আউটার স্টেডিয়ামের ‘সবুজ গালিচা’ উধাও
Published: 25th, January 2025 GMT
অবৈধদের দখলে চলে গিয়েছিল নগরীর সবচেয়ে জমজমাট খেলার মাঠটি। প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মাঠের ভেতরেই গড়ে তোলা হয় অঘোষিত ‘গাড়ি রাখার টার্মিনাল’। বছরের বেশি সময় ধরে চলত মেলা। মাঠের চারপাশে ছোট-বড় রেস্টুরেন্টসহ নানা স্থাপনা নির্মাণ করে দখলে নেয় দখলদাররা। দিনের পর দিন মাঠে জমে থাকত আবর্জনার স্তূপ; রাতে বসত মাদকসেবীদের আসর। দখলদারদের কালো থাবায় মাঠ থেকে হারিয়ে যায় সবুজ ঘাস; উধাও হয়ে যায় খেলাধুলা। পাড়ার শিশু-কিশোর, তরুণদের নিয়মিত অনুশীলন চলে যায় নির্বাসনে। এমন বিপর্যয় ও নাজুক পরিস্থিতি থেকে কাজীর দেউড়ির এমএ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন আউটার স্টেডিয়ামকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টরা। সবুজ ঘাসে আবারও নান্দনিকভাবে পুরোনো রূপ ফিরে পায় ঐতিহাসিক এ খেলার মাঠটি। তিন দশক ধরে পতিত জমিতে পরিণত হওয়া আউটার স্টেডিয়ামটি রূপলাভ করে একখণ্ড ‘সবুজ গালিচায়’।
দীর্ঘদিন পর এই মাঠে ক্রিকেট ব্যাটে পড়ে বল; পায়ে লাগে ফুটবল। চট্টগ্রাম নগরের পাশাপাশি দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই খেলাধুলা করতে ছুটে আসেন এই মাঠে। তবে মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই ‘সবুজ গালিচা’র মাঠটি এখন আবারও ধুলাবালিতে পরিণত হয়েছে। দেশের পটপরিবর্তনের কিছুদিন পর আউটার স্টেডিয়াম আবারও প্রাণ ফিরে পায়। তবে প্রশাসনের কোনো তদারকি কিংবা নজরদারি না থাকায় মাঠটি আবারও আস্তে আস্তে আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে। মাঠটি এখন ধুলাবালিতে একাকার। এ অবস্থার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্তদের উদাসীনতার দিকেই আঙুল তুলছেন নিয়মিত এখানে অনুশীলন করতে আসা খেলোয়াড়সহ সংশ্লিষ্টরা। এতে ক্ষোভও প্রকাশ করছেন অনেকে। দ্রুত সময়ের মধ্যে মাঠটি রক্ষায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ না নিলে অতীতের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার কথাও বলছেন কেউ কেউ।
এমনিতেই চট্টগ্রামে খেলাধুলার মাঠের প্রবল সংকট। হাতেগোনা যে কয়টি মাঠ ছিল সেখানে কিছুদিন পরপর হয় নানা আয়োজন। যে কারণে মাঠের অভাবে খেলাধুলা থেকে বিমুখ হচ্ছেন অনেকেই। এ অবস্থায় আউটার স্টেডিয়ামের মাঠটিকে সংস্থার করে পুনরায় খেলা উপযোগী হিসেবে গড়ে তোলায় স্বস্তি ফিরে আসে চট্টগ্রামের ক্রীড়াপ্রেমী থেকে শুরু করে সবার মাঝে। কারণ এ মাঠটি হয়ে উঠে নগরের একটি বড় অংশের প্রধান মাঠ হিসেবে। তবে মাত্র কয়েক মাসেই মাঠের সবুজ ঘাস উধাও হয়ে এটির নাজুক অবস্থায় সবার মধ্যে দেখা দিয়েছে হতাশা। কারণ সবুজ ঘাসের বেশির ভাগই এখন আর নেই।
