রাউজানে পাহাড়, টিলা কিংবা সমতল ভূমি– এমন কোনো জায়গা বাকি নেই যেখানে খননযন্ত্রের কোপ পড়েনি। সন্ধ্যা নেমে এলেই এক্সক্যাভেটরের (খননযন্ত্র) শব্দ আর সারিবদ্ধ ট্রাকের আওয়াজে রাতের ঘুম হারাম স্থানীয়দের। আবার কোথাও কোথাও মাটি কাটা নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষ কিংবা কেউ সড়ক দিয়ে গাড়ি চালাচল বন্ধের চেষ্টা করলে ঘটছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। কোনো কোনো ঘটনায় গুলিও চালানো হচ্ছে। কখনও ঝাঁজড়া হচ্ছে প্রতিপক্ষের পা কিংবা শরীরের অংশ। একদিকে যন্ত্রতাণ্ডবে সাবাড় হচ্ছে রাউজানের পাহাড়-পর্বত, টিলা কিংবা সমতল ভূমি। অন্যদিকে, ভাগবাটোয়ারা নিয়ে সংঘর্ষে আহত হয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন মাটিখেকোদের কেউ কেউ। এমন চিত্র রাউজান উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর থেকে রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে একশ্রেণির দুষ্কৃতকারী বেপরোয়াভাবে মাটি কেটে বিক্রি করছে। এসব মাটি দ্বারা পুকুর, কৃষিজমি ভরাট করা হচ্ছে। শুধু রাজনৈতিক পরিচয়ধারী নন, ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয় দিয়েও মাটি কাটার অভিযোগ অহরহ। অনেকে বলছেন ছাত্র প্রতিনিধিদের নাম ভাঙিয়ে সন্ত্রাসীরা এসব কাজ করছে। 
১৫ ডিসেম্বর মাটি কাটা নিয়ে কদলপুর ইউনিয়নের আশরাফ আলী হাট এলাকায় দু’পক্ষের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় আনোয়ার হোসেন নামে একজন গুলিবিদ্ধ হন। ২ জানুয়ারি রাউজান ইউনিয়নের নাতোয়ানবাগিচা ও খলিলাবাদ এলাকায় আরও দুটি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিরাতে মাটি কাটা নিয়ে দু’পক্ষের ফাঁকা গুলি শব্দে আতঙ্কিত এলাকার মানুষ।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, রাউজান উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নে বেশ কয়েকটি টিলাভূমি কেটে মাটি বিক্রি করা হয়েছে। আবার কোথাও কোথাও কৃষিজমি কেটে মাছের ঘের তৈরি করা হচ্ছে। টিলাভূমির বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ নিধন করা হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই এলাকার আবদুল কাদের ওরফে কলা কাদেরসহ একটি সিন্ডিকেট মিলে ধারিচ্ছে টিলা নামক একটি টিলাভূমি কেটে মাটি বিক্রি করেছেন। অভিযোগ অস্বীকার করে আবদুল কাদের বলেন, ‘আমি কোনো টিলা কাটছি না, ইলিয়াছ নামে একজন কাটছে।’ হলদিয়া ইউনিয়নে আরও দুটি টিলাভূমি কাটা হচ্ছে বলে দাবি তাঁর।  নোয়াজিশপুর ইউনিয়ন ও আবদুল্লাহপুর ইউনিয়নের সীমানায় কৃষিজমির টপ সয়েল কেটে স্থানীয় পল্লী কানন কনভেনশন হলের পাশে বিশাল কৃষিজমি ভরাট করছেন মোহাম্মদ আবু নামে এক প্রভাবশালী ব্যক্তি। জানতে চাইলে তিনি সমকালকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে কৃষিজমি ভরাট করছি। কিছু অংশ কৃষিজমি কাটা হয়েছে।’ তিনি জেলা প্রশাসকের অনুমতিপত্র দেখাতে পারেননি। 
এদিকে ডাবুয়া ইউনিয়নের উত্তর আইলিখীল এলাকায়ও টিলাভূমি ও কৃষিজমি কেটে সাবাড় করা হচ্ছে। সেখানে বৃক্ষ নিধনও চলছে। এছাড়া রাউজান সদর ইউনিয়ন, কদলপুর, পাহাড়তলী, পূর্বগুজরা, পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নেও চলছে যন্ত্রতাণ্ডব। মাটি কাটার সঙ্গে জড়িত থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমরা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অনুমতিসাপেক্ষে মাটি কাটছি।’ 
অপরদিকে ১৫ জানুয়ারি বুধবার বিকেলে রাউজান উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের রাবার বাগান সংলগ্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেছেন রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) অংছিং মারমা। পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সহযোগিতায় এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। ঘটনাস্থলে গিয়ে জড়িতদের কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে একটি স্কেভেটর (খনন যন্ত্র) ও একটি ট্রাক জব্দ করে হলদিয়া রাবার বাগানের ব্যবস্থাপকের জিম্মায় দেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, মুছা নামে এক ব্যক্তি জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে প্রশাসন।
পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ আন্দোলনের সভাপতি মীর মোহাম্মদ আসলাম সমকালকে বলেন, উপজেলাজুড়ে যন্ত্রতাণ্ডব চললেও প্রশাসন কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। পরিবেশ অধিদপ্তর কিংবা উপজেলা প্রশাসনের নিরব ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (রুটিন দায়িত্ব) অংছিং মারমা সমকালকে বলেন, ‘আমি নতুন আসছি, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসাবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা না আসায় আমাকে পৌরসভার প্রশাসকের দায়িত্ব সহ ছয়টি দপ্তরের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। পাহাড় টিলাভূমি কাটার বিষয়ে নতুন ইউএনও আসলে অভিযান পরিচালনা করা হবে। এরপরও বসে নেই আমি। তথ্য পেলেই প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ঘর ষ এল ক য়

