ফাহিমের নেতৃত্বে গড়া বিসিবির গঠনতন্ত্র সংশোধনী কমিটি স্থগিত
Published: 25th, January 2025 GMT
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) গঠনতন্ত্র সংশোধনী প্রস্তাবনা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগ বয়কট করেছে ঢাকার ক্লাবগুলো। সঙ্গে নাজমুল আবেদীন ফাহিমের নেতৃত্বে আহ্বায়ক কমিটিরও বিলুপ্তি চেয়েছে ‘ঢাকা ক্রিকেট ক্লাব অর্গানাইজার্স অ্যাসোসিয়েশন’।
এসব দাবি জানিয়ে বিসিবি প্রেসিডেন্ট ফারুক আহমেদকে স্মারকলিপি দেওয়ার সপ্তাহ খানেকের মধ্যে সংশোধনী কমিটিসহ এর কার্যক্রম স্থগিত করেছে বোর্ড। শনিবার (১৭ জানুয়ারি) বোর্ড সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয় বিসিবির পরিচালনা পর্ষদ।
বোর্ড সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেন পরিচালক মাহবুব আনাম।
আরো পড়ুন:
বিসিবির স্ট্যান্ডিং কমিটি ঘোষণা, কোন দায়িত্বে কে
দাবি নিয়ে এবার বিসিবিতে ক্রিকেটাররা, ফারুকের আশ্বাস
“আপনারা জানেন, গঠনতন্ত্রের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছিল। আজকে বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাদের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তীতে এই কমিটি পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করা হবে। তাদের কাজের পরিধি ও টার্মস অব রেফারেন্স তৈরি করার পরই বাকি কার্যক্রম হবে।”
“গঠনতন্ত্রে কী পরিবর্তন আনা প্রয়োজন এবং স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে নিয়ে সেগুলো কীভাবে তারা করবেন বিষয়গুলো সেখানে থাকবে”-আরো যোগ করেন মাহবুব আনাম।
গত শনিবার বিকেলে বিসিবি কার্যালয়ে ফারুকের সঙ্গে বৈঠকে বসেন ক্রীড়া সংগঠকরা। বৈঠক শেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন ক্রীড়া সংগঠক রফিকুল ইসলাম বাবু ও লুতফর রহমান বাদল।
বয়কটের ঘোষণা দিয়ে বাদল বলেন, “এটা স্পষ্ট, দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা খেলব না। খেলা থেকে বিরত থাকবো। আমরা খেলার পক্ষে, আমাদের বিরুদ্ধে যে ষড়ন্ত্রমূলক কার্যক্রম চলছে, এগুলো বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্রিকেটের সঙ্গে নেই এবং ভবিষ্যতেও থাকবো না।”
১৪ জানুয়ারি থেকে বিসিবি গঠনতন্ত্রের সংশোধনী প্রস্তাবনার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে ক্লাবগুলো। প্রস্তাবনায় ক্লাবগুলোর কতৃত্ব কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রথমে তারা তিন দিনের আল্টিমেটাম দেন। এরপর ১৮ জানুয়ারি ফারুকের সঙ্গে দেখা করে লিগ বয়কটের ঘোষণা দেন।
প্রস্তাবনা খসড়ায় দেখা যাচ্ছে নতুন করে সংস্কারের লক্ষ্যে কাজ করলেও বোর্ডে কমানো হচ্ছে ঢাকাভিত্তিক ক্রিকেট ক্লাবের কর্তৃত্ব আর বাড়ানো হচ্ছে ‘সরকারের প্রভাব’। বর্তমানে ক্লাব ক্যাটাগরি থেকে ১২ জন পরিচালক আসতে পারবেন। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে ক্লাব থেকে সেটি কমিয়ে মাত্র ৪ জন পরিচালকে নিয়ে আসা হয়েছে। অর্থাৎ, ঢাকার প্রিমিয়ার ডিভিশন, ফার্স্ট ডিভিশন ও থার্ড ডিভিশন ক্লাব ক্যাটাগরি থেকে মাত্র ৪ জন পরিচালক আসতে পারবেন বোর্ডে।
ক্লাব ক্রিকেটের সংশ্লিষ্টতা কমলেও বাড়ছে ডিভিশন ও ডিসট্রিক্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রভাব। আগে ১০ জন পরিচালক আসতে পারতেন বিভাগ ও জেলা থেকে। সেটি তিনজন বাড়িয়ে ১৩ করার প্রস্তাব আনা হচ্ছে। প্রস্তাবিত গঠনতন্ত্রে ঢাকা বিভাগ থেকে পরিচালক একজন বাড়িয়ে তিনজন করা হচ্ছে।
এ ছাড়া, দুজন করে পরিচালক হবেন চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর থেকে। একজন করে থাকবেন বরিশাল ও সিলেট থেকে। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে ইন্সটিটিউশন থেকে একজন বাড়িয়ে দুজন করা হচ্ছে। একই থাকছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে। আগের মত বর্তমান সংশোধনীতেও দুজন রাখা হচ্ছে।
