুন:
২২টি যুদ্ধের পর শত্রুমুক্ত হয় কুষ্টিয়া
আজ ১১ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া মুক্তদিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে দীর্ঘ ৯ মাসের সশস্ত্র সংগ্রাম, ২২টি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ আর অসংখ্য নীরব ত্যাগের মধ্যদিয়ে পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের কুষ্টিয়া থেকে বিতাড়িত করেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। কালেক্টরেট চত্বরে উত্তোলন করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা।
মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্ন থেকেই কুষ্টিয়া ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধের এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে এপ্রিলের প্রথম দিকে এখানে ইপিআর, পুলিশ এবং সাধারণ মানুষ মিলে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।
আরো পড়ুন:
টাঙ্গাইল শত্রুমুক্ত হয় ১১ ডিসেম্বর
৩৬ ঘণ্টার যুদ্ধে শত্রুমুক্ত হয় মাদারীপুর
কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই প্রতিরোধে যোগ দেন, যা পরবর্তীতে সুসংগঠিত মুক্তিযোদ্ধা বাহিনীতে রূপ নেয়। মুক্তিযুদ্ধের পুরো ৯ মাস জুড়ে কুষ্টিয়ার বিভিন্ন স্থানে গেরিলা হামলা, সম্মুখযুদ্ধ ও প্রতিরোধের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয় চূড়ান্ত মুক্তির পথ।
ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী, ১৬ এপ্রিল থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত কুষ্টিয়া জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত ২২টি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ও সংঘর্ষ সংঘটিত হয়। মিরপুর, ভেড়ামারা, দৌলতপুর, খোকসা, কুমারখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিযোদ্ধারা শত্রুর সুসজ্জিত ঘাঁটির বিরুদ্ধে প্রাণপণ লড়াই চালান। পাকবাহিনীর ক্যাম্প, ব্রিজ, সড়ক ও রসদ সরবরাহ লাইনে ধারাবাহিক আক্রমণ চালিয়ে তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে দেওয়া হয়। প্রতিটি যুদ্ধে বহু মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ শহীদ হন। পাকিস্তানি বাহিনীরও বিপুল ক্ষয়ক্ষতি ঘটে। তারা কুষ্টিয়ায় অবস্থান টিকিয়ে রাখতে ব্যর্থ হয়।
১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া শহরের প্রবেশমুখ, গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও স্থাপনার আশপাশে মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী পাক সেনাদের সঙ্গে চূড়ান্ত লড়াইয়ে অবতীর্ণ হন। ভোর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে গোলাগুলি, মর্টার শেল ও ভারী অস্ত্রের প্রচণ্ড গর্জনে পুরো শহর কেঁপে ওঠে। কৌশলগত স্থানে অবস্থান নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর প্রতিরক্ষা ভেঙে দেন। এক পর্যায়ে পাকিস্তানি বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে পিছু হটতে ও আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়। তাদের অনেকেই প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে যায়। ১১ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে কুষ্টিয়া শত্রুমুক্ত ঘোষণা করা হয় এবং দিনটিকেই ‘কুষ্টিয়া মুক্ত দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
১১ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত কুষ্টিয়া শহরের কালেক্টরেট চত্বরে তৎকালীন রাজনৈতিক ও মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্বে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা উত্তোলন করা হয়। এ সময় প্রাদেশিক পরিষদের জোনাল চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ চৌধুরীসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও সাধারণ মানুষ উপস্থিত থেকে শহীদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানান। এই পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়েই প্রতীকীভাবে স্বাধীন কুষ্টিয়ার জন্ম এবং মুক্তাঞ্চল হিসেবে প্রশাসনিক কার্যক্রম চালুর সূচনা ঘটে। ।
প্রতি বছরের মতো এবারো কুষ্টিয়া মুক্তদিবস উপলক্ষে কালেক্টরেট চত্বরে কেন্দ্রীয় শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে পুষ্পস্তবক অর্পণ, শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনায় দোয়া-মোনাজাত, র্যালি পরবর্তী শহীদ স্মৃতিস্মম্ভ চত্বরে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদ দিবসটি উপলক্ষে পৃথক কর্মসূচি পালন করছে। শহীদ পরিবার ও জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের স্মৃতিচারণের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের সামনে যুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরছেন।
ঢাকা/কাঞ্চন/মাসুদ