Samakal:
2025-03-31@10:15:23 GMT

এস কে সুরের গোপন লকারে কী আছে

Published: 26th, January 2025 GMT

এস কে সুরের গোপন লকারে কী আছে

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরীর (এস কে সুর) গোপন লকারে কী আছে, তা নিয়ে কৌতূহল দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সংরক্ষিত লকারটি আজ রোববার খোলা হবে বলে দুদক সূত্র জানিয়েছে।

গত ১৯ জানুয়ারি অভিযান চালিয়ে রাজধানীর ধানমন্ডিতে এস কে সুরের বাসা থেকে ১৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা জব্দের সময় তাঁর নামে বাংলাদেশ ব্যাংকে ভল্ট থাকার তথ্য পায় দুদক। পরে সংস্থাটি জানতে পারে, সেটি ভল্ট নয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকে কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মূল্যবান সামগ্রী রাখার লকার (সেফ ডিপোজিট)।

এর পর দুদক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংককে দেওয়া চিঠিতে লকারের সামগ্রী স্থানান্তর ও হস্তান্তর না করতে বলে। ২১ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিরাপত্তা শাখা থেকে দুদককে ফিরতি চিঠি দিয়ে লকারের সামগ্রী স্থানান্তর স্থগিত করার তথ্য জানায়। চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের লকারে বিধি অনুযায়ী ব্যাংকে কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যক্তিগত মূল্যবান সামগ্রী তাদের নিজ নামে প্যাকেট অথবা কৌটায় নিজ দায়িত্বে সিলগালাযুক্ত অবস্থায় জমার তারিখ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত রাখা হয়।

এর পর ২৩ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক আরেক চিঠিতে জানায়, এস কে সুর তিনটি লকার নম্বরে মূল্যবান সামগ্রী রেখেছেন। এর মধ্যে গত বছর ২৫ সেপ্টেম্বরের এসডি-৪৪/৬১ এবং ২০১৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারির এসডি-৪৮/১২ নম্বরের নমিনি করেছেন স্ত্রী সুপর্ণা সুর চৌধুরীকে।

আর ২০১৭ সালের ১২ জুলাইয়ের এসডি-৪৭/৩৫ নম্বরে রাখা সামগ্রীর নমিনি করেছেন মেয়ে নন্দিতা সুর চৌধুরীকে। সামগ্রীগুলোর ধরন চিঠিতে সম্পর্কে বলা হয়, সেগুলো কাপড়ে মোড়ানো গালাযুক্ত কৌটা বা প্যাকেট। তবে ওই তিনটি লকারে কী রেখেছেন এস কে সুর, তা বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়নি।

সূত্র জানায়, লকারে রাখা প্যাকেট ও কৌটা সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরাপত্তা শাখা জানলেও, এর ভেতরে সামগ্রীর বিষয়ে জানে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ চিঠির পর দুদক সেটি খুলে দেখার জন্য অনুমতি চায়। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, লকার খুলতে আদালতের অনুমতি লাগবে। পরে ২২ জানুয়ারি দুদকের উপপরিচালক নাজমুল হুসাইন স্বাক্ষরিত আবেদন ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজের কাছে জমা দেওয়া হয়। পরদিন লকার খোলার অনুমতি দেন আদালত।

লকার খোলার সময় উপস্থিত থাকার জন্য একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চেয়ে দুদক পরিচালক কাজী মো.

সায়েমুজ্জামান স্বাক্ষরিত আরেকটি আবেদন ২৩ জানুয়ারি ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জমা দেওয়া হয়। ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের অনুমতি দেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংকে গ্রাহকের জন্য লকার সেবা রয়েছে। লকারে কী সামগ্রী থাকে, তা ব্যাংকের কাউকে জানানো হয় না। কতগুলো প্যাকেট বা কৌটা রাখা হয়েছে, শুধু সে তথ্য জানানো হয়। ব্যাংকগুলোর অসংখ্য লকারে অপরাধলব্ধ অর্থ নিরাপদে রাখার সুযোগ নিচ্ছেন একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তারা।

এভাবে ব্যাংকের অজ্ঞাতে জিনিসপত্র নিরাপদ লকারে রাখায় নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট গ্রাহকরা যেসব জিনিস রাখছেন, সেগুলো কি বৈধ? যেহেতু ব্যাংক কর্তৃপক্ষই জানে না লকারের প্যাকেট অথবা কৌটায় কী রাখা হয়েছে। এ কারণে লকারগুলোতে অবৈধ জিনিসপত্র রাখা সম্ভব হচ্ছে। বিগত দিনে বিভিন্ন অভিযোগ অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে লকারের জিনিসপত্রের তথ্য চাওয়া হলেও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো তা দেয়নি।

কেন দেয়নি– এমন প্রশ্নে দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তারা বলেছেন, অবৈধভাবে অর্জিত বিপুল অঙ্কের টাকা ডলার বা অন্য কোনো মুদ্রায় রূপান্তর করে ওইসব লকারে রাখা হচ্ছে। যেহেতু লকার মালিক ইচ্ছেমতো যে কোনো সময় সেটি খুলে গচ্ছিত মালপত্র আনা-নেওয়া করতে পারেন, সেহেতু অবৈধ সম্পদ ভোগ করার জন্য লকার অনুঘটকের ভূমিকা পালন করছে।

