Samakal:
2025-01-31@10:59:49 GMT

ডোরা নির্বিশেষে আটক করুন

Published: 25th, January 2025 GMT

ডোরা নির্বিশেষে আটক করুন

দাগি অপরাধীদের অপতৎপরতার পাশাপাশি ধারাবাহিক ছিনতাই, ডাকাতি ও চাঁদাবাজির ঘটনায় জনমনে যেই আতঙ্ক ছড়াইতেছে উহা সকলের জন্যই উদ্বেগজনক। শনিবার প্রকাশিত সমকালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দীর্ঘদিন কারাগারে থাকিবার পর সম্প্রতি যেই সকল চিহ্নিত সন্ত্রাসী জামিনে বাহির হইয়া আসিয়াছে, তাহারা সাঙ্গোপাঙ্গ লইয়া ফের অপরাধজগৎ দাপাইয়া বেড়াইতেছে। ফলস্বরূপ খুন, জখম, দখল, ছিনতাই, চাঁদাবাজির ন্যায় অপরাধ বাড়িতেছে; এমনকি চাঁদা ও ভাগবাটোয়ারা লইয়া নিজেদের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষের পাশাপাশি খুনোখুনিও চলিতেছে। পুলিশের অপরাধ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাইতেছে, গত সেপ্টেম্বর হইতে ডিসেম্বর অবধি চার মাসে ঢাকাসহ সারাদেশে ৯৪৭ জন খুন হইয়াছেন। ডাকাতি ও ছিনতাই ঘটনায় ওই চার মাসে মামলা হইয়াছে ৭৯৬টি, অপহরণের ঘটনায় মামলা হয় ৩০২টি। এই সকল পরিসংখ্যানই বলিয়া দেয়, নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তা কতটা হুমকির সম্মুখীন। বলিয়া রাখা প্রয়োজন, মামলার সংখ্যা দিয়া দেশের প্রকৃত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কখনোই নিরূপণ করা যায় না। কারণ– প্রথমত, দুর্ভাগ্যবশত, ফৌজদারি মামলার সংখ্যা বৃদ্ধিকে এই দেশের পুলিশ স্টেশন তথা থানাগুলির পরিচালকদের অনেকে বরাবরই নিজেদের ব্যর্থতা হিসাবে দেখে। তাই মামলা গ্রহণে তাহাদের মধ্যে নিরুৎসাহ লক্ষ্য করা যায়। দ্বিতীয়ত, মূলত দীর্ঘদিনের বিচারহীনতার অপসংস্কৃতির কারণে ভুক্তভোগীদের মধ্যে আইনের আশ্রয় গ্রহণে উৎসাহ কম দেখা যায়। ফলে নিছক মামলার সংখ্যা দিয়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যথাযথভাবে উপলব্ধি করা যায় না। প্রকৃত চিত্র আরও ভয়াবহ হইবার আশঙ্কা উড়াইয়া দেওয়া যাইবে না। 

আমরা জানি, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পুলিশের থানা, ফাঁড়িসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন স্থাপনায় হামলার মাধ্যমে আগ্নেয়াস্ত্র-গুলি লুটের ঘটনা ঘটিয়াছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, সেই সময় লুট হওয়া অস্ত্রের সংখ্যা প্রায় ছয় সহস্র, গুলির পরিমাণ ছয় লক্ষাধিক। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় অদ্যাবধি প্রায় সাড়ে ৪ সহস্র 
অস্ত্র উদ্ধার হইলেও, বেহাত রহিয়াছে প্রায় এক সহস্র চারশত অস্ত্র। আশঙ্কা করা হয়, সেই সকল অস্ত্র-গুলি হাতবদল হইয়া সন্ত্রাসী, এমনকি কিশোর গ্যাংয়ের হস্তে চলিয়া যাইতে পারে। এই অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি অস্বাভাবিক নহে।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার বলিয়াছেন, ‘শীর্ষ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে’ তাহারা সতর্ক রহিয়াছেন। তিনি ওই অপরাধীদের নজরদারিতে রাখা হইয়াছে বলিয়া জানাইয়াছেন। র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালকও বলিয়াছেন, যাহারা নতুনভাবে অপরাধে জড়াইতেছে, তাহাদের উপর নজরদারি রহিয়াছে। বাস্তবতা হইল, পুলিশ ও র‍্যাবের কথিত নজরদারির মধ্যেই অপরাধজনক ঘটনা বৃদ্ধি পাইতেছে। নাগরিকেরা জানমালের নিরাপত্তা লইয়া ক্রমবর্ধমান শঙ্কাবোধ করিতেছেন। এইদিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এহেন অবনতি এমন সময়ে ঘটিতেছে, যখন দেশে বিবিধ কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ বিঘ্নিত হইতেছে। পাশাপাশি বিনিয়োগেও ভাটার টান লক্ষ্য করা যাইতেছে, বিশেষত কর্মসংস্থানের উপর যাহার অভিঘাত ভয়াবহ হইতে পারে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গৃহীত না হইলে একদিকে নতুন নতুন অপরাধী জন্ম লইতে পারে, অন্যদিকে উপায়হীন নাগরিকদের মধ্যে আইন স্বীয় হস্তে লইবার প্রবণতা বৃদ্ধি পাইতে পারে। এই অবস্থায় সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও অপরাধ আরও বাড়িয়া যাইতে পারে।

