রাবিতে ৪ মাস ক্লাস করার পর ভুয়া শিক্ষার্থী আটক
Published: 26th, January 2025 GMT
ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হয়েও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আইন বিভাগে ক্লাস করার ৪ মাস পর এক ভুয়া শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে।
শনিবার (২৫ জানুয়ারি) ক্লাসের অন্য শিক্ষার্থীদের সন্দেহ হলে তারা বিভাগের সভাপতিকে বিষয়টি জানান। পরে তাকে প্রক্টর দপ্তরের মাধ্যমে পুলিশের সোপর্দ করা হয়।
ওই ভুয়া শিক্ষার্থীর নাম নাভিক রহমান। তিনি ছদ্মবেশে আইন বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ক্লাস করছিলেন এতদিন।
জিজ্ঞাসাবাদে নাভিক রহমান দাবি করেছেন, তার মায়ের অনেক আশা ছিল, ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। কিন্তু তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সুযোগ পাননি। তাই মাকে খুশি করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার অভিনয় করে আসছিলেন।
নাভিক রহমানের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ঘুরে দেখা যায়, অ্যাকাউন্টে নিজেকে রাবি আইন বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। প্রোফাইল পিকচারে আইন বিভাগ লেখা একটা টি-শার্ট পরিহিত ছবিও রয়েছে। এছাড়া আইন বিভাগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার ছবিও পোস্ট করেছেন তিনি। তার বন্ধু তালিকায় আইন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদেরও অনেকে যুক্ত রয়েছেন।
এ বিষয়ে আইন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী শাহরুখ মাহমুদ বলেন, “তার বিষয়ে ব্যাচমেটদের সন্দেহ হলে তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং পরিচয় বের হয়ে আসে। এমনকি সে তার গার্ডিয়ান হিসেবে যাদের ডেকেছিল, তারাও ভুয়া। এরপর বিভাগের সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রক্টর অফিস নিয়ে গিয়ে নাভিক ও তার ভুয়া অভিভাবকদের পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “গত ৪ মাসে বিভাগের সবকিছুতে সে উপস্থিত ছিল একদম প্রফেশনাল স্পাই এজেন্টের মতো। সে কোনো গুপ্তচর প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত কিনা তদন্ত করা হোক।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সতর্ক থাকা দরকার আমাদের বিভাগের সিকিউরিটি নিয়ে। একজন ৪ মাস যাবৎ ক্লাস করেছে, প্রতিটা প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেছে। অথচ আমাদের বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আইডেন্টিফাই করতে পারেনি, এটা চরম ব্যর্থতা।”
ইমতিয়াজ নাহিদ নামে চতুর্থ বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, “ওই ব্যাচে এর আগেও একজন ফ্রড ধরা পড়েছিল। তার নাম ছিল আনিকা। সবাই মিলে তাকে ধরার চেষ্টা করলে পালিয়ে যায় মেয়েটা।”
আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান মেহেদী বলেন, “আমাদের ক্লাস শুরু হওয়ার প্রথম দিকে এক মাস মত রোল কল করা হত না। ওইসময় নাভিককে নিয়মিত ক্লাস করতে দেখেছি। পরে রোল কল শুরু হলে তাকে খুব একটা নিয়মিত দেখা যেত না। তবে বিভাগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সে নিয়মিত অংশগ্রহণ করত। আমাদের প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষায় তাকে উপস্থিত হতে না দেখে খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারি, তার নাম আমাদের শিক্ষার্থীদের তালিকায় নেই।”
এ বিষয়ে আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড.
