পাবনায় বিরোধপূর্ণ জমিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণের অভিযোগ
Published: 25th, January 2025 GMT
সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ভেঙে জমি দখলের অভিযোগ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন জমির দাবিদার কয়েকজন। তাদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ভয়ভীতি দেখিয়ে বিরোধপূর্ণ ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গা দখল করে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করা হয়েছিল।
পাবনা সদর উপজেলার ভাড়ারা ইউনিয়নের পশ্চিম জামুয়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ভাঙচুর নিয়ে শনিবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন তারা।
আরো পড়ুন: আশ্রয়ণ প্রকল্পটি এখন ধ্বংসস্তূপ
আরো পড়ুন:
চৌগাছায় বাওড়ের মাছ নিয়ে বিএনপির ২ পক্ষের সংঘর্ষ, পিস্তল উদ্ধার
কিশোরগঞ্জে জমি দখল নিয়ে সংঘর্ষ, যুবদল নেতাসহ আহত ১৫
নিজেদের জমির মালিক দাবি করে ইসমাইল হোসেন প্রামাণিক নামের একজন জানান, ১৯৪৭ সালে তৎকালীন জমিদার থেকে তাদের বাপ-দাদারা এই জমি কিনে ভোগ দখল করে আসছিলেন। তাদের নামে ডিএস, সিএস রেকর্ডও রয়েছে। তবে আরএস রেকর্ডের সময় পাশের সরকারি খাস জায়গার সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। যা নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। সেই বিরোধের সুযোগে এবং ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার জেরে ভাড়ারা ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আবু সাঈদ খান জায়গাটি দখল করে স্থানীয় প্রশাসনকে দেন। পরে সেখানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করা হয়।
তিনি আরো জানান, গত ৫ আগস্টের পর সাঈদ চেয়ারম্যান পালিয়ে গেলে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা নিজেদের ঘরবাড়ি ভেঙে নিয়ে চলে যান। তাদের কেউ তাড়িয়ে দেয়নি। বা কেউ ঘর ভেঙে দেয়নি। গণমাধ্যমে ঘর ভাঙচুরের প্রসঙ্গে যে অভিযোগ উঠেছে, তা সঠিক নয় বলে দাবি করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে জমির মালিক মৃত আবুল হোসেন প্রামাণিকের ছেলে ইসমাইল হোসেন প্রামাণিক ও তার ৬ ভাইসহ কয়েকজন এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, পাবনা সদর উপজেলার ভাড়ারা পশ্চিম জামুয়া গুচ্ছগ্রামে নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৬০টি ঘর গুঁড়িয়ে দিয়ে জমি দখলের অভিযোগ ওঠে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্রের বিরুদ্ধে। শুধু ঘর ভাঙচুরই নয়, লুট করা হয়েছে ঘরের দরজা, জানালা, টিনের চালসহ প্রায় সবকিছু।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ৫ আগস্ট রাতে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি আশ্রয়ণ প্রকল্পের জমিকে নিজেদের দাবি করে সেখানে বসবাস করা পরিবারগুলোকে জোরপূর্বক তুলে দেয়। একইসঙ্গে ঘর ভেঙে সবকিছু লুট করে নিয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই হারানো ওই পরিবারগুলো অন্যের বাড়িতে, বাঁধে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযান করছেন।
ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পের জমি নিজেদের দাবি করে আদালতে মামলা চলমান উল্লেখ করে সেখানে সাতজনের নাম সম্বলিত একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছে চক্রটি। জমির মালিক দাবিদার সাতজন হলেন- ভাড়ারা পশ্চিম জামুয়া গ্রামের আকরাম প্রামাণিক, উম্মত প্রামাণিক, আক্কাস প্রামাণিক, ইব্রাহিম প্রামাণিক, ইসমাইল প্রামাণিক, নায়েব আলী ও নবাব আলী। এ নিয়ে সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়।
ভুক্তভোগী ফুলমালা বেগম বলেন, “শেখ হাসিনা পালায়ে যাবার পর সন্ধ্যার সময় কিছু লোকজন এসে আমাগোরে এক ঘণ্টার মধ্যি ঘর ছাইড়ে দিয়ার জন্যি নির্দেশ দেয়। তখন রান্না করতেছিলাম। তাগারে অনুরোধ কইরেও কাম হয় নাই। সারারাত না খায়ে ঘরের বাইরে বসে কাঁদিছিলাম। সকালে কাপড় চুপুর লিয়ে বাপের বাড়িতে যাই। সেহেন থেনে এই বাঁধে আইসে কোনোরহমে এই ঘরডা তুইলে আছি। আমরা সরকারের কাছে মাথা গুজার ঠাঁই চাই।”
বাচ্চু প্রামাণিকের স্ত্রী ফাতেমা খাতুন বলেন, “ওইদিন পরথম কয়েকজন আইছিল। ঘণ্টাখানেক পর পিরায় তিনশ থেকে চারশ লোক আইসে আমাগারে ওপর সেই হম্বিতম্বি। এক ঘণ্টা সুময় দিয়ে কইলো যার যা আছে টুপলা বাইধে চইলি যা। না হলি বিপদ হবি। এই কয়া ভাঙচুর শুরু করে। পরে কি করবো, দিশা মিশা না পায়া যা ছিল কাপড় চোপড় একটা ছাগল ছিল লিয়ে চইলে আসি। পরে সেই ছাগলডা বেইচে এই বাধে কুনুরহম ঘরডা তুইলে আছি বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন।”
