জাবিতে পোষ্য কোটা সম্পূর্ণ বাতিলের দাবি
Published: 26th, January 2025 GMT
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) আসন্ন ভর্তি পরীক্ষায় পোষ্য কোটা সম্পূর্ণ বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা।
রবিবার (২৬ জানুয়ারি) বিকাল ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন তারা।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মইনুল রাহাত বলেন, “যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে আমাদের জুলাই আন্দোলন শুরু হয়েছিল, সেখানে যদি অযৌক্তিক বৈষম্যমূলক কোটা এখনো বলবৎ থাকে, সেটাকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কখনই মেনে নেবে না। আমরা মনে করি, পোষ্যকোটা আমাদের জুলাই আন্দোলনের স্পিরিটের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। সাধারণ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিয়ে অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এ পোষ্য কোটা বাতিল করতে হবে।”
সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী শামিম আফজাল বলেন, “দেশের ১৮ কোটি মানুষের ট্যাক্সের টাকায় চলা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ লেভেলের বিদ্যাপিঠগুলোতে একটা শ্রেণী অযৌক্তিকভাবে অতিরিক্ত সুবিধা ভোগ করবে, এটা আমরা কখনই দেখতে চাই না। আমরা প্রশাসনকে জানিয়ে দিতে চাই, আমাদের বৈষম্যহীন বাংলাদেশে একটা নির্দিষ্ট শ্রেণিকে পোষ্য কোটা নামক অযৌক্তিক কোটার মাধ্যমে বাংলাদেশের তরুণ মেধাবীদের বৈষম্যের শিকার করা চলবে না।”
ছাত্র অধিকার পরিষদ জাবি শাখার সংগঠক ইয়াসিন আরাফাত রাজু বলেন, “আমাদের জানা মতে, প্রতিটা বিভাগে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ চারজন শিক্ষার্থী পোষ্যকোটায় ভর্তি হতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমাদের প্রশ্ন, তারা এখন পর্যন্ত কেন এ অনায্য নিয়ম জারি রেখেছে? শিক্ষার্থীরা আরো আগে থেকেই এ অনায্য কোটা বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু প্রশাসনের এখন পর্যন্ত টনক নড়ছে না। আমাদের দাবি সুস্পষ্ট, এ অনায্য, অযৌক্তিক পোষ্য কোটা বাতিল হোক।”
সমাপনী বক্তব্যে জাহাঙ্গীরনগর সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়ক ইয়াহিয়া জিসান বলেন, “গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে যখন আমাদের একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ, একটি বৈষম্যহীন ক্যাম্পাস গড়ার কথা, ঠিক তখন আমাদের আবার কোটার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হচ্ছে। এর থেকে পরিতাপের বিষয় আর কি হতে পারে!”
তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে বলা হয়েছিল, সব বিভাগ মিলে সর্বোচ্চ ৩০-৪০ জনের বেশি পোষ্য কোটায় ভর্তি হতে পারে না। অথচ নতুন ব্যবস্থায় যে সুযোগ তৈরি করা হয়েছে, তাতে প্রায় ১৪২ জন শিক্ষার্থী পোষ্য কোটায় ভর্তি হতে পারবে। অর্থাৎ সব মিলিয়ে প্রায় ৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পোষ্য কোটার মাধ্যমে জাবিতে ভর্তি হতে পারবে।”
তিনি আরো বলেন, “পোষ্য কোটায় যারা ভর্তি হয়, তাদের বড় একটি অংশকে আমরা অন্যায়-অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত হতে দেখেছি। বিশ্ববিদ্যালয় বিধান অনুযায়ী পোষ্য কোটাধারীদের হলে থাকার সুযোগ নেই। অথচ তাদের একটি বড় অংশ হলে অবস্থান করে। এজন্য আমরা গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশে আমরা এ পোষ্য কোটা সম্পূর্ণ বাতিল চাই।”
“ইতোমধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা বাতিল হয়েছে। যতদিন পর্যন্ত আমাদের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটার কবর রচনা না হবে, ততদিন পর্যন্ত আমরা শিক্ষার্থীরা এ আন্দোলন অব্যাহত রাখবো,” যুক্ত করেন জিসান।
ঢাকা/আহসান/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
কোটার সুবিধা পাবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা
মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের ছেলে-মেয়েদের পাশাপাশি জুলাই গণঅভ্যুত্থান ২০২৪ এ আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যদেরও সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য কোটা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ-সংক্রান্ত অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের ছেলে-মেয়েদের এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থান ২০২৪ এ আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ৫ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে। মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের ছেলে-মেয়েদের এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থান ২০২৪ এ আহত বা শহীদ পরিবারের সদস্যদের আসন নির্ধারণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রমাণপত্র বা গেজেটের সত্যায়িত কপি আবেদনপত্রের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে এবং ভর্তির সময় মূল কপি দেখাতে হবে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ইস্যু করা মুক্তিযোদ্ধা সনদ বা জুলাই গণঅভ্যুত্থান ২০২৪-এ শহীদদের গেজেট যথাযথভাবে যাচাই করে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে।
তবে মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের ছেলে-মেয়েদের এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থান ২০২৪-এ আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের পাওয়া না গেলে মেধা তালিকা থেকে এই আসনে ভর্তি করতে হবে। কোনো অবস্থায় আসন শূন্য রাখা যাবে না।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই আদেশ বাস্তবায়নের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছে।
আগের নীতিমালায় ভর্তিতে মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের ছেলে ও মেয়েদের জন্য ৫ শতাংশ কোটা ছিল। এখন এই ৫ শতাংশের মধ্যে জুলাই গণঅভ্যুত্থান ২০২৪ এ আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যরাও যুক্ত হবেন।