‘ড. ইউনূসের পদত্যাগ করে সব দলকে নির্বাচনের সুযোগ দেওয়া উচিত’
Published: 25th, January 2025 GMT
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে ভারতের গণমাধ্যম ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে’।
সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্দেশে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘তার (মুহাম্মদ ইউনূস) চেয়ারে বসার কোনো অধিকার নেই। তিনি কোনো নেতা নন, কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নন। আমাদের দেশে একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশ একটি অদ্ভুত উদাহরণ হয়ে উঠেছে। ইউনূসের উচিত পদত্যাগ করা এবং আওয়ামী লীগসহ সব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে লড়াই করার সুযোগ দিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে দেওয়া। এটাই একমাত্র উপায়।’
আওয়ামী লীগের পতনের প্রসঙ্গে সাবেক মন্ত্রী বলেন, ‘আমি ১০ বছর ৬ মাস বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলাম। আমি এই সময়ের মধ্যে অনেক ঘটনা দেখেছি। এখন সব ৩৬০ ডিগ্রি উল্টে গেছে। গত বছরের ৩-৫ আগস্টের মধ্যে প্রায় ৪৬০টি থানা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ৫ হাজার ৮২৯টি অস্ত্র পুলিশ স্টেশন থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যেখানে থাকেন, সেই গণভবন থেকে এসএসএফের অস্ত্রও কেড়ে নেওয়া হয়। আমি নিজেও ৫-৬ আগস্ট ঢাকায় ছিলাম এবং ৭ আগস্ট বাড়ি থেকে বের হয়েছি।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ঘটনার আঁচ করতে পেরেছিলেন না কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘যখন থানা জ্বলছে এবং পুলিশ নিষ্ক্রিয় হয়ে যাচ্ছে, তখন জাতি কেবল সাক্ষী হওয়া এবং মৃতদের গণনা করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারে না। পুলিশ সাধারণ মানুষকে রক্ষা করে, কিন্তু পুলিশ যদি হামলার শিকার হয়, তাহলে কী হবে? আমি বলব এটি একটি যৌথ অভ্যুত্থান ছিল। জঙ্গি ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভ্যুত্থান ছিল এটি।’
গোয়েন্দা ব্যর্থতার বিষয়ে আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, ‘আমি একমত যে, একটি গোয়েন্দা ব্যর্থতা ছিল, তা ইচ্ছাকৃত বা অন্যভাবে হোক। তবে এটিও একটি সামরিক অভ্যুত্থান ছিল। সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ গোয়েন্দা ইউনিট রয়েছে- ডিজিএফআই (ডিরেক্টর জেনারেল ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স)। তারা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট করে। এনএসআইও (ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স) সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট করে। এমনকি পুলিশ গোয়েন্দা বিভাগও প্রধানমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট করে। শুধু গোয়েন্দা প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ যা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আসে।’
আওয়ামী লীগের ভুলের কারণে কী এই অসন্তোষের জন্ম দিয়েছে, এমন প্রশ্নে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আমি ভুল বলব না, তবে হ্যাঁ, আমাদের দল পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নিতে আমরা দীর্ঘ সময় নিয়েছি। এটাই হলো সমস্যা। দুই বছর পর নতুন নেতা আসতে হবে। কিন্তু আমরা যথাসময়ে নেতাদের নির্বাচন করতে পারিনি।’
ভারত কীভাবে এই সংকটে সাহায্য করতে পারে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি স্বাধীনতা যুদ্ধে কমান্ডার ছিলাম, তাই আমি জানি ১৯৭১ সালে ভারত বাংলাদেশের জন্য কী করেছে। আমি স্বীকার করি যে, বাংলাদেশকে সাহায্য করার জন্য ভারত সর্বদাই পাশে রয়েছে। এখন ভারত কূটনৈতিক উপায়ে আমাদের সাহায্য করতে পারে। আমাদের আদালতগুলো অচল হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগের আইনজীবীরা আদালতে যেতে পারেন না। সব বিচারককে পুনরায় নিয়োগ করা হয়েছে। তাই প্রথমত, কূটনৈতিক চাপ এবং উচ্চস্বরে আওয়াজ তোলা উচিত, যেন আদালতগুলো আবার কাজ শুরু করতে পারে। ভারত এ ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে।’
নির্বাচনে লড়ার প্রশ্নে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘আমি ফিরে যেতে ভয় পাই না। কিন্তু সেটা তখনই হবে যখন আইনের শাসন পুনরুদ্ধার করা হবে, বিচারপতিরা (স্বাধীনভাবে এবং নির্ভয়ে) মামলাগুলো শুনতে পারবেন এবং আমাদের আইনজীবীরা আমাদের পক্ষে উপস্থিত হবেন। আমরা নির্বাচনে বিশ্বাস করি। আমরা অবশ্যই নির্বাচনে লড়ব, যদি আমরা অংশগ্রহণ করতে পারি।’
শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি উনার সঙ্গে দেখা করতে পারি না। তবে ফোনে কথা বলতে পারি, সমস্যা সম্পর্কে বলতে পারি এবং দিকনির্দেশনা চাইতে পারি। তিন দিন আগে তার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি (শেখ হাসিনা) বলেছেন, আপনারা সব নেতাকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে বলেন এবং আমরা খুব অল্প সময়ের মধ্যে অবশ্যই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠব।’
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের প্রতিক্রিয়া
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া আসাদুজ্জামান খান কামালের সাক্ষাৎকারটি শুক্রবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে শেয়ার করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
শেয়ার ক্যাপশনে প্রেস সচিব বলেন, ‘ভারতীয় সংবাদপত্রগুলোর মধ্যে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতি আমার কিছুটা শ্রদ্ধা ছিল। কিন্তু এটি যখন বাংলাদেশের খুনিকে প্ল্যাটফর্ম দেয়, তখন কি কেউ এই পত্রিকার ওপর আস্থা রাখতে পারে? ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের জানা উচিত, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জুলাই-আগস্ট গণহত্যার রূপকার। দেশের সবচেয়ে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী তিনি। বাংলাদেশকে পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন, যেখানে হাজার হাজার মানুষকে নিখোঁজ করা হয়েছিল, হাজার হাজার মানুষকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছিল এবং প্রায় ৬০ লাখ বিরোধী কর্মীকে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছিল।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স হ য য কর ইউন স আগস ট আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
আসক্তিহীন ব্যথানাশক নতুন ওষুধের অনুমোদন দিল যুক্তরাষ্ট্র
আসক্তিমূলক নয় ( নন-ওপিওয়েড) এমন একটি ব্যথানাশক ওষুধের অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ)। প্রাপ্তবয়স্কদের স্বল্পমেয়াদি ব্যথার চিকিৎসায় এর অনুমোদন দেওয়া হয়।
ব্র্যান্ড নাম জারনাভ্যাক্স হিসেবে পরিচিত সুজট্রিজিন নামে এই ওষুধটি মানুষের শরীরের ব্যথার সংকেত মস্তিষ্কে পৌঁছানোর আগেই কাজ করতে শুরু করে। খবর বিবিসির
প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ভারটেক্স ফার্মাসিউটিক্যালস জানিয়েছে, এই ওষুধটিতে আসক্তি সৃষ্টিকারী উপাদান ওপিওয়েড নেই। এটি মাঝারি থেকে গুরুতর ব্যথার উপশম করতে পারে।
বছরের পর বছর ধরে ব্যথানাশক ওষুধের আসক্তিজনিত সমস্যা মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৭ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একে ‘জাতীয় লজ্জা’ বলে উল্লেখ করেছিলেন এবং জনস্বাস্থ্যজনিত জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিলেন।
মানুষের শরীরে নতুন ব্যথানাশক ওষুধটির কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়েছে। ওই পরীক্ষায় পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এফডিএ বলেছে, অস্ত্রোপচারের পর ব্যথা কমানোর ক্ষেত্রে জারনাভ্যাক্স কার্যকারিতা দেখিয়েছে। এই ওষুধের অনুমোদন দেওয়াকে জনস্বাস্থ্য খাতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক বলে উল্লেখ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি)-এর হিসাব অনুসারে, প্রতিবছর আসক্তি উদ্রেগকারী ওপিওয়েড ব্যবহারের কারণে দেশটিতে হাজার হাজার মানুষ মারা যায়। ২০২২ সালে মাত্রাতিরিক্ত ওপিওয়েড ব্যবহারের কারণে ৮২ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
সম্প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। ট্রাম্প বলেছেন, তিনি কানাডা এবং মেক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ সীমান্ত করারোপ করবেন। চীনা পণ্যের ওপর শুল্কারোপেরও হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। চীনের ফেন্টানিল রপ্তানিকে একটি কারণ উল্লেখ করে এই হুমকি দিয়েছেন তিনি।
ওপিওয়েড শরীরের ব্যথার সংকেতগুলোকে মস্তিষ্কে পৌঁছাতে দেয় না। এই প্রক্রিয়া চলাকালীন মস্তিষ্ক নিউরোট্রান্সমিটার ডোপামিনে ভরে যায়। এটি আনন্দের অনুভূতি তৈরি করে। আর এসবের মধ্য দিয়ে ওপিওয়েড অনেক বেশি আসক্তি তৈরি করে।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর মাঝারি থেকে তীব্র ব্যথা সারাতে প্রায় ৮ কোটি মানুষকে ওষুধ খেতে পরামর্শ দেওয়া হয়। ভারটেক্সের প্রধান নির্বাহী রেশমা কেওয়ালরামানি এই অনুমোদনকে ঐতিহাসিক মাইলফলক বলেছেন।
কোম্পানিটি বলেছে, জারনাভ্যাক্সের প্রতিটি ক্যাপসুলের দাম পড়বে সাড়ে ১৫ ডলার করে। তবে ওষুধটি শিশুদের জন্য নিরাপদ ও কার্যকর কি না, তা এখনো জানা যায়নি বলে উল্লেখ করেছে তারা।