ভারতে দিনে ১০০ নারী ধর্ষণ, শিকার এবার বাংলাদেশি
Published: 25th, January 2025 GMT
ভারতের দিল্লিকে বলা হয় ‘ধর্ষণের রাজধানী’। প্রতিদিন দেশটিতে প্রায় ১০০ নারী ধর্ষণের শিকার হন। এতেই বোঝা যায়, সেখানকার বাড়বাড়ন্ত ভয়াবহ ধর্ষণের চিত্র। এবার ভারতে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন নাজমা (২৪) নামে বাংলাদেশি এক নারী। বেঙ্গালুরুর এই ঘটনা ২৪ জানুয়ারির হলেও জানাজানি এর পরদিন (২৫ জানুয়ারি)।
ভারতীয় পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে, বেঙ্গলুরুতে ওই নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। নিহত নারী বিবাহিত ছিলেন। তার স্বামী ব্রুহাত বেঙ্গালুরু মহানগর পালিকার পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে কাজ করেন। তারা তিন সন্তানসহ শহরে বসবাস করতেন।
গত বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) ওই অ্যাপার্টমেন্টে কাজ শেষে বের হওয়ার পরই তিনি নিখোঁজ হন। নাজমা তার স্বামীকে ফোন করে বলেছিলেন, তিনি আধ ঘণ্টার মধ্যে বাড়ি ফিরে আসবেন। কিন্তু আর ফিরে আসেননি।
আরো পড়ুন:
আইএসআই কর্মকর্তাদের ঢাকা ‘সফরের গুজব’, নয়াদিল্লির পাত্তা
ভারতের ১০ বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যকে বহিষ্কার
ধর্ষণের পর হত্যা ভারতের ‘জাতীয় সমস্যায়’ পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গে এক চিকিৎসক নারীকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় পুরো ভারত উত্তাল হয়ে ওঠে। রাজনীতিও গরম হয়ে যায়। এমনকি, ক্ষমতায় টিকে থাকা নিয়ে চ্যালেঞ্জে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
দেশটির ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) বলছে, গত ১০ বছরে ভারতে প্রতিদিন গড়ে ১০০ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। আর ২০২৩ সালে দেশটিতে প্রতিদিন গড়ে ১২০ জন নারী ধর্ষণের শিকার হন।
এ তো গেল সরকারি হিসাব। ডয়চে ভেলে বলছে, ভারতে ধর্ষণের প্রকৃত সংখ্যা সরকারি হিসাবের চেয়ে অনেক বেশি। কারণ, মান-সম্মানের ভয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ধর্ষণের শিকার নারীরা মুখ খুলতে চান না। সব মিলে ভারতে ধর্ষণের ভয়াবহতা ছিল, আছে এবং ক্রমেই তা যেন আরো বাড়ছে।
ভারতে বাংলাদেশি নারীকে ধর্ষণের পর হত্যার প্রতিবাদে ঢাবির রাজু ভাস্কর্যের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ।
এদিকে, বেঙ্গালুরুতে বাংলাদেশিকে নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা ও তার লাশ উদ্ধারের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর তা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। সেখানে ভারতে বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশটির সরকারকে কড়া ভাষায় সতর্ক করা হয়েছে।
প্রতিবাদ জানিয়ে সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। এখনো কেন ভারতের হাইকমিশনারকে ডেকে এর জবাব চাওয়া হলো না, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এ প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছে বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়া হবে না বলেও জানান তারা।
তারা বলেন, ‘‘এ দেশের মানুষ এখন ভারতের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে জানে। আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এখন এ দেশের মানুষ সোচ্চার।’’
এ ছাড়া, ফেলানী থেকে শুরু করে এ যাবৎ সব হত্যার বিচারের জোড় দাবি তোলা হয় বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে। তাদের অভিযোগ, ভারত শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগকে আশ্রয় দিয়ে একের পর এক বাংলাদেশবিরোধী কাজ করে যাচ্ছেন।
ঢাকা/এনএইচ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ইউজিসির নজরদারি সংস্থার অধীনে যাচ্ছে সাত কলেজ
রাজধানীর আলোচিত সাত কলেজ নিয়ে নতুন সিদ্ধান্তে এসেছে সরকার। এ জন্য আপাতত একটি ‘নজরদারি সংস্থা’ গঠন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) একজন সদস্য এ সংস্থার নেতৃত্ব দেবেন। সাত অধ্যক্ষের যে কোনো একজন সংস্থাটির পরিচালকের দায়িত্ব পালন করবেন। নজরদারি সংস্থার কার্যালয় হবে সাত কলেজের যে কোনোটির ক্যাম্পাসে।
এ ছাড়া সাত কলেজের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের নতুন ভর্তি কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, ভর্তি ও রেজিস্ট্রার দপ্তর এবং হিসাব বিভাগের প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি সাময়িক কাঠামো থাকবে, যা ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে সাত কলেজের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের যাবতীয় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এসব কাজের জন্য সাত কলেজের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি পৃথক ব্যাংক একাউন্ট পরিচালনা করবে। বিশ্ববিদ্যালয় মর্যাদার স্বতন্ত্র কাঠামো চূড়ান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত এই নজরদারি সংস্থার অধীনে সাত কলেজ পরিচালিত হবে।
