জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, শুধু দেশে না, চক্রান্ত এখন দেশের বাইরে থেকে হচ্ছে। খুনি হাসিনা বাংলাদেশের মানুষের যে লক্ষ কোটি টাকা চুরি করে নিয়ে গিয়েছেন, সেগুলো দিয়ে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছেন, চক্রান্ত করছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর তাদের জায়গা থেকে সচেতন থাকা প্রয়োজন যে, আমাদের ভেতরের কোন চিন্তা বা মতপার্থক্যের সুযোগ বাইরের কেউ নিচ্ছে কি না।

শনিবার দুপুরে পঞ্চগড় রেলস্টেশনের সৌন্দর্যবর্ধন কাজের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। এ সময় জেলা প্রশাসক মো.

সাবেত আলী, পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান মুন্সি, জেলা জজ আদালতের পিপি আদম সুফি, পৌর বিএনপির আহবায়ক তৌহিদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

সারজিস আলম বলেন, আমরা যেন আমাদের কথা, মতামত বা পদক্ষেপের মাধ্যমে নতুন করে আবার ওই ফ্যাসিস্ট বা তাদের কোন দোসরকে সুযোগ না দেই। তারা তো চাইবে আমাদের ঐক্যের মধ্যে ফাটল ধরাতে। এই ফাটলের সুযোগে আমরা নিজেরা বিভাজনে লিপ্ত হব। তারা এই সুযোগটা নিয়ে তাদের স্বার্থ হাসিল করবে। আমরা আমাদের জায়গা থেকে মনে করি, এখন গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে জাতীয় ঐক্য। জাতীয় ঐক্যের জন্য সবার আগে কোন গোষ্ঠী, দল, ব্যক্তি এসবের স্বার্থের আগে বাংলাদেশের স্বার্থ চিন্তা করতে হবে এবং আমরা যদি এখন সেটা চিন্তা করতে পারি, তাহলে যে বাংলাদেশ আমরা প্রত্যাশা করি অভ্যুত্থানের যে স্পিরিট, সেটা সফল হওয়া সম্ভব। 

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি বলেছেন, কোন দেশে এই রকম বিপ্লব হলে সেখানে বাহিনীই থাকে না। তারা আমাদের সন্তান। যারা অন্যায়ের লোকজন ছিল, তাদের একের পর এক শাস্তি হচ্ছে। পুলিশ বিভাগ পুনর্গঠন হচ্ছে। তারা শিগগির মানুষের সাথে কাধে কাধ মিলিয়ে কাজ করবে। 

পুলিশ, র‌্যাব ও আনসারের পোশাক নিয়ে সামাজিক গণমাধ্যমে মন্তব্য সম্পর্কে স্বরাষ্ট্র সচিব বলেন, মানুষ পক্ষে বিপক্ষে বলবে এটাই ডেমোক্রেসি। কেউ বলছে এটা হয়নি। আবার কেউ বলবে, এটা ভালো হয়েছে। আরেকজন বলেছে এটা কিছুই হয়নি, তোমরা আবার নতুন করে বানাও। এগুলো কথাবার্তা তো চলবে। আমরা কারোর মুখ চেপে ধরছি না। সরকার চায় সবাই বলুক।

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

স্মৃতি ও শ্রদ্ধার অনন্য আয়োজন

তাঁর শারীরিক উপস্থিতি ছিল না অনুষ্ঠানে। তবে তাঁর উপস্থিতি ছিল আরও ব্যাপক বিপুল বিস্তারে। ‘নতুন করে পাব বলে’ নামে অনুষ্ঠান হলো তাঁকে স্মরণ করে, তাঁরই হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান ছায়ানট মিলনায়তনে। তিনি সন্‌জীদা খাতুন। বাংলাদেশের সংস্কৃতির অন্যতম বিনির্মাতা, সংগীতজ্ঞ, শিক্ষাবিদ, সংগঠক সন্‌জীদা খাতুনকে স্মরণ করে যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল ছায়ানট, জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ, নালন্দা উচ্চবিদ্যালয়, কণ্ঠশীলন ও ব্রতচারী।

গতকাল শুক্রবার ছুটির দিন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল ‘কোন আলোতে প্রাণের প্রদীপ জ্বালিয়ে’ সম্মেলক কণ্ঠে গানের সঙ্গে সমবেত নৃত্যের পরিবেশনা দিয়ে। মঞ্চ সাজানো হয়েছিল অনাড়ম্বর, কিন্তু শুচিস্নিগ্ধ সজ্জায়। সবুজ গাছ আর ফুল দিয়ে। মঞ্চের নেপথ্যে বড় ডিজিটাল পর্দায় একের পর এক হচ্ছিল পরিস্ফুটিত সন্‌জীদা খাতুনের তারুণ্যের কাল থেকে বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের বিভিন্ন মুহূর্তের ছবির পর ছবি।