তারা আরও বলেন, গ্রাহক ব্যাংক হিসাবে টাকা রাখলে সে সম্পর্কিত তথ্য সংশ্লিষ্ট গ্রাহক ও ব্যাংক কর্তৃপক্ষের জানার সুযোগ আছে। অথচ লকারে কী কী জিনিসপত্র রেখেছেন, সে সম্পর্কে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অন্ধকারে থাকছে।

দুদক এস কে সুর, তাঁর স্ত্রী সুপর্ণা সুর চৌধুরী ও কন্যা নন্দিতা সুর চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা করে গত ২৩ ডিসেম্বর। এস কে সুরকে গ্রেপ্তার করা হয় ১৪ জানুয়ারি। এর পর ১৯ জানুয়ারি দুদক এস কে সুরের বাসায় অভিযান চালিয়ে টাকা জব্দ করে।

সূত্র জানায়, দেশের আর্থিক খাত থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা পাচারকারী পি কে হালদারের ক্ষমতার উৎসে যারা ছিলেন, এস কে সুর তাদের অন্যতম। দুদকের মামলায় গ্রেপ্তার ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক এমডি রাশেদুল হক আদালতে ১৬৪ ধারায় বলেছেন, নির্বিঘ্নে দুর্নীতি-সংক্রান্ত কাজ করে দেওয়ার বিনিময়ে এস কে সুর প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের মাসোহারা পেতেন। সময়ে সময়ে দেওয়া হতো বিপুল অঙ্কের টাকা ছাড়াও মূল্যবান সামগ্রী।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ ন সপত র গ র হক র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

সাতক্ষীরায় বে‌ড়িবাঁধ ভেঙে ৫ গ্রাম প্লা‌বিত

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার খোল‌পেটুয়া নদীর বে‌ড়িবাঁধ ভেঙে পাঁচটি গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লা‌বিত হয়েছে। কয়েক শত মৎস‌্য ঘের পানিতে ভেসে গেছে। 

হঠাৎ করে বেড়িবাঁধ ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ঈদের আনন্দ গ্রামবাসীর নিরানন্দে পরিণত হয়েছে। গ্রামবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে ভাঙন পয়েন্টে বিকল্প রিং বাঁধ নির্মাণের চেষ্টা করলেও তা ব্যর্থ হয়।

সোমবার (৩১ মার্চ) বেলা সা‌ড়ে ৯টার দি‌কে আশাশুনি উপ‌জেলার বিছট গ্রামের আব্দুর রহিম সরদারের ঘেরের বাসার কাছ থেকে প্রায় দেড়শত ফুট বেড়িবাঁধ হঠাৎ করে খোলপেটুয়া নদীরগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

আরো পড়ুন:

গঙ্গা পানি চুক্তি নবায়ন: ভারত যাচ্ছে বাংলাদেশের দল

সুনামগঞ্জে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ৪৫ ভাগ শেষ হয়নি

বিছট গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক নজরুল ইসলাম জানান, সকালে তারা ঈদের নামাজ আদায়ে ব্যস্ত ছিলেন। নামাজ শেষে জানতে পারেন, প্রায় দেড়শত ফুট বেড়িবাঁধ হঠাৎ করে খোলপেটুয়া নদীরগর্ভে ধ‌সে প‌ড়ে‌ছে। বিষয়টি গ্রামের মসজিদের মাইকে প্রচার করে দ্রুত লোকজনকে ভাঙন পয়েন্টে যেতে বলা হয়। গ্রামবাসী স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে ভাঙন পয়েন্টে একটি বিকল্প রিং বাঁধ নির্মাণের চেষ্টা ক‌রে। দীর্ঘ সা‌ড়ে তিন ঘণ্টা চেষ্টা ক‌রেও শেষ রক্ষা হয়‌নি। সা‌ড়ে ১১টার দি‌কে প্রবল জোয়া‌রের তো‌ড়ে বা‌ধের অব‌শিষ্টাংশ ভে‌ঙে গি‌য়ে লোকাল‌য়ে পা‌নি ঢুক‌তে শুরু ক‌রে।

স্থানীয়রা জানান, ইতোম‌ধ্যে বিছট, বল্লবপুর, নয়াখালী, আনু‌লিয়াসহ আশপা‌শের কয়েকটি গ্রা‌মে পা‌নি ঢুকে‌ছে। শত শত মৎস‌্য খামার ভে‌সে গে‌ছে। দ্রুততম সম‌য়ে বাঁধ বাধ‌তে না পার‌লে পার্শ্ববর্তী খাজরা ও বড়দল ইউনিয়নও প্লা‌বিত হ‌তে পা‌রে।

স্থানীয় আনুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল কুদ্দুস বলেন, বিছট গ্রামে বেড়িবাঁধ ভাঙনের খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। বেড়িবাঁধের প্রায় দেড়শত ফুট নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বিষয়টি আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলীকে হ‌য়ে‌ছে। পাউবোর লোকজন ঈদের ছু‌টি‌তে। তারা ফেরার চেষ্টা কর‌ছেন।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবে) বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাখাওয়াত হোসেন জানান, বেড়িবাঁধে ভাঙনের খবর পেয়ে কর্মকর্তাদের সেখানে পাঠানো হয়েছে। দ্রুত পদ‌ক্ষেপ নেওয়া হ‌চ্ছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়েছে।
 

ঢাকা/শাহীন/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