Samakal:
2025-01-31@12:06:27 GMT

পরিযায়ী পাখি কমেছে

Published: 25th, January 2025 GMT

পরিযায়ী পাখি কমেছে

মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলায় অবস্থিত এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওরে দু’দিনব্যাপী জলচর পাখিশুমারি শেষ হয়েছে। এ বছর হাওরে অতিথি পাখির সংখ্যা কমেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
শুমারিতে ৩৫ হাজার ২৬৮টি পাখি পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে বলে জানান জরিপে অংশগ্রহণকারী পাখি বিশেষজ্ঞরা। শুক্রবার এ কার্যক্রম শেষ হয়।
বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিনিধি দল প্রতিবছরের মতো এবারও হাকালুকি হাওরে পরিযায়ী জলচর পাখির জরিপ করেছে। ২৩ ও ২৪ জানুয়ারি দু’দিনব্যাপী চলেছে জরিপের কাজ। এ কাজে সহযোগিতা করেছে বেসরকারি সংস্থা সিএনআরএস ও বাংলাদেশ বন অধিদপ্তর। জরিপে অংশ নেন ওমর শাহাদাত, খালেক মিলা, সুলতান আহমেদ, সাব্বির আহাম্মেদ, উজ্জ্বল দাস, আবু মুসা রাজু, মাহফুজ হিমেল ও খোরশেদ আলম।
পাখি বিশেষজ্ঞরা জানান, এ বছর হাকালুকি হাওরের গুরুত্বপূর্ণ প্রায় ৪৫টি বিলে চালানো গণনায় সর্বমোট ৩৫ হাজার ২৬৮টি পাখি পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। এর মধ্যে পিংলা বিলে বিশ্বব্যাপী বিপন্ন বেয়ারের ভূতি হাঁস দুটি, নাগুয়া-লরিবাই বিলে বাংলাদেশের বিরল প্রজাতির বৈকাল তিলিহাঁস একটি, প্রায় সংকটাপন্ন ফুলুরি হাঁস তিনটি, মরচে রংয়া ভূতিহাঁস ১ হাজার ৫৮৮টি, উত্তুরে টিটি ৬টি, সংকটাপন্ন কালো মাথা কাস্তেচরা ৩৯৩টি এবং বিশ্বব্যাপী বিপন্ন পাতি ভূতিহাঁস ৯০৯টি উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়াও পিয়ং হাঁস ৫ হাজার ৫৫২টি, উত্তুরে ল্যাঞ্জ্যা হাঁস ৪ হাজার ২৭২টি এবং এশীয় শামুকখোল ৪ হাজার ২২৮টি পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিগত বছরের তুলনায় এবার পাখি সংখ্যা তুলনামূলক কম পরিলক্ষিত হয়েছে। কেননা প্রায় প্রতিটি জলাশয়ে মৎস্য আহরণ চলছে এবং কিছু কিছু জলাশয় প্রায় পানিশূন্য করে মাছ শিকার করা হচ্ছে। ব্যাপকভাবে কীটনাশকের ব্যবহারও বেড়েছে হাওর এলাকায়।
নাগুয়া বিলে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল দিয়ে পাখি শিকার, পিংলা বিলের পাশে বিষটোপ (কার্বোটাফ) দিয়ে পাখি শিকারের নমুনা স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে। হাতেনাতে ধরে জালও নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি পরিত্যক্ত মাছ ধরার ফাঁদ হাওরে ব্যাপকভাবে দৃশ্যমান, যা অতিথি পাখির জন্য হুমকি।
বার্ড ক্লাব সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালে হাকালুকি হাওরে পাখিশুমারি হয়নি। এর আগে ২০২৩ সালের শুমারিতে হাওরে ৫২ প্রজাতির ৩৭ হাজার ৭৭৮টি, ২০২২ সালে ৫১ প্রজাতির ৩৬ হাজার ৫০১টি পাখি দেখা গিয়েছিল। এ ছাড়া ২০২০ সালে ৫৩ প্রজাতির ৪০ হাজার ১২৬টি এবং এর আগের বছর ২০১৯ সালে ৫১ প্রজাতির ৩৭ হাজার ৯৩১টি পাখির দেখা মিলেছিল। সেই তুলনায় চলতি বছরে হাকালুকি হাওরে ৩৫ হাজার ২৬৮টি পাখি পর্যবেক্ষণ করেছেন জরিপে অংশগ্রহণকারীরা।
স্থানীয় পরিবেশ কর্মীরা জানান, হাকালুকি হাওরের প্রতিবেশ প্রতিনিয়ত সংকটাপন্ন হচ্ছে। যার ফলে বর্ষার সময় দীর্ঘমেয়াদি জলাবদ্ধতা, শুষ্ক মৌসুমে পানিশূন্যতার প্রধান কারণ হচ্ছে দীর্ঘদিন থেকে নদীনালা ও বিল খনন না করা। পাহাড়ি পলিতে বিলগুলো ভরাট হয়ে নাব্য হারিয়েছে।
এ ছাড়া ফাঁদ পেতে শিকারিরা অতিথি পাখি শিকার চলছে বিলগুলোতে। এতে হাওরের প্রতিবেশ বিভিন্ন প্রজাতি পাখি ও হাঁসের জন্য সংকটাপন্ন হয়েছে।
ইউএনও মহিউদ্দিন জানান, পরিবেশ বিনষ্টে হাকালুকি হাওরের কুলাউড়া অংশে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হচ্ছে।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম (মৌলভীবাজার কার্যালয়) জানান, বিস্তীর্ণ হাকালুকি হাওরের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন। পাখি শিকার বন্ধে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রয়েছে।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশের ৪২টি ভাষার ডিজিটাইজেশনের কাজ সম্পন্ন

