ইয়াংগুন-টেকনাফ সীমান্তে বাণিজ্য বন্ধ রেখেছে মিয়ানমার
Published: 26th, January 2025 GMT
ইয়াংগুন থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরের সীমান্ত বাণিজ্য সাময়িকভাবে বন্ধ করেছে মিয়ানমার সরকার। দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি মিয়ানমারের ইয়াংগুন থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে আসার পথে পণ্যবাহী কার্গো বোট আটকে রাখায় জান্তা সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া টেকনাফ স্থলবন্দর উদ্দেশে রওনা দেওয়া একটি হিমায়িত মাছের বোট আকিয়াব থেকে মিয়ানমারে ফেরত যেতে বাধ্য হয়েছে।
একাধিক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে। যদিও এর আগে গতকাল শনিবার মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম বর্ডার নিউজ এজেন্সিও মিয়ানমার সরকার ইয়াংগুন-টেকনাফ স্থলবন্দরের সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ করার খবর প্রকাশ করে।
এদিকে গত ১৬ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) দুপুরে মিয়ানমারের ইয়াংগুন থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরে আসার পথে বাংলাদেশ-মিয়ানমার নাফ নদের জলসীমা নাইক্ষ্যংদিয়ায় তল্লাশির কথা বলে পণ্যবাহী তিনটি বোট আটকে দেয় আরাকান আর্মি। পরে চার দিন পর গত সোমবার পণ্যবাহী দুটি কার্গো বোট ছেড়ে দিলেও এখনও পণ্যবাহী একটি কার্গো বোট দশ আরাকান আর্মির হেফাজতে রয়েছে। অপরদিকে মিয়ানমারের রাখাইনে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সড়কপথে বাণিজ্য বন্ধ রেখেছে জান্তা সরকার। যার প্রতিক্রিয়া হিসেবে এই নৌরুটে আরাকান আর্মি হস্তক্ষেপ করছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
‘আরাকান আর্মি কমিশন বন্ধ চায়’
এ বিষয়ে কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, ‘ইতোমধ্য ইয়াংগুন থেকে টেকনাফ সীমান্ত বাণিজ্য পণ্যবাহী বোটের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে জান্তা সরকার। কারণ, ইয়াংগুন থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে আসার পথে পণ্যবাহী থেকে আরাকান আর্মি ‘কমিশন’ নিচ্ছে। সেটি রোধ করতে সাময়িকভাবে পণ্যবাহী বন্ধ রেখেছে দেশটির সরকার। এতে দুই দেশে ব্যবসার ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়বে। তাই নিজেদের স্বার্থে এর থেকে উত্তোলনের রেহাই পেতে দুই দেশের আন্তরিক হওয়া দরকার। না হলে ব্যবসায়ীদের ব্যাপক লোকসানে পড়তে হবে।’
অন্যদিকে এক ব্যবসায়ীর বরাত দিয়ে মিয়ানমারের বর্ডার নিউজ এজেন্সি বলছে, ‘আরাকান আর্মির হাতে আটক পণ্যবাহী কার্গোটি দেশটির প্রভাবশালী উ কিয়াউক তাউংয়ে। তার সঙ্গে দেশটির সেনা কর্মকর্তার সু-সর্ম্পক রয়েছে। তার অনুরোধে জান্তা সরকার সম্ভবত ইয়াংগুন থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরের সীমান্ত বাণিজ্য সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছে। এর কারণে মিয়ানমার থেকে টেকনাফের উদ্দেশে রওনা দেয়া মাছে বোট মাঝপথ থেকে ফেরত যেতে বাধ্য হয়েছে। যাতে আরাকান আর্মিও এ ধরনের কার্যক্রম থেকে দূরে থাকে। যাতে তাদের (আরাকান আর্মি) এ অবৈধ আয় বন্ধ থাকে।’
বন্দরে আসা মাছের বোট, মাঝপথ থেকে ফেরত
স্থলবন্দর ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত মঙ্গলবার ইয়াংগুন থেকে একটি মাছের বোট টেকনাফ স্থলবন্দরের উদ্দেশে রওনা দেয়। পরে সেটি আকিয়াব পৌছলে সেদেশের সরকার বোটটি আবার ফেরত যেতে বাধ্য করে। এই বোটে ইলিশসহ প্রায় ১০০ টন মাছ ছিল। এসব মাছ টেকনাফের স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী মো.
