ডব্লিউইএফ সম্মেলনে বিদেশি বিনিয়োগে গুরুত্ব দিয়েছেন ড. ইউনূস
Published: 26th, January 2025 GMT
সুইজারল্যান্ডের দাভোসে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) এবারের সম্মেলন বাংলাদেশের জন্য ছিল অতি গুরুত্বপূর্ণ। পাঁচ দিনব্যাপী এ সম্মেলনে এবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি ছিল সবার বিশেষ আগ্রহ। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, বিভিন্ন নামি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে তার বৈঠক হয়েছে। তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন ড.
রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
তিনি বলেন, ডব্লিউইএফ সম্মেলন প্রধান উপদেষ্টার প্রতি অতিথিদের একটি বিশেষ আকর্ষণ ছিল। ড. ইউনূস জুলাই অভ্যুত্থান ও দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেছেন। তাদের অবহিত করা হয়েছে- বর্তমানে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের সুবর্ণ সময় যাচ্ছে। তাদের তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। শিগগিরই বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল সুইজারল্যান্ডে যাবেন। আবার শিগগিরই জার্মানের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসবেন। তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। বিদেশি বিনিয়োগের দিকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
শফিকুল আলম বলেন, বিগত সরকারের আমলে যেসব অর্থপাচার হয়েছে, তার একটি অংশ সুইজারল্যান্ডে গিয়েছে। এ বিষয়ে সুইজারল্যান্ডের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। তারা সহযোগিতা করবে বলে জানিয়েছেন। এছাড়া অন্যান্য দেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত দেওয়ার বিষয়েও অধ্যাপক ইউনূস আহ্বান জানিয়েছেন। সবাই সহযোগিতা করবেন বলে জানিয়েছেন। পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকারের একটি।
প্রেস সচিব বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়েও আলোচনা হয়েছে। সে ব্যাপারেও অধ্যাপক ইউনূস পরিষ্কার করেছেন। ফেসবুকে যাতে ভুল তথ্য প্রকাশিত না হতে পারে, সেটা মেটার প্রধান নির্বাহীর কাছে উপস্থাপন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা।
সম্প্রতি ভারতীয় একটি গণমাধ্যমে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সাক্ষাৎকার বিষয়ে এক প্রশ্নের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আসাদুজ্জামান কামাল বাংলাদেশের কসাই। বুচার অব বাংলাদেশ। যারা তার খবরাখবর ছাপেন। তাদের মনটা কেমন আপনারা বোঝেন।’
শফিকুল আলম আরও বলেন, গত অক্টোবর থেকে প্রতি মাসে রপ্তানির পরিমাণ বাড়ছে। কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা বিশৃঙ্খলা করছে। তাদের মালিকরা বিগত সরকারের আমলে ব্যাংক লুট করে বিদেশে পালিয়েছে। তাদের কারণে দুয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটছে। এটা দিয়ে বিদেশি বিনিয়োগের পরিবেশ নেই এটা বলার কোনো সুযোগ নেই।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সরক র র ইউন স র একট
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞ চলছে, বন্ধ মানবিক সহায়তাও
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ঘরবাড়ি ও তাঁবুর মতো আশ্রয়কেন্দ্রও ইসরায়েলি বর্বরতা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের ওপর বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে দখলদার দেশটি। পাশাপাশি আট সপ্তাহ ধরে উপত্যকায় খাদ্য, ওষুধ ও ত্রাণসামগ্রী প্রবেশ বন্ধ করে রেখেছে। এ পরিস্থিতিকে জাতিসংঘ সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকট হিসেবে বর্ণনা করেছে।
আলজাজিরার সংবাদদাতারা জানিয়েছেন, বুধবার রাতভর এবং বৃহস্পতিবার ভোরে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। মধ্য গাজার নুসেইরাতের কাছে একটি তাঁবুতে তিন শিশু এবং গাজা শহরের একটি বাড়িতে এক নারী ও চার শিশু নিহত হয়েছেন। সাম্প্রতিক এক হামলায় স্থানীয় সাংবাদিক সাঈদ আবু হাসানাইনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে কমপক্ষে ২৩২ সাংবাদিক নিহত হলেন।
গাজার দেইর এল-বালাহ থেকে আলজাজিরার তারেক আবু আযুম বলেন, অবরুদ্ধ উপত্যকা স্পষ্টতই ইসরায়েলি সেনা বৃদ্ধি এবং ক্রমবর্ধমান মানবিক সংকটের সাক্ষী হচ্ছে। এখানকার অক্ষত ও আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোও গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। বেশির ভাগ সরঞ্জাম ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় উদ্ধারকারীরাও অসহায় হয়ে পড়েছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়াদের কাছে পৌঁছানোর জন্য তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
অধিকৃত পশ্চিম তীর পরিচালনাকারী ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বলছে, ‘ইসরায়েলের আক্রমণের কোনো বিরতি নেই, কোনো করুণা নেই, কোনো মানবতা নেই।’
প্রায় দুই মাস ধরে ইসরায়েল ত্রাণ সহায়তা অবরোধ করে রাখায় গাজার মানবিক সংকট আরও তীব্র হয়েছে। এটিকে জাতিসংঘের মানবিকবিষয়ক সমন্বয় অফিসের ভারপ্রাপ্ত প্রধান ‘ফিলিস্তিনি জীবনের ইচ্ছাকৃত ধ্বংসাবশেষ’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, গাজা উপত্যকা এখন সম্ভবত ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামলা শুরুর পর ১৮ মাসের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ মানবিক সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অপুষ্টির সম্মুখীন নারী ও শিশুদের বিপজ্জনক ও বিপর্যয়কর ক্ষতির কথা তুলে ধরেছে। তারা অনেকেই পর্যাপ্ত খাবার, পানীয় জল এবং শিশুর খাবারের অভাবের মুখোমুখি হয়েছে। ইসরায়েলের গাজায় সাহায্য পাঠাতে অব্যাহত অস্বীকৃতি ২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক আদালতের একটি আদেশকে লঙ্ঘন করে। সেই আদেশে দুর্ভিক্ষ ও অনাহার রোধে জরুরি ভিত্তিতে উপত্যকায় সাহায্য পৌঁছানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে রাখা নিয়ে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত (আইসিজে) আগামী সপ্তাহে হেগে অনুষ্ঠিত গণশুনানির একটি সূচি প্রকাশ করেছে। সেখানে গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে জাতিসংঘ, এনজিওর কার্যকলাপকে অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে ইসরায়েলের আইনি বাধ্যবাধকতা নিয়ে আলোচনা করা হবে। আগামী সোমবার শুরু হতে যাওয়া এ শুনানির আগে প্রায় ৪৫টি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা লিখিত বিবৃতি জমা দিয়েছে।
হাসপাতাল সূত্র আলজাজিরাকে জানিয়েছে, বুধবার গাজায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৪৫ জন নিহত এবং ১০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত ১৮ মাসে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৫১ হাজার ৩০৫ জন নিহত এবং ১ লাখ ১৭ হাজার ৯৬ জন আহত হয়েছেন।