বিদ্যুৎ-জ্বালানিতে বকেয়া ৪৫ হাজার কোটি টাকা
Published: 26th, January 2025 GMT
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বকেয়া বিল ফের বাড়ছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র ও গ্যাস সরবরাহকারী বিদেশি কোম্পানিগুলো সরকারের কাছে প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা পাবে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর পাওনা ৩৮ হাজার কোটি টাকার বেশি। গ্যাস সরবরাহকারী কোম্পানিগুলোর বকেয়া প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা। কোম্পানিগুলো দ্রুত পাওনা পরিশোধে সরকারকে তাগাদা দিচ্ছে। সময়মতো পাওনা অর্থ না পেলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বিঘ্নিত হতে পারে বলে সতর্ক করে তারা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগে চিঠি দিয়েছে। তারা বলছে, চলতি মাসের মধ্যে বকেয়ার উল্লেখযোগ্য অংশ পরিশোধ না করলে এলএনজি ও ফার্নেস অয়েল আমদানি ব্যাহত হবে। এতে রমজান ও গ্রীষ্মে গ্যাস-বিদ্যুতের বাড়তি চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে না।
অর্থ সংকটে কয়লা, ফার্নেস অয়েল ও গ্যাস আমদানি ব্যাহত হওয়ায় গত বছর গরম মৌসুমে বিভিন্ন সময় পায়রা, রামপাল, এস আলমসহ অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ ছিল। এ কারণে লোডশেডিং বেড়ে গিয়েছিল। বাধ্য হয়ে সরকার তালিকা করে লোডশেডিং দিয়েছিল দেশজুড়ে।
বিদ্যুৎ কেনা বাবদ ৩৮ হাজার কোটি টাকার বেশি পাওনা জমেছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যান রেজাউল করিম। প্রায় ছয় মাসের বিল বকেয়া বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, দেশীয় বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর পাওনা প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। বেসরকারি বিদ্যুৎ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিপ্পার প্রতিনিধিরা ৮ জানুয়ারি পাওনার বিষয়ে বিদ্যুৎ সচিব ফারজানা মমতাজের সঙ্গে দেখা করেছেন। সংগঠনটির পক্ষ থেকে দ্রুত বকেয়া পরিশোধের জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে একজন সদস্য সমকালকে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, তারা সরকারকে জানিয়েছেন, চলতি মাসের মধ্যে অন্তত ৫ হাজার কোটি টাকা দিতে। তাহলে তেল আমদানির জন্য এলসি খোলা সম্ভব হবে। তা না হলে রমজান ও গরমে চাহিদা অনুসারে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। ফার্নেস আমদানি ব্যাহত হলে গরমে তেলচালিত কেন্দ্রে আড়াই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বিঘ্নিত হবে।
ভারতের আদানি গ্রুপের বকেয়া দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। কোম্পানিটি গত জানুয়ারিতে এ নিয়ে পিডিবির সঙ্গে বৈঠক করে। রোববার পিডিবিকে পাঠানো এক চিঠিতে আগামী জুনের মধ্যে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বকেয়া বিল শোধ করার সময় বেঁধে দিয়েছে। আগামী জুনের মধ্যে বকেয়া দিলে বিলম্ব ফি মওকুফ করার প্রস্তাব করেছে আদানি। পাওনা নিয়ে গত আগস্টের পর থেকে আদানির সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের টানাপোড়েন চলছে। পাওনা আদায়ে নভেম্বর থেকে একটি ইউনিটের উৎপাদন আদানি বন্ধ রাখে।
চীন ও বাংলাদেশের যৌথ মালিকানার পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের বকেয়া প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা। সময়মতো অর্থ না পেলে কয়লা আমদানি ব্যাহত হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রটির পরিচালনাকারী বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানির (বিসিপিসিএল) একজন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, সংকটে পায়রা সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য কেন্দ্র। এর উৎপাদন ব্যাহত হলে গরমে প্রচণ্ড লোডশেডিং হবে। এ ছাড়া ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির প্রায় চার হাজার কোটি টাকা; রামপাল, এস আলম, মাতারবাড়ীসহ বিভিন্ন কেন্দ্রের বকেয়া প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা।
এ বিষয়ে পিডিবির চেয়ারম্যান বলেন, তারা পাওনা পরিশোধোর বিষয়ে কাজ করছেন। বকেয়া অর্থ দেওয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছেন। তিনি বলেন, কিছু হলেও অর্থ দিতে হবে যাতে আগামী রমজান ও গরমের সময় কেন্দ্রগুলো জ্বালানি সংকটে না ভোগে।
গ্যাসের বকেয়া দ্রুত পরিশোধের অনুরোধ
বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন গ্যাস বিক্রি বাবদ পেট্রোবাংলার কাছে প্রায় ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা পাবে। এ অর্থ পরিশোধে গত বৃহস্পতিবার জ্বালানি বিভাগে তারা চিঠি দিয়েছে। শেভরন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট এরিক এম ওয়াকার চিঠিতে বকেয়ার অন্তত ৯০০ কোটি টাকা দ্রুত পরিশোধের অনুরোধ জানিয়েছেন। চিঠিতে বলা হয়েছে, শেভরনের পাওনার মধ্যে ২ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা গ্যাসের মূল্য। বাকি টাকা কর ও সুদ। শেভরন জানিয়েছে, সময়মতো অর্থ ছাড় না হওয়ায় তারা প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আনতে পারছে না। এতে গ্যাস উৎপাদন বিঘ্নিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি দেশের সবচেয়ে বড় গ্যাসক্ষেত্র বিবিয়ানাসহ জালালাবাদ ও মৌলভীবাজার ক্ষেত্র পরিচালনা করে। এর মধ্যে বিবিয়ানা থেকেই দৈনিক সরবরাহ করা দেশীয় গ্যাসের (১৯৩ কোটি ঘনফুট) প্রায় অর্ধেক (৯৭ কোটি ঘনফুট) উত্তোলন করা হয়।
