ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার বটের হাট এলাকার সখিনা বেগম। স্বামী অসুস্থ হওয়ায় নিজে কাজ করে জীবিকার ব্যবস্থা করেন। শামীম উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি পাকা বাড়ি করে দেওয়ার আশ্বাস দিলে গরু বিক্রি ও কাজ করে জমানো ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা তাঁকে দিয়েছেন। তিনি বলছিলেন, ‘আমাদের বলেছে, তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকার কাজ করে দেওয়া হবে। তবে এখনও কাজ হয়নি। যার মাধ্যমে টাকা দিয়েছি, তাঁকে বলছি; কোনো গুরুত্ব নেই। বাড়িতে যাচ্ছি, দেখা পাওয়া যায় না। তারিখের পরে তারিখ আর শেষ হয় না।’
ঠাকুরগাঁওয়ে সখিনার মতো অসহায়, গরিব ও দুস্থ মানুষকে পাকা বাড়ি করে দেওয়ার কথা বলে অন্তত ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে সপরিবারে আত্মগোপনে চলে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে শামীমের বিরুদ্ধে। প্রায় দেড় হাজার পরিবার প্রতারণার শিকার হয়েছে বলে জানা গেছে। তাঁর বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। বিষয়টি জানতে পেরে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসন।
জেলার হরিপুর উপজেলার মহেন্দ্রগাঁও এলাকার শামসুদ্দিন মণ্ডলের ছেলে শামীম। ভুক্তভোগী ও টাকা উত্তোলনে জড়িত ব্যক্তিরা বলছেন, বিদেশি অনুদানে অসহায় মানুষকে পাকা বাড়ি করে দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি। মসজিদের ইমাম, মাদ্রাসার শিক্ষক, শিক্ষা কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ীসহ ১৫ ব্যক্তির মাধ্যমে অন্তত দেড় হাজার মানুষের ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। কিছু বাড়ির কাজ শুরু করেছেন। কারও ইট দিয়েছেন। তবে বেশির ভাগ মানুষ কিছুই পাননি।
এরই মধ্যে আত্মগোপনে চলে যান শামীম। এক বছর ধরে তাঁর খোঁজ না পাওয়ায় ভুক্তভোগীরা হতাশায় ভুগছেন। বাড়ি বা টাকা ফেরত না পেয়ে তারা ঘুরছেন টাকা তোলায় যুক্ত ব্যক্তিদের বাড়ি বাড়ি। তাদের চাপে ইমাম ও শিক্ষকদের অনেকে চাকরি হারিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন। শামীম কোথায় আছেন বা টাকা কী করেছেন, তা জানা নেই কারও।
রংপুরের পাগলাপীর এলাকার ইমাম আনিসুর রহমান ৩৭টি ঘরের জন্য ৫০ লাখ ও মসজিদ-মাদ্রাসার অজুখানার জন্য ২০ লাখসহ ৭০ লাখ টাকা তুলে দিয়েছেন শামীমকে। এখনও কোনো কাজ হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, শামীমের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। তবে তিনি কোনো মামলায় হাজিরা দেন না। তারা জানতে পেরেছেন, পরিবার রংপুরে আর শামীম থাকেন সৈয়দপুরে। ফোন নম্বর পরিবর্তন করেন। এ কারণে তাঁকে পাওয়া যাচ্ছে না।
পীরগঞ্জ উপজেলায় টাকা উত্তোলনে যুক্ত ছিলেন মাদ্রাসা শিক্ষক রেজাউল করীম। তিনি বলেন, ‘শামীম বিভিন্ন প্রলোভনে প্রায় ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এখন আমরা মানুষের চাপে চাকরি হারিয়ে পরিবার নিয়ে কষ্টে আছি। তার খবর পাচ্ছি না। প্রতি বাড়ির জন্য ১ লাখ ২৫ হাজার করে টাকা দিয়েছেন। ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিটি বাড়িতে চার লাখ টাকার কাজের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এমন আশ্বাসে মানুষ আগ্রহী হয়ে টাকা দেন। ১২৬টি পরিবার থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার করে টাকা তুলে দিয়েছি। এখনও কাউকে ঘর করে দিতে পারিনি।’
সদর উপজেলার টাকা তুলেছেন রহিমানপুরের রেজাউল ইসলাম। তাঁর ভাষ্য, ‘শামীমের কাছে ঘর ও কাজ বাবদ দেড় কোটি টাকা পাব। নিঃস্ব মানুষের চাপে কষ্টে আছি। শামীমের কোনো খবর পাচ্ছি না।’ বাড়ির জন্য টাকা দেওয়া সদরের ফকদনপুরের বুধু মোহাম্মদ বলেন, নিজের ও মেয়ের দুটি বাড়ি করতে আড়াই লাখ টাকা দিয়েছেন তিনি। ঘরও পাননি, টাকাও ফেরত দিচ্ছে না। এরই মধ্যে তাদের ঘর ভেঙে পড়ায় পরিবার নিয়ে কষ্টে আছেন।
বিষয়টি নিয়ে বক্তব্য জানতে শামীমের বাড়িতে তিনবার গিয়েও তাঁকে পাওয়া যায়নি। ফোনকল একাধিকবার রিসিভ করেছেন। প্রতিবারই নানা অজুহাতে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন তিনি।
জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা বলেন, শামীম উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি বাড়ি করে দেওয়ার কথা বলে টাকা তুলে গা ঢাকা দিয়েছেন বলে তিনি অভিযোগ পেয়েছেন। বিষয়টি জানার পরে সংশ্লিষ্ট ইউএনওকে নির্দেশনা দিয়েছেন। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য পর ব র উপজ ল ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

