মঞ্চে নেওয়ার আগে মেয়েরা অতিথিদের পা ধুয়ে বরণ করে নিলেন। এটা বরেন্দ্র অঞ্চলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর রেওয়াজ। তার আগে রেওয়াজ অনুযায়ী নৃত্য আর গানে গানে অতিথিদের বরণ করে মঞ্চের কাছে আনা হলো। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চৈতন্যপুর গ্রামে সমতল ও পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সম্প্রীতি সমারোহ অনুষ্ঠানের শুরুতে দেখা গেল এ দৃশ্য।

নেচে নেচে অতিথিদের মঞ্চের কাছে আনলেন গোগ্রাম বটতলা গ্রামের কাকলি মুণ্ডা, লাবনী মুন্ডা, দীপিকা মুন্ডা, প্রীতি মুন্ডা আর মৌমিতা মুন্ডা। তাদের সঙ্গে মাদল বাজালেন অখিল টপ্পো। করতাল বাজাচ্ছিলেন নীলকান্ত মুরারি। আর একদল নারী ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে দিচ্ছিলেন অতিথিদের গায়ে।

‘তারুণ্যের উৎসব’ শিরোনামে দেশব্যাপী বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনের ধারাবাহিকতায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী অধ্যুষিত এ গ্রামে শনিবার (২৫ জানুয়ারি) এবং রবিবার (২৬ জানুয়ারি) দুই দিনব্যাপী সমতল ও পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সম্প্রীতি সমারোহ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ আয়োজনে ছিল রাজোয়াড় জাতিগোষ্ঠীর আলপনাচিত্র প্রদর্শন ও ১৩ জনগোষ্ঠীর নৃত্য-গীত ও নাট্যানুষ্ঠান।

আরো পড়ুন:

উচ্ছেদ আতঙ্কে তানোরের ৪০ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবার

চাটমোহরে পুষড়া আদিবাসী উৎসবে মিলনমেলা

শনিবার বিকালে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আলোচনা শেষে নৃত্য পরিবেশন করেন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানের চাকমা, মারমা, পাংখোয়া, ত্রিপুরা এবং রাজশাহী অঞ্চলের সমতলের সাঁওতাল, ওরাঁও, পাহাড়িয়া, রাজোয়াড়, মুণ্ডা, মাহাতো, ভূমিজ, গড়াৎ মাহালী শিল্পীরা।

রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতারের সভাপতিত্বে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ, রাজশাহীর পুলিশ সুপার ফারজানা ইসলাম, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বিমল চন্দ্র রাজোয়াড় ও অনগ্রসর সমাজ উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক রাজকুমার শাও। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উপ-পরিচালক এসএম শামীম আকতার।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, ‘‘একটি ভাষা হারিয়ে গেলে উপলব্ধিটাই হারিয়ে যায়। আপনাদের কাছে অনুরোধ, এই রাজোয়াড় ভাষাটা যেন হারিয়ে না যায়।’’ তিনি বলেন, ‘‘আপনারা আপনাদের জমি যাতে ফেরত পাওয়া যায়, সেজন্য কাজ করবেন। আপনারা লেখাপড়া করবেন আপনাদের পাশে আমরা থাকব।’’

অনুষ্ঠানে বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ বলেন, ‘‘এখন বলা হয় অনেক কিছু হারিয়ে যাচ্ছে। আমি বলব এটা হারিয়ে যাওয়া নয়, এক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আরেক সম্প্রদায়ের মিশে যাওয়া। তবে মিশে গেলেও নিজস্ব কৃষ্টি কালচার সংস্কৃতি ধরে রাখতে হবে। আপনারা আপনাদের বাপ দাদার এলাকা ছেড়ে কোথাও মাইগ্রেট করার চিন্তাও করবেন না। আমরা আগেও যেভাবে মিলেমিশে ছিলাম, এখনো সেভাবে থাকব। দু’-একজন দুর্বৃত্ত যেটা আগেও ছিল, হয়তো ভবিষ্যতেও থাকবে। যেভাবে শান্তির সঙ্গে, সমৃদ্ধির সঙ্গে বসবাস করতে চান, সেটা করবেন। কোনো সমস্যা হলে আমাদের জানাবেন। আমরা সবাই শান্তিপূর্ণভাবে থাকতে চাই।’’

