সময়টা ২০১৭ সালের ১৪ জুলাই। টটেনহ্যাম হটস্পার থেকে ইংলিশ রাইট-ব্যাক কাইল ওয়াকার ম্যানচেস্টার সিটি ছেড়ে রেকর্ড ৫০ মিলিয়ন পাউন্ডে যোগ দিলেন ম্যানচেস্টার সিটিতে। একজন ২৬ বছর বয়সী ডিফেন্ডারকে বিক্রি করে এরবেশি আর কী আশা করা যায়? তবে হলো ঠিক উল্টো! স্পার্স ফ্যানদের অসম্ভব মন খারাপ। দলটির সভাপতি ড্যানিয়েল লেভিকে দুয়ো দিতে ছাড়ল না নর্থ লন্ডনের ক্লাবটির সমর্থকরা।

একজন ফুটবলারের ক্লাব পর্যায়ের ক্যারিয়ারে যত শিরোপা জেতা সম্ভব, ম্যানসিটিতে যোগ দিয়ে সবই অর্জন করে ফেলেছেন ওয়াকার। এরপর সিদ্ধান্ত নিলেন নতুন চ্যালেঞ্জ নেওয়ার। সেই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি, ২০২৫) এই ৩৪ বছর বয়েসী রাইট-ব্যাক চলতি মৌসুমের বাকি সময়ে জন্য এসি মিলানে নাম লেখালেন। আপাতত ধারে খেলবেন, আসছে গ্রীষ্মে তার চুক্তি পাকাপাকি হওয়ার কথা।

আরো পড়ুন:

 ৭২.

৬ মিলিয়নে মিশরীয় মারমুশকে দলে নিলো ম্যানসিটি

চ্যাম্পিয়নস লিগে বুধবার রাতের ম্যাচের ফলাফল

 

এমন এক সময়ে ওয়াকার ম্যানসিটি ছাড়ছেন যখন ক্লাবটি শেষ ৯ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বাজে অবস্থা অতিক্রম করছে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে টেবিলের পঞ্চম স্থানে আছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা। ঘরোয়া লিগে তাও সেরা চারের লড়াইয়ে আছে গার্দিওলার দল। তবে ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্বের আসর চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচটা হারলে সেকেন্ড রাউন্ডে উঠতে ব্যর্থ হবে সিটি।

ওয়াকার স্পার্স ছেড়ে ম্যানসিটির জার্সি গায়ে জড়ানোর পর কেটে গিয়েছি ৮টি বছর। এই ডিফেন্ডার সিটির জার্সিতে ৩১৯ ম্যাচ খেলে করেছেন ৬ গোল এবং করিইয়েছেন ২৩টি। ক্যারিয়ারের অন্তিম লগ্নে থালেও এখনো বদলায়নি তার কার্যকরীতা। এজন্যই ওয়াকারকে মিস করবেন কি না, এমন প্রশ্নে গার্দিওলার ডুবে যান হতাশায়। ঠিক ৮ বছর আগে স্পার্স ফ্যানরা যেভাবে কষ্টে ডুবেছিল।

মিলানে যোগ দিয়ে সিটির প্রতি ইনস্টাগ্রামে বিদায়ী বার্তাও দিয়েছেন ওয়াকার, “অনেককেই ধন্যবাদ। কোচিং স্টাফ থেকে শুরু করে ক্লাবের সঙ্গে সংস্লিষ্ট সবাইকে। আপনাদের কারণে প্রতিটি দিন উপভোগ্য হয়েছে, নিজেদের সেরাটা দিতে পেরেছি। সতীর্থদের বলছি, সিটির দরজা দিয়ে প্রথম পা রাখার মুহূর্ত থেকেই নিজের ঘর মনে হয়েছে। দারুণ সব স্মৃতি এবং যেসব সাফল্য আমরা ভাগ করে নিয়েছি, সেসবের জন্য ধন্যবাদ। তোমরা আমার বন্ধু, কিন্তু সারা জীবনের পারিবারিক সদস্যও। পেপ গার্দিওলাকে বলছি, আমার ওপর আস্থা রাখার জন্য ধন্যবাদ এবং ২০১৭ সালে আমাকে নিয়ে আসতে বহু কাঠখড় পোড়ানোর জন্যও। আমরা একসঙ্গে ১৭টি ট্রফি জিতেছি এবং আপনার নির্দেশনাতেই আমি খেলোয়াড় হয়ে উঠতে পেরেছি। চিরজীবন কৃতজ্ঞ থাকব।”

