বিদ্বেষ নিয়ে নেতৃত্ব দেওয়া বিপজ্জনক
Published: 25th, January 2025 GMT
দেশব্যাপী অনেকের সঙ্গে যোগ দিয়ে আমরা আজ সকালে এক জাতি হিসেবে ঐক্যের জন্য প্রার্থনা করতে জড়ো হয়েছি। এর উদ্দেশ্য কোনো চুক্তি নয়, কিংবা রাজনৈতিক ব্যাপারও নয়। বরং এমন ঐক্যের ডাক দিয়েছি, যা বিভিন্ন সম্প্রদায় ও বৈচিত্র্যকে সুরক্ষা দেয়। এটি এমন ঐক্য, যা সবার কল্যাণে কাজ করে।
আমি একজন বিশ্বাসী ব্যক্তি। আমি বিশ্বাস করি, এ দেশে ঐক্য সম্ভব, তবে পুরোপুরি নয়। কারণ আমরা পরিপূর্ণভাবে শুদ্ধ মানুষ নই এবং আমাদের ঐক্যও অপূর্ণ। আমাদের বিশ্বাস অব্যাহত রাখতে এবং আদর্শকে উপলব্ধি করার জন্য কাজ চালিয়ে যাওয়াই যথেষ্ট। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের আদর্শ মানুষের সহজাত সাম্য ও মর্যাদার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে।
ঐক্যের প্রথম ভিত্তি প্রত্যেক মানুষের অন্তর্নিহিত মর্যাদাকে সম্মান করা, যা এখানে প্রতিনিধিত্বকারী সব ধরনের বিশ্বাসকে সব মানুষের জন্মগত অধিকার বলে বিশ্বাস করে। জনপরিসরের আলোচনায় একে অপরের মর্যাদাকে সম্মান করার অর্থ হলো যাদের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য রয়েছে, তাদের উপহাস না করা, ছোট করে না দেখা কিংবা সম্মানের সঙ্গে ফারাকের ব্যাপারগুলো নিয়ে বিতর্ক করা। যখনই সম্ভব সব পক্ষের জন্য সাধারণ ভিত্তি খুঁজে বের করা। যদি সাধারণ ভিত্তি সম্ভব না হয়, তাহলেও আমরা নিজেদের বিশ্বাসের ব্যাপারে সৎ থাকব এবং কোনো রকম বিদ্বেষ বা অবজ্ঞা পোষণ করব না। এটাই মর্যাদার ভিত্তি।
একতার দ্বিতীয় ভিত্তি হলো ব্যক্তিগত কথোপকথন ও প্রকাশ্য বক্তৃতায় সততা বজায় রাখা। আমরা যদি সৎ হতে ইচ্ছুক না হই, তাহলে ঐক্যের জন্য প্রার্থনা করে কোনো লাভ নেই। কারণ আমাদের কাজগুলো এ প্রার্থনার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। আমরা কিছু সময়ের জন্য কতিপয় লোকের মধ্যে ঐক্যের মিথ্যা অনুভূতি বোধ করতে পারি, কিন্তু আমাদের মুখোমুখি হওয়া চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করার জন্য আমাদের যে দৃঢ়, বৃহত্তর ঐক্য প্রয়োজন তা সেখানে নেই।
ন্যায্য কথা বলতে গেলে, সব সময় সত্য কোথায় তা আমাদের জানা থাকে না। আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলেও বর্তমানে সত্যের বিরুদ্ধে অনেক ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। যখন আমরা জানি সত্য কী, তখন সত্য কথা বলা আমাদের দায়িত্ব, এমনকি বিশেষ করে যখন তা করতে গিয়ে আমাদের মূল্যও দিতে হয়।
ঐক্যের তৃতীয় ভিত্তি নম্রতা, যা আমাদের সবার প্রয়োজন। কারণ আমরা সবাই ভ্রান্ত মানুষ। আমরা ভুল করি। আমরা এমন কিছু বলি এবং করি যা আমাদের আফসোসের কারণ হয়। আমরা অনেক কিছু দেখি না এবং আমাদের পক্ষপাত রয়েছে। যখন আমরা নিজেদের নিঃসন্দেহে পুরোপুরি সঠিক দাবি করি এবং অন্যকে ভুল সাব্যস্ত করি, তখনই আমরা সম্ভবত নিজেদের ও অন্যদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক হয়ে উঠি। কারণ, তখন আমরা নিজেদের ভালো মানুষ বনাম খারাপ মানুষ হিসেবে চিহ্নিত করি, যেখানে দু’পক্ষের মধ্যে মাত্র কয়েক ধাপ দূরত্ব থাকে।
