বিতর্ক উস্কে বাংলা একাডেমি পুরস্কারের তালিকা স্থগিত
Published: 26th, January 2025 GMT
এবারও বিতর্ক এড়াতে পারল না বাংলা একাডেমি পুরস্কার। তালিকা ঘোষণার দুই দিন পর গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় তা স্থগিত করা হয়েছে। কয়েক বছর ধরে পুরস্কারটি নিয়ে বিতর্ক চলছে। গত বছর বিতর্কের জেরে কথাসাহিত্যিক জাকির তালুকদার তাঁর পুরস্কার ফেরত দিয়েছেন।
বাংলা একাডেমি সূত্রে জানা যায়, উদ্ভূত সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এবং পুরস্কার-তালিকাভুক্ত কারও কারও সম্পর্কে কিছু অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ায় পূর্বঘোষিত ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪’-এর পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন সম্পর্কে আলোচনা হয়। উত্থাপিত অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পূর্বঘোষিত তালিকা স্থগিত করা হয়েছে। তিন কর্মদিবসের মধ্যে পুনর্বিবেচনার পর তালিকাটি আবার প্রকাশ করা হবে।
শনিবার রাত ৮টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টেও একই তথ্য জানান সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি লেখেন, ‘বাংলা একাডেমি পুরস্কারের জন্য ঘোষিত নামের তালিকা স্থগিত করা হয়েছে। পাশাপাশি এটাও বলা প্রয়োজন, যে আজব নীতিমালা এ ধরনের উদ্ভট ও কোটারি পুরস্কারের সুযোগ করে দেয়, সেগুলা দ্রুত রিভিউ করা আমাদের প্রথম কাজ। পাশাপাশি বাংলা একাডেমি কীভাবে পরিচালিত হবে, কোন সব নীতিতে চলবে– এই সবকিছুই দেখতে হবে। একাডেমির আমূল সংস্কারের দিকে আমরা যাব এখন। দেশের সংস্কার হবে, বাংলা একাডেমির সংস্কার কেন নয়?’
গত বৃহস্পতিবার একাডেমির নির্বাহী পরিষদের অনুমোদনে মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারের তালিকা ঘোষণা করা হয়। তালিকায় নাম থাকা ব্যক্তিরা হলেন কবিতায় মাসুদ খান, কথাসাহিত্যে সেলিম মোরশেদ, নাটক ও নাট্যসাহিত্যে শুভাশিস সিনহা, প্রবন্ধ/গদ্যে সলিমুল্লাহ খান, শিশুসাহিত্যে ফারুক নওয়াজ, অনুবাদে জি এইচ হাবীব, গবেষণায় মুহম্মদ শাহজাহান মিয়া, বিজ্ঞানে রেজাউর রহমান, মুক্তিযুদ্ধে মোহাম্মদ হাননান ও ফোকলোরে সৈয়দ জামিল আহমেদ।
পুরস্কারের তালিকা ঘোষণার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা শুরু হয়।
তালিকায় নাম থাকা কয়েকজনের বিষয়ে আপত্তি ওঠে। কোনো নারীর নাম তালিকায় না থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে ফেসবুকে পোস্ট করেন কেউ কেউ।
অর্জয়িতা রিয়া নামে একজন লেখেন, ‘অনেকে বলেন যোগ্য লেখকদের সাহিত্য পুরস্কার দেওয়া হয়। এইটা ভুল কথা। সাহিত্যে পুরস্কার কেউ যোগ্যতার ভিত্তিতে দেয় না, দেয় গুরুত্ব বিবেচনায়। সেটা নোবেল বলেন, আর বাংলা একাডেমি বলেন। তবে দেখা যাচ্ছে গুরুত্ব বিবেচনার ক্ষেত্রে বারবার বাংলা একাডেমি একটা নির্দিষ্ট জেন্ডারকে বাদ দিচ্ছে, নারীদেরকে।’
‘বাংলা একাডেমি কি আওয়ামী লীগারদের পুনর্বাসন-পুরস্কার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে?’– এ প্রশ্ন তুলে গল্পকার ও ঔপন্যাসিক মাহবুব মোর্শেদ তাঁর ফেসবুকে অ্যাকাউন্টে লেখেন, ‘শেখ মুজিবকে নিয়ে বইয়ের পর বই লেখা ফারুক নওয়াজ ও মোহাম্মদ হাননান কীভাবে পুরস্কার পেলেন, সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে আমাদের। এ দুজন নিশ্চিতভাবেই আওয়ামী লীগার।’
তালিকায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদের নাম থাকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। মাহবুব মোর্শেদ লেখেন, ‘বাংলা একাডেমি ও শিল্পকলা একাডেমি একই মন্ত্রণালয়ের অধীন দুই প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠান দুটি নানা সূত্রে পরস্পর সম্পর্কিত। এ রকম একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে পদে থাকা অবস্থায় পুরস্কার দেওয়া যায়?’