ইংল্যান্ডের জার্সিতে ৯৩ ম্যাচ খেলা এই রাইট-ব্যাক মিলানে সতীর্থ হিসেবে পাচ্ছেন স্বদেশি ফিকায়ো তোমোরি, রুবেন লফটাস-চিক ও ট্যামি আব্রাহামকে। ৭ বারের চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ী মিলানে যোগ দিয়ে ওয়াকার জানান, “আমি এসি ক্লাবে যোগ দিতে পেরে গর্বিত। এটা এমন একটি ক্লাব যার অনেক উজ্জ্বল ইতিহাস আছে। মিলানের জার্সি পরা সম্মানের বিষয়।” 

ঢাকা/নাভিদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল

এছাড়াও পড়ুন:

পদ্মাপাড়ের মাটি বিক্রি করছেন সাবেক ছাত্রদল নেতা, হুমকিতে পুলিশ একাডেমিসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা

রাজশাহীর চারঘাটে পদ্মাপাড়ের মাটি কেটে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে ছাত্রদলের সাবেক এক নেতার বিরুদ্ধে। এতে একদিকে হারিয়ে যাচ্ছে চাষিদের ফসলের জমি, অন্যদিকে লাগাতার পাড়ের মাটি কেটে নেওয়ায় ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি, বিজিবি ক্যাম্প, স্লুইসগেট, চারঘাট থানা, ভূমি অফিস, গুচ্ছগ্রামসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।

এ ব্যাপারে ১৫ এপ্রিল পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর অভিযোগ করেছেন বড়াল রক্ষা আন্দোলন ও চলনবিল রক্ষা আন্দোলনের সদস্যসচিব এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য এস এম মিজানুর রহমান। এ ছাড়া ২৬ ফেব্রুয়ারি চারঘাটের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ হোসেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর বড়াল নদের উৎসমুখে পদ্মাপাড়ের মাটি কেটে বিক্রি করার ভয়াবহতা উল্লেখ করে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। এই প্রতিবেদনে এলাকাটি অবৈধ দখলদারের হাত থেকে উদ্ধার করে চারঘাটের ঐতিহ্য খয়েরবাগান সৃজন এবং একটি মিনি শিশুপার্ক নির্মাণের প্রস্তাব করেন।

উপজেলা ভূমি অফিসের প্রতিবেদন ও উপদেষ্টা বরাবর দাখিল করা অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, পদ্মাপাড়ের মাটি কেটে বিক্রি চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী মতলেবুর রহমান ওরফে মতলেব। তাঁকে সহযোগিতা করছেন উপজেলা বিএনপির একজন নেতা। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত এক্সকাভেটর (খননযন্ত্র) দিয়ে মাটি কেটে শত শত ড্রামট্রাকে বিভিন্ন ইটভাটা ও স্থাপনায় পাঠানো হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চারঘাট বাজারের স্লুইসগেট সংলগ্ন পদ্মা ও বড়াল নদের মোহনা বালুমহাল হিসেবে সরকার প্রতিবছর ইজারা দিত। কিন্তু বালু তোলার কারণে ক্যাডেট কলেজ, পুলিশ একাডেমিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ভাঙনের মুখে পড়ায় উচ্চ আদালতে মামলা চলমান থাকায় দুই বছর ধরে বালুমহালের ইজারা বন্ধ আছে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বালুমহাল সংলগ্ন পদ্মাপাড়ের জায়গাগুলো নিয়ন্ত্রণে নেন যুবদল নেতা মতলেবুর রহমান। সেখান থেকে নদীপাড়ের মাটি কেটে বিক্রি শুরু করেন। স্থানীয় প্রশাসন সেখানে একাধিকবার অভিযান পরিচালনা করলেও মতলেব ও তাঁর লোকজন বালু তোলা বন্ধ করেননি।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ ফেব্রুয়ারি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌস ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ হোসেনের নেতৃত্বে মাটি কাটার জায়গাটি পরিদর্শন করেন। তাঁরা সেখানে সরকারি খাসজমির সঠিক সীমানা নির্ধারণ করে লাল পতাকা ও সাইনবোর্ড স্থাপন করেন। এ সময় জার্মান ফেডারেল মিনিস্ট্রি ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের অর্থায়নে নেওয়া প্রকল্প ‘ইনোভেশনস ফর ক্লাইমেট-স্মার্ট আরবান ডেভেলপমেন্টের’ প্রতিনিধিদলকে সঙ্গে নিয়ে ভাঙন রোধে সেখানে চারঘাটের ঐতিহ্যবাহী খয়েরগাছ রোপণের মাধ্যমে সামাজিক বনায়ন কার্যক্রম শুরু করা হয়।