এ বিষয়ে মাছ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স সুফিয়া এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী এম কায়সার জুয়েল বলেন, ‘ইয়াংগুন থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে আসা একটি মাছের বোট আবার ফেরত গেছে। সেখানে আমারসহ আরও অনেকের মাছ ছিল। কিন্তু কী কারণে ফেরত গেছে সেটি পরিষ্কার না। তবে আমি শুনেছি ইয়াংগুন থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে পণ্যবাহী বোট আসা আপতত স্থগিত রয়েছে।’
কয়েকদিন টেকনাফ স্থলবন্দরে পণ্যবাহী বোট আসা বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স জিন্না অ্যান্ড ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী শওকত আলী চৌধুরী। তিনি ইয়াংগুনের ব্যবসায়ীদের বরাত দিয়ে বলেন, ‘আপতত কিছুদিন সেখান থেকে পণ্যবাহী বোট আসবে না। একটি মাছের বোট আসার কথা ছিল, সেটিও আর আসতে পারছে না। সেখানকার কিছু সমস্যার কারণে সামায়িকভাবে এ সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।’
ব্যবসার কাজে ইয়াংগুন সফরকারী ব্যবসায়ী মো. ফারুক আলম মুঠোফোনে সমকালকে বলেন, ‘আমাদের একটি মাছে বোট আবার এখানে (ইয়াংগুনে) ফেরত এসেছে। মূলত ইয়াংগুন থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে আসার পথে পণ্যবাহী কার্গো বোট আটকের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে ব্যবসায়ীদের মাঝে খুব আতঙ্ক কাজ করছে।’
এদিকে রোববার সকালে আরাকান আর্মির দখলে থাকা রাখাইন থেকে দুটি বোট টেকনাফ স্থলবন্দরে পৌছেছে। এ বোটে করে রাখাইন মংডুতে বাংলাদেশ থেকে সিমেন্ট যাওয়ার কথা রয়েছে।
মংডু থেকে আসা এক বোটের মো. জামাল মাঝি বলেন, ‘আসার পথে খালে পণ্যবাহী একটি কার্গো বোট দেখেছি। সেখানে তল্লাশি করছে আরাকান আর্মি। এটি কবে ছেড়ে দেবে সেটি আমার পক্ষে বলা সম্ভব না।’
জানতে চাইলে টেকনাফ স্থলবন্দর পরিচালনাকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট টেকনাফ লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক জসিম উদ্দিন চৌধুরী ব্যবসায়ীদের বরাত দিয়ে বলেন, ‘ইয়াংগুন থেকে টেকনাফ সীমান্ত বাণিজ্য পণ্যবাহী বোটের ওপর বিধিনিষেধের কথা শোনা যাচ্ছে, সেটি সমাধানের প্রক্রিয়াও চলছে। আর আরাকান আর্মির হেফাজতে থাকা পণ্যবাহী কার্গো বোটটি খুব দ্রুত মুক্তি পাবে বলে আশা করছি।’
এ প্রসঙ্গে টেকনাফ স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হক বাহাদুর বলেন, ‘ইয়াংগুন থেকে টেকনাফ পণ্যবাহী বোট বন্ধের বিষয়টি আমিও বিভিন্নভাবে শুনছি। কিন্তু সেটি সেদেশের সরকারের সিদ্ধান্ত কিনা সেটি আমার জানা নেই। এ বিষয়ে আমরা সেদেশের ব্যবসায়ীরে কাছ থেকে জানার চেষ্টা করছি।’
তিনি বলেন, ‘দশ দিন পার হয়ে গেলেও এখনও আরাকান আর্মির হেফাজতে থাকা একটি পণ্যবাহী কার্গো বোটটি ছাড়েনি।’
টেকনাফ কাস্টমসের কর্মকর্তা মো. সোহেল উদ্দীন বলেন, ‘আরাকান আর্মি তল্লাশির নামে পণ্যবাহী কার্গো বোট এখনও ছাড়েনি। সেটি কবে ছেড়ে দেবে সেটি বলা মুশকিল। আর ইয়াংগুন থেকে বোট না ছাড়ার বিষয়টি আমার জানা নেই।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আর ক ন আর ম র হ ব যবস য় দ র র ব যবস য় ব যবস য় র র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
বিজিএমইএ নির্বাচনে ৬৯০ ভুয়া ভোটার
তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএর পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনে ভোট গ্রহণ আগামী ১ জুন। এ জন্য নির্বাচন পরিচালনা ও আপিল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। চলছে ভোটার তালিকা যাচাই-বাছাইয়ের কাজ। ইতোমধ্যে ৬৯০ ভুয়া ভোটার শনাক্ত করে তাদের ভোটাধিকার বাতিল করা হয়েছে। সূত্র জানায়, বিজিএমইএর মেম্বারশিপ ফাইল অডিট এবং ভেরিফিকেশনে ভুয়া ভোটার শনাক্ত হয়। ভুয়া শনাক্ত সদস্যদের মধ্যে ঢাকা অঞ্চলে ৫৮২ এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলে ১০৮ জন। এখন প্রকৃত ভোটারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮০৬।