এর আগে শুক্রবার এক পোস্টে সংস্কৃতি উপদেষ্টা ফারুকী লেখেন, ‘মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসাবে আমি এই পুরস্কার নিয়ে যে সমালোচনাগুলা হচ্ছে, সেটা গ্রহণ করছি। একজনও নারী লেখক খুঁজে না পাওয়া বিস্ময়কর। এছাড়া কিছু ক্যাটাগরিতে যে প্রশ্ন উঠেছে, সেগুলাও অযৌক্তিক না। সময় এসেছে, এই পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন প্রক্রিয়া সংস্কারের। একই সাথে একাডেমিকে একটা বিশেষ গোষ্ঠীর মিলনমেলা না বানিয়ে কি করে ইনক্লুসিভ করা যায়, কি করে তরুণ মেধাকে এর চালিকাশক্তির অংশ করা যায়, সেটা নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে।’
এদিকে পুরস্কারের জন্য ঘোষিত তালিকা স্থগিত করায় রসিকতাও করছেন কেউ কেউ। অনেকে আবার স্থগিত হওয়া তালিকায় নাম ওঠা ব্যক্তিদের ‘সম্মানহানি’র বিষয়টি নিয়ে কথা বলছেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক শাতিল সিরাজ গত রাতে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘এরপর কারো পুরস্কার প্রাপ্তির ঘোষণা বা নিয়োগ পাওয়ার খবর শুনে মিষ্টি খাওয়া বড্ড ঝুঁকির ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে!।’
তালিকা স্থগিতের বিষয়ে জানতে চাইলে কথাসাহিত্যিক জাকির তালুকদার সমকালকে বলেন, ‘এটি একটি বাজে উদাহরণ। যদিও এর আগে অনেক বাজে উদাহরণ বাংলা একাডেমি তৈরি করেছে। আরেকটি যোগ হলো।’
তিনি জানান, যারা বিরোধিতা করেছেন, তাদের যুক্তি হলো, এর আগে রাজনৈতিক বিবেচনায় পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এবারও আগের সুবিধাভোগীরা পুরস্কার পাওয়ায় রাজনৈতিক কারণেই বাতিল করতে হবে। এর মাধ্যমে মূলত রাজনৈতিক অসুস্থতা বহাল থাকল। তিনি সাহিত্যিককে সাহিত্যের বিচারে দেখার আহ্বান জানান।
জাকির তালুকদারের মতে, বাংলা একাডেমির ভেতর গণতন্ত্রহীনতা, আমলাতন্ত্র, অসুস্থ চর্চা রয়ে গেছে– এসবের প্রতিফলন হিসেবে এ রকম ঘটনা ঘটতে থাকবে, যতদিন না বাংলা একাডেমিকে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ঢেলে সাজানো হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব ল এক ড ম র জন ত ক এক ড ম র ফ সব ক
এছাড়াও পড়ুন:
প্রস্তাবিত স্থান পরিদর্শনে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক
চীনের অর্থায়নে এক হাজার শয্যার আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণের লক্ষ্যে সম্ভাব্য স্থান পরিদর্শন করেছেন রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হারুন অর রশিদ। মঙ্গলবার তিনি নীলফামারী সদর উপজেলার টেক্সটাইল মিলসংলগ্ন জায়গাটিকে ‘প্রথম পছন্দ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
এ সময় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক সাইদুল ইসলাম, সিভিল সার্জন ডা. আব্দুর রাজ্জাক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিভাগীয় কো-অর্ডিনেটর ডা. জুবায়ের আল মামুন ও জেলা বিএনপির সভাপতি আলমগীর সরকার উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে হাসপাতাল নির্মাণের সিদ্ধান্তের খবরের পর মানুষের মাঝে আনন্দের বন্যা নেমে এসেছে। উচ্ছ্বসিত এ জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে মিছিলও হয়েছে।
ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, উপদেষ্টা মহোদয় রংপুর বিভাগের আশপাশে ১০ থেকে ১২ একরের মধ্যে একটি জায়গা নির্ধারণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এখানে ২০ থেকে ২৫ একর জমি পাওয়া যাবে। ফলে হাসপাতাল নির্মাণের জন্য এটি আরও উপযোগী হয়ে উঠেছে। জেলা প্রশাসক এ জায়গাটির বিষয়ে প্রস্তাব দেন। সার্বিক দিক বিবেচনায় এটি উপযোগী স্থান। এই জায়গা নিয়ে এখন পর্যন্ত কেউ দ্বিমত পোষণ করেননি।
ডা. হারুন অর রশিদ আরও বলেন, নিরাপত্তার দিক থেকে উত্তরবঙ্গের মানুষ অত্যন্ত সহনশীল ও শান্তিপ্রিয়। পাশেই সৈয়দপুর বিমানবন্দর এবং সড়ক পথে অন্যান্য জেলার সঙ্গে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা এই স্থানটিকে হাসপাতাল নির্মাণের জন্য আরও উপযুক্ত করে তুলেছে।