সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ভেঙে জমি দখলের অভিযোগ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন জমির দাবিদার কয়েকজন। তাদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ভয়ভীতি দেখিয়ে বিরোধপূর্ণ ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গা দখল করে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করা হয়েছিল।

পাবনা সদর উপজেলার ভাড়ারা ইউনিয়নের পশ্চিম জামুয়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ভাঙচুর নিয়ে শনিবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন তারা।

আরো পড়ুন: আশ্রয়ণ প্রকল্পটি এখন ধ্বংসস্তূপ

আরো পড়ুন:

চৌগাছায় বাওড়ের মাছ নিয়ে বিএনপির ২ পক্ষের সংঘর্ষ, পিস্তল উদ্ধার

কিশোরগঞ্জে জমি দখল নিয়ে সংঘর্ষ, যুবদল নেতাসহ আহত ১৫ 

নিজেদের জমির মালিক দাবি করে ইসমাইল হোসেন প্রামাণিক নামের একজন জানান, ‍১৯৪৭ সালে তৎকালীন জমিদার থেকে তাদের বাপ-দাদারা এই জমি কিনে ভোগ দখল করে আসছিলেন। তাদের নামে ডিএস, সিএস রেকর্ডও রয়েছে। তবে আরএস রেকর্ডের সময় পাশের সরকারি খাস জায়গার সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। যা নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। সেই বিরোধের সুযোগে এবং ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার জেরে ভাড়ারা ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আবু সাঈদ খান জায়গাটি দখল করে স্থানীয় প্রশাসনকে দেন। পরে সেখানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করা হয়।

তিনি আরো জানান, গত ৫ আগস্টের পর সাঈদ চেয়ারম্যান পালিয়ে গেলে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা নিজেদের ঘরবাড়ি ভেঙে নিয়ে চলে যান। তাদের কেউ তাড়িয়ে দেয়নি। বা কেউ ঘর ভেঙে দেয়নি। গণমাধ্যমে ঘর ভাঙচুরের প্রসঙ্গে যে অভিযোগ উঠেছে, তা সঠিক নয় বলে দাবি করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে জমির মালিক মৃত আবুল হোসেন প্রামাণিকের ছেলে ইসমাইল হোসেন প্রামাণিক ও তার ৬ ভাইসহ কয়েকজন এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, পাবনা সদর উপজেলার ভাড়ারা পশ্চিম জামুয়া গুচ্ছগ্রামে নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৬০টি ঘর গুঁড়িয়ে দিয়ে জমি দখলের অভিযোগ ওঠে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্রের বিরুদ্ধে। শুধু ঘর ভাঙচুরই নয়, লুট করা হয়েছে ঘরের দরজা, জানালা, টিনের চালসহ প্রায় সবকিছু।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ৫ আগস্ট রাতে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি আশ্রয়ণ প্রকল্পের জমিকে নিজেদের দাবি করে সেখানে বসবাস করা পরিবারগুলোকে জোরপূর্বক তুলে দেয়। একইসঙ্গে ঘর ভেঙে সবকিছু লুট করে নিয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই হারানো ওই পরিবারগুলো অন্যের বাড়িতে, বাঁধে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযান করছেন।

ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পের জমি নিজেদের দাবি করে আদালতে মামলা চলমান উল্লেখ করে সেখানে সাতজনের নাম সম্বলিত একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছে চক্রটি। জমির মালিক দাবিদার সাতজন হলেন- ভাড়ারা পশ্চিম জামুয়া গ্রামের আকরাম প্রামাণিক, উম্মত প্রামাণিক, আক্কাস প্রামাণিক, ইব্রাহিম প্রামাণিক, ইসমাইল প্রামাণিক, নায়েব আলী ও নবাব আলী। এ নিয়ে সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়।

ভুক্তভোগী ফুলমালা বেগম বলেন, “শেখ হাসিনা পালায়ে যাবার পর সন্ধ্যার সময় কিছু লোকজন এসে আমাগোরে এক ঘণ্টার মধ্যি ঘর ছাইড়ে দিয়ার জন্যি নির্দেশ দেয়। তখন রান্না করতেছিলাম। তাগারে অনুরোধ কইরেও কাম হয় নাই। সারারাত না খায়ে ঘরের বাইরে বসে কাঁদিছিলাম। সকালে কাপড় চুপুর লিয়ে বাপের বাড়িতে যাই। সেহেন থেনে এই বাঁধে আইসে কোনোরহমে এই ঘরডা তুইলে আছি। আমরা সরকারের কাছে মাথা গুজার ঠাঁই চাই।”

