সন্তানের মুক্তির দাবিতে শত দিনের অনশন
Published: 25th, January 2025 GMT
মিসরে কারাবন্দি ব্রিটিশ-মিসরীয় অ্যাক্টিভিস্ট ও লেখক আলা আবদেল ফাত্তাহর মা লায়লা সোয়েফ সম্প্রতি তাঁর অনশনের ১০০তম দিন পার করেছেন। তিনি সন্তানের মুক্তির জন্য যুক্তরাজ্যের প্রতি ‘যথাযথ পদক্ষেপ’ নেওয়ার দাবি জানান।
‘মিথ্যা সংবাদ ছড়িয়ে দেওয়ার’ অভিযোগে মিসরীয় কর্তৃপক্ষ আবদেল ফাত্তাহকে পাঁচ বছরের সাজা দেয়। তা সম্পন্ন করার পরও তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়নি। এর প্রতিবাদে লায়লা সোয়েফ ২৯ সেপ্টেম্বর অনশন শুরু করেন। মিসরীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিচারের আগে আটক থাকা দুই বছর তাঁর সাজার অংশ হিসেবে গণ্য হবে না, যা মিসরীয় আইনের লঙ্ঘন।
২০১১ সালে মিসরে হোসনি মোবারকের পতনের সময় গণঅভ্যুত্থানে আবদেল ফাত্তাহ শক্তিশালী ভূমিকা রেখেছিলেন। অ্যাক্টিভিজমের জন্য মিসরীয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে বারবার কারাদণ্ড দিয়েছে।
৬৮ বছর বয়সী লায়লা সোয়েফ ছেলের মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য যুক্তরাজ্য সরকার আরও জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া পর্যন্ত না খাওয়ার শপথ নিয়েছেন। প্রতিদিন কেবল কালো কফি, ভেষজ চা এবং তিন প্যাকেট রিহাইড্রেশন লবণ খেয়ে বেঁচে আছেন।
এক বিবৃতিতে লায়লা বলেন, ‘আমি সত্যিই বিশ্বাস করতে পারছি না, আমার শরীর ১০০ দিন ধরে অনশনে আছে। আমার ধারণা ছিল না, এটি সম্ভব হবে কিনা। দুর্ভাগ্যবশত (ব্রিটিশ) সরকার আমার ছেলের মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ না নিয়ে আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করার জন্য অপেক্ষা করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ভাগ্যবান যে, আমার শরীর এখনও টিকে আছে। শিগগিরই আমাদের সময় ফুরিয়ে যাবে। আমার ওজন অনেক কমে গেছে। প্রতিদিন আরও ক্লান্ত হয়ে পড়ছি।’
লায়লা সোয়েফের মেয়ে সানা সাইফ ভাইয়ের মুক্তি নিশ্চিত করার প্রচেষ্টায় যুক্তরাজ্য সরকারের ‘দায়সারা অবস্থান’ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘কেউ কল্পনাও করতে পারেনি, আমার মা ১০০ দিন ধরে অনশন চালিয়ে যেতে পারবেন। যে কোনো মুহূর্তে তিনি সংকটাপন্ন অবস্থায় পড়তে পারেন। তারা (ব্রিটিশ সরকার) কিসের জন্য অপেক্ষা করছে?’
