মিসরে কারাবন্দি ব্রিটিশ-মিসরীয় অ্যাক্টিভিস্ট ও লেখক আলা আবদেল ফাত্তাহর মা লায়লা সোয়েফ সম্প্রতি তাঁর অনশনের ১০০তম দিন পার করেছেন। তিনি সন্তানের মুক্তির জন্য যুক্তরাজ্যের প্রতি ‘যথাযথ পদক্ষেপ’ নেওয়ার দাবি জানান।
‘মিথ্যা সংবাদ ছড়িয়ে দেওয়ার’ অভিযোগে মিসরীয় কর্তৃপক্ষ আবদেল ফাত্তাহকে পাঁচ বছরের সাজা দেয়। তা সম্পন্ন করার পরও তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়নি। এর প্রতিবাদে লায়লা সোয়েফ ২৯ সেপ্টেম্বর অনশন শুরু করেন। মিসরীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিচারের আগে আটক থাকা দুই বছর তাঁর সাজার অংশ হিসেবে গণ্য হবে না, যা মিসরীয় আইনের লঙ্ঘন।
২০১১ সালে মিসরে হোসনি মোবারকের পতনের সময় গণঅভ্যুত্থানে আবদেল ফাত্তাহ শক্তিশালী ভূমিকা রেখেছিলেন। অ্যাক্টিভিজমের জন্য মিসরীয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে বারবার কারাদণ্ড দিয়েছে।
৬৮ বছর বয়সী লায়লা সোয়েফ ছেলের মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য যুক্তরাজ্য সরকার আরও জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া পর্যন্ত না খাওয়ার শপথ নিয়েছেন। প্রতিদিন কেবল কালো কফি, ভেষজ চা এবং তিন প্যাকেট রিহাইড্রেশন লবণ খেয়ে বেঁচে আছেন।
এক বিবৃতিতে লায়লা বলেন, ‘আমি সত্যিই বিশ্বাস করতে পারছি না, আমার শরীর ১০০ দিন ধরে অনশনে আছে। আমার ধারণা ছিল না, এটি সম্ভব হবে কিনা। দুর্ভাগ্যবশত (ব্রিটিশ) সরকার আমার ছেলের মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ না নিয়ে আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করার জন্য অপেক্ষা করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ভাগ্যবান যে, আমার শরীর এখনও টিকে আছে। শিগগিরই আমাদের সময় ফুরিয়ে যাবে। আমার ওজন অনেক কমে গেছে। প্রতিদিন আরও ক্লান্ত হয়ে পড়ছি।’
লায়লা সোয়েফের মেয়ে সানা সাইফ ভাইয়ের মুক্তি নিশ্চিত করার প্রচেষ্টায় যুক্তরাজ্য সরকারের ‘দায়সারা অবস্থান’ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘কেউ কল্পনাও করতে পারেনি, আমার মা ১০০ দিন ধরে অনশন চালিয়ে যেতে পারবেন। যে কোনো মুহূর্তে তিনি সংকটাপন্ন অবস্থায় পড়তে পারেন। তারা (ব্রিটিশ সরকার) কিসের জন্য অপেক্ষা করছে?’
মিসরীয় কর্তৃপক্ষ আবদেল ফাত্তাহর সাজা বাড়াতে পারে– এমন আশঙ্কা থেকে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করেছে আলা আবদেল ফাত্তাহর পরিবার। তা সত্ত্বেও তারা তেমন কোনো সাড়া পাননি।
সেপ্টেম্বরে লায়লা সোয়েফ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামির সঙ্গে দেখা করেন, যিনি বিরোধী দলে থাকার সময় আলার মুক্তির প্রচারণায় সোচ্চার সমর্থক ছিলেন। ওই সাক্ষাতের পরও খুব ইতিবাচক কিছু আসেনি। তখন লায়লা জানান, তিনি আরও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের জন্য অপেক্ষা করছেন।
গত ২০ ডিসেম্বর ল্যামি আলা আবদেল ফাত্তাহর বিষয়টি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে উত্থাপন করেন। সেখানে পার্লামেন্টের অন্তত ১০৭ জন সদস্য আবদেল ফাত্তাহর মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য ‘হাতে থাকা সর্বোচ্চ কূটনৈতিক পদক্ষেপ’-এর আহ্বান জানিয়েছেন। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারও জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অ্যাক্টিভিস্টদের চাপের মুখে রয়েছেন।
আলার পরিবারকে জানানো হয়েছিল, ৮ আগস্ট মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সঙ্গে এক বৈঠকে স্টারমার আলাকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি উত্থাপন করেছিলেন। সেখানে কী আলোচনা হয়েছে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হয়নি।
গত মাসে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রধান অ্যাগনেস ক্যালামার্ডসহ মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা স্টারমারকে এ বিষয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে চিঠি লিখেছিলেন। কূটনৈতিক অবস্থানকে নির্দেশ করে সেখানে তাদের যুক্তি ছিল– ‘কলমের আঘাতেই এ মামলার সমাধান হতে পারে।’
এ ছাড়া গত মাসেই ব্রায়ান কক্স, বিল নাই, এমিলি ওয়াটসনসহ বেশ কয়েকজন প্রথম সারির অভিনেতা এক ভিডিও বার্তায় স্টারমারকে আলা আবদেল ফাত্তাহর মুক্তির দাবিতে ‘ফোন তুলে নেওয়ার’ আহ্বান জানান। v

