মুন্সীগঞ্জে ফসলি জমির ওপর দিয়ে বৈদ্যুতিক লাইন নির্মাণ বন্ধের দাবি
Published: 26th, January 2025 GMT
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলায় তিন ফসলি জমির উপর দিয়ে ২৩০/১৩২ কেভি বৈদ্যুতিক লাইন নির্মাণ বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন করেছে ভুক্তভোগী জমি মালিকরা।
রবিবার (২৬ জানুয়ারি) বিকাল সাড়ে ৩টায় গজারিয়া উপজেলার ভাটেরচর নতুন রাস্তা এলাকায় মানববন্ধনে ভুক্তভোগী জমির মালিক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা অংশ নেন।
ভুক্তভোগী জমি মালিক মমতাজ বেগম বলেন, ‘‘শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য সরকার বৈদ্যুতিক লাইন নিচ্ছে, সেখানে আমাদের আপত্তি নেই। আমাদের দাবি, বৈদ্যুতিক লাইনটা অন্য জায়গা দিয়ে নির্মাণ করা হোক।’’
আরো পড়ুন:
বিদ্যুৎ খাতে অতিরিক্ত ৩৬৭ কোটি টাকা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক
পটুয়াখালী তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু
ভুক্তভোগী জমি মালিক তানভীর হোসেন জানান, এই জায়গা দিয়ে বৈদ্যুতিক লাইন নির্মাণ করা হলে কম করে হলেও তিনশত কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অনেকের তিন ফসলি জমির উপর দিয়ে লাইনটি যাচ্ছে। কৃষিকাজ করে যারা জীবিকা নির্বাহ করে তারাও আর্থিক দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আরেক ভুক্তভোগী জমি মালিক কোহিনুর বেগম বলেন, ‘‘আমার জমির উপর দিয়ে বৈদ্যুতিক লাইন যাচ্ছে না তারপরও আমি মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছি। আমি শুনেছি, জমিতে বৈদ্যুতিক লাইনের জন্য টাওয়ার নির্মাণ করা হয়, সে জমির আশপাশের জমি কেউ কিনতে চায় না। এই জমিতে বাড়ি ঘর নির্মাণ করা হলে ভাড়াটিয়া পাওয়া যায় না। এই জায়গা দিয়ে লাইন নির্মাণ করা হলে আমরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হব। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি বিনীত অনুরোধ আপনারা লাইনটি অন্য জায়গা দিয়ে নির্মাণ করুন।’’
মেঘনা ঘাট এলাকার পাওয়ার প্লান্ট থেকে কুমিল্লার মেঘনা উপজেলায় নির্মাণাধীন একটি বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহের ২৩০/১৩২ কেভি ফোর সার্কিট সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করছে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)। তবে প্রস্তাবিত অ্যালাইনমেন্ট অনুযায়ী লাইন নির্মাণ করলে গজারিয়া উপজেলার কয়েকশত কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এদিকে বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যুৎ বিধিমালা ২০২০ অনুযায়ী ২৩০ কেভি বৈদ্যুতিক লাইনের উন্মুক্ত তার হতে ন্যূনতম নিরাপদ দূরত্ব ৪.
