মায়ের সামনে ছেলেকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন
Published: 26th, January 2025 GMT
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে মায়ের সামনে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে ইমরান হোসেন (২১) নামের এক যুবককে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। নির্যাতনের শিকার যুবক বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) রাতে উপজেলার কনকাপৈত ইউনিয়নের দৌলতপুর মসজিদের সামনে এ ঘটনা ঘটে। ইমরান ওই গ্রামের মো.
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ইমরান একজন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। শুক্রবার রাতে স্থানীয় তারাশাইল বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে স্থানীয় সন্ত্রাসী শহিদুর রেজা (রতন) মিয়াজির নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী পথরোধ করে অস্ত্রের মুখে তাকে জিম্মি করে এলোপাথাড়ি মারধর শুরু করে। এ সময় ইমরানের ডাক-চিৎকারে তার মা আফরোজা বেগম এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা তাকেও অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ফেলে। পরে ইমরানকে দৌলতপুর মসজিদের সামনে একটি খুঁটির সঙ্গে বেঁধে মায়ের চোখের সামনে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করা হয়। এ সময় সন্ত্রাসীরা অস্ত্র হাতে মহড়া দেওয়ায় স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসতে সাহস করেনি।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত প্রায় তিন ঘণ্টা নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতনে ইমরান অচেতন হয়ে পড়লে সন্ত্রাসীরা তাকে মৃত ভেবে রেখে পালিয়ে যায়। পরে পরিবারের লোকজন ইমরানকে আহতাবস্থায় উদ্ধার করে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে কুমিল্লা মেডিকেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। নির্যাতনের একটি ভিডিও ফুটেজ শনিবার সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে অভিযুক্তরা গা ঢাকা দেয়।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক জাবেদ হোসেন বলেন, ‘‘শুক্রবার রাত ১২টা ২০ মিনিটে মুমূর্ষু অবস্থায় ইমরান হোসেনকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন স্বজনেরা। তার পুরো শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আমরা তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করি।’’
ইমরানের মা আফরোজা বেগম বলেন, ‘‘শহিদুর রেজা (রতন মিয়াজি) এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী। এলাকায় তার নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী রয়েছে। তার সামাজিক অপকর্মের বিরুদ্ধে আমার ছেলে প্রায়ই প্রতিবাদ করত। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সে আমার ছেলেকে বিভিন্ন সময় হুমকি দিয়ে আসছিল। শুক্রবার সন্ধ্যার পরে ইমরান তারাশাইল বাজার থেকে ফেরার পথে সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মারধর শুরু করে। ছেলের চিৎকার শুনে এগিয়ে গেলে তারা আমাকেও অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। পরে আমার চোখের সামনে ইমরানকে একটি খুঁটির সঙ্গে বেঁধে প্রায় ৩ ঘণ্টা ধরে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালানো হয়।’’
চৌদ্দগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘ইমরান নামে এক যুবককে নির্যাতনের একটি ভিডিও ফুটেজ আমাদের নজরে এসেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর পরিবার লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। পরবর্তী আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।’’
ঢাকা/রুবেল/রাজীব
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র স মন ইমর ন এ ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
বগুড়ায় নারী হাজতখানায় পরিবারের সঙ্গে পুরুষ আসামির সাক্ষাৎ
বগুড়ায় আলোচিত ১৭ মামলার আসামি তুফান সরকারকে আদালতের নারী হাজতখানায় পরিবারের পাঁচ সদস্যের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে আদালত পুলিশের ২ সদস্যকে প্রত্যাহার ও ৫ সাক্ষাত প্রার্থীকে ৫৪ ধারায় চালান দেওয়া হয়েছে।
সোমবার বিকেলে বগুড়ার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যাহার করা পুলিশের ২ সদস্য হলেন- সহকারী টাউন উপ-পরিদর্শক (এটিএসআই) জয়নাল আবেদিন ও নারী কনস্টেবল ইকসানা খাতুন।
জানা যায়, তুফান সরকার বগুড়া শহর যুব শ্রমিকলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। তিনি বগুড়া শহরের চকসুত্রাপুর এলাকার মজিবর সরকারের ছেলে। তিনি হত্যা, মাদক, ধর্ষণ, ছিনতাইসহ ১৭ মামলার আসামি।
জানা যায়, সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের দ্বিতীয় তলায় নারী হাজতখানার দরজা কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। ভেতরে তুফান সরকার, তার স্ত্রী, ছোট বোন, শাশুড়ি, স্ত্রীর বড় বোন এবং একজন আইনজীবীর সহকারী মিলে গল্প করছিলেন। পরে নারী হাজতখানায় পুরুষ আসামি ঢুকার বিষয়টি জানাজানি হলে আদালত চত্বরে হৈ চৈ পড়ে যায়। পরে দ্রুত তুফান সরকারকে প্রিজন ভ্যানে কারাগারে পাঠানো হয়।
এসময় তুফান সরকারের সঙ্গে দেখা করতে আসা নারী হাজত খানা থেকে ওই ৫ জন সরে যান। পরে তাদের আদালত চত্বর থেকে আটক করে ৫৪ ধারায় চালান দেওয়া হয়।
আটক ৫ জন হলেন, তুফানের শাশুড়ি তাসলিমা বেগম, তুফান সরকারের স্ত্রী আশা বেগম, শ্যালিকা ফেরদৌসি বেগম, শ্যালক নয়ন, তুফানের আইনজীবীর সহকারী হারুনুর রশিদ।
বগুড়া আদালত পুলিশের পরিদর্শক মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, সকালে তুফান সরকারকে বিদ্যুৎ সংক্রান্ত একটি মামলায় আদালতে হাজিরার জন্য কারাগার থেকে আনা হয়। কারাগার থেকে আনা অন্য সব হাজতিকে দুপুরের মধ্যেই প্রিজন ভ্যানে পাঠিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু বাদ পড়ে তুফান সরকার। হাজতখানার চাবি এটিএসআই জয়নাল আবেদিনের কাছে থাকে। তুফান সরকারকে কারাগারে না পাঠিয়ে তাকে নারী হাজতখানায় পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাত করার সুযোগ করে দেয় জয়নাল আবেদিন। আদালতের সবার অগোচরে ঘটনাটি ঘটে।
বগুড়ার পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা বলেন, পুরুষ আসামিকে নারী হাজত খানায় পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগে এটিএসআই জয়নাল আবেদিন ও এক নারী কনস্টেবলকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পুলিশের আরও যাদের গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে এক কলেজ ছাত্রীকে আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগ উঠে তুফান সরকারের বিরুদ্ধে। পরে শালিস ডেকে ভুক্তভোগী নারী ও তার মা'কে দোষী উল্লেখ করে মারধর করে এবং মা-মেয়ের মাথা ন্যাড়া করে দেয় তুফান সরকার। সেই ঘটনায় দেশ জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হলে তুফান সরকার গ্রেপ্তার হয়।