বাংলাদেশের ৪০টি জনগোষ্ঠীর ভাষিক প্রতিনিধিবৃন্দকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ’ প্রকল্পের আওতায় ‘মাল্টিলিংঙ্গুয়াল ক্লাউড: ডিজিটাল রিসোর্সেস ফর ল্যাঙ্গুয়েজেস অফ বাংলাদেশ’ বিষয়ক কর্মশালা।

বুধবার (২৯ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত এই কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, এনডিসি। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক ড. মুহাম্মদ মেহেদি হাসান। 

কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন প্রকল্প পরিচালক মো. মাহবুব করিম।
 
বিশেষ অতিথি আইসিটি পলিসি অ্যাডভাইজার ফয়েজ আহমদ তৈয়ব ভিডিও বার্তায় বলেন, “বিশ্বের প্রায় ৭১০০ ভাষার মধ্যে ৪০ শতাংশ ভাষাই বিপন্ন হতে চলেছে। ভাষার টিকে থাকার জন্য প্রয়োজন নিয়মিত চর্চা ও ডিজিটাল সংরক্ষণ। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের ৪২টি ভাষার ডিজিটাইজেশন ও ট্রাইলিঙ্গুয়াল ডিকশনারি তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়েছে, যা ভাষার সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”

সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও ভাষাগত সংরক্ষণ নিয়ে প্রধান অতিথি শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশের ভাষাগুলো শুধুমাত্র ভাষাগত পরিচয়ের অংশ নয় বরং এরা সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক। ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে এই ভাষাগুলোর সংরক্ষণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।” 

তিনি এক্ষেত্রে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার ভাষিক মিলের লক্ষ্যণীয় দিকগুলো তুলে ধরেন। এই আলোকে বিপন্ন ভাষাগুলোকে কীভাবে প্রাণবন্ত করা যায়, এদিকে গুরুত্ব আরোপ করে এই প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।

