যশোরে বায়েজিদ হত্যা: বিএনপি নেতা মুল্লুক চাঁনের বিরুদ্ধে চার্জশিট
Published: 26th, January 2025 GMT
যশোরে ইঞ্জিনিয়ার বায়েজিদ হাসান হত্যা মামলায় নগর বিএনপির সভাপতি ও ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম চৌধুরী ওরফে মুল্লুক চাঁনসহ ছয়জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।
মামলার তদন্ত শেষে আদালতে এ চার্জশিট জমা দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের এসআই শরীফ আল মামুন। অভিযুক্ত অন্য আসামিরা হলেন, শহরের গাড়িখানা রোডের পাওয়ার হাউজ মোড়ের শাহ আলম, শাহ আব্দুল করিম রোডের আলী মন্টু, লোন অফিস পাড়ার জসিম উদ্দিন, মণিরামপুরের আগরহাটি গ্রামের শহিদুল ইসলাম ও লউড়ি গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমান খোকা।
হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ না পাওয়ায় রকিবুল ইসলাম চৌধুরী ওরফে সঞ্জয় চৌধুরী, রাজু আহম্মেদ, আব্দুর রহমান রাজন ও জসিম মোল্যার অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে চার্জশিটে। চার্জশিটে অভিযুক্ত সকল আসমিকে আটক দেখানো হয়েছে।
আরো পড়ুন:
খুবির অর্ণবের মা, ‘বুকে ফিরে আয় আমার বাবা’
তিন সাঁওতাল হত্যা: সাবেক এমপিসহ আসামিদের গ্রেপ্তার দাবিতে সমাবেশ
নগর বিএনপির সভাপতি মুল্লুক চাঁনকে অভিযুক্ত করায় জেলা বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, মুল্লুক চাঁনকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শরীফ আল মামুন জানান, অভিযুক্ত ছয়জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করলেও ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ না পাওয়ায় সঞ্জয় চৌধুরীসহ চারজনের অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে।
বিএনপি নেতাকর্মীরা দাবি করছেন, এ মামলায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চালানো হচ্ছে এবং মুল্লুক চাঁনের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। তারা আশা করছেন, সত্য উদঘাটন হবে এবং মুল্লুক চাঁন নিরপরাধ প্রমাণিত হবেন।
মামলার অভিযোগ করা হয়েছে, বায়েজিদ হাসান খুলনার সোনাডাঙ্গা থানার হাজী ইসমাইল লিংক রোডের আল আমিন মহল্লার মৃত শিকদার নজরুল ইসলামের ছেলে। তিনি মুল্লুক চাঁদ ও সঞ্জয় চৌধুরীর ঢাকার অফিসে কাজ করতেন। ২০২৪ সালের ১৫ মার্চ বায়েজিদ ও তার স্ত্রী ঢাকা থেকে খুলনার বাড়িতে আসেন। ২৪ মার্চ দুপুরে মুল্লুক চাঁদের কর্মচারি শহিদুল ইসলাম, রাজু ও রাজনসহ অপরিচিত কয়েকজন বায়েজিদের বাড়িতে যান এবং পাওনা ৫ লাখ ৫৪ হাজার টাকা দাবি করেন। ওই টাকার জন্য তাকে খুলনা থেকে যশোর নিয়ে আসেন তারা। এরপর টাকা আদায়ের জন্য বায়েজিদকে মারপিট করা হয়। অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসা না দিয়ে ঘরে ফেলে রাখা হয়। পরে বায়েজিদ মারা যায়।
এ ঘটনায় নিহতের মা দিলরুবা বাদী হয়ে কোতয়ালি থানায় মামলা করেন।
ঢাকা/রিটন/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন ত কর ম ল ইসল ম ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
গায়েবি মামলায় ভুগছেন জবির ১১ শিক্ষার্থী
হঠাৎ গ্রেপ্তার হন ১১ শিক্ষার্থী। তিন দিনের মধ্যে সাময়িক বহিষ্কার করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। তিন থেকে পাঁচ মাস জেল খাটেন। শিক্ষাজীবনে পিছিয়ে পড়েন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ঘটনা সম্পর্কে তারা কিছুই জানতেন না। তিন বছর আগের গায়েবি মামলায় এখনও ভুগছেন।
অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের শিক্ষার্থী শাহিন ইসলাম জানান, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ভর্তি হন বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১ মার্চ পুরান ঢাকার একটি মেসে ওঠেন। ২৪ দিন পর আটক করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। তিন মাস জেল খাটেন। বর্তমানে তিনি তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন। মামলা চালাতে পরিবারের খরচ হয় প্রায় ৪ লাখ টাকা।