আবেদ শেখের স্ত্রী বৃদ্ধা ফাতেমা বেগমের (৭০) ছেলে আলম শেখ বলেন, “ভাঙচুর শুরু হলি আমার বৃদ্ধা মাকে নিয়ে পাগলের মতো হয়ে গেছিলাম। কোনো যাবো কি করবো দিশেহারা অবস্থা তখন। পরে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় লেই। আর দিনমজুরি কইরে বাঁধের এহেনে আইসে ছাপড়া তুইলে মাকে লিয়ে আছি।”
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পাবনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম বলেন, “বাড়িগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে সে বিষয়টি জানা ছিল না। তবে নজরে আসার পর আমি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দিতে বলেছি। পুরো বিষয়টি জানার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। যদি কেউ ভেঙে থাকে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
জমি নিয়ে মামলা আছে কি না জানা নেই উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বলেন, “মামলার কাগজপত্র না দেখে বিষয়টি নিয়ে কিছু বলা সম্ভব নয়।”
পাবনা সদর উপজেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রতিটি ঘর নির্মাণে খরচ হয় ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। সে হিসেবে ৬০টি ঘর নির্মাণে সরকারের খরচ হয়েছে এক কোটি দুই লাখ ষাট হাজার টাকা।
ঢাকা/শাহীন/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ঘর সদর উপজ ল ঘর ন র ম ণ ঘর ভ ঙ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সিলেটে ছাত্রলীগের মিছিলের পর দুই আ.লীগ নেতার বাসায় হামলা
সিলেটে সকালে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ঝটিকা মিছিল করার পর বিকাল ও সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের দুই নেতার এবং ছাত্রলীগের এক নেতারা বাসায় হামলা ও ভাঙচুর হয়েছে।
বুধবার (২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় সিলেটে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এবং মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল এবং সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বাসায় বিকালে হামলা হয়েছে। প্রায় একই সময়ে ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রুহেল আহমদের বাসায়ও হামলা চালানো হয়েছে।
আরো পড়ুন:
নোয়াখালীতে বিনোদনকেন্দ্রে হামলা, পুলিশসহ আহত ৭
রাঙ্গুনিয়ায় আহত আ.লীগ নেতার মৃত্যু
হামলাকারীরা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের বাসার জিনিসপত্র ভাঙচুর করেছে।
সিলেট নগরীর শুভেচ্ছা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরীর (নাদেল) বাসভবনের ‘ফ্ল্যাট অ্যাপার্টমেন্টের কার্যালয়ে’ হামলা চালায় একদল মানুষ। তারা মিছিল নিয়ে তার বাসায় ঢুকে পড়েন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় লোকজন সূত্রে জানা গেছে, বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে নগরের পাঠানটুলা এলাকায় আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বাসায় ৭০ থেকে ৮০টি মোটরসাইকেলে করে শতাধিক তরুণ-যুবক গিয়ে এ হামলা চালান। এ সময় হামলাকারীরা বাসায় ঢুকে আসবাবপত্র ভাঙচুরের পাশাপাশি লুটপাট চালান। বাসাটিতে আনোয়ারুজ্জামানের পরিবারের কেউ থাকেন না। দুজন তত্ত্বাবধায়ক বাসার দেখাশোনা করেন।
মেজরটিলা এলাকায় অবস্থিত ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রুহেল আহমদের বাসায় হামলা চালায় দুর্বৃত্তদের একটি দল। সন্ধ্যা সাতটায় রুহেলের বাসায় হামলার সময় তাঁর মা ও বোন বাসায় ছিলেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
অবশ্য এসব হামলায় হতাহতের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
বুধবার সকাল থেকে সিলেট নগরীতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের একটি মিছিলের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এরপর বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা মাঠে নামে। তারা ভিডিওতে দেখা যাওয়া চার-পাঁচজন মিছিলকারীকে ধরে পুলিশে হাতে তুলে দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ছাত্রলীগের ব্যানারে ৩০ থেকে ৪০ জন তরুণ নগরের ধোপাদিঘিরপাড় এলাকায় ঝটিকা মিছিল করেন। এতে ছাত্রদলের কিছুসংখ্যক নেতা-কর্মী বিক্ষুব্ধ হয়ে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের তিন নেতার বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর চালান।
এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আনিসুর রহমান বলেন, বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা নাদেলের বাসায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, হামলার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। শুনেছি, বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা এই হামলা চালিয়েছে।
তিনি বলেন, মিছিলকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।