গত নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৪৯৬। পর্যালোচনার কাজ এখনও শেষ হয়নি বলে সূত্র জানিয়েছে। অবশ্য গত ২৯ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেছেন বিজিএমইএর ১০ সদস্য। এতে ১৪ লাখ টাকার বিনিময়ে প্রশাসকের নিয়োগ করা হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোং অডিট ফার্মের বিজিএমইএর মেম্বারশিপ ফাইল অডিট ও ভেরিফিকেশন কার্যক্রম স্থগিত করা এবং বিজিএমইএর সদস্যপদ নবায়নের নতুন নিয়মের স্থগিতাদেশ চাওয়া হয়। রিটটি শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। এর মধ্যেই ভুয়া ভোটার শনাক্ত করার কাজটি হয়েছে।
দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া বিজিএমইএ নির্বাচনে দুটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে থাকে। একটি সম্মিলিত পরিষদ এবং অপরটি ফোরাম। দল নিরপেক্ষ বলা হলেও গত ১৬ বছর সম্মিলিত পরিষদে আওয়ামী লীগের প্রাধান্য ছিল। কিছুটা আওয়ামীবিরোধী শিবির হিসেবে বিবেচনা করা হয় ফোরামকে। গত নির্বাচনের আগে ৭৯২ ভুয়া ভোটার থাকার অভিযোগ করা হয় ফোরামের পক্ষ থেকে। শর্ত অনুযায়ী, ভোটার হতে নিয়মিত আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হয়। তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যে দেখা যায়, অভিযুক্তদের রিটার্ন হালনাগাদ নয়। অভিযোগের ভিত্তিতে সে সময়কার নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড ৬৭ জনের ভোটাধিকার বাতিল করে। বাকিদের ভোটাধিকার বহাল ছিল। নির্বাচনে সম্মিলিত পরিষদ নিরঙ্কুশ বিজয় পায়। প্যানেল লিডার এস এম মান্নান কচি সভাপতি নির্বাচিত হন।
অবশ্য গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর সমঝোতার ভিত্তিতে সিনিয়র সহসভাপতি রফিকুল ইসলামকে সভাপতি করা হয়। এতেও ফোরাম আপত্তি থাকায় পর্ষদ ভেঙে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়। বিজিএমইএর নির্বাচিত পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার পর ১২০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং নির্বাচিতদের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তরে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনকে প্রশাসক নিয়োগ করে সরকার। নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব না হওয়ায় গত ১১ ফেব্রুয়ারি আরও চার মাস প্রশাসকের মেয়াদ বাড়ানো হয়। আগামী ১৬ জুন তাঁর বর্ধিত মেয়াদ শেষ হবে।
সংগঠনের প্রতিদিনকার কার্যক্রম পরিচালনা এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশাসককে সহায়তার উদ্দেশ্যে একটি সহায়ক কমিটি রয়েছে। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি এ কমিটির বৈঠকে নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড এবং আপিল বোর্ড গঠন করা হয়। জানা গেছে, নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয়েছে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইকবালকে। ল ফার্ম সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের ব্যবস্থাপনা অংশীদার ব্যারিস্টার সৈয়দ আফজাল হাসান উদ্দিন এবং ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আশরাফ আহমেদ এ বোর্ডের সদস্য করা হয়েছে।
অন্যদিকে নির্বাচন আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয়েছে এপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুরকে। এ বোর্ডের দুই সদস্য হয়েছেন বার্জার পেইন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রূপালী হক চৌধুরী এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব এ এন এম কুদরত-ই-খু্দা। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বিজিএমইএর সহায়ক কমিটির বৈঠকে নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড এবং আপিল বোর্ড গঠন করা হয়।
নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইকবাল গতকাল সমকালকে বলেন, দায়িত্ব নিয়েছেন তারা। আজ সোমবার বোর্ডের প্রথম বৈঠক হবে। একটা সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ সম্পর্কে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হবে। ভুয়া ভোটারের বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তিনি শুনেছেন। তবে বিস্তারিত এখনও জানেন না।