৯০ দিনের মধ্যে গণহত্যার বিচার ও অবিলম্বে আ.লীগের নিবন্ধন বাতিল দাবি

আগামী ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে জুলাই গণহত্যার বিচার, ফ্যাসিবাদী অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অবিলম্বে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল ও নিষিদ্ধকরণের দাবি জানিয়েছে কয়েকটি সংগঠন। 

গতকাল সোমবার সচিবালয়ে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বরাবর এক স্মারকলিপিতে তারা এ দাবি জানান। জুলাই রেভ্যুলেশনারি অ্যালায়েন্স, অ্যান্টি ফ্যাসিস্ট কোয়ালিশন, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি ন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, স্টুডেন্ট এলায়েন্স ফর ডেমোক্রেসি নামের সংগঠনগুলোর পাঁচ প্রতিনিধিরা এ দাবি তুলে ধরেন।

আইন উপদেষ্টার কাছে ওই স্মারকলিপিতে তারা লিখেছেন, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে সংঘটিত ভয়াবহ গণহত্যা আমাদের জাতীয় ইতিহাসে এক কলঙ্কময় অধ্যায়। রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের যৌথ নির্দেশনায় এদেশের সাধারণ নাগরিকদের ওপর চালানো হয়েছে পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞ, যার ফলে দুই সহস্রাধিক মানুষ শহীদ হয়েছেন এবং বহু মানুষ এখনও পঙ্গু ও নিখোঁজ। এই গণহত্যার বিচার এখনও শুরু হয়নি। বিচার প্রক্রিয়া হচ্ছে চরম ধীরগতির, নানাভাবে প্রতিহত করা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় কাঠামো ব্যবহার করে। বিচারহীনতার এই ধারাবাহিকতা সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ১৩২ ধারার অপব্যবহারের মাধ্যমে, যা সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের আগে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমতি গ্রহণের বিধান দেয়। এই ধারা বর্তমানে রাষ্ট্রীয় খুনিদের বিচার এড়ানোর আইনি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বহু প্রশাসনিক কর্মকর্তা ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছে। হাজার হাজার ভুক্তভোগী এখনও মামলা ও হয়রানির মুখোমুখি, অনেক নিরীহ নাগরিককে গুম-খুনের শিকার হতে হয়েছে, যাদের অধিকাংশের নামই রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে করা মামলা ও মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত।

স্মারকলিপিতে দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ফৌজদারি কার্যবিধি ১৩২ ধারা অবিলম্বে বাতিল বা সংস্কার করতে হবে, যাতে সরকারি কর্মকর্তারা দায়মুক্তি না পান। আগামী ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে জুলাই অভ্যুত্থানে সংগঠিত গণহত্যার বিচার, শাপলায় সংঘটিত গণহত্যা, পিলখানা, ২৮ ফেব্রুয়ারি এবং ২৬ মার্চসহ সকল হত্যাকাণ্ডের দ্রুত নিরপেক্ষ তদন্ত ও দৃশ্যমান বিচার কার্যক্রম শুরু করতে হবে। আওয়ামী লীগ, তার অঙ্গসংগঠন এবং ১৪ দলের যেসব নেতা গত তিন নির্বাচনে ক্ষমতায় ছিলেন-তাদের অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। বিগত ১৫ বছরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে অবৈধ অর্থ উপার্জনকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। গণহত্যা তদন্তে অসহযোগিতাকারী সকল প্রশাসনিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এখনও গুম থাকা ব্যক্তিদের সন্ধান দিতে হবে এবং আয়নাঘর এবং গুমে জড়িতদের শাস্তির ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে। বিগত জুলাই আন্দোলনে দায়েরকৃত ষড়যন্ত্রমূলক মামলাগুলোসহ গত ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনামলে দায়ের করা ষড়যন্ত্র, প্রহসন এবং রাজনৈতিক হয়রানিমূলক সকল মামলা বাতিল করতে হবে। ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে, অনতিবিলম্বে আওয়ামী লীগ এবং তাদের অঙ্গসংগঠনসমূহকে নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করতে হবে এবং আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে।

স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ নামক দলটি বারবার গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে, রাষ্ট্রকে ব্যবহার করেছে নিজস্ব স্বার্থে এবং জনগণের ওপর চালিয়েছে ফ্যাসিবাদী নিপীড়ন। এই মুহূর্তে এ দলটিকে নিষিদ্ধ ও নিবন্ধন বাতিল করা না হলে ভবিষ্যতে দেশকে আরও ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হবে। আমরা আশাবাদী, আপনি এই সংকটময় সময়ে সাহসী ও ন্যায়নিষ্ঠ ভূমিকা রাখবেন। ইতিহাসের আদালতে আপনি ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেবেন-এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নবীনগরে হেফাজতের কমিটি নিয়ে মুখোমুখি দু’পক্ষ
  • ফেসবুক লাইভে এসে নিরাপত্তা চাইলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতা
  • ফরিদপুরে যুবককে কুপিয়ে জখম, থানায় মামলা না নেওয়ার অভিযোগ পরিবারের
  • বাংলাদেশকে হারানোর সুবর্ণ সুযোগ দেখছে জিম্বাবুয়ে
  • লেনিন কেন এখনও জরুরি
  • মিয়ানমার জান্তার মরিয়া চেষ্টা
  • হাওরে হাওরে ধান কাটার ধুম
  • ৯০ দিনের মধ্যে গণহত্যার বিচার ও অবিলম্বে আ.লীগের নিবন্ধন বাতিল দাবি
  • বিশ্ব সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবন দিবস আজ
  • সুপেয় পানি সংকটের স্থায়ী সমাধানের পথ