আ’লীগ নেতা পিকুল ও সহযোগীদের দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদক
Published: 26th, January 2025 GMT
যশোর জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুজ্জামান পিকুল এবং তাঁর সহযোগীদের অনিয়ম, লুটপাট, দুর্নীতি তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে পিকুলের সহযোগী চার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে তলব করা হয়েছে।
তারা হলেন– জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান, সহকারী প্রকৌশলী মো.
গত ১৪ জানুয়ারি দুদক সমন্বিত যশোর জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক আল আমিন স্বাক্ষরিত একটি নোটিশ ইস্যু করা হয়। এতে বলা হয়, সড়ক-মহাসড়কের সরকারি হাজার হাজার গাছ বিক্রি ও বিভিন্ন প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা লোপাট, নিয়োগ বাণিজ্য, জমি ইজারা ও দোকান বরাদ্দের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তদন্তে কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি অভিযুক্তদের দুদকে হাজির হওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
অভিযুক্ত জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামানের ভাষ্য, দুদক আমাদের বক্তব্য শুনবেন।
জানা যায়, ২০১৭ সালের ১৭ এপ্রিল উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাইফুজ্জামান পিকুল। এর পর ২০২২ সালের ১৭ অক্টোবর দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হন। দুই দফায় প্রায় সাড়ে ৭ বছর তিনি চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর আত্মগোপনে চলে যান তিনি।
অভিযোগ রয়েছে, যশোর-খুলনা মহাসড়ক, যশোর-ঝিনাইদহ ও যশোর-নড়াইল মহাসড়ক এবং আঞ্চলিক সড়কের হাজার হাজার গাছ বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছেন পিকুল ও তাঁর সহযোগীরা। প্রকল্প বরাদ্দে ২৫ শতাংশ কমিশন দিতে হতো। ভুয়া প্রকল্প তৈরি করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল নির্মাণ প্রকল্পে সরকারি বরাদ্দ থাকলেও জেলা পরিষদ থেকে একাধিকবার বরাদ্দ দিয়ে টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। প্রতিবছর শীতবস্ত্র ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ ছাড়াও জেলা পরিষদের মালিকানাধীন যশোর শহরের খাজুরা বাসস্ট্যান্ড ও যশোর টাউন হল মাঠসংলগ্ন মার্কেটের দোকান বরাদ্দের নামে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা ঘুষ আদায় করা হয়েছে।
অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর গত ২ ডিসেম্বর অফিস আদেশে প্রধান সহকারী (ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা) লুৎফর রহমান সরদারকে নড়াইল জেলা পরিষদে ও অফিস সহায়ক সরোয়ার উদ্দিনকে মেহেরপুর জেলায় বদলি করা হয়েছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ঠিকাদার বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে ২ প্রকৌশলীকে হুমকির অভিযোগ
খুলনা নগরীর খানজাহান আলী থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোল্লা সোহাগের বিরুদ্ধে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) দুই প্রকৌশলীকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কুয়েটের একটি ভবনের ছাদের ওয়াটারপ্রুফিংয়ের কাজে ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে লাভ আরও বেশি নির্ধারণের কথা বলেছিলেন ওই ঠিকাদার। এ নিয়ে প্রকৌশলীদের তিনি হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ প্রেক্ষাপটে কুয়েটের নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর) শেখ আবু হায়াত ও নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর) মো. গোলাম কিবরিয়া সোমবার কুয়েট উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগ করে নিরাপত্তা চেয়েছেন।
সূত্র জানায়, কুয়েটের ১৩ নম্বর ভবনের ছাদের ওপর ওয়াটারপ্রুফিংয়ের কাজ নিয়েছেন মোল্লা সোহাগ। কাজটি কয়েকদিন আগে শুরু হয়। গত রোববার বিকেল ৩টার দিকে ঠিকাদার সোহাগ প্রথমে নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়ার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে কল দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী এ বি এম মামুনুর রশিদ এবং অন্য নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ আবু হায়াতকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও হুমকি দেন। গালাগাল করতে নিষেধ করলে তিনি গোলাম কিবরিয়াকেও গালাগাল ও হুমকি দেন। পরে তিনি একই পরিচয় দিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ আবু হায়াতকে ফোনে গালাগাল ও হুমকি দেন।
উপাচার্যের কাছে দুই নির্বাহী প্রকৌশলী লিখিত অভিযোগে বলেন, ওয়াটারপ্রুফিংয়ের কাজের দর প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয়ের প্রকৌশলীরা বাজারদরের সঙ্গে সরকারি নিয়মে ভ্যাট, আইটি ও ১০ শতাংশ প্রফিট বা লাভ (পূর্বনির্ধারিত) যুক্ত করে নির্ধারণ করেন। ঠিকাদার সোহাগ ১০ শতাংশ লাভ কেন যুক্ত করে দর নির্ধারণ করা হয়েছে, তাঁকে আরও বেশি লাভ দিতে হবে বলে ফোনে প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়াকে জানান। এ কথা বলার পর প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া অফিসে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু কোনো কথা না শুনে ফোনে প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া ও শেখ আবু হায়াতকে গালাগাল ও মারধরের হুমকি দেন সোহাগ। এ অবস্থায় তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ আবু হায়াত বলেন, রোববার বিকেল ৩টার কিছু আগে খানজাহান আলী থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক পরিচয়ে আমাকে ফোন দিয়ে বলে– ‘তুই চেয়ারের পরে বসে সবাইরে ১০ লাখ ২০ লাখ টাকার কাজ দিস। আমাকে দিছিস টেন পারসেন্ট লাভে।’ এই বলে আমাকে যাচ্ছেতাই বলে গালাগাল করেন। পাঁচ মিনিট পর ফোন দিয়ে আমাকে দেখে ছাড়বেন, আমার বাড়ি আক্রমণ করবেন, ফুলবাড়িগেটে গেলে আমাকে দেখে নেবেন– এসব বলে হিুমকি দেন।
নিজের সাংগঠনিক পরিচয় ও প্রকৌশলীকে ফোন দেওয়ার কথা স্বীকার করেন মোল্লা সোহাগ। তবে কোনো ধরনের ঠিকাদারি কাজের সঙ্গে তিনি জড়িত নন বলে দাবি করেন। মোল্লা সোহাগ বলেন, আমার নেতার অর্ডার আছে– আমি কোনো জায়গায় কোনো টেন্ডারেও যাই না, কোনো ঠিকাদারিতেও নেই। আমার কোনো কাজ কুয়েটে চলে না। আমার ট্রেড লাইসেন্সই নেই, কাজ পরের কথা। আমি তাদের (প্রকৌশলী) ফোন দিয়েছিলাম, কথা হয়েছে, তবে কোনো হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়নি।
কোনো কাজ চলছে না, তাহলে প্রকৌশলীদের কার হয়ে ফোন দিয়েছিলেন– এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা আবু হায়াত ও গোলাম কিবরিয়াকে ফোন দিলে ভালোভাবে জানতে পারবেন।’