সরেজমিন আউটার স্টেডিয়াম ঘুরে দেখা যায়, আগে দূর থেকে তাকালে দেখা যাওয়া সেই ‘সবুজ গালিচা’ এখন উধাও। মাঠের অধিকাংশ অংশ থেকে উঠে গেছে সবুজ ঘাস। সেখানে দেখা মিলছে বালু আর বালু। কিছু কিছু স্থানে সবুজ ঘাসের কিছু অস্তিত্ব দেখা গেলেও সেগুলো বিলীন হওয়ার পথে। সবুজ মাঠটি বালুময় হওয়ায় সেখানেই নিয়মিত অনুশীলন ও খেলাধুলা করার কারণে চারপাশে উড়ছে বালু। যে কারণে মাঠের চারপাশে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে সেসব বালু। এতে অনেকটা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে চারপাশ। এমন নাজুক অবস্থার মধ্যে খেলাধুলা করতে গিয়ে বেগ পেতে দেখা যায় অনেককে। আর এমন পরিবেশ খেলোয়াড়দের শরীরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলেও জানান কয়েকজন।
চট্টগ্রাম নগরের আসকারদিঘি পাড় এলাকা থেকে ক্রিকেট খেলতে আসা ইমতিয়াজ হোসেন শিমুল বলেন, ‘কয়েকমাস আগেও মাঠটি সবুজ ঘাসে ভরপুর ছিল। তবে এখন এটির অবস্থা খুবই নাজুক। বেশিরভাগ অংশ থেকে সবুজ ঘাস উঠে গেছে; সেখানে দেখা মিলছে বালুর। প্রশাসনের তদারকি ও সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবেই সুন্দর মাঠটির এমন করুন পরিণতি হয়েছে। শিগগির এটি রক্ষায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া না হলে আগের মতো পরিণতি হবে এটির।’
দুই ছেলেকে নিয়ে আসা বাবা সুনীল চৌধুরী বলেন, ‘চট্টগ্রাম শহরে এমনিতেই খেলার জন্য উন্মুক্ত কোনো মাঠ নেই। তাই এই মাঠটি একমাত্র ভরসা আমার সন্তানদের মতো অনেকের। এটিও অনেক বছর ধরে ছিল অবৈধদের দখলে। দীর্ঘদিন পর মাঠটি দখলমুক্ত হওয়ায় আমার মতো অনেকের জন্য স্বস্তি নিয়ে আসে। সবুজ মাঠটিতে সন্তানদের নিয়ে প্রায়ই আসি। কিন্তু বর্তমানে মাঠটির সবুজায়ন অনেকাংশে হারিয়ে গেছে। দায়িত্বপ্রাপ্তদের কোনো নজরদারি না থাকায় এটির এমন নাজুক অবস্থা হয়েছে। এর দায়ভার প্রশাসন এড়াতে পারে না। এটির রক্ষণাবেক্ষণে কেউ না থাকায় যে যার মতো করে মাঠটিকে ব্যবহার করছে। যে যেভাবে পারছে এখানে গর্ত করছে। আশা করছি কর্তৃপক্ষ প্রাণের এই মাঠটি রক্ষায় এগিয়ে আসবে।’ আউটার স্টেডিয়ামের পাশে নিয়মিত বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দেওয়া অ্যাডভোকেট মো.
