Samakal:
2025-01-31@12:09:54 GMT

সড়ক ও নদীর পার কেটে মাটি বিক্রি

Published: 25th, January 2025 GMT

সড়ক ও নদীর পার কেটে মাটি বিক্রি

অবৈধ ইটভাটার জন্য সড়কের পাশে জমি ও নদীর পাড় কেটে মাটি পাচার করা হচ্ছে। আবার সড়কের ইছামতী নদী থেকে দেদার বালু উত্তোলন চলছে। এ কারণে রাঙামাটির কাউখালী-রানীরহাট সড়কটি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এক্সক্যাভেটর দিয়ে রাত-দিন সমানতালে নদীর পাড় কাটা এবং মেশিন দিয়ে বালু তোলার ফলে ভারী যান চলাচলের কারণে যে কোনো মুহূর্তে রাস্তা ধসে গিয়ে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া নদী থেকে বালু উত্তোলন, রাস্তার পাড় ও নদীর পাড় কেটে মাটি বিক্রি করছে একটি চক্র। এ চক্রটি বেশ কিছুদিন ধরে মাটি কেটে ট্রাকে করে প্রকাশ্যে বিক্রি করছে, যা দেখার যেন কেউ নেই। 
জানা গেছে, রাঙামাটি জেলার কাউখালী উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা হচ্ছে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলা। এই দুই সীমান্তবর্তী উপজেলার মাঝখান দিয়ে কাউখালী উপজেলা সদর থেকে রাঙ্গুনিয়ার রানীরহাট পর্যন্ত একটি সড়ক করা হয়েছে; যা কাউখালী-রানীরহাট সড়ক হিসেবে পরিচিত। মূলত এ সড়কটি চট্টগ্রাম-রাঙামাটির সড়কে গিয়ে পড়েছে; যা এ সড়কটি কাউখালী উপজেলাবাসীর যোগাযোগের অন্যতম সড়ক। প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে শত শত যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু কাউখালী-রানীরহাট সড়কের বহরাতল থেকে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কের কাউখালী রাস্তার মাথা পর্যন্ত প্রায় সাত কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে মাটি কাটায় বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে যে কোনো মহূর্তে সড়কটি বিচ্ছিন্নের আশঙ্কা রয়েছে। অভিয়োগ রয়েছে, এলাকার সিংহভাগই পাশের রাঙ্গুনিয়া উপজেলা প্রশাসনের আওতায় থাকায় কাউখালী উপজেলা প্রশাসন থেকে বারবার মৌখিক ও লিখিতভাবে জানানো হলেও অদৃশ্য কারণে মাটি এবং বালু পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না হয়নি। 
অপরদিকে, ইছামতি নদী থেকে মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে কাউখালী উপজেলা সদরের কাউখালী কেন্দ্রীয় কবরস্থান, কাউখালী বাজার কবরস্থান, বগাবিলি উচ্চ বিদ্যালয় এলাকার সম্মুখভাগসহ আশপাশের বহু এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। তবে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন থেকে নদীর নির্দিষ্ট কিছু এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করার জন্য প্রতি বছর নামমাত্র মূল্যে ইজারা প্রদান করা হলেও, প্রতি বছর শতকোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে এলাকাবাসীর। এলাকা নির্দিষ্ট করে বালু উত্তোলনের জন্য ইজারা দেওয়া হলেও প্রভাবশালীরা এসব তোয়াক্কা করছে না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। 
সরেজমিন পরিদর্শন দেখা গেছে, কাউখালী উপজেলার পাশের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের বহরাতল থেকে কাউখালী রাস্তার মাথা এলাকা পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশের পাড়, নদীর পাড় কেটে মাটি ও ইছামতী নদী থেকে বালু উত্তোলন করে পাচার করছে একটি চক্র। এসব মাটির অধিকাংশ যাচ্ছে স্থানীয় ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকার ইটভাটায়। আধুনিক এক্সক্যাভেটর দিয়ে সড়কের পাশে জমির মাটি কাটায় কাউখালী-রানীরহাট সড়কটি যে কোনো মুহূর্তে ভেঙে যেতে পারে। আগামী বর্ষা মৌসুম শুরু হলে এ সড়ক আরও মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে বলে স্থানীয়দের আশঙ্কা। 
স্থানীয়দের অভিযোগ, বহরাতল থেকে শুরু হয়ে রাস্তা ও নদীর পাড় কাটা এবং ইছামতি নদী থেকে বালু উত্তোলনের মহাযজ্ঞ চলছে। সড়কের পাশে বালুর স্তূপ এবং এর পাশেই মাটি কেটে গাড়ি যাওয়ার রাস্তা বানানো হয়েছে। সেখান থেকে খালের দিকে নজর দিলেই দেখা যায় বিশাল এলাকাজুড়ে এক্সক্যাভেটরের সাহায্যে নদীর পাড় কাটার গভীর চিহ্ন। একটি চক্র বেশ কিছুদিন ধরে মাটি কেটে ট্রাকে করে প্রকাশ্যে পাচার করছে। এতে রাস্তার পাশে এবং খালের পাড়ে গভীর খাদের সৃষ্টি হয়েছে। ভারী এক্সক্যাভেটরের সাহায্যে মাটি কাটতে কাটতে একেবারে সড়কের পাশে চলে এসেছে। আগে আশপাশের নদীপাড়ে লতা, আলুসহ নানা ফসলের আবাদ হলেও, এই স্থানে মাটি কাটার ফলে তা সম্ভব হচ্ছে না। গভীর করে মাটি কাটায় ক্ষেত ভেঙে পড়ছে খাদে। 
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, ভৌগলিকভাবে রাঙ্গুনীয়া উপজেলার শেষ সীমান্ত হওয়ায় এ স্থানে প্রশাসনের তদারকি কম। ফলে দিনের পর দিন এই অবৈধ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে একটি চক্রটি। শুধু এ স্থানেই নয়, ইছামতী নদীর আরও বিভিন্ন পয়েন্টে একইভাবে বালু উত্তোলন করে এবং পাড়ের মাটি কেটে পাচার করা হচ্ছে। 
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা জানান, একটি প্রভাবশালী মহল ইতিপূর্বে নদীর তলদেশ থেকে বালু উত্তোলন করতো। এবার এখন  পাড়ের মাটিও কেটে বিক্রি করছে ইটভাটায়। গত ৫ আগস্টের পর আগের চক্রটি নেই, নতুন চক্র গড়ে উঠেছে। 
এ ব্যাপারে  কাউখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্থা (ইউএনও) কাজী আতিকুর রহমান বলেন,  ‘কাউখালী-রানীরহাট সড়কের দুই পাশের মাটি কাটা, ইছামতি নদী থেকে মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে কাউখালীর বিস্তীর্ণ এলাকায় ভাঙন হচছে। পাশাপাশি কাউখালী-রানীরহাট সড়ক ঝুকিপূণ হয়ে উঠেছে। বিষয়টি রাঙ্গুনিয়ার ইউএনওকে মৌখিক ও লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।  প্রশাসনিকভাবে ওই এলাকাটি রাঙ্গুনীয়া উপজেলার আওতায়  পড়েছে, তাই সমন্বয় করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 
রাঙ্গুনীয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘কাউখালী-রানীরহাট সড়ক, ইছামতী নদীর পাড়ের মাটি কাটা এবং বালু উত্তোলনের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরেজমিনে পরিদর্শন করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সড়ক র প শ প চ র কর উপজ ল র এ সড়ক