মিসরীয় কর্তৃপক্ষ আবদেল ফাত্তাহর সাজা বাড়াতে পারে– এমন আশঙ্কা থেকে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করেছে আলা আবদেল ফাত্তাহর পরিবার। তা সত্ত্বেও তারা তেমন কোনো সাড়া পাননি।
সেপ্টেম্বরে লায়লা সোয়েফ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামির সঙ্গে দেখা করেন, যিনি বিরোধী দলে থাকার সময় আলার মুক্তির প্রচারণায় সোচ্চার সমর্থক ছিলেন। ওই সাক্ষাতের পরও খুব ইতিবাচক কিছু আসেনি। তখন লায়লা জানান, তিনি আরও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের জন্য অপেক্ষা করছেন।
গত ২০ ডিসেম্বর ল্যামি আলা আবদেল ফাত্তাহর বিষয়টি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে উত্থাপন করেন। সেখানে পার্লামেন্টের অন্তত ১০৭ জন সদস্য আবদেল ফাত্তাহর মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য ‘হাতে থাকা সর্বোচ্চ কূটনৈতিক পদক্ষেপ’-এর আহ্বান জানিয়েছেন। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারও জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অ্যাক্টিভিস্টদের চাপের মুখে রয়েছেন।
আলার পরিবারকে জানানো হয়েছিল, ৮ আগস্ট মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সঙ্গে এক বৈঠকে স্টারমার আলাকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি উত্থাপন করেছিলেন। সেখানে কী আলোচনা হয়েছে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হয়নি।
গত মাসে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রধান অ্যাগনেস ক্যালামার্ডসহ মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা স্টারমারকে এ বিষয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে চিঠি লিখেছিলেন। কূটনৈতিক অবস্থানকে নির্দেশ করে সেখানে তাদের যুক্তি ছিল– ‘কলমের আঘাতেই এ মামলার সমাধান হতে পারে।’
এ ছাড়া গত মাসেই ব্রায়ান কক্স, বিল নাই, এমিলি ওয়াটসনসহ বেশ কয়েকজন প্রথম সারির অভিনেতা এক ভিডিও বার্তায় স্টারমারকে আলা আবদেল ফাত্তাহর মুক্তির দাবিতে ‘ফোন তুলে নেওয়ার’ আহ্বান জানান। v
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অনশন আবদ ল ফ ত ত হ ন শ চ ত কর র র জন য অ পদক ষ প সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনার পরও অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সি আর আবরার কথা বলার পরও কোনো সুরাহা হয়নি। তিনি শিক্ষার্থীদের বারবার অনুরোধ করলেও ভিসির পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) সকাল পৌনে ১০টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত শিক্ষা উপদেষ্টা কুয়েট ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের পাশে ছিলেন।
এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘‘তাদের দাবি মেনে নেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে একটা কমিটি গঠন করা হয়েছে। অতি শিগগির কমিটি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলবে। তাড়াহুড়ো করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই, কারণ তা আদালতে টেকে না।’’
আরো পড়ুন:
কুয়েটে শিক্ষা উপদেষ্টা, কথা বলছেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে
৪০ ঘণ্টা অনশনে, অসুস্থ কুয়েটের পাঁচ শিক্ষার্থী
শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা দুইমাস ধরে আন্দোলন করে আসছি। কিন্তু, আমাদের দাবি মানা হচ্ছে না। আমরা এই বিষয়ে আর সময় দিতে চাই না। আমরা লাশ হয়ে গেলেও ভিসির পদত্যাগ ছাড়া অনশন ভাঙব না।
এর আগে, গত সোমবার বিকেল ৪টা থেকে কুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদকে অপসারণের দাবিতে ক্যাম্পাসের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারের বারান্দায় আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেন ৩২ জন শিক্ষার্থী।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো হলেও কুয়েট প্রশাসন নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এ ঘটনায় হামলাকারীদের নাম উল্লেখ না করে অজ্ঞাতপরিচয়ের কয়েকজনের বিরুদ্ধে শুধু দায়সারা একটি মামলা করেছে কর্তৃপক্ষ। সেই মামলায় এখনো কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। উল্টো হামলার ঘটনায় বহিরাগত একজন বাদী হয়ে ২২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
মামলায় ছাত্রদের ব্যক্তিগত পরিচয়, বিভাগ ও রোল নম্বর যেভাবে নিখুঁত বর্ণনা করা হয়েছে তা কুয়েট প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব না। এরপর কর্তৃপক্ষ ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে। এর মধ্যে, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীও রয়েছে। উপাচার্যের কাছে বারবার দাবি জানালেও তিনি দাবিগুলো বাস্তবায়ন করেননি।
গত ১৩ এপ্রিল ক্যাম্পাসে ঢুকে হল খুলে দেওয়ার জন্য দাবি জানানো হয়। কিন্তু, কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের আহ্বানে সাড়া দেয়নি। দুই রাত খোলা আকাশের নিচে থাকার পর ১৫ এপ্রিল তালা ভেঙে হলে ঢোকেন তারা। কিন্তু হলে খাবার, পানি ও ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হয়নি। এসব ঘটনায় উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে অনশন কর্মসূচি পালন করছেন তারা।
ঢাকা/রাজীব