চট্টগ্রামে এক সময়ের খেলোয়াড় তৈরির কারখানা ছিল আউটার স্টেডিয়াম। এই মাঠেই নিয়মিত খেলতেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান, তামিম ইকবাল, নান্নু থেকে শুরু করে নাফিস ইকবাল, আফতাব হোসেনসহ আরও কয়েকজন। কলকাতা ইস্ট বেঙ্গল টিমও খেলেছে এ মাঠে। স্টার সামার, স্টার যুব টুর্নামেন্টের মত বড় বড় টুর্নামেন্ট আয়োজিত হয়েছে এখানেই। যেখানে খেলেছে দেশ-বিদেশের অনেক নামিদামি ক্রিকেটার। কিন্তু গত তিন দশক ধরে দখলদারদের থাবায় এটি পরিণত হয় জঞ্জালে। সৌন্দর্য বর্ধনের নামে এটিকে পরিণত করা হয় ব্যবসায়ীক জোনে। অথচ দেশের ক্রীড়াঙ্গণের অনেক অর্জন-সাফল্যের স্বাক্ষী এই মাঠ। মাঠটির যাবতীয় বিষয় তদারকির দায়িত্ব চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের। পদাধিকার বলে জেলা প্রশাসক এটির সভাপতি। এটির বর্তমান নাজুক অবস্থা সম্পর্কে জানতে বর্তমান জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
হারিয়ে যাওয়া সবুজ ঘাসের নান্দনিক আউটার স্টেডিয়ামটি চট্টগ্রামবাসীকে আবারও ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন চট্টগ্রামের সাবেক জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। তার নেওয়া বেশকিছু উদ্যোগে আবারও প্রাণ ফিরে পায় মাঠটি। বিপর্যস্ত আউটার স্টেডিয়ামের চারপাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে ২০২৩ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর উন্নয়ন কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি। এ ব্যাপারে আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘দখলদারদের হাত থেকে মাঠটি রক্ষা করা অনেক কঠিন ও চ্যালেঞ্জের ছিল। এখানে অভিযান চালাতে গিয়ে অনেকভাবে হুমকি-ধমকিও দেওয়া হয়েছিল। তবে কিছুতেই পিচপা হয়নি। উদ্দেশ্য ছিল চট্টগ্রামবাসীকে সবুজ ঘাসের নান্দনিক মাঠ উপহার দেওয়ার। এখন এটি রক্ষা করা সবার দায়িত্ব।’
চট্টগ্রাম নগরের প্যারেড ও পলোগ্রাউন্ড মাঠ থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে সেগুলো খেলার অনুপযোগী। তাছাড়া এসব মাঠে বেশিরভাগ সময় নানা অনুষ্ঠান লেগেই থাকে। দেশের পটপরিবর্তনের পর নগরের অন্যতম বৃহৎ এই দুই মাঠে খেলাধুলা করতে গিয়ে প্রায়ই ফিরে যেতে হয় ক্রীড়াপ্রেমীদের। এর প্রধানতম কারণ হলো আগে এসব মাঠে বিভিন্ন মেলার আয়োজন করা হলেও গত ৫ আগস্টের পর থেকে বিভিন্ন ইসলামী সংগঠনের দখলে চলে যায় মাঠ দুটি। তাদের নানা অনুষ্ঠানের কারণে খেলাধুলার সুযোগ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে খেলোয়াড়ররা।
আউটার স্টেডিয়াম সংস্কারে সিজেকেএসের নিজস্ব অর্থায়নে এক কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। মাঠটির আয়তন প্রায় ১১ হাজার বর্গফুট। এরমধ্যে ৮ হাজার বর্গফুট জুড়েই খেলার মাঠ। এখানে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি ও লিগ টুর্নামেন্টের জন্য আলাদা জায়গাও রাখা হয়। প্রকল্পের আওতায় কয়েকমাস ধরে মাঠে ঘাস লাগানো হয়। সাধারণত রোপণ পদ্ধতির মাধ্যমে ঘাস গজানো হয়। তবে এখানে ঘাস গজানোর জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল আধুনিক স্প্রেডিং পদ্ধতি। ঘাষ বড় করতে টানা কয়েকমাস করা হয় নিয়মিত পরিচর্যা। মাঠের চারপাশে দেওয়া হয় লোহার বেষ্টনি। এর আগে শেষ করা হয় বালু ভরাট ও ফিনিশিংয়ের কাজ। পরিকল্পিত এসব কাজের কারণে দীর্ঘদিন পর সবুজে ঢেকে যায় অনেকের পছন্দের আউটার স্টেডিয়াম। তবে সেটি রক্ষা করতে ব্যর্থ হচ্ছে দায়িত্বশীলরা।
