ইয়াংগুন থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরের সীমান্ত বাণিজ্য সাময়িকভাবে বন্ধ করেছে মিয়ানমার সরকার। দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি মিয়ানমারের ইয়াংগুন থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে আসার পথে পণ্যবাহী কার্গো বোট আটকে রাখায় জান্তা সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া টেকনাফ স্থলবন্দর উদ্দেশে রওনা দেওয়া একটি হিমায়িত মাছের বোট আকিয়াব থেকে মিয়ানমারে ফেরত যেতে বাধ্য হয়েছে।

একাধিক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে। যদিও এর আগে গতকাল শনিবার মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম বর্ডার নিউজ এজেন্সিও মিয়ানমার সরকার ইয়াংগুন-টেকনাফ স্থলবন্দরের সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ করার খবর প্রকাশ করে।

এদিকে গত ১৬ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) দুপুরে মিয়ানমারের ইয়াংগুন থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরে আসার পথে বাংলাদেশ-মিয়ানমার নাফ নদের জলসীমা নাইক্ষ্যংদিয়ায় তল্লাশির কথা বলে পণ্যবাহী তিনটি বোট আটকে দেয় আরাকান আর্মি। পরে চার দিন পর গত সোমবার পণ্যবাহী দুটি কার্গো বোট ছেড়ে দিলেও এখনও পণ্যবাহী একটি কার্গো বোট দশ আরাকান আর্মির হেফাজতে রয়েছে। অপরদিকে মিয়ানমারের রাখাইনে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সড়কপথে বাণিজ্য বন্ধ রেখেছে জান্তা সরকার। যার প্রতিক্রিয়া হিসেবে এই নৌরুটে আরাকান আর্মি হস্তক্ষেপ করছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

‘আরাকান আর্মি কমিশন বন্ধ চায়’

এ বিষয়ে কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, ‘ইতোমধ্য ইয়াংগুন থেকে টেকনাফ সীমান্ত বাণিজ্য পণ্যবাহী বোটের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে জান্তা সরকার। কারণ, ইয়াংগুন থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে আসার পথে পণ্যবাহী থেকে আরাকান আর্মি ‘কমিশন’ নিচ্ছে। সেটি রোধ করতে সাময়িকভাবে পণ্যবাহী বন্ধ রেখেছে দেশটির সরকার। এতে দুই দেশে ব্যবসার ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়বে। তাই নিজেদের স্বার্থে এর থেকে উত্তোলনের রেহাই পেতে দুই দেশের আন্তরিক হওয়া দরকার। না হলে ব্যবসায়ীদের ব্যাপক লোকসানে পড়তে হবে।’

অন্যদিকে এক ব্যবসায়ীর বরাত দিয়ে মিয়ানমারের বর্ডার নিউজ এজেন্সি বলছে, ‘আরাকান আর্মির হাতে আটক পণ্যবাহী কার্গোটি দেশটির প্রভাবশালী উ কিয়াউক তাউংয়ে। তার সঙ্গে দেশটির সেনা কর্মকর্তার সু-সর্ম্পক রয়েছে। তার অনুরোধে জান্তা সরকার সম্ভবত ইয়াংগুন থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরের সীমান্ত বাণিজ্য সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছে। এর কারণে মিয়ানমার থেকে টেকনাফের উদ্দেশে রওনা দেয়া মাছে বোট মাঝপথ থেকে ফেরত যেতে বাধ্য হয়েছে।  যাতে আরাকান আর্মিও এ ধরনের কার্যক্রম থেকে দূরে থাকে। যাতে তাদের (আরাকান আর্মি) এ অবৈধ আয় বন্ধ থাকে।’

বন্দরে আসা মাছের বোট, মাঝপথ থেকে ফেরত

স্থলবন্দর ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত মঙ্গলবার ইয়াংগুন থেকে একটি মাছের বোট টেকনাফ স্থলবন্দরের উদ্দেশে রওনা দেয়। পরে সেটি আকিয়াব পৌছলে সেদেশের সরকার বোটটি আবার ফেরত যেতে বাধ্য করে। এই বোটে ইলিশসহ প্রায় ১০০ টন মাছ ছিল। এসব মাছ টেকনাফের স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী মো.