সব মিলিয়ে ২৫ জন পরিচালক থেকে কমিয়ে আনা হচ্ছে ২১-এ। তাতে দেখা যাচ্ছে— বিভাগ, জেলা, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও ইন্সটিটিউশনের ১৭ জন পরিচালকই হবেন সংশ্লিষ্ট সরকারের আস্থাভাজন কেউ। তাতে বোর্ডে বাড়বে ‘সরকারের প্রভাব’ আর কমবে ক্রিকেট-সংশ্লিষ্ট ক্লাবের কর্তৃত্ব।
ঢাকা/রিয়াদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গঠনতন ত র
এছাড়াও পড়ুন:
হাতে ভাজা মুড়ি, শাশুড়ির পেশাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অর্চনা
হাঁটতে হাঁটতে তিতাস নদীর পাড় পর্যন্ত যেতেই কানে এলো মুড়ি ভাজার শব্দ। কয়েকজন নারী মুড়ি ভাজছেন। পুরাতন পদ্ধতিতে গরম বালুর সঙ্গে খোলায় ভাজা চালের স্পর্শে হাড়িতে মট-মট শব্দে ফুটে তৈরি হচ্ছে সুস্বাদু মুড়ি।
এখানে হাতে ভাজা মুড়ির মূল কারিগর অর্চনা দাস (৫৫)।
অর্চনা দাস ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরশহরের পাইকপাড়া পাটগুদাম রোড দাস পাড়ার ঝান্টু দাসের স্ত্রী। ঝান্টু দাস পেশায় একজন মাছ ব্যবসায়ি। অর্চনা দাসের চার মেয়ে ও একজন ছেলে। চার মেয়েকেই দিয়েছেন বিয়ে এবং ছেলে এই বছর বিবিএ শেষ করেছে।
অর্চনা দাসের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের আগে থেকেই শাশুড়ি তরঙ্গ বালা দাস হাতে ভাজা মুড়ি ভাজতেন। শাশুড়ি আমাকে খুব ভালোবাসতেন। শাশুড়ির কাছাকাছি থাকতে থাকতে আমিও মুড়ি ভাজা শিখে ফেলেছি। শাশুড়ি ২০১৯ সালে মারা গেলে ছেলেমেয়েরা মুড়ি ভাজতে নিষেধ করেছিল কিন্তু শাশুড়ির ৫০ বছরের পেশাটাকে বাঁচিয়ে রাখতেই মুড়ি ভাজার দায়িত্বটা আমি কাঁধে নেই।”
মুড়ি ভাজতে উপকরণ হিসেবে তিনি বলেন, “হাতে ভাজা মুড়ি ভাজতে দেশি চাউল দিয়েও হয় তবে রমজান আসলে মুড়িগুলো সুন্দর করতে ‘শান্তি সিলভার’ নামে এক কোম্পানির চাউল আছে, সেটা ব্যবহার করি। আমি চালগুলো লবণ পানি দিয়ে মেখে দেই। আমার ভাইয়ের মেয়ে সুলেখা দাস লবণ পানি দেওয়া চালগুলো তাওয়াতে ৪-৫ মিনিট গরম করে। তারপর আমার ভাসুরের ছেলের বউ বন্দনা দাস গরম বালুতে সেই চাউলগুলো ঢেলে চিকন কাঠি দিয়ে হাতে নাড়া দিলেই হয়ে যাচ্ছে হাতে ভাজা মুড়ি।”
অর্চনা দাস বলেন, “আমার শাশুড়ির বাড়িতে এসে আমি দেখেছি ১৯৯০ সালে এক কেজি মুড়ি ২৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতেন। এখন মুড়ি বিক্রি করি ১২০ টাকা দরে।”
দাম বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “এক বস্তা চালের দাম ৩৪০০ টাকা, লবণ লাগে ৩০ টাকা, রিকশাভাড়া ৩০ টাকা, ভাজা খরচ ১৪০ টাকা। এক বস্তা চাউলে ৩৮ কেজি মুড়ি হয়। রমজান মাসে এক দিনে ৬০ কেজি মুড়ি বিক্রি করতে পারি। রমজান মাস ছাড়া ২৫ কেজি বিক্রি হয়।”
পাইকার ব্যবসায়িরা এক কেজি মুড়ি ৯৫ টাকা ধরে কিনে নিয়ে যায় পাইকাররা কেজি প্রতি ১২০ টাকা বিক্রি করেন।
প্রতিবেশি নিদু দাস বলেন, “আমরা ২০ বছর ধরে হাতে ভাজা মুড়ি বিক্রি করতাম। বর্তমানে শ্রমিক সংকটের কারণে পেশাটাকে ছেড়ে দিয়েছি। আমাদের যা কাস্টমার ছিল এখন অর্চনা থেকে মুড়ি নিয়ে যায়। কেমিকেল মুক্ত হওয়ায় অনেকেই আসে মুড়ি নিতে। রমজান মাসে চাহিদা বেশি থাকে। আগে এখানে ১০টা পরিবারের মতো হাতে ভাজা মুড়ি তৈরি করতেন কিন্তু বর্তমানে লোকবল সংকটের কারণে এই পেশা থেকে মানুষ দূরে চলে গেছে।”
মুড়ি ক্রেতা ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি জাবেদ রহিম বিজন বলেন, “আমি ১০ বছর ধরে তাদের বাড়ি থেকে মুড়ি কিনি। সুস্বাদু ও কেমিকেল মুক্ত হওয়ায় আমার পরিবারের পছন্দ এই মুড়ি। দুই কেজি মুড়ি ২৪০ টাকা দিয়ে কিনেছি।”
কুমারশিল মোড়ের নিউ স্টোরের সত্ত্বাধিকারী হৃদয় রায় বলেন, “পাইকপাড়া থেকে হাতে ভাজা মুড়ি আমরা কিনে রাখি। হাতে ভাজা মুড়ি পুরাতন কাস্টমার যারা আছে তারা কিনে নিয়ে যায়। ক্যামিকেল মুক্ত হওয়ায় অনেকেই নিয়ে যায়।”
ঢাকা/টিপু