সংগীতজ্ঞের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের আয়োজনে গান তো থাকবেই। সেই সঙ্গে আরও ছিল তাঁর না থাকার শূন্যতার বোধ, তিনি যে চেতনার আলো জ্বালিয়ে গেলেন, তা প্রাণে প্রাণে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রত্যয়। তাঁর জীবনী আলোচনা, তাঁর নিজের লেখা থেকে পাঠ, তাঁর নিজের গাওয়া গান, স্মৃতিচারণা, কবিতা আবৃত্তি, গীতি-আলেখ্যর সমন্বয়ে সাজানো টানা তিন ঘণ্টার অনুপম পরিবেশনা। সন্‌জীদা খাতুন তাঁর জীবিতকালে ছায়ানটের অনুষ্ঠানগুলো বরাবরই ত্রুটিহীন ও আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করার রীতি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই ধারাবাহিকতা থাকল তাঁর অনুপস্থিতিতেও। অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা থেকে পরিবেশনা অবধি, যাঁরাই যে কাজে ছিলেন সবাই যেন নিজেদের উজাড় করে দেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন এই অনুষ্ঠানে।

প্রথম পরিবেশনার পর ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি ডা. সারওয়ার আলী বললেন, ‘আমরা যেন এক মহিরুহের ছায়া থেকে বঞ্চিত হয়েছি। সংস্কৃতির মধ্যমে সর্বজনের মধ্যে বাঙালি জাতিসত্তার জাগরণের অক্লান্ত চেষ্টা চালিয়ে গেছেন তিনি। সেই কাজের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে।’ সব বাধা প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে সবাইকে হাতে হাত মিলিয়ে সন্‌জীদা খাতুনের দেখিয়ে যাওয়া পথে অগ্রসর হওয়ার আহ্বান জানালেন তিনি।

এরপর সম্মেলক কণ্ঠে পরিবেশিত হলো ‘পান্থ তুমি পান্থ জনের সখা হে’। সন্‌জীদা খাতুনের জীবনী তুলে ধরেন জয়ন্ত রায়। এরপর মঞ্চ আঁধার করে নেপথ্যে সন্‌জীদা খাতুনের ছবি রেখে পরিবেশন করা হলো তাঁর রেকর্ড করা গান ‘এখনো গেল না আঁধার’। ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় পড়ে শোনালেন রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের স্মৃতিচারণা করে সন্‌জীদা খাতুনের লেখা ‘একুশ আমাকে ভাষা দিয়েছে’।

ছায়ানটের উপদেষ্টা মফিদুল হক আলোচনা করলেন সন্‌জীদা খাতুনের বহুমাত্রিক জীবন ও কর্ম নিয়ে। তিনি বললেন, শিক্ষা, গবেষণা, সংগঠন পরিচালনাসহ বহুবিধ কাজে সন্‌জীদা খাতুন আত্মনিয়োগ করলেও গান নিয়েই মূলত তিনি পথ চলেছেন। গানের ভেতর দিয়েই সংস্কৃতিকে উপলব্ধি করেছেন। মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছেন মঙ্গলের চেতনা। ষাটের দশকে আইয়ুব খানের কঠিন সামরিক শাসনের ভয়ভীতি উপেক্ষা করে রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপন করেছেন তিন দিনের অনুষ্ঠান করে। সেই সূত্রে ছায়ানট ও পরে রমনার বটমূলে পয়লা বৈশাখে নববর্ষের অনুষ্ঠান। বাঙালি সংস্কৃতির জাগরণে তাঁর ভূমিকা অম্লান থেকে যাবে।

আলোচনার পর তানিয়া মান্নান গেয়েছেন ‘মালা হতে খসে পড়া’। কণ্ঠশীলনের জহিরুল হক আবৃত্তি করেন ‘পুরস্কার’ কবিতার অংশবিশেষ। এভাবেই একক ও সম্মেলক গান,  ব্রতচারীর গান, আবৃত্তি পাঠ, স্মৃতিচারণার পরিবেশনা দিয়ে এগিয়েছে অনুষ্ঠান।

নালন্দার শিক্ষার্থীরা পরিবেশন করেছে সন্‌জীদা খাতুনের প্রবন্ধ অবলম্বে গীতি-আলেখ্য ‘সবারে বাস রে ভালো’। ত্রপা মজুমদার পড়েছেন মুক্তিযুদ্ধকালের স্মৃতিচারণা করে সন্‌জীদা খাতুনের লেখা, তাঁর সংস্কৃতি ভাবনা নিয়ে প্রবন্ধ পড়েছেন সুমনা বিশ্বাস। স্মৃতিচারণা ও গান করেছেন লিলি ইসলাম। একক গান পরিবেশন করেছেন রোকাইয়া হাসিনা নীলি, মহিউজ্জামান চৌধুরী, খায়রুল আনাম শাকিল, ইফফাত আরা দেওয়ান, শারমিন সাথী ইসলাম, প্রমীলা ভট্টাচার্য, এ টি এম জাহাঙ্গীর, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, বুলবুল ইসলাম ও লাইসা আহমদ লিসা।

সম্মেলক কণ্ঠে ‘শেষ নাহি যে শেষ কথা কে বলবে’ গানটির পর জাতীয় সংগীত দিয়ে শেষ হয়েছিল স্মৃতি ও শ্রদ্ধার এই অনন্য আয়োজন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