বাড়ি নির্মাণের আশ্বাসে কোটি কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা
Published: 25th, January 2025 GMT
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার বটের হাট এলাকার সখিনা বেগম। স্বামী অসুস্থ হওয়ায় নিজে কাজ করে জীবিকার ব্যবস্থা করেন। শামীম উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি পাকা বাড়ি করে দেওয়ার আশ্বাস দিলে গরু বিক্রি ও কাজ করে জমানো ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা তাঁকে দিয়েছেন। তিনি বলছিলেন, ‘আমাদের বলেছে, তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকার কাজ করে দেওয়া হবে। তবে এখনও কাজ হয়নি। যার মাধ্যমে টাকা দিয়েছি, তাঁকে বলছি; কোনো গুরুত্ব নেই। বাড়িতে যাচ্ছি, দেখা পাওয়া যায় না। তারিখের পরে তারিখ আর শেষ হয় না।’
ঠাকুরগাঁওয়ে সখিনার মতো অসহায়, গরিব ও দুস্থ মানুষকে পাকা বাড়ি করে দেওয়ার কথা বলে অন্তত ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে সপরিবারে আত্মগোপনে চলে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে শামীমের বিরুদ্ধে। প্রায় দেড় হাজার পরিবার প্রতারণার শিকার হয়েছে বলে জানা গেছে। তাঁর বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। বিষয়টি জানতে পেরে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসন।
জেলার হরিপুর উপজেলার মহেন্দ্রগাঁও এলাকার শামসুদ্দিন মণ্ডলের ছেলে শামীম। ভুক্তভোগী ও টাকা উত্তোলনে জড়িত ব্যক্তিরা বলছেন, বিদেশি অনুদানে অসহায় মানুষকে পাকা বাড়ি করে দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি। মসজিদের ইমাম, মাদ্রাসার শিক্ষক, শিক্ষা কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ীসহ ১৫ ব্যক্তির মাধ্যমে অন্তত দেড় হাজার মানুষের ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। কিছু বাড়ির কাজ শুরু করেছেন। কারও ইট দিয়েছেন। তবে বেশির ভাগ মানুষ কিছুই পাননি।
এরই মধ্যে আত্মগোপনে চলে যান শামীম। এক বছর ধরে তাঁর খোঁজ না পাওয়ায় ভুক্তভোগীরা হতাশায় ভুগছেন। বাড়ি বা টাকা ফেরত না পেয়ে তারা ঘুরছেন টাকা তোলায় যুক্ত ব্যক্তিদের বাড়ি বাড়ি। তাদের চাপে ইমাম ও শিক্ষকদের অনেকে চাকরি হারিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন। শামীম কোথায় আছেন বা টাকা কী করেছেন, তা জানা নেই কারও।
রংপুরের পাগলাপীর এলাকার ইমাম আনিসুর রহমান ৩৭টি ঘরের জন্য ৫০ লাখ ও মসজিদ-মাদ্রাসার অজুখানার জন্য ২০ লাখসহ ৭০ লাখ টাকা তুলে দিয়েছেন শামীমকে। এখনও কোনো কাজ হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, শামীমের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। তবে তিনি কোনো মামলায় হাজিরা দেন না। তারা জানতে পেরেছেন, পরিবার রংপুরে আর শামীম থাকেন সৈয়দপুরে। ফোন নম্বর পরিবর্তন করেন। এ কারণে তাঁকে পাওয়া যাচ্ছে না।
পীরগঞ্জ উপজেলায় টাকা উত্তোলনে যুক্ত ছিলেন মাদ্রাসা শিক্ষক রেজাউল করীম। তিনি বলেন, ‘শামীম বিভিন্ন প্রলোভনে প্রায় ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এখন আমরা মানুষের চাপে চাকরি হারিয়ে পরিবার নিয়ে কষ্টে আছি। তার খবর পাচ্ছি না। প্রতি বাড়ির জন্য ১ লাখ ২৫ হাজার করে টাকা দিয়েছেন। ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিটি বাড়িতে চার লাখ টাকার কাজের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এমন আশ্বাসে মানুষ আগ্রহী হয়ে টাকা দেন। ১২৬টি পরিবার থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার করে টাকা তুলে দিয়েছি। এখনও কাউকে ঘর করে দিতে পারিনি।’
সদর উপজেলার টাকা তুলেছেন রহিমানপুরের রেজাউল ইসলাম। তাঁর ভাষ্য, ‘শামীমের কাছে ঘর ও কাজ বাবদ দেড় কোটি টাকা পাব। নিঃস্ব মানুষের চাপে কষ্টে আছি। শামীমের কোনো খবর পাচ্ছি না।’ বাড়ির জন্য টাকা দেওয়া সদরের ফকদনপুরের বুধু মোহাম্মদ বলেন, নিজের ও মেয়ের দুটি বাড়ি করতে আড়াই লাখ টাকা দিয়েছেন তিনি। ঘরও পাননি, টাকাও ফেরত দিচ্ছে না। এরই মধ্যে তাদের ঘর ভেঙে পড়ায় পরিবার নিয়ে কষ্টে আছেন।
বিষয়টি নিয়ে বক্তব্য জানতে শামীমের বাড়িতে তিনবার গিয়েও তাঁকে পাওয়া যায়নি। ফোনকল একাধিকবার রিসিভ করেছেন। প্রতিবারই নানা অজুহাতে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন তিনি।
জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা বলেন, শামীম উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি বাড়ি করে দেওয়ার কথা বলে টাকা তুলে গা ঢাকা দিয়েছেন বলে তিনি অভিযোগ পেয়েছেন। বিষয়টি জানার পরে সংশ্লিষ্ট ইউএনওকে নির্দেশনা দিয়েছেন। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন য পর ব র উপজ ল ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
শেখ হাসিনার ফাঁসির দাবিতে চট্টগ্রামে অনশনে বৈষম্যবিরোধীরা
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ জড়িত সবার ফাঁসির দাবিতে অনশন করছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর জামালখানে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে এ অনশন শুরু করেন তারা। পরে প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে অবস্থান নেন। রাত সাড়ে ৮টা এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অনশন চলছিল। এর আগে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ করেন তারা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য রাসেল আহমেদ বলেন, ‘বিপ্লবের ছয়মাস পূরণ হতে যাচ্ছে। আমরা এখনও এ সরকারের কাছে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখতে পাইনি। আমাদের ভাইদের রক্ত এখনও রাজপথে লেগে আছে। আমি এখানে বসলাম, যতক্ষণ পর্যন্ত সরকার কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেবে না আমরা এখান থেকে উঠব না। আমাদের লড়াই চলছে, চলবে। আমরা আমাদের আমরণ অনশন চালিয়ে যাব। আমরা বিচার চাই। বিচার ছাড়া কোনো কথা নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ সরকার আমাদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে ক্ষমতায় বসেছে। ইউনূস সরকার কি করে। খুনি বাইরের দেশে বসে আছে। তাদের ধরে এনে ফাঁসির দড়িতে ঝুলাতে হবে। এটাই আমাদের শেষ কথা।’
রাসেল আহমেদ বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে যেভাবে ফ্যাসিবাদী কাঠামো গড়ে উঠেছিল, সেটাকে ভেঙে দিয়ে খুনি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আমরা রাজপথে নেমে এসেছিলাম। এখন পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে আমরা ন্যূনতম সংস্কার ও বিচার পাইনি। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আমাদের দুই হাজারের অধিক ভাই জীবন দিয়েছে। তারা রাজপথে সাহসিকতার সঙ্গে আওয়ামী লীগের পেটোয়া বাহিনী প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল।’
রাসেল আরও বলেন, ‘স্বাধীনতার পর এখনও আমাদের খুনি হাসিনা, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের বিচারের দাবিতে রাজপথে নামতে হয়। আমাদের এ মুক্ত বাতাসে এখনও লাশের গন্ধ ভেসে বেড়ায়। বারবার আমাদের তাদের বিচারের দাবিতে আওয়াজ তুলতে হচ্ছে। এ অন্তর্বর্তী সরকারকে সেসব খুনিদের বিচার করার জন্যই ক্ষমতায় বসানো হয়েছে। আজও ছাত্রলীগ-যুবলীগের গুণ্ডাবাহিনী বীর চট্টলার বুকে মিছিল করেছে। খুনি হাসিনাসহ আমাদের ভাইদের যারা খুন করেছে, তাদের বিচার ও ফাঁসি না হওয়া পর্যন্ত আমরা এখানে এখন থেকেই আমরণ অনশন পালন করব।’
আজ বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) শাকিলা সোলতানা বলেন, ‘এখনো তারা সড়কে আছেন। তাদের দাবি দাওয়া নিয়ে আলোচনা চলছে।’
অনশনকারীদের অন্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- দ্রুত বিচার আইনে বিভাগীয় ট্রাইব্যুনাল গঠন করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডে জড়িত ও উস্কানিদাতাদের গ্রেপ্তার-বিচার করা, শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত এনে বিচার করা, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষণা করা, সব হত্যা, গুম, খুন, ধর্ষণ, অপরাধ ও নির্যাতনের বিচার করা, আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা, আওয়ামী লীগ নেতাদের অবৈধভাবে অর্জিত সব অর্থ ও সম্পদ রাষ্ট্রীয়ভাবে বাজেয়াপ্ত করা, বিদেশে পাচার করা অর্থ ফেরত আনা, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের জীবনের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে গ্রহণ করতে হবে ও নতুন সংবিধান প্রণয়ন করাসহ রাষ্ট্রের যাবতীয় গণতান্ত্রিক সংস্কারের রূপরেখা প্রদান করতে হবে।