অনুষ্ঠানে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার বলেন, ‘‘একা একা ভালো থাকা যায় না। সবাই মিলে ভালো থাকতে হয়। এই যে আমরা ভালো আছি, এই ভালো থাকাটা ধরে রাখতে হবে।’’

অনুষ্ঠানে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের নেতা রাজ কুমার শাও ‘আদিবাসীদের’ সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি জানান। বিমল চন্দ্র রাজোয়াড় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের প্রধান সমস্যা জমি উল্লেখ করে বলেন, ‘‘তাদের অনেক জমি বেহাত হয়ে যায়। এগুলো যেন না হয় সেই জন্য সবাইকে নজর রাখতে হবে।’’
 

ঢাকা/কেয়া/বকুল 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ল দ শ শ ল পকল জনগ ষ ঠ র এক ড ম র আপন দ র আহম দ করব ন

এছাড়াও পড়ুন:

কানাডার টরেন্টোতে বাংলা বর্ষবরণ উৎসব

উৎসবমুখর ও বর্ণিল আয়োজনের মধ্যে দিয়ে কানাডার টরেন্টোতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বাংলা বর্ষবরণ উৎসব ১৪৩২। কর্মময় একঘেয়েমি জীবন থেকে বেরিয়ে এসে প্রবাসী বাঙালিরা আনন্দ উৎসবে মেতেছিলেন অন্যরকম এক মিলনমেলায়।

স্থানীয় সময় রোববার দুপুর ১টায় মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয় শপার্স ওয়ার্ল্ড এর পার্কিং লট থেকে। এসময় প্রচুর সংখ্যক অভিবাসী বাঙালি পায়ে হেঁটে টায়রা এভিনিউ ধরে সমবেত হন ডেন্টনিয়া পার্ক শহীদ মিনার পাদদেশে। 

টরেন্টোর বাঙালি অধ্যুষিত এলাকা ডেন্টোনিয়া পার্কে বৈশাখের রঙ, ভালবাসার রঙ, আড্ডার রঙ, লোকজ ভাবনা, বাংলার ঐতিহ্য ও আনুষ্ঠানিকতায় একে অপরের সান্নিধ্যে শ্রদ্ধা, ভালবাসা বিনিময়ের মাধ্যমে হৃদয়-মন ভরে উঠেছিল প্রবাসী জীবনের আনন্দ জয়গানে। এদিন শিশু কিশোরদের হাতে মুখ ও মুখোশ নিয়ে ছিল বৈশাখী মঙ্গলশোভা যাত্রা।

আয়োজকরা জানান, নবপ্রজন্মের কাছে আবহমান বাংলার কৃষ্টি ইতিহাস, ঐতিহ্য ও জাতীয় স্বত্ত্বাকে তুলে ধরাই ছিল বাংলা বর্ষবরণ উৎসবের মূল লক্ষ্য।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কানের ইতিহাসে এবারই প্রথম
  • অষ্টগ্রামের বিস্তীর্ণ হাওরের বুকে ধান কাটার উৎসব
  • এবার রিশাদের ২ উইকেট ও ২ রান, রান উৎসবের ম্যাচে হেরে গেল লাহোর
  • ভেড়াডহর গ্রামে উরিগানের আসরে
  • এমপিওভুক্ত পৌনে ৫ লাখ শিক্ষকের বোনাস বাড়ছে
  • প্রথম আলোর উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি উৎসব আগামী ১৫ ও ১৬ মে
  • পয়লা বৈশাখের পর বৈশাখী ভাতা পেলেন মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীরা
  • কানাডার টরেন্টোতে বাংলা বর্ষবরণ উৎসব
  • আরাকান আর্মির বাংলাদেশের আকাশীমা লংঘ‌নের প্রতিবাদ
  • অনুপ্রবেশ করে আরাকান আর্মি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে: জামায়াত