সরকারের এসব সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে গতকাল সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে চিঠি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। যুগ্ম সচিব শারমিনা নাসরীনের সই করা চিঠিতে এই সুপারিশমালা বাস্তবায়নে উপাচার্যকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এসএমএ ফায়েজ এই উচ্চ পর্যায়ে গঠিত কমিটির আহ্বায়ক।
ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) কমিটির সদস্য।
এ কমিটি সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলে একাধিক সভায় মিলিত হয়ে সরকারের কাছে যে সুপারিশমালা পেশ করেছে, তা সরকার গ্রহণ করেছে।
কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক এসএমএ ফায়েজ জাপান সফরে থাকায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এর আগে তিনি সমকালকে বলেছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয় সমমর্যাদার স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হওয়ার আগ পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সময়ে সাত কলেজ কীভাবে চলবে, সে বিষয়ে আমরা সরকারকে একটি সুপারিশমালা দিয়েছি।
গতকাল ঢাবি উপাচার্যকে দেওয়া চিঠিতে জানানো হয়, ইউজিসি এবং অধিভুক্ত কলেজের একজন অধ্যক্ষের নেতৃত্বে সাত কলেজের সার্বিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এতে ঢাবি প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতিনিধি থাকবেন। দ্রুত ঢাবির সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলে বিষয়টি চূড়ান্ত করার জন্য উপাচার্যকে অনুরোধ জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সাত কলেজ হলো– ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, সরকারি কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন থাকা রাজধানীর এই বড় সাতটি কলেজকে ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত করা হয়েছিল। প্রায় ৮ বছর ঢাবির অধীনে চলে সাতটি কলেজ। গত ২৭ জানুয়ারি অধিভুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেয় ঢাবি। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে এখন সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তর প্রক্রিয়া শুরু করেছে অর্ন্তবর্তী সরকার। তার আগ পর্যন্ত এই নজরদারি সংস্থার অধীনে চলবে সাত কলেজ।
কেমন হবে নজরদারি সংস্থার কাঠামো
নজরদারি সংস্থার প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ঢাবির রেজিস্ট্রার দপ্তর মনোনীত কর্মকর্তা, পরীক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ঢাবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর মনোনীত কর্মকর্তা, অর্থ ও হিসাব সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট শাখা মনোনীত প্রতিনিধি দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া সাত কলেজের অনলাইন ভর্তি কমিটির মাধ্যমে আবেদন সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালিত হবে। কলেজগুলোর শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে এই কাঠামো।
সুপারিশে বলা হয়েছে, ‘সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রশাসনিক জটিলতা ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের নানা অসুবিধার কথা বিবেচনায় রেখে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেসব শিক্ষার্থী বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান শিক্ষা কার্যক্রমের অধীনে রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দায়িত্বশীলতার সঙ্গে বর্তমান ব্যবস্থা চালু রাখবে।’
আরও বলা হয়েছে, ‘প্রস্তাবিত ব্যবস্থাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যথাযথ পর্ষদে (একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেট) জরুরি ভিত্তিতে অনুমোদিত হতে হবে।’
উচ্চ পর্যায়ের কমিটির সুপারিশ অনুসারে, ‘সাত কলেজের ভর্তি, পরীক্ষা ও অন্যান্য কার্যক্রম সংক্রান্ত তথ্য আদান প্রদানের জন্য স্ব স্ব কলেজের অধ্যক্ষের নিয়ন্ত্রণে একটি করে হেল্প ডেস্ক থাকবে; নিয়োগপ্রাপ্তির পরেই প্রস্তাবিত সাময়িক কাঠামোর পরিচালক জনবলের প্রস্তাবসহ কাঠামোর কার্যক্রমের অপারেশন ম্যানুয়েল প্রণয়ন করে সিন্ডিকেটে অনুমোদনের লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দাখিল করবেন। কমিশন সমন্বিত কাঠামোর সার্বিক তত্ত্বাবধানসহ সময়ে সময়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবে।’