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, “ছেলেটি স্বীকার করেছে যে, তার মায়ের অনেক আশা ছিল, তার ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। কিন্তু সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সুযোগ পায়নি। তাই মাকে খুশি করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার অভিনয় করেছে এতদিন। তাকে থানায় হস্তান্তর করেছি। পুলিশ অধিকতর তদন্ত করে বিষয়টি দেখবে।”
এ বিষয়ে জানতে মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল মালেকের মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আইন ব ভ গ র ক ল স কর রহম ন
এছাড়াও পড়ুন:
আমরা গাজায় পরিণত হতে চাই না, রাখাইন করিডোর ইস্যুতে মির্জা ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আরাকানদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য যে করিডোর তৈরি করার সিদ্ধান্ত, সেটি সব দলের মতামতের ভিত্তিতে নেওয়া উচিত ছিল। সরকারের দায়িত্ব ছিল সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলা। কারণ আমরা রোহিঙ্গাদের নিয়ে এমনিতেই সমস্যায় আছি, আমরা কোনো যুদ্ধ চাই না, আমরা গাজায় পরিণত হতে চাই না।
সোমবার বিকেলে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নে গণসংযোগ কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এদেশের মানুষ তাদের নিজস্ব সরকার দেখতে চায়। বর্তমানে এমপি নেই, সমস্যা হলে কার কাছে যাবেন। স্থানীয় চেয়ারম্যানরা সব সমস্যার সমাধান করতে পারেন না। এজন্য আমরা বারবার করে বলছি, সংস্কারটা হউক, নির্বাচনটাও হউক।
তিনি বলেন, নির্বাচনটা বাংলাদেশে খুব দরকার। এই কাজগুলো যদি আমরা না করতে পারি, তাহলে হবে না। আমরা আশা করবো, সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। তারা বলেছে যে, নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে থেকে জুনের মধ্যে দেওয়ার চেষ্টা করবে। আমরা বলি এভাবে না বলে পরিষ্কার করে বলেন- নির্বাচনটা কখন হবে, রোডম্যাপ দেন। রোডম্যাপ দিলেই মানুষ আশ্বস্ত হবে।
স্থানীয়দের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, গত ১৫ বছরে আপনাদের সঙ্গে আমার খুব কম দেখা হয়েছে, কারণ আপনারা সবাই জানেন। এই ১৫ বছর আমাদের শান্তিতে থাকতে দেয়নি। প্রায় ৯ জনকে হত্যা করা হয়েছে। বড় খোচাবাড়ীতে আমাদের এক ভাইয়ের হাত কেটে নেওয়া হয়েছিল। ২০১৮ সালে নির্বাচনের সময় আমরা কেউ এ এলাকায় ঢুকতে পারিনি। তারা আমাদের গাড়িগুলো জ্বালিয়ে দিয়েছে, আমাদের রাস্তা গাছ ফেলে বন্ধ করে দিয়েছিল, যাতে করে আমরা আপনাদের কাছে আসতে না পারি। নির্বাচন করতে না পারি। গত ১৫ বছরে আপনারা ভোট দিতে পারেনি, নতুন ছেলেরা তো পারেইনি। এই ১৫ বছরে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। আমাদের দেশের লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা তারা বিদেশে পাচার করেছে। ব্যাংকগুলো লুট করেছে।
তিনি আরও বলেন, রাস্তাগুলো দিয়ে যাতায়াত করা যাচ্ছে না। এগুলোর নাম করে তারা অনেক টাকা নিয়ে চলে গেছে। বিএনপির যদি গন্ধ পেয়েছে কোথাও তার চাকরি হয়নি। ব্যবসা বাণিজ্য হয়নি, চাকরির জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। পরে এ দেশের মানুষ অস্থির হয়ে, জীবন দিয়ে তারা হাসিনাকে তাড়িয়েছে। আপনারা দেখেছেন, মানুষ কোনো কিছুকে ভয় পায়নি ওই দিনগুলোতে। তারা শুধু সামনের দিকে ছুটে গেছে। আপনাদের বিরুদ্ধেও অনেক মামলা হয়েছে, অনেকে জেলেও গেছেন। আপনাদের একমাত্র অপরাধ ছিল, আপনারা বিএনপি করেছেন।
শেখ হাসিনা জোর করে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিলেন উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ জোর করে ক্ষমতা ধরে রেখেছিল। ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য সরকার যা করা দরকার তা করেছিল। সারাদেশ নিয়ে আমাদের কাজ করতে হয়, সে কারণে বেশি সময় পাইনা আপনাদের মাঝে আসার। ঠাকুরগাঁওয়ের সাধারণ মানুষ ১৫ বছর উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছি। চাকরি, কৃষকের ন্যায্য পাওনা থেকে, শ্রমিক ভাইয়ের পাওনা থেকে বঞ্চিত হয়েছি। আগামীতে যদি আমরা নির্বাচিত হতে পারি, আমরা সবার আগে নতুন কর্মসংস্থানের দিকে গুরুত্ব দেবো। চাকরির দিকে গুরুত্ব দেবো। আমাদের যুবক-তরুণ ছেলে মেয়েরা যে চাকরি পায় না তারা যেনো চাকরি পায় সে ব্যবস্থা আমরা সবার আগে করবো।
জগন্নাথপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেনের সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. আব্দুল হামিদ। এতে বিএনপি-অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। পরে একই ইউনিয়নের বড় খোচাবাড়ীতে পথসভায় বক্তব্য দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।