বাংলা একাডেমির পুরস্কার ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো উচিত: সাখাওয়াত টিপু
Published: 25th, January 2025 GMT
সাখাওয়াত টিপু কবি ও প্রাবন্ধিক। কবিতায় নতুন কাব্যভাষা নির্মাণ করে তিনি পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। বাংলার পাশাপাশি স্প্যানিশ, ইতালিয়ান, সার্বিয়ান, স্লোভেনিয়ান, ইংরেজিসহ এশিয়ার কয়েকটি ভাষায় তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। বেলগ্রেড এবং ইতালি থেকে প্রকাশিত হয়েছে Absence of Eye ও Feather of Wings নামে দ্বিভাষিক কাব্যগ্রন্থ। কবিদের আন্তর্জাতিক আন্দোলন ‘পোয়েটস অব দ্যা প্লানেট’-এর তিনি কো-ফাউন্ডার। সম্পাদনা করেছেন ‘চাড়ালনামা’, দর্শন ও ভাষার কাগজ ‘জাতীয় সাহিত্য’ ‘তর্কবাংলা’। বর্তমানে তিনি বাংলা সাহিত্যের জার্নাল ‘প্রতিধ্বনি’ সম্পাদনা করছেন।
রাইজিংবিডি: বাংলা একাডেমি জাতীয় মননশীলতার প্রতীক। জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে একাডেমির কোন বিষয়গুলোতে পরিবর্তন হওয়া উচিত ছিল বলে আপনি মনে করেন?
সাখাওয়াত টিপু: প্রথমে আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন—বাংলা একাডেমি একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান। তাই বলা হয়েছে ‘জাতীয় মননশীলতার প্রতীক’। স্লোগান হিসেবেও খুব সুন্দর! অতীতে বাংলা একাডেমির কর্তাদের অনভিপ্রেত কর্মকাণ্ডের জন্য এই স্লোগান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল; সেটা দুঃখজনক। বর্তমান প্রেক্ষাপট ভিন্ন। ২০২৪ সালের অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থানে অসংখ্য ছাত্র-জনতা আত্মহুতি দিয়েছেন। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর সফল অভ্যুত্থানের ফলে মানুষের প্রত্যাশাও বিপুলভাবে বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু সমস্যা অন্যখানে। অতীতের ফ্যাসিস্ট শাসন কাঠামোর ফলে বাংলা একাডেমির মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর মর্যাদা তিলে তিলে ধ্বংস করা হয়েছে। কার্যত ভঙ্গুর প্রতিষ্ঠানগুলোর ভেতরগত কাঠামোও ভেঙে পড়েছে। ভাঙা কাঠামো গড়া খুব সহজ কাজ নয়। প্রথম কাজ হবে ‘বাংলা একাডেমি আইন-২০১৩’ রিভিউ করা। আইনের যে ধারাগুলো অগণতান্ত্রিক, মুক্ত চিন্তা ও বাংলা একাডমির সৃজনশীল চিন্তাবিরোধী, সেগুলো বাতিল করা। দ্বিতীয় কাজ গবেষণার জন্য বছরের ক্যালেন্ডার প্রকাশ করা। ইতোমধ্যে কিছু ভালো উদ্যোগও নিয়েছে তারা। তৃতীয় প্রকাশনার ক্ষেত্রে বইয়ের মান যাচাই ও নির্ধারণে বুদ্ধিবৃত্তিক পরিসরকে আমলে নেওয়া। সৃষ্টিশীল আর সৃজনশীল মানুষের চিন্তা চর্চার কেন্দ্র হিসেবে সুষ্ঠু পদক্ষেপ নিতে হবে বাংলা একাডেমিকে।
রাইজিংবিডি: অভিযোগ রয়েছে, বাংলা একাডেমির কার্যনির্বাহী কমিটি নিয়ে; অনেকেই এটাকে ‘আমলা নির্ভর’ মনে করেন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী একাডেমি পরিচালনায় বাধা কোথায়?