এছাড়াও পড়ুন:

সামারিক শক্তিতে মিয়ানমারের চেয়ে ২ ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশ

চলতি বছর সামরিক শক্তির দিক থেকে মিয়ানমারের চেয়ে দুই ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। চলতি সপ্তাহে সামরিক শক্তি পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার প্রকাশিত সূচকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সংস্থাটি তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এই র‌্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের সামরিক বাজেট। সেনাবাহিনীর আকার, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীর শক্তিকেও বিবেচনা করা হয়েছে সমীক্ষায়।

গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ারের সূচক অনুযায়ী, বিশ্বে সামরিক শক্তির ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, এরপরে পরে রয়েছে রাশিয়া, চীন, ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়া। পরমাণু শক্তিধর হলেও পাকিস্তানের অবস্থান ১২ নম্বরে। তালিকায় বাংলাদেশ রয়েছে ৩৫তম অবস্থানে। বাংলাদেশের আগে রয়েছে উত্তর কোরিয়া ও আর্জেন্টিনা। আর বাংলাদেশের প্রতিবেশী মিয়ানমার রয়েছে ৩৭তম অবস্থানে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটির বেশি। এর মধ্যে প্রায় ৬ কোটি ৬১ লাখ মানুষ সামরিক বাহিনীতে যুক্ত হওয়ার যোগ্য। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীতে মোট সেনা সংখ্যা ১ লাখ ৬৩ হাজার। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে রয়েছে ১৭ হাজার ৪০০ সদস্য এবং নৌবাহিনীতে রয়েছে ২৫ হাজার ১০০ সেনা। 

অন্যদিকে, মিয়ানমারের মোট জনসংখ্যা ৫ কোটি ৭৫ লাখ। এর মধ্যে প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ সামরিক বাহিনীতে যুক্ত হওয়ার যোগ্য। মিয়ানমারের সক্রিয় সৈন্য সংখ্যা ১ লাখ ৫০ হাজার। মিয়ানমারের রিজার্ভ সৈন্য রয়েছে ২০ হাজার। দেশটির বিমানবাহিনীতে রয়েছে ১৫ হাজার সদস্য এবং নৌবাহিনীতে রয়েছে ১৬ হাজার সেনা। 

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