ভারতীয় হাইকমিশনারের কাছে জবাব চাইতে বললেন বৈষম্যবিরোধীরা
Published: 25th, January 2025 GMT
ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে বাংলাদেশি নারীকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় ভারতের পদক্ষেপ জানতে ভারতীয় হাইকমিশনারকে তলব করে জবাবদিহি চাওয়ার দাবি জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার্থীরা। এখনও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিবৃতি দেওয়া হয়নি কেন? সে প্রশ্নও তুলেছেন তারা।
শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে হত্যার ঘটনায় বিক্ষোভ সমাবেশে এ দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব আরিফ সোহেল বলেন, ৫ আগস্টের ফ্যাসিস্ট সরকারকে উৎখাতের পর থেকে অভ্যুত্থানকে ভারত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছে। তারা অনবরত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা ছড়িয়েছে। ঘৃণা উৎপাদন করেছে। আজ আমরা তার ফল প্রত্যক্ষ করছি।
তিনি বলেন, আমাদের বোনকে হত্যার পর ধর্ষণের ঘটনায় ভারতকে পদক্ষেপ নিতে হবে। তারা কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, ভারতীয় হাইকমিশনারকে তলব করে তার জবাবদিহি চাইতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্য তারেকুল ইসলাম বলেন, ভারতীয়দের হাতে বাংলাদেশিদের খুন আজকের কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। স্বাধীনতার পর থেকেই তারা বাংলাদেশের জনগণকে দ্বিতীয় সারির নাগরিক মনে করে খুন করেছে। সীমান্তে প্রতিবছর শত শত মানুষকে হত্যা করেছে। গত সরকারের আমলে বিচার করা তো দূরের কথা, বিচার চাওয়াও হয়নি।
তিনি বলেন, ২০২৪ সালের অভ্যুত্থান ছিল ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে নতুন মুক্তিযুদ্ধ। এখানে আবু সাঈদ থেকে শুরু করে যারা শহীদ হয়েছেন, তারা আবরার ফাহাদ, ফেলানির সিলসিলা ধরে ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। বাংলাদেশ তার ওপর আর অন্য কোনো দেশের আধিপত্যবাদ মেনে নেবে না।
সমম্বয়ক হাসিব আল ইসলাম বলেন, ভারতে যখন মৌমিতা নির্মমভাবে ধর্ষণ করা হলো, তখন আমরা প্রতিবাদ জারি রেখেছিলাম। কিন্তু যখন নাজমাকে হত্যা করা হলো, তখন ভারতীয় জনগণ চুপ কেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে এখনও কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি। কিন্তু আমরা বাংলাদেশের ১৮ কোটি জনতা নাজমা হত্যার বিচার চাই।
তিনি বলেন, বিগত সরকার ভারতের গোলামী করে স্বৈরাচারী ক্ষমতা টিকিয়ে রেখেছিল। বাংলাদেশের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করে অসম চুক্তির মাধ্যমে দেশকে বিক্রির ষড়যন্ত্র করছিল। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ আর সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে একটুও ছাড় দিবে না।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দপ্তর সেল সম্পাদক জাহিদ আহসানের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন জুলাই অভ্যুত্থান বিষয়ক বিশেষ সেলের সদস্য সালোয়া আক্তার প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে বাংলাদেশি নারীকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার কর্ণাটকের বেঙ্গালুরু শহরের রামমূর্তি নগরের কেলকেরে লেকের কাছে ২৮ বছর ওই বয়সী বাংলাদেশি নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তার স্বামী একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। তিন সন্তান নিয়ে উত্তর বেঙ্গালুরুতে থাকতেন তারা। ওই নারী একটি অ্যাপার্টমেন্টে গৃহকর্মীর কাজ করতেন। বৃহস্পতিবার কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে এই ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করেছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
৯০ দিনের মধ্যে গণহত্যার বিচার ও অবিলম্বে আ.লীগের নিবন্ধন বাতিল দাবি
আগামী ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে জুলাই গণহত্যার বিচার, ফ্যাসিবাদী অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অবিলম্বে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল ও নিষিদ্ধকরণের দাবি জানিয়েছে কয়েকটি সংগঠন।