সিজেকেএস’র এক কর্মকর্তা বলেন, ‘দেশের পটপরিবর্তনের পর থেকে সবকিছু চলছে অন্যভাবে। কমিটি না থাকায় সব কাজ অগোছালোভাবে চলছে। এ কারণে আউটার স্টেডিয়ামের করুণ পরিণতি হয়েছে। এটি নিয়ে আমরাও চিন্তিত।’ চট্টগ্রামের ক্রীড়াবিদ এবং ক্রীড়া সংগঠকদের মতে, দখলদারদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া মাঠটি যাতে অক্ষত থাকে সেজন্য আমরা প্রশাসনকে বারবার তাগাদা দিয়েছি। কিন্তু তারা এ ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি। এ কারণে অনেকের ভরসার মাঠটির অবস্থা বর্তমানে নাজুক।
মেলা করা নিয়ে তোপের মুখে খোদ জেলা প্রশাসন
চট্টগ্রামে বিজয় মেলার স্থান হিসেবে গত ডিসেম্বর আউটার স্টেডিয়ামকে বেছে নেয় জেলা প্রশাসন। সংস্থাটির এমন সিদ্ধান্তে চট্টগ্রামজুড়ে নেতিবাচক আলোচনার জন্ম দেয়। ক্রীড়াপ্রেমীসহ নানা মহলের ‘তোপের মুখে’ পড়ে সংস্থাটি। পরে রেলওয়ের মালিকানাধীন সিআরবির মাঠে মেলা করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু সেটিও পরিবর্তন করতে বাধ্য হয় জেলা প্রশাসন। সবশেষে কাজীর দেউড়ির পরিত্যক্ত শিশুপার্কের মাঠে বসে বিজয়মেলা। আউটার স্টেডিয়ামে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলা আয়োজনের কাজ প্রায় সেরে ফেলেছিল জেলা প্রশাসন। এজন্য প্রায় পুরো মাঠজুড়ে বড় বড় গর্ত করে প্যান্ডেলও তৈরি করা হয়। এতে সবুজ ঘাস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যে কারণে তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ নানা মাধ্যমে প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নেতিবাচক লেখালেখিও হয়। বছর ধরে ‘খেলার মাঠে মেলা নয়’ ঢাকঢোল পিটিয়ে এমন ‘নীতিবাণী’ প্রচার করে জেলা প্রশাসন। অথচ আকরাম খান, তামিম ইকবাল, নান্নু, নাফিস, আফতাবদের মতো উঠে আসা একঝাঁক ক্রীড়াতারকার ‘জন্মস্থান’ আউটার স্টেডিয়ামে ফের মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলার আয়োজন প্রায় সেরে ফেলেছিল। পরে খেলোয়াড়, ক্রীড়ামোদিদের তোপের মুখে পড়ে আউটার স্টেডিয়ামের বারোটা বাজিয়ে এমন বিনাশী সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে বাধ্য হয় জেলা প্রশাসন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আউট র স ট ড য় ম র ন জ ক অবস থ সব জ ঘ স র সব জ গ ল চ র অবস থ ট র এমন অবস থ য় র জন য এই ম ঠ দ ন পর হয় ছ ল নগর র
এছাড়াও পড়ুন:
বৈষম্যবিরোধীর ব্যানারে কতিপয় সন্ত্রাসী ক্যাম্পাসে দখলদারিত্ব কায়েম করেছে: ছাত্রদল
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কতিপয় সন্ত্রাসী বিভিন্ন ক্যাম্পাসে রক্ষীবাহিনীর মতো সন্ত্রাস ও দখলদারিত্ব কায়েম করেছে বলে অভিযোগ করেছে ছাত্রদল। সংগঠনটি বলছে, তারা বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের কর্মীদের মবের ভয়ভীতি দেখিয়ে ছাত্রলীগের স্টাইলের সন্ত্রাসের পুনরাবৃত্তি করছে।
রোববার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনের পর নয়াপল্টনে ছুরিকাঘাতে নিহত ছাত্রদল নেতা জাহিদুল ইসলাম পারভেজের জানাজা সম্পন্ন হয়। তাকে ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার বিরুনিয়া ইউনিয়নে নিজ গ্রামে দাফন করা হবে।
রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রদলের কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কতিপয় সন্ত্রাসী রক্ষীবাহিনীর মতো সন্ত্রাস ও দখলদারিত্ব কায়েম করেছে। তারা বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের কর্মীদের মবের ভয়ভীতি দেখিয়ে ছাত্রলীগের স্টাইলের সন্ত্রাসের পুনরাবৃত্তি করছে। ক্যাম্পাস তো বটেই, এমনকি ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণের বাইরে গিয়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের কার্যক্রম পরিচালনায়ও বাধা দেওয়া হচ্ছে, যা গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সুস্পষ্ট লংঘন।’