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)-এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ডিজাইন এন্ড কোয়ালিটি কন্ট্রোল (ট্রান্সমিশন লাইন) সরদার মোহাম্মদ জাফরুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি একটু ব্যস্ত আছি, আপনার সঙ্গে পরে কথা বলব।’’ পরবর্তীতে তাকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
গত ১৩ জানুয়ারি একই দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছিল ভুক্তভোগী জমির মালিকেরা।
ঢাকা/রতন/বকুল
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
জবি শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রদল কর্মীর নেতৃত্বে হামলার অভিযোগ, প্রতিবাদে বিক্ষোভ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা এ বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করে দ্রুত বিচার দাবি করেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা হলেন, জবির রসায়ন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আকাশ আলী, তামান্না তাবাসসুম ও আবুল বাসার। অপরদিকে, হামলার নেতৃত্ব দেওয়া অভিযুক্ত ছাত্রদল কর্মী অনিক কুমার দাশ মার্কেটিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ।
এর আগে, গতকাল বুধবার (২৯ জানুয়ারি) জবির কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মার্কেটিং বিভাগের দুই শিক্ষার্থী জুতা পায়ে উঠলে রসায়ন বিভাগের দুই শিক্ষার্থী তার প্রতিবাদ করে। এতে তাদের ওপর হামলা চালায় মার্কেটিং বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী।
এ হামলার নেতৃত্ব দেন জবি ছাত্রদল কর্মী ও মার্কেটিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী অনিক কুমার দাশ। এতে আরো যুক্ত ছিলেন, মাহফুজুর রহমান চৌধুরী মাহী, আয়ান, আরিফ, রাতুল, আসিফসহ আরো ১৫ জন।
এ হামলার প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, গত ৫ আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশে আমরা আর কোন দমন-পীড়ন বরদাস্ত করব না। আর কাউকে ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠার সুযোগ দেওয়া হবে না। এর আগের হামলাগুলোর ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে আজ আমাদের এখানে দাঁড়াতে হত না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এসব ঘটনার দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করুক। আমরা এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
রসায়ন বিভাগের ভুক্তভোগী নারী শিক্ষার্থী ২০২০ -২০২১ সেশনের তামান্না তাবাসসুম বলেন, “আমরা প্রক্টরের কাছে গিয়েছিলাম। তারা আমাদের কোন সহযোগিতা করেনি। আমরা তাহলে কার কাছে যাব? আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।”
একই বিভাগের শিক্ষার্থী আকরাম হোসেন বলেন, “গতকালের ঘটনার পর আমরা প্রক্টরের কাছে যাওয়ার পর তিনি আমাদের বলেন, ২০০৫ সালের নীতিমালা পড়ার জন্য। এ বিষয়ে তারা কি পদক্ষেপ নেবে, সে ব্যাপারে তিনি আমাদের কিছু জানাতে পারেননি। বরং আমাদের বিভাগের শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। যদি এ ঘটনায় প্রশাসন কোন ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে আমরা প্রশাসন ও যে দলের প্রশ্রয়ে এ ঘটনা ঘটেছে, তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন গড়ে তুলবে। সেই সঙ্গে আমরা ক্লাস বর্জনের ডাক দেব।”
আব্দুল কাহহার জামিল বলেন, “গতকালের ঘটনায় প্রক্টর স্যার আমাদের কোন খোঁজ নেননি। রাত ১০টার পর একজন সহকারী প্রক্টরকে পাঠান। তিনি চিকিৎসার জন্য কিছু টাকা দেন। কিন্তু প্রক্টর স্যারের সঙ্গে আমরা কথা বলতে গেলে তিনি দুর্ব্যবহার করেন। গত ১ বছরে আামদের বিভাগের শিক্ষার্থীরা তিনটি হামলার অভিযোগ করলেও সুষ্ঠু বিচার পাননি। যদি ওই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হত, তাহলে আজ আমাদের এখানে দাঁড়াতে হত না। আমরা এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”
তিনি বলেন, “বিচারের নামে টালবাহানা করা হয়। আমাদের প্রক্টর অফিস থেকে ভয় দেখিয়ে অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়। এছাড়া আমাদের নানা হুমকি দিয়ে ভয় দেখনো হয়। বলা হয়, যদি ক্যাম্পাসের বাইরে কেউ হামলা করে, তাহলে সে দায় প্রক্টর অফিস নেবে না।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, “সবকিছুর জন্য সময় দরকার। রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা যেভাবে বিচার চাচ্ছে, সেটা এত দ্রুত সম্ভব না। আগের একটা কমিটি আছে, সে কমিটির কাছেই আমি এটার তদন্ত হস্তান্তর করেছি।”
তিনি বলেন, “হ্যাঁ, আমি তাদের ২০০৫ সালের নীতিমালা পড়তে বলেছি। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামীকাল ভর্তি পরীক্ষা আছে। সব মিলিয়ে ব্যস্ততার মধ্যে আছি।”
ঢাকা/লিমন/মেহেদী