বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমাতে সক্ষম রঙিন চাল
Published: 25th, January 2025 GMT
কালো, লালচে, বেগুনি ও বাদামি রঙের চাল! শুনতে অবাক লাগলেও রঙিন এই চালে রয়েছে পুষ্টি ও ঔষধি গুণ। বাহারি রঙের পাশাপাশি স্বাস্থ্য উপকারিতার কারণে এ চাল দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সাধারণ সাদা চালের তুলনায় রঙিন চালে বেশি পরিমাণে প্রোটিন, আঁশ এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। বিশেষ করে, এতে থাকা অ্যান্থোসায়ানিন নামক শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এটি ক্যান্সার প্রতিরোধেও কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম।
প্রায় তিন বছর ধরে চালানো গবেষণার বরাতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ছোলায়মান আলী ফকির ও তাঁর গবেষক দল এসব তথ্য জানান। রঙিন চালের চাষ পদ্ধতি, ফলন ও পুষ্টিগুণের ওপর গবেষণা করে তারা সাফল্য পেয়েছেন। লালচে ও কালো রঙের চালে থাকা পুষ্টিগুলোর মাত্রা বের করতে সক্ষম হয়েছেন বলে দাবি ওই গবেষক দলের। গতকাল শনিবার সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান অধ্যাপক ছোলায়মান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিভাগের অধ্যাপক নেছার উদ্দিন, আলমগীর হোসেন-১ ও আলমগীর হোসেন-২। গবেষক দলে ছিলেন বিভাগের অধ্যাপক আলমগীর হোসেন-২, স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস ও সাগরিকা খাতুন।
ছোলায়মান আলী ফকির জানান, রঙিন চাল মূলত পাহাড়ি অঞ্চল এবং উদ্ভাবনী কৃষকদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। তবে এটি এখন সাধারণ মানুষের মাঝেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। চালের রং লাল, কালো, বাদামি কিংবা বেগুনি হতে পারে। আমরা মূলত লাল ও কালো রঙের চালটি নিয়ে গবেষণা করে এর মধ্যে থাকা পুষ্টিগুণের মাত্রা বের করেছি। গবেষণায় দেখা গেছে, সাদা চালের চেয়ে কালো চালে ২-৩ গুণ খনিজ পদার্থ বিশেষত, আয়রন ও জিংক বিদ্যমান। এগুলোর বাইরের আবরণে থাকা অ্যান্থোসায়ানিন এবং অন্যান্য ফাইটো-কেমিক্যাল উপাদান এসব চালকে করেছে অনন্য। অ্যান্থোসায়ানিনের উপস্থিতির কারণে চালের রং লাল হয়ে থাকে বলেও জানান তিনি।
চাষাবাদ ও ফলন সম্পর্কে প্রধান গবেষক জানান, এটি মূলত আমন মৌসুমে চাষ হয়, তবে বোরো মৌসুমেও ফলন সম্ভব। এ ধানের ফলন কিছুটা কম হলেও বাজারমূল্য বেশি হওয়ায় কৃষকরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন। এই ধানের একটি চ্যালেঞ্জ হলো কম রাসায়নিক সার সহনশীলতা এবং পাখি বা রোগবালাইয়ের প্রতি সংবেদনশীল। তাই উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন এবং আধুনিক কৃষি ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন রয়েছে বলেও জানান তিনি।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সাবেক আইনমন্ত্রীর সিটিজেনস ব্যাংককে ঢেলে সাজানো হচ্ছে
সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের মালিকানায় থাকা সিটিজেনস ব্যাংককে ঢেলে সাজানো শুরু করেছে নতুন পরিচালনা পর্ষদ। ইতিমধ্যে ব্যাংকটিতে দুজন নতুন উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর আগে এই দুজন ব্যাংক এশিয়ার সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
এ ছাড়া সিটিজেনস ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ মাসুমেরও মেয়াদ শেষ হয়েছে। তাঁর স্থলে ব্যাংক এশিয়ার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আলমগীর হোসেনকে এমডি পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনের পর এই নিয়োগ চূড়ান্ত করা হবে।
জানা যায়, সিটিজেনস ব্যাংকের বর্তমান পর্ষদ এটিকে ব্যাংক এশিয়ার আদলে করপোরেট মডেলে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে। সেই কারণে শীর্ষ পর্যায়ে ব্যাংক এশিয়া থেকে সবচেয়ে বেশি লোক নিয়োগের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশের পঞ্চম প্রজন্মের ব্যাংকটি ২০২০ সালে রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন পায়। তখন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের মা জাহানারা হক। তিনি মারা যাওয়ার পর আনিসুল হকের ঘনিষ্ঠ তৌফিকা আফতাবকে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান করা হয়।
ব্যাংকটির নথিপত্র অনুযায়ী, সিটিজেনস ব্যাংকে আনিসুল হকের শেয়ার রয়েছে ১০ শতাংশ। এ ছাড়া পোশাক খাতের আরও সাত ব্যবসায়ীর রয়েছে ১০ শতাংশ করে শেয়ার। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ১৪ আগস্ট এক চিঠিতে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সিটিজেনস ব্যাংকের চেয়ারম্যান তৌফিকা আফতাবের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। তৌফিকা আফতাব আনিসুল হকের আইনি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও জড়িত।
সূত্র জানায়, গত ১৪ সেপ্টেম্বর ব্যাংকের তৃতীয় বার্ষিক সাধারণ সভা বা এজিএমে পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন চৌধুরী মোহাম্মদ হানিফ শোয়েব। পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠান সালমা গ্রুপের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক চৌধুরী মোহাম্মদ হানিফ শোয়েব। নতুন চেয়ারম্যান দায়িত্ব নেওয়ার পর ব্যাংকটিকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত মাসে ব্যাংক এশিয়ার সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মোস্তাফিজুর রহমানকে ডিএমডি হিসেবে সিটিজেনস ব্যাংকে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি দীর্ঘদিন ব্যাংক এশিয়ার বনানী শাখার ব্যবস্থাপক ছিলেন। এর বাইরে ব্যাংক এশিয়ার সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদুল লতিফকেও সিটিজেনস ব্যাংকের ডিএমডি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি ব্যাংক এশিয়ার প্রধান শাখার ব্যবস্থাপক ছিলেন।
জানা যায়, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সিটিজেনস ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ মাসুমের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তাই নতুন এমডি হিসেবে ব্যাংক এশিয়ার ডিএমডি আলমগীর হোসেনকে নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয় ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সভায়। এখন এমডির এই নিয়োগ বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান চৌধুরী মোহাম্মদ হানিফ শোয়েবকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। ব্যাংকটির কোম্পানি সচিব ওয়াহেদ ইমাম প্রথম আলোকে বলেন, নতুন এমডি নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছে, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
বেসরকারি খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে ২০২০ সালে অনুমোদন পেলেও ব্যাংকটির বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হয় ২০২২ সালের মাঝামাঝি। সারা দেশে ব্যাংকটির ১৫টি শাখা রয়েছে। ব্যাংকটির সর্বশেষ ২০২৩ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ওই বছর শেষে ব্যাংকটির আমানত ছিল ১ হাজার ৫ কোটি টাকা। আর এ সময়ে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ৪৩৮ কোটি টাকা।
বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সাল পর্যন্ত ব্যাংকটি ছিল লোকসানি ব্যাংক। ওই বছর ব্যাংকটি কর–পরবর্তী প্রায় দেড় কোটি টাকা লোকসান করেছে। ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধন ৪০০ কোটি টাকা।