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অনশন আবদ ল ফ ত ত হ ন শ চ ত কর র র জন য অ পদক ষ প সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে গণঅবস্থানের ১৮ দিন

ফ্যাসিবাদী দল হিসেবে আওয়ামী লীগ ও মিত্রদের নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে চলমান গণঅবস্থান কর্মসূচি রবিবার ১৮তম দিন অতিবাহিত করেছে।

এদিনও ফ্যাসিবাদী দল নিষিদ্ধ ও বিচারের পাঁচ দফা দাবির পক্ষে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ অব্যাহত ছিল।

রবিবার (২ মার্চ) গণঅবস্থানে সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত অংশ নেন জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের বিভিন্ন পর্যার্যের নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়েছিলেন।

আরো পড়ুন:

নাগরিক পার্টির যুগ্ম-আহ্বায়ক সাবেক ছাত্রদল নেতা

ঢাবিতে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের পতাকা উত্তোলন

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের রাজনৈতিক আহ্বায়ক আনিছুর রহমান, সদস্য সচিব হাসান মোহাম্মদ আরিফ, সহকারী সদস্য সচিব গালীব ইহসান, সদস্য ওয়াসিম আহম্মেদ, মোহাম্মদ হিজবুল্লাহ ও তামিম আনোয়ার।

এছাড়া বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ, সদস্য সচিব ফজলুর রহমান, সহকারী সদস্য সচিব আশরাফুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম নূর শাফায়েতুল্লাহ, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম প্রমুখ।

এদিকে, রমজান উপলক্ষে গণঅবস্থানের মঞ্চে গণইফতারের আয়োজন করা হয়। এতে গণঅবস্থানকারী ছাত্র-জনতার পাশাপাশি সাধারণ পথচারী রোজাদাররাও অংশগ্রহণ করেন।

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দুই নেতা মো. ওমর ফারুক ও আবু সাঈদের অনশনের মধ্য দিয়ে রাজু ভাস্কর্যের চলমান কর্মসূচি শুরু হয়। পরে ১৫ ফেব্রুয়ারি অনশনে যোগ দেন বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের নেতাকর্মীরা।

১৬ ফেব্রুয়ারি উত্তরার শহীদ রানা তালুকদারের পরিবার এ কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালানোর আহ্বান জানান। তার অনুরোধে অনশন ভেঙে লাগাতার গণঅবস্থান শুরু হয়।

২৯ ফেব্রুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ।

তাদের দাবিগুলো হলো-⁠ ⁠গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তাদের তাদের মিত্রদের নিষিদ্ধ করতে হবে; ⁠সকল ফ্যাসিবাদী দল ও সংগঠনের কার্যালয় ও সম্পদ রাষ্ট্রীয়ভাবে অধিগ্রহণ করে তা ফ্যাসিবাদী আমলে নির্যাতিত অসহায় মজলুমদের পুনর্বাসনে ব্যবহার করতে হবে; ⁠২০০৯-২০২৪ পর্যন্ত ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মন্ত্রীপরিষদ সদস্যসহ সবাইকে ফ্যাসিস্ট ঘোষণা করে গ্রেপ্তারি পরওয়ানা জারি ও বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।

তাদের অন্য দুইটি দাবি হলো- ⁠ফ্যাসিবাদ ধারণ করে গড়ে ওঠা নব্য ফ্যাসিবাদী বা একই চরিত্রের যেকোনো দল ও সংগঠনকেও নিষিদ্ধ করতে হবে; ⁠ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দলকে নিষিদ্ধ করার বিধান সংবিধানে সংযুক্ত করতে হবে।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে গণঅবস্থানের ১৮ দিন