তিনি বলেন, ‘এটা নতুন নামে সেই পুরাতন ফ্যাসিবাদ। এই চলমান দখলদারিত্ব ও সন্ত্রাসই এই হত্যার পেছনে খুনি-সন্ত্রাসীদের সাহস ও মদদ যুগিয়েছে। দিনে দিনে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ডিহিউম্যানাইজ করার যে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র, এটা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে সাজানো হয় শহীদ পারভেজদের হত্যাকাণ্ডের বৈধতা উৎপাদনের জন্য। পারভেজের খুনিদের রাজনৈতিক প্রশ্রয়দাতাসহ খুন ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত সকলের যথাযথ বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’
রাকিব বলেন, ‘আমরা নিদারুণ কষ্ট ও ক্ষোভের সঙ্গে জানাচ্ছি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী ও প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২৩ ব্যাচের টেক্সটাইল বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজকে সন্ত্রাসীরা ছুরিকাঘাত করে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। শনিবার বিকেল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সামনে এ বর্বর ঘটনা ঘটে। মরহুম জাহিদুল ইসলাম পারভেজ ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার বিরুনিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা। আমরা মরহুমের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও সহপাঠীদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা জেনেছি, ঘটনার সূত্রপাত হয় যখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও দুই-তিনজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বসে সিঙাড়া খাচ্ছিলেন। এমন সময় মেহেরাজ ইসলাম এবং আরও দুইজন ছাত্রীসহ কয়েকজন ওই পথে হেঁটে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ করেই তারা পারভেজকে উদ্দেশ্য করে ‘এদিকে তাকাচ্ছ কেন?’, ‘এদিকে তাকালে চোখ তুলে দেব’-এ ধরনের টিজিং ও উস্কানিমূলক মন্তব্য করতে থাকেন। পারভেজ জবাবে বলেন, ‘কী দোষ করেছি ভাই?’ এতে তারা আরও উত্তেজিত হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে উভয়পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। বিষয়টি মীমাংসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. আব্দুস সালাম হস্তক্ষেপ করেন এবং উভয়পক্ষকে মীমাংসা করে দেন।
রাকিব বলেন, ‘আমরা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি-পারভেজ ইসলামের ওপর চালানো এই হামলা ছিল পূর্বপরিকল্পিত। নতুবা তুচ্ছ একটি ঘটনার জেরে, প্রক্টর কর্তৃক মীমাংসার পরও একজন মেধাবী ছাত্রকে প্রকাশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করার প্রশ্নই আসে না। আমরা এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে এই হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আবারও এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী, ইন্ধনদাতা, হুকুমদাতা এবং হামলাকারী সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। ছাত্রনেতাদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জোরালো দাবি জানাচ্ছি। তাদেরকে বিভিন্ন বিষয়ে একপাক্ষিক আচরণের বদলে সমতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদলের সিনিয়র সহ সভাপতি আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়া, সহ সভাপতি এইচ এম আবু জাফর, ইজাজুল কবির, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক শ্যামল মালুম, যুগ্ম সম্পাদক মো. সারোয়ার হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক আমান উল্লাহ আমান, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি আবু হুরায়রা, সাধারণ সম্পাদক রাজিবুল আলম বিন্দু প্রমুখ।