কর্মশালায় ভাষা বিশেষজ্ঞ, গবেষক, এবং বিভিন্ন গোষ্ঠীর প্রতিনিধিরাও অংশগ্রহণ করেন।

দ্বিতীয় পর্বে, ম্রো ভাষার ব্যাকরণ প্রণেতা ইয়াঙগান ম্রো তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, “ম্রো ভাষার কিবোর্ড ও ফন্ট তৈরির ফলে আমাদের ভাষা সংরক্ষণ ও প্রচারের একটি নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। এই উদ্যোগ আমাদের ভাষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

কর্মশালার দ্বিতীয় পর্ব, কারিগরি অধিবেশনে কমিউনিটি-ভিত্তিক ভাষা উন্নয়ন এবং ডিজিটাইজেশন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মনিপুরি মৈতৈ ভাষার প্রতিনিধি একে শেরাম ইউবোর্ডে মনিপুরি মৈতৈ লিপি অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেন, যা ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। এছাড়া তিনি অঞ্চলভিত্তিতে ভাষা বিষয়ক কর্মশালা ও বাংলাদেশের ভাষার কিবোর্ড, ইউবোর্ডকে তরুণ প্রজন্মের সাথে পরিচয় ও তাদের মাঝে এর ব্যবহার ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করতে আহবান জানান।

উক্ত কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জফির উদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাহরিয়ার রহমান এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাজ্জাদুল ইসলাম সুমন।

অধ্যাপক ড. জফির বলেন, “একটি জাতির ভাষা মৃত্যুর সাথে সাথে সেই জাতির সংস্কৃতি ও জ্ঞানচর্চারও মৃত্যু হয়, তাই যে ভাষাগুলোর ডিজিটাইজেশন করা হলো তার যে শব্দ, বাক্য, রূপমূল রয়েছে। ভাষাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে, বয়স্ক ব্যক্তি যে কিনা ঐ ভাষা থেকে দূরে আছে, সেক্ষেত্রে তার ভাষা নেওয়ার জন্য তার কাছে যাওয়ার যে প্রচেষ্টা সেটা এই প্রকল্পে কতটা অনুসরণ করা হয়েছে, তা দেখার বিষয়।”

অধ্যাপক ড. শাহরিয়ার একটি লার্নিং প্ল্যাটফর্ম তৈরি প্রসঙ্গে বলেন, “যেখানে সব ভাষাভাষী এই প্ল্যাটফর্মের আলোকে ভাষাগুলো শিখতে আগ্রহী হবে।” 

একই সাথে প্রত্যেকটি ভাষার আইপিএ সংশ্লিষ্ট চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে তিনি বলেন, “দ্বিতীয় ধাপে যদি এই প্রকল্পটির উদ্যোগ নেওয়া হয়, তাহলে বিভিন্ন ভাষার ধ্বনিগত দিক বিশ্লেষণ করে আরও বিস্তৃতভাবে কাজ করা যাবে।” 

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাজ্জাদ ভাষা সংরক্ষণ করার পাশাপাশি ভাষার প্রয়োগও নিশ্চিত করনের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। পাশাপাশি মাতৃভাষায় শিক্ষার সুযোগ বাড়ানোর জন্য এই ডিজিটাল রিপোজিটরির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে বলে জানান।

অনুষ্ঠানটিতে ধারণাপত্র উপস্থাপন, প্রকল্প সংশ্লিষ্ট নানা মন্তব্য ও প্রশ্নগুলোর উত্তর প্রদান করেন প্রকল্পের পরামর্শক, সঞ্চালক মামুন অর রশীদ। 

কর্মশালা শেষে অংশগ্রহণকারীরা ভাষার ডিজিটাইজেশনের এই প্রয়াসকে স্বাগত জানান এবং ভবিষ্যতে আরও বিস্তৃতভাবে কাজ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

ঢাকা/হাসান/টিপু

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাংলাদেশের ৪২টি ভাষার ডিজিটাইজেশনের কাজ সম্পন্ন