প্রথম দেখায় কাউকে আমরা বলি সুন্দর, কাউকে অনেক সুন্দর আবার কাউকে অসাধারণ সুন্দর। সুন্দরের এই সংজ্ঞা কেউ দেন শারীরিক সৌন্দর্য দেখে, আবার কারও কাছে মনের সৌন্দর্যই প্রকৃত সুন্দর। তাই সুন্দরের মধ্যেই প্রকাশ পায় রকমফের। চলুন বিস্তারিত পড়ি–
সুন্দর এবং প্রকৃত সুন্দর: সুন্দর মানুষ সহজেই সবার চোখে পড়ে। যে প্রকৃত সুন্দর, সে চিরস্থায়ীভাবে মানুষের মনে গেঁথে যায়। কারণ, সুন্দর মানুষ দেখতেই সুন্দর। তাদের সাধারণত তেমন কোনো গুণ থাকে না। তবে প্রকৃত সুন্দর মানুষের এমন কিছু ব্যাপার থাকে, যা কেউ অস্বীকার করতে পারে না। এ কারণে সে মানুষের মনে আসন লাভ করে।
ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য নয়: একজন সুন্দর মানুষ নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে। ম্যাগাজিন, পত্রিকার পাতায় নিজেকে প্রকাশ করতে চায়। অন্যদিকে প্রকৃত সুন্দর মানুষ বিশ্বে তার মনের ভাবনা আর স্বপ্ন ছড়িয়ে দিতে ব্যস্ত থাকে। এদিক থেকে প্রকৃত সুন্দর মানুষ একা। এক সময় সে সবার মনে স্থান করে নেয়।
ছয় বছরের মোৎসার্ট: মোৎসার্ট ছয় বছর বয়সে গান কম্পোজিশন শুরু করেন। তিনশ বছর পরও মানুষ তাঁকে ভোলেনি। বরং লাখ লাখ মানুষ আজও মুগ্ধ হয়ে মোৎসার্ট শোনে আর মোহিত হয়। প্রকৃত সুন্দর মানুষ মোৎসার্টের কম্পোজিশনের মতোই। শত বছর পরও মানুষ তাকে মনে রাখে অকৃপণভাবে।
নিজেকে নিয়ে ব্যস্ততা: সুন্দর মানুষ নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে। কারণ তারা স্বার্থপর। প্রকৃত সুন্দর মানুষ নিজেকে উজাড় করে পরার্থে। মুখের হাসি শেয়ার করে বন্ধুর চোখের জল মুছে দিতে। নিজের তৈরি খাবার অন্যের মুখে তুলে দেয় অনায়াসে। বুকে আগলে রাখে দুঃখী মানুষকে। মনের ভেতর থেকেই তাদের জন্য মানুষ ভালোবাসা অনুভব করে।
ব্যস্ত থাকে জ্ঞান নিয়ে: সুন্দর মানুষ ব্যস্ত থাকে তার নিজের দেহের সৌন্দর্য নিয়ে, শরীরের গঠন নিয়ে। এগুলো যে কোনো সময় নষ্ট হয়ে যেতে পারে। প্রকৃত সুন্দর মানুষ ব্যস্ত থাকে তার জ্ঞান, জানার পরিধি, অভিজ্ঞতা ইত্যাদি নিয়ে। শারীরিক সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায় দ্রুতই। মনের সৌন্দর্য আজীবন, এমনকি মৃত্যুর পরও অটুট থাকে।
রং বদলানোর খেলা: সুন্দর মানুষ শিশু থেকে কিশোর হয়, কিশোর থেকে প্রাপ্তবয়স্ক, যৌবনপ্রাপ্ত, বৃদ্ধ হয়। এর সঙ্গে সঙ্গে তার সৌন্দর্যের তারতম্য ঘটতে থাকে। প্রকৃত সুন্দর মানুষ সব সময়ই সুন্দর। তার সৌন্দর্য দিন দিন কমে না, বরং বাড়তে থাকে। প্রকৃত সুন্দর মানুষ আজীবনের জন্যই সুন্দর; সে মানুষের মনে স্থান করে নেয়।
জন্মসূত্রে: জন্মসূত্রে সুন্দর মানুষ হওয়া যায়। প্রকৃত সুন্দর মানুষ হতে হলে আপনাকে তা অর্জন করতে হবে। অর্থাৎ সুন্দর মানুষ কেউ হবে কি হবে না, সেটি তার নিজের ওপর নির্ভর করে না। প্রকৃত সুন্দর মানুষ হতে হলে নিজেকে তৈরি করে নিতে হয়।
সুন্দর, নাকি সুন্দরমনা: প্রকৃত সুন্দর মানুষ বেপরোয়া নিজেকে নিয়ে। সে জানে তার সৌন্দর্য হারানোর নয়; বরং বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তার সৌন্দর্য বাড়তে থাকবে। যদিও সে তার সৌন্দর্য নিয়ে কখনোই ব্যস্ত নয়। প্রকৃত সুন্দরের ব্যাপারে কোনো আপেক্ষিকতা নেই। এটি ধ্রুব সত্য। সবাই প্রকৃত সুন্দর মানুষকে ভালোবাসতে চায়। আপনি কোনটা চান? সুন্দর হতে, নাকি সুন্দরমনা হতে? u
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ঠিকাদার বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে ২ প্রকৌশলীকে হুমকির অভিযোগ
