কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে বেঁধে ইমরান হোসেন (২১) নামের এক যুবককে তার মায়ের সামনেই নির্যাতন করা হয়েছে। উপজেলার কনকাপৈত ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে প্রায় রাত ৯টা পর্যন্ত এই নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় ওই যুবক বর্তমানে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। 

এদিকে নির্যাতনের একটি সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনায় জড়িতদের আটক করতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। তবে শনিবার রাত ১১টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশ জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি। 

শনিবার বিকেলে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন নির্যাতিত ইমরানের মা। এতে ১৩ জনের নাম উল্লেখ এবং চার থেকে পাঁচজনকে অজ্ঞাত হিসেবে আসামি করা হয়েছে। থানায় দায়ের করা অভিযোগের প্রধান আসামি শহিদুর রেজা ওরফে রতন মিয়াজীও একই এলাকার বাসিন্দা। নির্যাতনের শিকার ইমরান দৌলতপুর গ্রামের মো.

শাহ আলমের ছেলে।

ইমরানের মা আফরোজা বেগমের দাবি, শহিদুর রেজা রতন মিয়াজী চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তার নানা কাজের বিরুদ্ধে প্রায় সময় প্রতিবাদ করতেন ইমরান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে হুমকি দিয়ে আসছিল শহিদুর রেজা রতনের লোকজন। তার ছেলেকে যারা বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করেছে তারা সবাই স্থানীয় সন্ত্রাসী। তাদের অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে কথা বলায় ক্ষিপ্ত হয়ে তার ছেলেকে এভাবে নির্যাতন করা হয়েছে।’ নির্যাতনের ঘটনাটি স্থানীয় একটি মসজিদের সিসি ক্যামেরায় কিছুটা ধরা পড়েছে। শনিবার সকাল থেকে কয়েকটি সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ইমরানের মা আফরোজা বলেন, ‘শুক্রবার সন্ধ্যার পর তারাশাইল বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে আমার ছেলেকে একা পেয়ে সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মারধর শুরু করে। আমার ছেলের চিৎকার শুনে আমি এগিয়ে গেলে তারা আমাকেও অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ফেলে। এ সময়ে তারা মসজিদের সামনের একটি বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে আমার সামনেই প্রায় তিন ঘণ্টা ইমরানের ওপর নির্মম নির্যাতন করে। এরপর মৃত ভেবে আমার ছেলেকে ফেলে রেখে যায়। তারা আমার ছেলের সঙ্গে থাকা টাকাও নিয়ে গেছে। আমি ওই সন্ত্রাসীদের বিচার চাই।’

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, ঘটনাটি অনেকে দেখলেও কেউ সহায়তায় এগিয়ে আসেনি। পরে ইমরানের মাসহ অন্য আত্মীয়স্বজনরা ইমরানকে উদ্ধার করে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে কুমিল্লা মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। 

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জাবেদ হোসেন বলেন, ‘শুক্রবার রাত প্রায় ১২টা ২০ মিনিটে গুরুতর অবস্থায় ইমরান হোসেনকে হাসপাতালে আনা হয়। তার পুরো শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আমরা তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছি।’

এদিকে শনিবার সকাল থেকে ইমরানকে নির্যাতনের ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। এরপর থেকে নির্যাতনে জড়িত ব্যক্তিরা এলাকা থেকে পালিয়ে গেছেন। প্রধান অভিযুক্ত শহিদুর রেজার মুঠোফোন সংযোগ বন্ধ পাওয়া গেছে। কয়েকবার চেষ্টা করেও তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

শনিবার রাতে চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেন, ‘ইমরান হোসেন নামের ওই যুবককে নির্যাতনের একটি ভিডিও চিত্র আমাদের নজরে এসেছে। বাড়ি ফেরার পথে ইমরানকে জিম্মি করে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করা হয়। এ ঘটনায় শহিদুর রেজা রতন মিয়াজীকে প্রধান আসামি করে ১৩ জনের নাম উল্লেখসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে লিখিতি অভিযোগ করেছেন নির্যাতনের শিকার ওই ছেলের মা। রাতেই অভিযোগটি এফআইআর করা হচ্ছে। অভিযুক্তদের আটক করতে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে।’
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম রধর ইমর ন র ম র স মন অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

ইরেশ জাকেরের বিরুদ্ধে মামলা খুবই বিরক্তিকর: ফারুকী

অভিনেতা ইরেশ জাকেরের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হওয়ার বিষয়টি খুবই বিরক্তিকর ও উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

আজ সোমবার সচিবালয়ে কান চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশি শর্টফিল্ম ‘আলী’র প্রদর্শনীর আমন্ত্রণ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথাগুলো বলেন।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর মিরপুরে গুলিতে বিএনপিকর্মী মাহফুজ আলম (শ্রাবণ) হত্যার অভিযোগে অভিনেতা ইরেশ জাকেরের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে—এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি এখন সরকারের অংশ, অ্যাকটিভিস্ট নই। অ্যাক্টিভিস্ট হলে কথা বলতাম বেশি। সরকারের অংশ হওয়ায় আমাকে কথা কম বলে কাজ বেশি করতে হয়।’

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘ইরেশ জাকেরকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। জুলাই আন্দোলনে তিনি জড়িত ছিলেন। ফলে এটা ডিপলি ট্রাবলিং অ্যান্ড ডিপলি ডিস্টার্বিং (খুবই বিরক্তিকর ও উদ্বেগজনক)।’ তিনি বলেন, ‘মামলা করেছেন একজন, এটি রাষ্ট্রপক্ষের মামলা নয়। আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, মামলা করার স্বাধীনতা সবার আছে। সেই স্বাধীনতার কেউ অপব্যবহারও করছেন।’

সংস্কৃতি উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, পুলিশ এটার সঠিক তদন্ত করবে। যেটা সত্য, সেটার পক্ষে থাকবে, যেটা মিথ্যা, সেটা বাতিল করবে।’

এ বিষয়ে আপনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলবেন কি না, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সরকারের অনেক কাজ আমরা প্রকাশ্যে বলতে পারি না। আপনারা নিশ্চিত থাকতে পারেন যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কোনো কিছু কিংবা যা কিছু সাংস্কৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত, সেগুলোর সঙ্গে আমি বা আমার মন্ত্রণালয় জড়িত থাকি। তবে সব ক্ষেত্রে আমরা বলি না এই কাজ আমরা করছি।’

সংস্কৃতি উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমরা অনেক কাজ করছি। যেটা আমাদের দায়িত্ব। সেই বিষয়ে পিআর (জনসংযোগ) করি না।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