গাজায় যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় দফায় ইসরায়েলের চারজন জিম্মি নারী সেনাসদস্যকে মুক্তি দিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস। স্থানীয় সময় আজ শনিবার তাদের মুক্তি দেওয়া হয়। এর বিনিময়ে যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত মেনে ২০০ জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেওয়ার কথা রয়েছে ইসরায়েলের।

আন্তর্জাতিক সংস্থা রেডক্রসের মধ্যস্ততায় চার জিম্মি নারী সেনা সদস্যকে ইসরায়েলের কাছে হস্তান্তর করা হয়। গাজা সিটির ফিলিস্তিন স্কয়ারে তাদের রেডক্রসের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ সময় নিরাপত্তাকর্মী ও অসংখ্য উৎসুক মানুষকে ভিড় করতে দেখা গেছে।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ফেরত আসা চার জিম্মি বর্তমানে আইডিএফের বিশেষ বাহিনীর সঙ্গে ইসরায়েলে ফিরছেন। সেখানে প্রথমে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হবে। এরপর তারা পরিবারের কাছে ফিরে যাবেন।

মুক্তিপ্রাপ্ত চার নারী সেনা হলেন- লিরি আলবাগ (১৯), কারিনা আরিয়েভ (২০), ডেনিয়েলে গিলবোয়া (২০) ও নামা লেভি (২০)।

গত রোববার ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সই হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়। যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী, গাজায় হামাসের হাতে থাকা ৩৩ জিম্মির মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ ৭৩৭ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্ত করে দেবে। গত ১৮ তারিখে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ৭৩৭ জন ফিলিস্তিনির হালনাগাদ তালিকা প্রকাশ করে দেশটির বিচার মন্ত্রণালয়।

আজ শনিবার দ্বিতীয় দফায় এই চার নারী সেনা মুক্তি পেলেন। প্রথম দফায় কারাবন্দি ৯০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছিল ইসরায়েল। আর হামাসের পক্ষ থেকে ৩ জন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে হামলা চালায় হামাস। ওই হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন। জিম্মি করে গাজায় নেওয়া হয় ২৫১ জনকে। ওই দিনই গাজা উপত্যকায় নৃশংস হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে গাজায় ৪৭ হাজার ২০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ১ লাখ ১০ হাজার ৭২৫ জন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

নিহতদের বেশির ভাগই বেসামরিক লোকজন। গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া উপত্যকাটির ২৩ লাখ বাসিন্দাকে হতে হয়েছে বাস্তুচ্যুত।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ইসর য় ল র

এছাড়াও পড়ুন:

পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে জানানো শোকবার্তা মুছে ফেলল ইসরায়েল

ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোকবার্তা প্রকাশ করেছিল ইসরায়েল। কিন্তু কিছু সময় পরেই শোকবার্তাটি মুছে ফেলা হয়। ইসরায়েল সরকারের পক্ষ থেকে এ ঘটনার কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।

বুধবার (২৩ এপ্রিল) ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত সোমবার ৮৮ বছর বয়সে ভ্যাটিকানে মারা যান পোপ ফ্রান্সিস। এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ইসরায়েলের অফিসিয়াল অ্যাকাউন্ট থেকে একটি পোস্ট দেওয়া হয়। সেখানে লেখা হয়- “আপনার আত্মা শান্তি পাক, পোপ ফ্রান্সিস। আপনার জীবনাদর্শ আমাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে থাকুক।”

আরো পড়ুন:

হামাসের হামলায় ইসরায়েলের ৬ সেনা হতাহত

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরো ৫৪ ফিলিস্তিনি

কিছুক্ষণ পর পোস্টটি মুছে ফেলা হয়। এ বিষয়ে ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা দ্য জেরুজালেম পোস্টকে বলেন, “প্রয়াত পোপ একাধিকবার ইসরায়েলবিরোধী বক্তব্য দিয়েছিলেন। তার মৃত্যুতে ভুলে শোকা বার্তাটি প্রকাশ করা হয়েছিল।”

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওই অ্যাকাউন্টটি ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণ করে থাকে বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে মন্তব্য জানতে রয়টার্সের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে ইসরায়েলি পরারাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো সাড়া দেয়নি।

উল্লেখ্য, পোপ ফ্রান্সিস গত নভেম্বরে গাজায় ইসরায়েলের অভিযানকে সম্ভাব্য গণহত্যা হিসেবে উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছিলেন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে তিনি গাজার মানবিক পরিস্থিতিকে ‘লজ্জাজনক’ বলে অভিহিত করেন। এসব বক্তব্য ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করে।

পোপের এসব মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে রোমের প্রধান র‍্যাবাই (ইহুদিদের ধর্মযাজক) বলেছিলেন, ফ্রান্সিস পক্ষপাতমূলক সমালোচনা করছেন।

পোপের মৃত্যুর পর হামাস এবং হিজবুল্লাহ পৃথকভাবে শোক জানিয়েছে। তারা পোপের আন্তঃধর্মীয় সংলাপ ও মানবিক মূল্যবোধের প্রশংসা করে বিবৃতি দিয়েছে।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু পোপের মৃত্যু নিয়ে কোনো মন্তব্য না করলেও প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগ খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতি শোকবার্তা পাঠিয়ে পোপ ফ্রান্সিসকে ‘গভীর বিশ্বাস এবং সীমাহীন সহানুভূতির মানুষ’ হিসেবে আখ্যা দেন।

 

দীর্ঘ কয়েকশ বছর ধরে ক্যাথলিক চার্চের সঙ্গে ইহুদিদের শত্রুভাবাপন্ন সম্পর্ক ছিল। তবে সাম্প্রতিক দশকগুলোতে সম্পর্কের কিছুটা উন্নতি হয়েছে।

দায়িত্ব পালনের ১২ বছরে সাধারণ কোনো সংঘাতে পক্ষ নেওয়া থেকে বিরত থেকেছেন পোপ ফ্রান্সিস। তিনি যেমন ক্রমবর্ধমান ইহুদি বিদ্বেষ নিয়েও নিন্দা জানিয়েছেন, তেমনি যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গাজায় অবস্থানরত সংখ্যালঘু খ্রিস্টানদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখতেন।

তবে শোকবার্তা প্রকাশ ও তা মুছে ফেলার ঘটনায় ইসরায়েল-ভ্যাটিকান সম্পর্কের জটিলতা নতুনভাবে সামনে এসেছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