গতকাল সোমবার সচিবালয়ে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বরাবর এক স্মারকলিপিতে তারা এ দাবি জানান। জুলাই রেভ্যুলেশনারি অ্যালায়েন্স, অ্যান্টি ফ্যাসিস্ট কোয়ালিশন, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি ন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, স্টুডেন্ট এলায়েন্স ফর ডেমোক্রেসি নামের সংগঠনগুলোর পাঁচ প্রতিনিধিরা এ দাবি তুলে ধরেন।
আইন উপদেষ্টার কাছে ওই স্মারকলিপিতে তারা লিখেছেন, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে সংঘটিত ভয়াবহ গণহত্যা আমাদের জাতীয় ইতিহাসে এক কলঙ্কময় অধ্যায়। রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের যৌথ নির্দেশনায় এদেশের সাধারণ নাগরিকদের ওপর চালানো হয়েছে পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞ, যার ফলে দুই সহস্রাধিক মানুষ শহীদ হয়েছেন এবং বহু মানুষ এখনও পঙ্গু ও নিখোঁজ। এই গণহত্যার বিচার এখনও শুরু হয়নি। বিচার প্রক্রিয়া হচ্ছে চরম ধীরগতির, নানাভাবে প্রতিহত করা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় কাঠামো ব্যবহার করে। বিচারহীনতার এই ধারাবাহিকতা সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ১৩২ ধারার অপব্যবহারের মাধ্যমে, যা সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের আগে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমতি গ্রহণের বিধান দেয়। এই ধারা বর্তমানে রাষ্ট্রীয় খুনিদের বিচার এড়ানোর আইনি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বহু প্রশাসনিক কর্মকর্তা ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছে। হাজার হাজার ভুক্তভোগী এখনও মামলা ও হয়রানির মুখোমুখি, অনেক নিরীহ নাগরিককে গুম-খুনের শিকার হতে হয়েছে, যাদের অধিকাংশের নামই রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে করা মামলা ও মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত।
স্মারকলিপিতে দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ফৌজদারি কার্যবিধি ১৩২ ধারা অবিলম্বে বাতিল বা সংস্কার করতে হবে, যাতে সরকারি কর্মকর্তারা দায়মুক্তি না পান। আগামী ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে জুলাই অভ্যুত্থানে সংগঠিত গণহত্যার বিচার, শাপলায় সংঘটিত গণহত্যা, পিলখানা, ২৮ ফেব্রুয়ারি এবং ২৬ মার্চসহ সকল হত্যাকাণ্ডের দ্রুত নিরপেক্ষ তদন্ত ও দৃশ্যমান বিচার কার্যক্রম শুরু করতে হবে। আওয়ামী লীগ, তার অঙ্গসংগঠন এবং ১৪ দলের যেসব নেতা গত তিন নির্বাচনে ক্ষমতায় ছিলেন-তাদের অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। বিগত ১৫ বছরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে অবৈধ অর্থ উপার্জনকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। গণহত্যা তদন্তে অসহযোগিতাকারী সকল প্রশাসনিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এখনও গুম থাকা ব্যক্তিদের সন্ধান দিতে হবে এবং আয়নাঘর এবং গুমে জড়িতদের শাস্তির ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে। বিগত জুলাই আন্দোলনে দায়েরকৃত ষড়যন্ত্রমূলক মামলাগুলোসহ গত ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনামলে দায়ের করা ষড়যন্ত্র, প্রহসন এবং রাজনৈতিক হয়রানিমূলক সকল মামলা বাতিল করতে হবে। ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে, অনতিবিলম্বে আওয়ামী লীগ এবং তাদের অঙ্গসংগঠনসমূহকে নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করতে হবে এবং আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে।
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ নামক দলটি বারবার গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে, রাষ্ট্রকে ব্যবহার করেছে নিজস্ব স্বার্থে এবং জনগণের ওপর চালিয়েছে ফ্যাসিবাদী নিপীড়ন। এই মুহূর্তে এ দলটিকে নিষিদ্ধ ও নিবন্ধন বাতিল করা না হলে ভবিষ্যতে দেশকে আরও ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হবে। আমরা আশাবাদী, আপনি এই সংকটময় সময়ে সাহসী ও ন্যায়নিষ্ঠ ভূমিকা রাখবেন। ইতিহাসের আদালতে আপনি ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেবেন-এটাই আমাদের প্রত্যাশা।