কায়ছার জুয়েল, ওমর ফারুক, শওকত আলম ও মোহাম্মদ ফারুকসহ অনেকের মাছ ছিল।

এ বিষয়ে মাছ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স সুফিয়া এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী এম কায়সার জুয়েল বলেন, ‘ইয়াংগুন থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে আসা একটি মাছের বোট আবার ফেরত গেছে। সেখানে আমারসহ আরও অনেকের মাছ ছিল। কিন্তু কী কারণে ফেরত গেছে সেটি পরিষ্কার না। তবে আমি শুনেছি ইয়াংগুন থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে পণ্যবাহী বোট আসা আপতত স্থগিত রয়েছে।’
 
কয়েকদিন টেকনাফ স্থলবন্দরে পণ্যবাহী বোট আসা বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স জিন্না অ্যান্ড ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী শওকত আলী চৌধুরী। তিনি ইয়াংগুনের ব্যবসায়ীদের বরাত দিয়ে বলেন, ‘আপতত কিছুদিন সেখান থেকে পণ্যবাহী বোট আসবে না। একটি মাছের বোট আসার কথা ছিল, সেটিও আর আসতে পারছে না। সেখানকার কিছু সমস্যার কারণে সামায়িকভাবে এ সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।’

ব্যবসার কাজে ইয়াংগুন সফরকারী ব্যবসায়ী মো. ফারুক আলম মুঠোফোনে সমকালকে বলেন, ‘আমাদের একটি মাছে বোট আবার এখানে (ইয়াংগুনে) ফেরত এসেছে। মূলত ইয়াংগুন থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে আসার পথে পণ্যবাহী কার্গো বোট আটকের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে ব্যবসায়ীদের মাঝে খুব আতঙ্ক কাজ করছে।’

এদিকে রোববার সকালে আরাকান আর্মির দখলে থাকা রাখাইন থেকে দুটি বোট টেকনাফ স্থলবন্দরে পৌছেছে। এ বোটে করে রাখাইন মংডুতে বাংলাদেশ থেকে সিমেন্ট যাওয়ার কথা রয়েছে।

মংডু থেকে আসা এক বোটের মো. জামাল মাঝি বলেন, ‘আসার পথে খালে পণ্যবাহী একটি কার্গো বোট দেখেছি। সেখানে তল্লাশি করছে আরাকান আর্মি। এটি কবে ছেড়ে দেবে সেটি আমার পক্ষে বলা সম্ভব না।’

জানতে চাইলে টেকনাফ স্থলবন্দর পরিচালনাকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট টেকনাফ লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক জসিম উদ্দিন চৌধুরী ব্যবসায়ীদের বরাত দিয়ে বলেন, ‘ইয়াংগুন থেকে টেকনাফ সীমান্ত বাণিজ্য পণ্যবাহী বোটের ওপর বিধিনিষেধের কথা শোনা যাচ্ছে, সেটি সমাধানের প্রক্রিয়াও চলছে। আর আরাকান আর্মির হেফাজতে থাকা পণ্যবাহী কার্গো বোটটি খুব দ্রুত মুক্তি পাবে বলে আশা করছি।’

এ প্রসঙ্গে টেকনাফ স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হক বাহাদুর বলেন, ‘ইয়াংগুন থেকে টেকনাফ পণ্যবাহী বোট বন্ধের বিষয়টি আমিও বিভিন্নভাবে শুনছি। কিন্তু সেটি সেদেশের সরকারের সিদ্ধান্ত কিনা সেটি আমার জানা নেই। এ বিষয়ে আমরা সেদেশের ব্যবসায়ীরে কাছ থেকে জানার চেষ্টা করছি।’

তিনি বলেন, ‘দশ দিন পার হয়ে গেলেও এখনও আরাকান আর্মির হেফাজতে থাকা একটি পণ্যবাহী কার্গো বোটটি ছাড়েনি।’

টেকনাফ কাস্টমসের কর্মকর্তা মো. সোহেল উদ্দীন বলেন, ‘আরাকান আর্মি তল্লাশির নামে পণ্যবাহী কার্গো বোট এখনও ছাড়েনি। সেটি কবে ছেড়ে দেবে সেটি বলা মুশকিল। আর ইয়াংগুন থেকে বোট না ছাড়ার বিষয়টি আমার জানা নেই।’  

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আর ক ন আর ম র হ ব যবস য় দ র র ব যবস য় ব যবস য় র র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