সত্য, বাহিনী হিসেবে বিশেষত পুলিশ এখনও সম্পূর্ণ সংগঠিত রূপ ফিরিয়া পায় নাই। কিন্তু এই অজুহাত দিয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্তাদের দায়িত্ব এড়াইবার অবকাশ নাই। এখনও সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাহাদের সহযোগিতা করিতে মাঠে আছেন, যাহারা ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাও পাইয়াছেন। আমাদের বিশ্বাস, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের জামিন বাতিলের আইনি উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি সর্বত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল কার্যক্রম জোরদার এবং গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হইলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব নহে। সর্বোপরি আটক করিতে হইবে ডোরা নির্বিশেষে। যেই দল বা গোষ্ঠীরই হউক, অপরাধীর পরিচয় অপরাধ দিয়াই নির্ধারিত হওয়া উচিত। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর স থ ত নজরদ র অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

বাসে বিএম কলেজছাত্রী লাঞ্ছিত, বাস শ্রমিক-শিক্ষার্থী পাল্টাপাল্টি হামলা ও ভাংচুর

বাস ভাড়া নিয়ে এক ছাত্রীকে হেনস্থার অভিযোগে বরিশাল নগরের রূপাতলী বাস টার্মিনাল অবরোধ করে রেখেছেন শিক্ষার্থীরা। এসময় শিক্ষার্থীরা বাস টার্মিনালে চাঁদাবাজি বন্ধসহ ৮ দফা দাবী জানিয়েছেন। তবে সড়ক অবরোধের আগে ছাত্রী হেনস্থার প্রতিবাদ জানাতে গেলে বাস শ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় হামলা পাল্টা হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। 

সড়ক অবরোধের কারণে ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কসহ বিভাগের অভ্যন্তরীণ ৬টি রুটে সড়ক যোগাযোগ অচল হয়ে পড়েছে। আটকা পড়েছে শত শত যাত্রীবাহী বাসসহ বিভিন্ন যানবাহন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (রাত ৯টা) মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছেন। ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী পৌঁছেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দুপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালাচ্ছে। 

রূপাতলী বাস টার্মিনালের নিয়ন্ত্রক হলেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদার। ৫ আগস্টের পর তিনি এ টার্মিনাল কেন্দ্রিক বাস মালিকদের সংগঠন বরিশাল-পটুয়াখালী মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি হন।  

শিক্ষার্থীদের দাবী, বিএম কলেজের এক ছাত্রী মঙ্গলবার ঝালকাঠি থেকে বাসে বরিশালে যাচ্ছিলেন। শিক্ষার্থী হিসাবে তিনি হাফ ভাড়া দেন। এ নিয়ে সুপারভাইজারের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। 

ছাত্রী অভিযোগ করেন, তাকে হেনস্থা করেছে বাস শ্রমিকরা। তিনি ঘটনাটি বিএম কলেজে সহপাঠীদের জানান। বিকেলে বিএম কলেজের একদল শিক্ষার্থী এর প্রতিবাদ জানাতে রূপাতলী বাস টার্মিনালে যান। তখন দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা হয়। 

বাস শ্রমিকদের অভিযোগ, শিক্ষার্থীরা শ্রমিক ইউনিয়ন অফিস ও কয়েকটি বাস ভাঙচুর করেছে। 

শিক্ষার্থী সাব্বির আহমেদ বলেন, সহপাঠী লাঞ্ছিত হওয়ায় প্রতিবাদ জানাতে তারা রূপাতলীতে যান। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছিলেন। টার্মিনালের কারো সঙ্গে কথা বলেননি। উল্টো শ্রমিকরা লাঠিসোটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। এতে তিন শিক্ষার্থী আহত হন। 

বরিশাল-পটুয়াখালী মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি জিয়া উদ্দিন সিকদার বলেন, শিক্ষার্থীরা হামলা-ভাঙচুর ও সড়ক অবরোধ করে জনদূর্ভোগ সৃষ্টি করেছেন। তারা সেটা না করে মালিক সমিতিতে অভিযোগ দিলে সমিতি যথাযথ ব্যবস্থা নিত। 

শিক্ষার্থীদের ৮ দফা গুলো হচ্ছে- ছাত্রীকে হেনস্থাকারী বাস শ্রমিকদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিচারের আওতায় আনা, হামলায় আহত শিক্ষার্থীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া, বরিশাল বিভাগের সকল রুটে আইডি কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া কার্যকর, আর কোনো বাসে শিক্ষার্থী হেনস্তা হলে সংশ্লিষ্ট বাসের রুট পারমিট বাতিল ও কর্মচারীকে আইনের আওতায় আনা, দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস মালিক সমিতিতে নির্বাচিত কমিটি গঠন, আধুনিক বাস সেবা ও ডিজিটাল ট্রাফিক আইন বাস্তবায়ন, প্রশিক্ষিত চালক নিয়োগ এবং বাস টার্মিনালে সকল প্রকার চাঁদাবাজি বন্ধ করা। 

কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থী ও বাস শ্রমিকদের মধ্যে কয়েক দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে রাখায় মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ। ঘটনাস্থলে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মোহাম্মদপুরে অভিযানের মধ্যেই ঘটছে অপরাধ
  • ইজতেমায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে র‌্যাব
  • ‘ইজতেমার নিরাপত্তায় থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৭ হাজার সদস্য’
  • দুর্নামের দায়ভার নিল বিসিবি, নজরদারিতে ফ্র‍্যাঞ্চাইজি মালিকরা 
  • নজরদারিতে ৬ ব্রোকারের কার্যক্রম, তদন্ত করবে বিএসইসি
  • বাসে বিএম কলেজছাত্রী লাঞ্ছিত, বাস শ্রমিক-শিক্ষার্থী পাল্টাপাল্টি হামলা ও ভাংচুর