অভাবের সংসার। অসুস্থ বাবার আয়-রোজগার না থাকায় স্বল্প আয়ের বড় ভাইদের ওপর নির্ভর পুরো পরিবার। যে কারণে বেতন-পরীক্ষা ফিসহ বিভিন্ন খরচ চালানো অসম্ভব হওয়ায় স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা বাড়িয়ে দিয়েছেন সহযোগিতার হাত। সবার সহযোগিতায় গত বছর কোচিং করেও ভর্তির সুযোগ মেলেনি। তবুও থেমে যাননি দরিদ্র পরিবারের সন্তান মেধাবী শিমা আক্তার। জেদ ধরেন মেডিকেলে পড়ার। তাই টাকার অভাবে পুনরায় কোচিং করতে না পারলেও এবার আর চেষ্টা বিফলে যায়নি তার। বাড়িতে বসে পড়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে। ১৯ জানুয়ারি প্রকাশিত ফলাফলে এ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন তিনি। শিমার কৃতিত্বে খুশি শিক্ষক ও স্বজনরা।
শিমার মা আয়েশা বেগম জানান, ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ার প্রতি খুব আগ্রহ ছিল শিমার। অনেক কষ্টের পরও মেয়ের এমন কৃতিত্বে তারা আনন্দিত। তবে এর মধ্যে রয়েছে দুশ্চিন্তাও। কারণ, তার দুই ছেলে যে আয় করে তা দিয়ে সংসারের খরচ ও মেয়ের মেডিকেলের পড়াশোনার খরচ মেটানো অনেকটাই অসম্ভব।
পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ছোটবেলা থেকে পড়ালেখার প্রতি শিমার প্রচণ্ড আগ্রহ ছিল। পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসিতে ভালো ফলাফল করেন তিনি। স্থানীয় চরপাগলা পাটওয়ারীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করে ভর্তি হন চরকালকিনি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে ৪.
পরিবারের ছয় সন্তানের মধ্যে শিমা পঞ্চম। কমলনগর উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের চরজাঙ্গালীয়া এলাকার দরিদ্র বাবা আলী আহাম্মদ দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকায় আয়-রোজগার নেই। বড় দুই ভাই মো. রিপন ও জাহাঙ্গীর আলমের স্বল্প আয়ে কোনো রকম চলছে তাদের সংসার। চরকালকিনি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার পর টাকার অভাবে শিমার লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। তখন শিক্ষকরা তাকে সম্পূর্ণ বিনা খরচে পড়ালেখা করার সুযোগ দেন। এভাবেই দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা চলে তার। সেখান থেকে এসএসসি পাসের পর একই ধরনের সহযোগিতা পান লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হয়ে। সেখান থেকে এইচএসসি পাসের পর কোচিং ছাড়াই বাড়িতে বসে মেডিকেলে ভর্তির প্রস্তুতি নেন।
শিমা আক্তার জানান, দারিদ্র্য জয় করা বিভিন্ন গুণীজনের জীবনী পড়ে তিনি অনুপ্রাণিত হয়েছেন। এটাকে ধারণ করেই মেডিকেলে পড়ার স্বপ্ন দেখেন। প্রথমবার যখন সেই স্বপ্ন অধরা হয়ে পড়ে তখন মনে জেদ চাপে। ওই জেদই তাকে স্বপ্ন পূরণের কাছাকাছি নিয়ে যায়। এ সাফল্যের জন্য মা, ভাই ও শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে স্বপ্ন পূরণে সবার সহযোগিতা চান তিনি।
শিমার এমন সাফল্যে খুশি তার প্রতিবেশী স্কুলশিক্ষক মিজানুর রহমান মানিক । তিনি জানান, ছোটবেলা থেকে শিমা অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী ছিল। শিমার পড়ালেখার জন্য তার পরিবারের সদস্যরা অনেক কষ্ট করেছেন। আজ তাদের কষ্ট সার্থক হলেও তাদের বড় চিন্তা পারিবারিক অভাব-অনটন।
চরকালকিনি আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক মাহমুদুর রহমান বেলায়েত বলেন, ‘এই বিদ্যালয়ে টাকার অভাবে পড়ালেখা শিমার বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। তখন মেধার কথা চিন্তা করে তার পড়ালেখার সব খরচ মওকুফ করা হয়েছিল।’
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুচিত্র রঞ্জন দাস বলেন, ‘পারিবারিক অভাব-অনটনে থাকা একটি পরিবারের সদস্য হয়েও শিমা যে কৃতিত্ব দেখিয়েছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিমাকে যথাসাধ্য সহযোগিতা করা হবে।’
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
আগৈলঝাড়ায় র্যাবের ওপর হামলার ঘটনায় দুই মামলা
বরিশালের আগৈলঝাড়ায় র্যাব-৮-এর মাদকবিরোধী অভিযানে র্যাবের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার র্যাব-৮-এর ডিএডি শেখ রিয়াজুল ইসলাম বাদী হয়ে আগৈলঝাড়া থানায় পৃথক দুটি মামলা করেন। এতে পলাতক দু’জনসহ অজ্ঞাত ১৫ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকলেও সেগুলো বন্ধ রয়েছে।
বরিশাল র্যাব-৮-এর মাদকবিরোধী অভিযান চলাকালে গত সোমবার সন্ধ্যায় গোলাগুলির সময় উজিরপুর উপজেলার জল্লা ইউনিয়নের বাহেরঘাট গ্রামের রিপন মোল্লার ছেলে সিয়াম মোল্লার (১৮) নিহত হয়। গুলিবিদ্ধ হন একই গ্রামের খালেক মোল্লার ছেলে রাকিব মোল্লা। মাদক কারবারিদের হামলায় আহত হন র্যাব সদস্যসহ তিনজন।
নিহত সিয়াম মোল্লার চাচাত বোন কলেজছাত্রী মীম আক্তার জানান, সিয়াম কারফা আইডিয়াল কলেজে এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিল। সোমবার সে সারাদিন ঘরেই ছিল। বিকেলে মামাত ভাই রাকিব মোল্লাকে নিয়ে ঘুরতে বের হওয়ার কিছুক্ষণ পর আমরা এ সংবাদ পাই। গতকাল দুপুর পর্যন্ত সিয়ামের মরদেহ বাড়িতে পৌঁছায়নি। তার মা জোসনা বেগম ছেলের শোকে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
চলতি এসএসসি পরীক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ রাকিব মোল্লার সহপাঠী আলী হোসেন বলেন, ‘আমরা সাহেবের হাট মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে বারপাইকা কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছি। সোমবার রাকিব আর আমি একই সঙ্গে পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফিরেছি। সন্ধ্যায় শুনি রাকিব গুলিবিদ্ধ হয়।’
নাম না প্রকাশের শর্তে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী জানান, পার্শ্ববর্তী রশিদ হাওলাদারের ছেলে দুলাল হাওলাদারের পরিত্যক্ত বাড়িতে মাদকসেবীদের নিয়মিত আড্ডা বসত। বর্তমানে ওই বাড়িতে তাঁর পরিবার থাকায় মাদকসেবীরা সেখানে বসতে পারছে না।
র্যাবের মামলার প্রসঙ্গে আগৈলঝাড়া থানার ওসি মো. অলিউল ইসলাম বলেন, মাদকবিরোধী অভিযানে গোলাগুলির ঘটনায় র্যাব বাদী হয়ে আগৈলঝাড়া থানায় পৃথক মামলা করেছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান রয়েছে।