খুলনা নগরীর খানজাহান আলী থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোল্লা সোহাগের বিরুদ্ধে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) দুই প্রকৌশলীকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কুয়েটের একটি ভবনের ছাদের ওয়াটারপ্রুফিংয়ের কাজে ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে লাভ আরও বেশি নির্ধারণের কথা বলেছিলেন ওই ঠিকাদার। এ নিয়ে প্রকৌশলীদের তিনি হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ প্রেক্ষাপটে কুয়েটের নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর) শেখ আবু হায়াত ও নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর) মো. গোলাম কিবরিয়া সোমবার কুয়েট উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগ করে নিরাপত্তা চেয়েছেন।
সূত্র জানায়, কুয়েটের ১৩ নম্বর ভবনের ছাদের ওপর ওয়াটারপ্রুফিংয়ের কাজ নিয়েছেন মোল্লা সোহাগ। কাজটি কয়েকদিন আগে শুরু হয়। গত রোববার বিকেল ৩টার দিকে ঠিকাদার সোহাগ প্রথমে নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়ার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে কল দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী এ বি এম মামুনুর রশিদ এবং অন্য নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ আবু হায়াতকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও হুমকি দেন। গালাগাল করতে নিষেধ করলে তিনি গোলাম কিবরিয়াকেও গালাগাল ও হুমকি দেন। পরে তিনি একই পরিচয় দিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ আবু হায়াতকে ফোনে গালাগাল ও হুমকি দেন।
উপাচার্যের কাছে দুই নির্বাহী প্রকৌশলী লিখিত অভিযোগে বলেন, ওয়াটারপ্রুফিংয়ের কাজের দর প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয়ের প্রকৌশলীরা বাজারদরের সঙ্গে সরকারি নিয়মে ভ্যাট, আইটি ও ১০ শতাংশ প্রফিট বা লাভ (পূর্বনির্ধারিত) যুক্ত করে নির্ধারণ করেন। ঠিকাদার সোহাগ ১০ শতাংশ লাভ কেন যুক্ত করে দর নির্ধারণ করা হয়েছে, তাঁকে আরও বেশি লাভ দিতে হবে বলে ফোনে প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়াকে জানান। এ কথা বলার পর প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া অফিসে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু কোনো কথা না শুনে ফোনে প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া ও শেখ আবু হায়াতকে গালাগাল ও মারধরের হুমকি দেন সোহাগ। এ অবস্থায় তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ আবু হায়াত বলেন, রোববার বিকেল ৩টার কিছু আগে খানজাহান আলী থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক পরিচয়ে আমাকে ফোন দিয়ে বলে– ‘তুই চেয়ারের পরে বসে সবাইরে ১০ লাখ ২০ লাখ টাকার কাজ দিস। আমাকে দিছিস টেন পারসেন্ট লাভে।’ এই বলে আমাকে যাচ্ছেতাই বলে গালাগাল করেন। পাঁচ মিনিট পর ফোন দিয়ে আমাকে দেখে ছাড়বেন, আমার বাড়ি আক্রমণ করবেন, ফুলবাড়িগেটে গেলে আমাকে দেখে নেবেন– এসব বলে হিুমকি দেন।
নিজের সাংগঠনিক পরিচয় ও প্রকৌশলীকে ফোন দেওয়ার কথা স্বীকার করেন মোল্লা সোহাগ। তবে কোনো ধরনের ঠিকাদারি কাজের সঙ্গে তিনি জড়িত নন বলে দাবি করেন। মোল্লা সোহাগ বলেন, আমার নেতার অর্ডার আছে– আমি কোনো জায়গায় কোনো টেন্ডারেও যাই না, কোনো ঠিকাদারিতেও নেই। আমার কোনো কাজ কুয়েটে চলে না। আমার ট্রেড লাইসেন্সই নেই, কাজ পরের কথা। আমি তাদের (প্রকৌশলী) ফোন দিয়েছিলাম, কথা হয়েছে, তবে কোনো হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়নি।
কোনো কাজ চলছে না, তাহলে প্রকৌশলীদের কার হয়ে ফোন দিয়েছিলেন– এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা আবু হায়াত ও গোলাম কিবরিয়াকে ফোন দিলে ভালোভাবে জানতে পারবেন।’