মামলার তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের ২৯ মার্চ যাত্রাবাড়ী থানার এসআই জাহিদুজ্জামান বিস্ফোরক আইনে মামলা করেন। এজাহার থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী হানিফ ফ্লাইওভার টোলপ্লাজা-সংলগ্ন এলাকায় লেগুনা ভাঙচুর এবং বোমাবাজির ঘটনায় মামলা হয়। এ মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামি হিসেবে ফাঁসানো হয় শাহিনকে। ঘটনার সময় তিনি ঠাকুরগাঁওয়ে ছিলেন।
এ ছাড়া ২০২২ সালের ২৫ মার্চ কোতোয়ালি থানার এসআই রুবেল খান বিস্ফোরক আইনে আরেকটি মামলা করেন। এ দুই মামলায় জবির ১১ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ভুক্তভোগী আল মামুন রিপন জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি লক্ষ্মীবাজারে সবজির দোকান চালাতেন। মিথ্যা মামলায় তিন মাস কারাগারে ছিলেন। মানসিক এবং অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তিন বছরে মামলার পেছনে প্রায় ৪ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।
এ ছাড়া আব্দুর রহমান অলি, শ্রাবণ ইসলাম রাহাত এবং রওশন-উল ফেরদৌসকে ফাঁসানো হয়। প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়ে ২০২২ সালে ঢাকায় আসেন তারা। তিন মাস না পেরোতেই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। মামলায় ওলির খরচ হয় সাড়ে ৪ লাখ, রাহাতের ৪ লাখ, ফাহাদের ৪ লাখ ও রওশনের ৬ লাখ টাকা।
রাহাত বলেন, ২০২২ সালের ৭ মার্চ গেণ্ডারিয়ায় বড় ভাই মো. ফাহাদ হোসেনের মেসে ওঠেন তিনি। এর ১৭ দিনের মাথায় পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। পাঁচ মাস কারাভোগ করতে হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো সহযোগিতা পাননি। তদন্ত ছাড়া তাদের সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়। এক বছর পিছিয়ে পড়েন। তিন বছর পার হলেও নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে।
লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের মাহাদি হাসান জানান, গ্রেপ্তার হওয়ার পর এক সপ্তাহ জানতেন না কী অভিযোগ। জেল থেকে আদালতে নেওয়ার পর জানতে পারেন ঘটনাটি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং সোসাইটির দপ্তর সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ছাত্রলীগের আসিফ। এ নির্বাচনে ছাত্রলীগের একাধিক প্রার্থী ছিলেন, এর মধ্যে অনেকে ডিবেট করতেন না। তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় ডিবেটিং সোসাইটির প্রার্থিতা বাতিলের উদ্দেশ্যে, যেন ছাত্রলীগের আসিফ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দপ্তর সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরে প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী হাসিব মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন এবং ছাত্রলীগের শাইদুল ইসলাম সাঈদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি হন। এর সঙ্গে সাবেক প্রক্টর মোস্তফা কামাল জড়িত বলে তিনি অভিযোগ করেন।
দুটি মামলার এজাহারে প্রায় একই ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির পর আট মাস পার হলেও সুরাহা হয়নি। কোতোয়ালি থানা চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে পাঠিয়েছে। এ মামলা নিষ্পত্তির জন্য আজ আদালতে উঠবে। যাত্রাবাড়ী থানার নথিপত্র পুড়ে যাওয়ায় অগ্রগতি জানাতে পারছে না পুলিশ। যাত্রাবাড়ী থানার ওসি কামরুজ্জামান বলেন, এ ধরনের গায়েবি মামলা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। খুব দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক ড. রিফাত হাসান বলেন, এর আগেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দ্রুত এই মামলা সমাধানে প্রশাসনিকভাবে পদক্ষেপ নেব। প্রক্টর ড. তাজাম্মুল হক বলেন, ‘১১ শিক্ষার্থীর গায়েবি মামলা নিষ্পত্তির জন্য একাধিকবার থানায় যোগাযোগ করেছি। এ বিষয়ে আবার কথা বলব।’