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবরোধ, কয়েক কিলোমিটার জুড়ে যানজট

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার ধানকোড়া ইউনিয়নের গোলড়া গ্রামের শত শত বাসিন্দারা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন। দীর্ঘদিনের পুরোনো একটি সড়ক পুনরুদ্ধারের দাবিতে তারা এ কর্মসূচি পালন করছেন। এতে মহাসড়কের দুই পাশে যানচলাচল বন্ধ হয়ে কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে আটকে পড়া যানবাহন গুলো দীর্ঘ সময় বসে থাকার পর বিকল্প সড়ক গোলড়া হয়ে সাটুরিয়া দিয়ে চলাচল করলে সাটুরিয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সৃষ্টি হয় যানজটের। এতে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন বাসের যাত্রী ও সাধারণ মানুষ। তবে দফায় দফায় স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে প্রশাসনের লোকজন বসলেও তারা সড়ক চালুর দাবিতে অনড় রয়েছেন।

বুধবার সকাল ১১টার দিকে গোলড়া গ্রামের মানুষ মহাসড়কে অবস্থান নেন এবং পরে অবরোধ গড়ে তোলেন। তাদের অভিযোগ, সাটুরিয়া উপজেলার ধানকোড়া ইউনিয়নের গোলড়া গ্রামের একটি শতবর্ষী সড়ক স্থানীয় দুটি শিল্প প্রতিষ্ঠান তারাসিমা অ্যাপারেলস লিমিটেড ও পেয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন লিমিটেড বন্ধ করে দেয়। ফলে তাদের যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দীর্ঘদিনের সমস্যা নিয়ে দুই শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বললেও তারা কর্ণপাত করেনি বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।

স্থানীয়দের দাবি, সড়কটি পাকা দেওয়াল দিয়ে বন্ধ করে দেওয়ায় গোড়লা গ্রামের স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা কয়েক কিলোমিটার ঘুরে স্কুল কলেজে যেতে হয়। এছাড়া কৃষকের উৎপাদিত ফসল বেচাকেনায় অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হয়। শতবর্ষী সড়কটি দখল করে দুই শিল্প প্রতিষ্ঠান তাদের স্বার্থে বন্ধ করে দিয়ে এলাকার মানুষের চলাচলের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।

অবরোধকারীদের দাবি, আওয়ামী সরকারের সময়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের যোগসাজশে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কোম্পানি দুটি রাতারাতি মানুষের চলাচল সড়কে পাকা দেওয়াল গড়ে তুলে। ফলে গ্রামবাসী তাদের ন্যায্য পথচলার অধিকার হারিয়েছে। তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, যতক্ষণ না বন্ধ হওয়া সড়কটি পুনরায় খুলে দেওয়া হবে, ততক্ষণ তারা সড়ক ছাড়বেন না। 

এদিকে, অবরোধের কারণে মহাসড়কে আটকে পড়েছে দূরপাল্লার বাস, পণ্যবাহী ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন। পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। 

সাটুরিয়া থানার ওসি শাহিনুল ইসলাম জানান, গ্রামবাসীরা সকাল ১১টা থেকে মহাসড়কে অবস্থান নিয়েছে, যার ফলে দুইপাশে যানবাহনের দীর্ঘ সারি তৈরি হয়েছে। তবে প্রশাসন, কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ও গ্রামবাসীদের মধ্যে দফায় দফায় আলোচনা চলছে। তিনি আশা করছেন, দ্রুত একটি সমাধান বেরিয়ে আসবে।

এ বিষয়ে দুই শিল্প প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবরোধ, কয়েক কিলোমিটার জুড়ে যানজট