বাচ্চু প্রামাণিকের স্ত্রী ফাতেমা খাতুন বলেন, “ওইদিন পরথম কয়েকজন আইছিল। ঘণ্টাখানেক পর পিরায় তিনশ থেকে চারশ লোক আইসে আমাগারে ওপর সেই হম্বিতম্বি। এক ঘণ্টা সুময় দিয়ে কইলো যার যা আছে টুপলা বাইধে চইলি যা। না হলি বিপদ হবি। এই কয়া ভাঙচুর শুরু করে। পরে কি করবো, দিশা মিশা না পায়া যা ছিল কাপড় চোপড় একটা ছাগল ছিল লিয়ে চইলে আসি। পরে সেই ছাগলডা বেইচে এই বাধে কুনুরহম ঘরডা তুইলে আছি বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন।”

আবেদ শেখের স্ত্রী বৃদ্ধা ফাতেমা বেগমের (৭০) ছেলে আলম শেখ বলেন, “ভাঙচুর শুরু হলি আমার বৃদ্ধা মাকে নিয়ে পাগলের মতো হয়ে গেছিলাম। কোনো যাবো কি করবো দিশেহারা অবস্থা তখন। পরে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় লেই। আর দিনমজুরি কইরে বাঁধের এহেনে আইসে ছাপড়া তুইলে মাকে লিয়ে আছি।”

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পাবনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম বলেন, “বাড়িগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে সে বিষয়টি জানা ছিল না। তবে নজরে আসার পর আমি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দিতে বলেছি। পুরো বিষয়টি জানার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। যদি কেউ ভেঙে থাকে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

জমি নিয়ে মামলা আছে কি না জানা নেই উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বলেন, “মামলার কাগজপত্র না দেখে বিষয়টি নিয়ে কিছু বলা সম্ভব নয়।”

পাবনা সদর উপজেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রতিটি ঘর নির্মাণে খরচ হয় ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। সে হিসেবে ৬০টি ঘর নির্মাণে সরকারের খরচ হয়েছে এক কোটি দুই লাখ ষাট হাজার টাকা।

ঢাকা/শাহীন/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ঘর সদর উপজ ল ঘর ন র ম ণ ঘর ভ ঙ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

এবার ১২ হাজার শিক্ষার্থীকে ইফতার করালো রাবি প্রশাসন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) অধ্যায়নরত ১২ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য ইফতারের আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

সোমবার (৩ মার্চ) দ্বিতীয় রোজায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে এ আয়োজন করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, আসরের নামাজের পর থেকেই শিক্ষার্থীরা দলে দলে কেন্দ্রীয় মসজিদে আসতে শুরু করেন। এ সময় মসজিদের ভেতরে এবং মসজিদ সংলগ্ন বাগানে তারা ইফতারির জন্য সারিবদ্ধভাবে বসেন। এ ছাড়াও নারীদের জন্য মসজিদের বাগানে আলাদাভাবে ইফতারির ব্যবস্থা করা হয়। এতে মসজিদ প্রাঙ্গণে তৈরি হয় এক উৎসবমুখর পরিবেশ।

আরো পড়ুন:

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গণইফতার আয়োজন করে অভিনব প্রতিবাদ

রাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা, ভোটগ্রহণ জুনে

ইফতারে অংশগ্রহণ করতে আসা ইনফরমেশন সাইন্স অ্যান্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. রোকনুজ্জামান বলেন, “আজকের আয়োজন অনেক ভালো ছিল। এখানে সবার সঙ্গে ইফতার করতে এসে খুবই ভালো লাগছে। একটা উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিটা দিন মনে হচ্ছে ঈদের মতো। প্রশাসনের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।”

আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী নয়ন আহমেদ বলেন, “গতকালের তুলনায় আজকের আয়োজন অনেক ভালো। কাল সব এলোমেলো ছিল। কিন্তু আজকের আয়োজন গোছালো হয়েছে। এত মানুষের সঙ্গে আগে কখনো ইফতার করিনি। অন্যরকম একটা ভালো লাগা কাজ করছে। মনে হচ্ছে এখানে মেলা চলছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই এত সুন্দর আয়োজন করার জন্য।”

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ইফতারে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাঈন উদ্দিন খান (প্রশাসন), উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মোহা. ফরিদ উদ্দিন খান (শিক্ষা), রেজিস্ট্রার ইফতেখারুল আলম মাসউদ, জনসংযোগ প্রশাসক অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার প্রমখ।

সার্বিক বিষয়ে জনসংযোগ প্রশাসক অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার বলেন, “আমরা আজ প্রায় সাড়ে ১১ হাজার থেকে ১২ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য ইফতার আয়োজন করেছি। যা গতকালের তুলনায় তিনগুণ। আমরা আশা করছি আজ সব ঠিকঠাক মতো হবে। এজন্য সবার সাহায্য প্রয়োজন, যাতে কোন উশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি না হয়।”

প্রথমবারের মতো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে মাসব্যাপী ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। রোজার প্রথমদিন রবিবার (২ মার্চ) ৪ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য ইফতারের আয়োজন করা হয়। কিন্তু আয়োজনের তুলনায় অধিক রোজাদার উপস্থিত হওয়ায় ইফতারে সঙ্কট দেখা দিলে শিক্ষার্থীদের ভাগাভাগি করে নিতে দেখা গেছে।

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