এদিকে ওই দিন দুপুরে গাছের চারা রোপণের পর রাত থেকেই আবারও মাটি কাটা শুরু হয়। মাটি পরিবহন করতে গিয়ে রোপণ করা গাছগুলোও নষ্ট করা হয়। সীমানা নির্ধারণের লাল পতাকা ও সাইনবোর্ড তুলে ফেলা হয়। এরপর স্থানীয় লোকজনের ফসল নষ্টের অভিযোগের ভিত্তিতে সর্বশেষ ১১ এপ্রিল বিকেলে সেখানে অভিযানে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌস, সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ হোসেন ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান। অভিযানে সহযোগিতায় ছিল মাত্র চারজন আনসার সদস্য।

আগামী মৌসুমে এই এলাকাজুড়ে তীব্র ভাঙন হওয়ার আশঙ্কা হয়েছে। যেখানে মাটি কাটা হচ্ছে তার ২০০ মিটারের মধ্যে রয়েছে পুলিশ একাডেমি, চারঘাট থানা, ভূমি অফিস, স্লুইসগেট, বিজিবি ক্যাম্পসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান।পার্থ সরকার, রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগ-২–এর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী

ঘটনাস্থলে গিয়ে উপজেলা প্রশাসনের কর্মীরা এক্সকাভেটর মেশিন অকেজো করার চেষ্টা করলে সেখানে উপস্থিত হন মতলেবুর রহমানের নেতৃত্বে ২০-২৫ জন দেশি অস্ত্রধারী। এ অবস্থায় যথেষ্ট ফোর্স না থাকায় অভিযান না চালিয়ে ফেরত আসতে বাধ্য হয় উপজেলা প্রশাসন। ওসি নিজে সেখানে উপস্থিত থাকলেও মাত্র ৩০০ মিটার দূরত্বে থেকেও ঘণ্টাখানেক সময়েও থানার পুলিশ ফোর্স সেখান উপস্থিত হননি।

প্রকাশ্যে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ওই এলাকায় যাওয়ার কোনো উপায় নেই। প্রশাসনের লোকজনকেই মাটি খননে জড়িত লোকজন ঘিরে ধরেন। তাই চারঘাটের মুক্তারপুর থেকে নৌকা নিয়ে পদ্মা নদী দিয়ে গত রোববার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, একটি ভুট্টাখেতের পাশ থেকে নদীপাড়ের মাটি খনন করা হচ্ছে। ৩০-৪০ ফুট গভীরে মাটি কাটায় সমতল ভূমি থেকে যন্ত্রটির মাথা দেখা যাচ্ছে না। সেখানকার ছবি তুলতে দেখেই খাদের মধ্যে ছাতা মাথায় দাঁড়িয়ে থাকা একজন এই প্রতিবেদককে সালাম দেন। ছবি নিয়ে চলে আসতে গেলে একজন পেছন পেছন দৌড়ে আসতে থাকেন। ডাকতে ডাকতে বলেন, ‘ভাই, বড় ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করে যান, ভাই, বড় ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করে যান।’

স্থানীয় গোপালপুর এলাকার এক কৃষক বলেন, পদ্মা নদীতে অসময়েও ভাঙন চলছে। একের পর এক ফসল জমি নদীতে বিলীন হচ্ছে। কিন্তু সবচেয়ে আতঙ্কের মধ্যে আছেন আগামী বর্ষা মৌসুমের কথা চিন্তা করে। যেভাবে নির্বিচার নদীর পাড়ের মাটি পুকুরসমান গর্ত করে কাটা হচ্ছে, তাতে পুরো এলাকা নদীর মধ্যে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আগে নদীর পাড়ে যেখানে ফসল ফলত, এখন সেখানে দুই মানুষ গর্ত হয়ে গেছে। যারা কাটছে তাদের বিরুদ্ধে কৃষকেরা প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না।

যেখানে মাটি কাটা হচ্ছে তার ২০০ মিটারের মধ্যে রয়েছে পুলিশ একাডেমি, চারঘাট থানা, ভূমি অফিস, স্লুইসগেট, বিজিবি ক্যাম্পসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাইফুলের বাবা বললেন, ছেলের লাশ দাফনের জায়গা নেই
  • রেললাইনের জীবন, রেললাইনেই শেষ
  • প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল হত্যায় আরও একজন গ্রেপ্তার
  • কাশ্মীর: যুদ্ধের মতো এক হামলা
  • দিনাজপুরে সাপের কামড়ে সাপুড়ের মৃত্যু
  • আগের মতোই নোংরা-পচা ঢাকা লিগ
  • বৈরুতে ইসরায়েলি হামলা, ইসলামপন্থী নেতা নিহত
  • সুন্দরবন সুরক্ষায় বিলম্ব নহে
  • নেতৃত্বশূন্য পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ কী
  • পদ্মাপাড়ের মাটি বিক্রি করছেন সাবেক ছাত্রদল নেতা, হুমকিতে পুলিশ একাডেমিসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা