এলএনজি কেনায় মার্কিন কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি, নানা প্রশ্ন
Published: 26th, January 2025 GMT
বছরে ৫০ লাখ টন তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করতে মার্কিন কোম্পানি আর্জেন্ট এলএনজির সঙ্গে নন-বাইন্ডিং চুক্তি করেছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। এলএনজি আমদানিকারক পেট্রোবাংলা এ সম্পর্কে অবহিত নয়। তবে জ্বালানি বিভাগ মনে করছে এই চুক্তির ফলে কোনো বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়নি।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বালানির বিশেষ বিধান বাতিলের পর টেন্ডার ছাড়া চুক্তি করা হলো। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের মতোই হয়ে গেল বিষয়টি। এতে কোনো স্বচ্ছতা থাকল না।
গতকাল শনিবার বিডার বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত শুক্রবার ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাসে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশের পক্ষে বিডা ও বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী এবং আর্জেন্ট এলএলসির চেয়ারম্যান ও সিইও জনাথন ব্যাস এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
এ বিষয়ে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আর্জেন্ট এলএনজি বছরে আড়াই কোটি টন এলএনজি সরবরাহের সক্ষমতার একটি অবকাঠামো গড়ে তুলছে লুইজিয়ানার পোর্ট ফোরচনে। এ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে সেখান থেকে পেট্রোবাংলার কাছে চুক্তি অনুযায়ী এলএনজি বিক্রি করতে পারবে।
জানা গেছে, আর্জেন্ট নতুন কোম্পানি। ২০২৩ সালে গঠিত কোম্পানিটির এলএনজি সংক্রান্ত কোনো ব্যবসা নেই। চুক্তির বিষয়ে বিডার চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, দেশে গ্যাসের বিশাল সংকট। শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান, ইত্যাদির জন্য আমাদের দীর্ঘমেয়াদি গ্যাস সরবরাহের সমাধান বের করতেই হবে। মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে আমেরিকা একটা ভালো বিকল্প। জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এ বিষয়ে বলেন, এটা নন-বাইন্ডিং একটি চুক্তি। মূল চুক্তির একটি প্রাথমিক ধাপ। এতে আমাদের কোনো বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়নি। তিনি বলেন, মার্কিন কোম্পানটি গ্যাস উত্তোলন করবে, তারপর এলএনজি আকারে সরবরাহ করবে। এটা সময়ের ব্যাপার।
তবে পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিডার চেয়ারম্যানের করা চুক্তি সম্পর্কে তারা অবহিত নন। গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর তারা জেনেছেন। এ ক্ষেত্রে কোনো মতামত নেওয়া হয়নি। চুক্তির সময় পেট্রোবাংলার কেউ ছিল না ।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রাক্তন অধ্যাপক ড.
জ্বালানি বিশ্লেষক প্রকৌশলী কল্লোল মোস্তফা ফেসবুকে লেখেন, ‘এলএনজি কেনার চুক্তি বা সমঝোতা যাই বলি, বিনিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান কেন করলেন? এটা তো জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের করার কথা। তাছাড়া এলএনজি কিনলে তো ডলার দেশ থেকে বের হয়। বিনিয়োগ বোর্ডের কাজ তো দেশে ডলার ঢোকানো। এই হেডস অব এগ্রিমেন্টটা কোন আইনের বলে করা হলো? এখন তো দ্রুত জ্বালানি আইন নাই, তাহলে বিনা টেন্ডারে একটা বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে হেডস অব এগ্রিমেন্ট হলো কেমনে? এটাকে জিটুজি চুক্তিও বলা যাবে না, কারণ আরেক পক্ষ বেসরকারি কোম্পানি।’
বর্তমানে দেশে প্রতিদিন গ্যাসের চাহিদা অন্তত ৪০০ কোটি ঘনফুট। এর বিপরীতে প্রতিদিন গড়ে ২৭৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। এর মধ্যে দেশীয় ক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে গড়ে ১৯০ কোটি ঘনফুট। আমদানি করা এলএনজি থেকে মিলছে ৮৫ কোটি ঘনফুট। ২০১৮ সাল থেকে বাংলাদেশ এলএনজি আমদানি করছে।
এখন মহেশখালীর গভীর সমুদ্রে দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল রয়েছে (এফএসআরইউ)। এ দুটি পরিচালনা করছে দেশীয় কোম্পানি সামিট ও যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিলারেট এনার্জি। এলএনজি সরবরাহের জন্য কাতার এবং ওমানের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে সরাসরি এলএনজি সংগ্রহে একাধিক কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি রয়েছে পেট্রোবাংলার। এছাড়া আরও একটি এফএসআরইউ, স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের উদ্যোগ রয়েছে সরকারের।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এলএনজ আর জ ন ট সরবর হ ঘনফ ট সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশ বন্ধ করল ইসরায়েল
গাজায় সব মানবিক সহায়তা প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল। রোববার দেশটি হুঁশিয়ার দিয়ে বলেছে, হামাস যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বৃদ্ধির নতুন প্রস্তাব মেনে না নিলে ‘আরও পরিণতি’ ভোগ করতে হবে। তাদের অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি সম্প্রসারণ পরিকল্পনায় রাজি হতে হবে।
বিবিসি জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় দেশটির বিরুদ্ধে ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টার অভিযোগ তুলেছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস। তারা বলেছে, গাজায় ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া নির্যাতনের এক সহজ উপায়, যুদ্ধাপরাধ ও চুক্তির (যুদ্ধবিরতি) ঘোরতর লঙ্ঘন। এই ঘটনায় মধ্যস্থতাকারীদের সহায়তাও চেয়েছে হামাস।
নেতানিয়াহুর দপ্তর এক বিবৃতিতে বলেছে, প্রথম ধাপের বন্দিবিনিময় চুক্তি শেষ হয়েছে এবং হামাস উইটকফের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আজ (রোববার) সকাল থেকে গাজায় সব ধরনের পণ্য ও সরবরাহ প্রবেশ বন্ধ থাকবে।
ইসরায়েলের সঙ্গে হামাসের সম্পাদিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় এক মাসের কিছু বেশি সময় ধরে গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছিল। কিন্তু রোববার সকাল থেকে গাজায় আর কোনো পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশ করেনি। এতে গাজায় হঠাৎ করে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা। সেখানকার মানুষ ময়দা, রুটি যা পারছে তাই খুঁজছেন। যেন সারাদিন রোজা রাখার পর অন্তত ইফতার করা যায়। পণ্য সরবরাহ বন্ধ করায় আবারও না খেয়ে থাকায় শঙ্কায় পড়েছেন গাজাবাসী।
এদিকে আনুষ্ঠানিকভাবে গাজার যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের ৪২ দিনের মেয়াদ শেষ হয়েছে। ইসরায়েল জানিয়েছে, দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে কোনো ঐকমত্য না হলেও, এখনই হামলায় যাচ্ছে না তারা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব মেনে রমজান মাসে যুদ্ধ বন্ধ রাখার বিষয়ে প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছেন নেতানিয়াহু। তবে হামাস গাজার যুদ্ধবিরতির চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে আরও ২৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর ফলে অবরুদ্ধ এই উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা প্রায় ৪৮ হাজার ৪০০ জনে পৌঁছেছে।