সত্য হলো আমরা ভালো-মন্দ মিলিয়ে সবাই মানুষ। আলেকজান্ডার সলঝেনিতসিন সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন, ‘ভালো ও মন্দকে আলাদা করার রেখাটি রাষ্ট্র, শ্রেণি বা রাজনৈতিক দলগুলোর মাধ্যমে চিহ্নিত হয় না, বরং প্রত্যেক মানুষের হৃদয় থেকে সব মানুষের হৃদয়ের মধ্যে বিরাজ করে।’ আমরা যত বেশি এটি উপলব্ধি করব, তত বেশি নিজেদের মধ্যে নম্রতার বিস্তৃতি ঘটবে এবং আমাদের ফারাকের ব্যাপারে একে অপরের প্রতি উদার হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। কারণ, প্রকৃতপক্ষে আমরা যতটা উপলব্ধি করি তার চেয়ে বেশি আমরা অবয়বে একে অপরের মতো এবং আমরা একে অপরের কাজে দরকার হই।
বিশেষ কোনো আনুষ্ঠানিক আয়োজনে ঐক্যের জন্য প্রার্থনা করা তুলনামূলক সহজ। যখন আমরা জনসাধারণের ক্ষেত্রে বাস্তব পার্থক্যগুলো বিবেচনায় নিয়ে মোকাবিলা করি, তখন এটি উপলব্ধি করা অনেক কঠিন। কিন্তু ঐক্য ছাড়াই আমরা বালুর ওপর আমাদের জাতির ঘর তৈরি করছি। ঐক্যের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতবদ্ধ হওয়ার মানে বৈচিত্র্যকে অন্তর্ভুক্ত করা এবং মতানৈক্য অতিক্রম করা। এ জাতীয় ঐক্যের জন্য মর্যাদা, সততা ও নম্রতার দৃঢ় ভিত্তি দরকার, যার মাধ্যমে আমরা বর্তমান সময়ে আমাদের আদর্শ ও যুক্তরাষ্ট্রের স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে যেতে পারি।
মারিয়ান এডগার বুড্ডে: ওয়াশিংটোর এপিস্কোপাল বিশপ; দ্য গার্ডিয়ান থেকে ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অপর র
এছাড়াও পড়ুন:
ইউক্রেনে জেলেনস্কির বিকল্প নেতা খুঁজছে যুক্তরাষ্ট্র!
ইউক্রেনে শান্তিচুক্তির জন্য দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির পদত্যাগ করা লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎস। তিনি বলেছেন, ‘ইউক্রেনের একজন নেতা প্রয়োজন, তিনি আমাদের সঙ্গে কাজ করতে পারবেন। তিনি শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার সঙ্গে কাজ করতে পারবেন এবং এই যুদ্ধ থামাতে পারবেন।’ খবর- সিএনএন
গণমাধ্যমের সামনেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির নজিরবিহীন বাগবিতণ্ডার পর এ কথা বললেন তিনি। বাগবিতণ্ডার এ ঘটনাটি নিয়ে নানা আলোচনা চলছে বিশ্বজুড়ে। ওই ঘটনার পর ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে ঐতিহাসিক চুক্তি হওয়ার কথা ছিল, সেটিও বাতিল হয়ে যায়। আর এর পরই ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ কোন পথে, তা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা।
এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। শুক্রবারের ওই ঘটনায় সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গড়া ওয়াশিংটন-কিয়েভ সম্পর্ক ভেঙে পড়েছে। এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
যদিও ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে আবারও এক টেবিলে বসার ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তিনি বলেছেন, ইউক্রেন ও রাশিয়া-দুই পক্ষই আলোচনায় না বসলে যুদ্ধ থামবে না। হোয়াইট হাউসে শুক্রবার ট্রাম্প-জেলেনস্কি বিতণ্ডার পর থেকে ইউক্রেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আর কথা হয়নি। যুদ্ধ থামানোর জন্য রাশিয়াকে আলোচনার টেবিলে আনতে হবে। তবে তাদের প্রতি বৈরী মনোভাব রাখলে, মস্কোকে আলোচনায় যুক্ত করা সম্ভব হবে না। কোনো চুক্তি করার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই মনোভাবই দেখিয়ে আসছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, সবকিছু আবার শুরু হতে পারে। আশা করি, তিনি (জেলেনস্কি) এটা বুঝতে পারবেন যে আমরা আসলে আরও হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর আগে, তাঁর দেশকে সাহায্যের চেষ্টা করছি।’