শেখ হাসিনার ফাঁসির দাবিতে চট্টগ্রামে অনশনে বৈষম্যবিরোধীরা

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ জড়িত সবার ফাঁসির দাবিতে অনশন করছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর জামালখানে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে এ অনশন শুরু করেন তারা। পরে প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে অবস্থান নেন। রাত সাড়ে ৮টা এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অনশন চলছিল। এর আগে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ করেন তারা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য রাসেল আহমেদ বলেন, ‘বিপ্লবের ছয়মাস পূরণ হতে যাচ্ছে। আমরা এখনও এ সরকারের কাছে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখতে পাইনি। আমাদের ভাইদের রক্ত এখনও রাজপথে লেগে আছে। আমি এখানে বসলাম, যতক্ষণ পর্যন্ত সরকার কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেবে না আমরা এখান থেকে উঠব না। আমাদের লড়াই চলছে, চলবে। আমরা আমাদের আমরণ অনশন চালিয়ে যাব। আমরা বিচার চাই। বিচার ছাড়া কোনো কথা নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ সরকার আমাদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে ক্ষমতায় বসেছে। ইউনূস সরকার কি করে। খুনি বাইরের দেশে বসে আছে। তাদের ধরে এনে ফাঁসির দড়িতে ঝুলাতে হবে। এটাই আমাদের শেষ কথা।’ 

রাসেল আহমেদ বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে যেভাবে ফ্যাসিবাদী কাঠামো গড়ে উঠেছিল, সেটাকে ভেঙে দিয়ে খুনি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আমরা রাজপথে নেমে এসেছিলাম। এখন পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে আমরা ন্যূনতম সংস্কার ও বিচার পাইনি। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আমাদের দুই হাজারের অধিক ভাই জীবন দিয়েছে। তারা রাজপথে সাহসিকতার সঙ্গে আওয়ামী লীগের পেটোয়া বাহিনী প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল।’

রাসেল আরও বলেন, ‘স্বাধীনতার পর এখনও আমাদের খুনি হাসিনা, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের বিচারের দাবিতে রাজপথে নামতে হয়। আমাদের এ মুক্ত বাতাসে এখনও লাশের গন্ধ ভেসে বেড়ায়। বারবার আমাদের তাদের বিচারের দাবিতে আওয়াজ তুলতে হচ্ছে। এ অন্তর্বর্তী সরকারকে সেসব খুনিদের বিচার করার জন্যই ক্ষমতায় বসানো হয়েছে। আজও ছাত্রলীগ-যুবলীগের গুণ্ডাবাহিনী বীর চট্টলার বুকে মিছিল করেছে। খুনি হাসিনাসহ আমাদের ভাইদের যারা খুন করেছে, তাদের বিচার ও ফাঁসি না হওয়া পর্যন্ত আমরা এখানে এখন থেকেই আমরণ অনশন পালন করব।’ 

আজ বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) শাকিলা সোলতানা বলেন, ‘এখনো তারা সড়কে আছেন। তাদের দাবি দাওয়া নিয়ে আলোচনা চলছে।’ 

অনশনকারীদের অন্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- দ্রুত বিচার আইনে বিভাগীয় ট্রাইব্যুনাল গঠন করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডে জড়িত ও উস্কানিদাতাদের গ্রেপ্তার-বিচার করা, শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত এনে বিচার করা, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষণা করা, সব হত্যা, গুম, খুন, ধর্ষণ, অপরাধ ও নির্যাতনের বিচার করা, আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা, আওয়ামী লীগ নেতাদের অবৈধভাবে অর্জিত সব অর্থ ও সম্পদ রাষ্ট্রীয়ভাবে বাজেয়াপ্ত করা, বিদেশে পাচার করা অর্থ ফেরত আনা, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের জীবনের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে গ্রহণ করতে হবে ও নতুন সংবিধান প্রণয়ন করাসহ রাষ্ট্রের যাবতীয় গণতান্ত্রিক সংস্কারের রূপরেখা প্রদান করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এক সপ্তাহেও তদন্তে নেই কোনো অগ্রগতি
  • এই চিঠি পোস্ট করা হয়নি
  • গাজা: যুদ্ধবিরতি এলো মানুষগুলো ফিরল না
  • শেখ হাসিনার ফাঁসির দাবিতে চট্টগ্রামে অনশনে বৈষম্যবিরোধীরা
  • পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেইনি: নাহিদ ইসলাম
  • আখাউড়া দিয়ে ভারত থেকে এল আরও পাঁচ টন মসুর ডাল
  • আখাউড়ায় দুই ভারতীয় নাগরিক আটক
  • কেরানীগঞ্জে বন্ধ হয়নি চাঁদাবাজি, শুধু হাত বদলেছে: সারজিস আলম
  • ক্রিকেটারদের চেক বাউন্স, ম‌্যানেজার বললেন, ‘আমি এখনও পাইনি টাকা’