এলএনজিতে বকেয়া
২০১৮ সাল থেকে বাংলাদেশ এলএনজি আমদানি করে। এর মধ্যে কাতার ও ওমান থেকে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় এলএনজি আনা হয়। এ ছাড়া চুক্তিবদ্ধ ২৩ কোম্পানির মাধ্যমে স্পট মার্কেট থেকে প্রতি মাসে চাহিদা অনুসারে এলএনজি কেনে সরকার। এর মধ্যে কাতার রাস গ্যাসের পাওনা ১ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা। ওমানের ওকিউ ট্রেডিং পাবে ৬০০ কোটি টাকা। স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি সরবরাহকারী কোম্পানিগুলোর বকেয়া জমেছে কমপক্ষে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
বকেয়ার বিষয়ে জ্বালানি সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, আগামী সপ্তাহে কোম্পানিগুলোর বকেয়া পরিশোধের চেষ্টা চলছে। অর্থ বিভাগের কাছে সহায়তা চাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সবার আগে এলএনজির বকেয়া শোধ করা দরকার। না হলে গ্যাস আমদানি ব্যাহত হবে।
রাস গ্যাস বছরে কমপক্ষে ৪০ কর্গো ও ওকিউ ১৬ কার্গো এলএনজি সরবরাহ করে। স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আনা হয় বছরে ২০ থেকে ২৫ কার্গো।
গ্রীষ্মে জ্বালানির সরবরাহ নিয়ে শঙ্কা
আগামী মার্চ মাসে রমজান। এ সময় গরমও শুরু হবে। ফেব্রুয়ারি থেকেই শুরু হয় সেচ মৌসুম। ফলে মার্চে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যায়। গত বছরের গ্রীষ্ম, রমজান ও সেচ মৌসুমে সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল সাড়ে ১৬ হাজার মেগাওয়াটের কাছাকাছি। এবার চাহিদা হতে পারে প্রায় ১৮ হাজার মেগাওয়াট। এ সময় বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজন দেড় লাখ টন ফার্নেস অয়েল ও ১৫-১৬ হাজার টন ডিজেল। দৈনিক কয়লার চাহিদা ৪০ হাজার টন। বিদ্যুতের জন্য গ্যাস লাগবে দিনে কমপক্ষে ১৩০ কোটি ঘনফুট। গতবার বিদ্যুৎ খাতে গড়ে ১১০-১১৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস দিয়েছিল পেট্রোবাংলা। বিপুল বকেয়ার কারণে গরমে বিদ্যুতের জন্য নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানির সরবরাহ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন খাত-সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর শ ধ র রমজ ন ও সরবর হ র জন য ঘনফ ট সরক র আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশ বন্ধ করল ইসরায়েল
গাজায় সব মানবিক সহায়তা প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল। রোববার দেশটি হুঁশিয়ার দিয়ে বলেছে, হামাস যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বৃদ্ধির নতুন প্রস্তাব মেনে না নিলে ‘আরও পরিণতি’ ভোগ করতে হবে। তাদের অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি সম্প্রসারণ পরিকল্পনায় রাজি হতে হবে।
বিবিসি জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় দেশটির বিরুদ্ধে ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টার অভিযোগ তুলেছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস। তারা বলেছে, গাজায় ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া নির্যাতনের এক সহজ উপায়, যুদ্ধাপরাধ ও চুক্তির (যুদ্ধবিরতি) ঘোরতর লঙ্ঘন। এই ঘটনায় মধ্যস্থতাকারীদের সহায়তাও চেয়েছে হামাস।
নেতানিয়াহুর দপ্তর এক বিবৃতিতে বলেছে, প্রথম ধাপের বন্দিবিনিময় চুক্তি শেষ হয়েছে এবং হামাস উইটকফের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আজ (রোববার) সকাল থেকে গাজায় সব ধরনের পণ্য ও সরবরাহ প্রবেশ বন্ধ থাকবে।
ইসরায়েলের সঙ্গে হামাসের সম্পাদিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় এক মাসের কিছু বেশি সময় ধরে গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছিল। কিন্তু রোববার সকাল থেকে গাজায় আর কোনো পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশ করেনি। এতে গাজায় হঠাৎ করে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা। সেখানকার মানুষ ময়দা, রুটি যা পারছে তাই খুঁজছেন। যেন সারাদিন রোজা রাখার পর অন্তত ইফতার করা যায়। পণ্য সরবরাহ বন্ধ করায় আবারও না খেয়ে থাকায় শঙ্কায় পড়েছেন গাজাবাসী।
এদিকে আনুষ্ঠানিকভাবে গাজার যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের ৪২ দিনের মেয়াদ শেষ হয়েছে। ইসরায়েল জানিয়েছে, দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে কোনো ঐকমত্য না হলেও, এখনই হামলায় যাচ্ছে না তারা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব মেনে রমজান মাসে যুদ্ধ বন্ধ রাখার বিষয়ে প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছেন নেতানিয়াহু। তবে হামাস গাজার যুদ্ধবিরতির চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে আরও ২৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর ফলে অবরুদ্ধ এই উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা প্রায় ৪৮ হাজার ৪০০ জনে পৌঁছেছে।