সাখাওয়াত টিপু: বাংলা একাডেমির কার্যনির্বাহী কমিটি অনেকটাই আমলা নির্ভর—কথাটা সঠিক নয়। আমলা ছাড়া বিভিন্ন সেক্টরের ৭ জন সদস্য তো আছেন। সবচেয়ে বড় কথা—বাংলা একাডেমির কর্তারা রাজনৈতিক দলীয়করণ, স্বজনপ্রীতি, বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠানের লেজুরবৃত্তি ছেড়ে দিলে বাংলা একাডেমির ন্যূনতম জাতীয় রূপটা আমরা দেখতে পাবো। একাডেমির নিয়োগ প্রক্রিয়ায় একটা বিষয় স্পষ্ট থাকা প্রয়োজন, যারা বাংলা একাডেমি নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন, তারা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারবেন না। কেউ করলে তাকে শাস্তির আওতায় আনা হবে।
রাইজিংবিডি: বিগত বছরগুলোর মতো এবারও একাডেমির পুরস্কার নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। এখানে কী ধরনের পরিবর্তন আনা যেতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
সাখাওয়াত টিপু: প্রতিবছর পুরস্কার নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হওয়া অভিপ্রেত কাজ নয়। একটি কথা না বললেই নয়, বাংলা একাডেমির সাবেক ডিজি শামসুজ্জামান খান নানা কিসিমের পুরস্কার প্রথা চালু করেন। তার আমলে এসব পুরস্কার পাত্রে-অপাত্রে দান করে বাংলা একাডেমির পুরস্কারের মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। বর্তমান মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজমও সেই ঐতিহ্য বহন করে চলেছেন। এ জন্যই বাংলা একাডেমির পুরস্কার নিয়ে বিতর্ক থামছে না। সে জন্য তিনি বিস্তর সমালোচনা এবং প্রশ্নের মুখে পড়েছেন। পুরস্কারের বিষয়ে মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের আগে থেকেই নানা বিষয় বিবেচনায় আনা উচিত ছিল।
আমার বিবেচনায় বাংলা একাডেমির পুরস্কার ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো উচিত। তিনটি পদ্ধতিতে বাংলা একাডেমি পুরস্কার দিতে পারে—নবীন, তরুণ ও আজীবন সম্মাননা। সেটা কেমন হবে? নবীন লেখক বলতে—প্রথম বইয়ে জন্য, যার বয়সসীমা হবে ২০ থেকে ৪০ বছর, তরুণ লেখক বলতে যাদের বয়সসীমা ৪১ থেকে ৫৫ বছর, আর আরেকটি ষাটোর্ধ্ব বয়স যাদের আজীবন সম্মাননা দেওয়া। এটাকে আইডিয়া হিসেবে নিলে পুরস্কার নিয়ে বিতর্ক অনেকাংশে কমে যাবে। ছোট্ট পরিসরে সব কিছু বলা সম্ভব নয়—আপাতত এটুকুই।
সবচেয়ে গুরুতর প্রশ্ন—দ্বৈত নাগরিকের ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমির পুরস্কার কী হবে—সেটার স্পষ্ট রূপরেখা নাই। যদি জাতীয় সংসদে কোনো দ্বৈত নাগরিক সংসদ সদস্য হতে না পারেন, সে ক্ষেত্রে দ্বৈত নাগরিকত্ব যাদের আছে, তাদের বাংলা একাডেমির পুরস্কার দেওয়া তো সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
রাইজিংবিডি: বাংলা একাডেমির পুরস্কার নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, এতে পুরস্কারের মান কমছে বলেও অভিযোগ শোনা যায়, পুরস্কারের অর্থমূল্য নিয়েও রয়েছে অসন্তুষ্টি—আপনি কী মনে করেন?
সাখাওয়াত টিপু: পুরস্কারের মূল্য কত টাকা সেটা বড় বিষয় নয়। ফরাসি একাডেমির পুরস্কারের মূল্যমান ১ ফ্রা। কিন্তু সেটার সম্মান নোবেল প্রাইজের চেয়ে কম নয়; সেটার মর্যাদা নোবেল প্রাইজের সমতুল্য। তারপরও একটা বিষয় বিবেচনা যোগ্য—দেশে তো শিল্প-সাহিত্যের কোনো যথাযথ সম্মানীর ব্যবস্থা নাই, লেখকরা তাদের সৃষ্টির যথাযথ সম্মান পান না, এ ক্ষেত্রে দেশে পুরস্কারের অর্থ মূল্য বেশি হওয়া উচিত এবং যাকে পুরস্কার দেওয়া হবে তাকে কমপক্ষে এক বছরের বেতনভূক্ত ফেলোশিপ দেওয়া উচিত।
রাইজিংবিডি: পুরস্কারের তালিকায় এবার নারী লেখক নেই—অনেকেই বিষয়টি নিয়ে কথা বলছেন। এ কথাও উঠেছে যে, একজন লেখককে নারী অথবা পুরুষ হিসেবে আলাদা করে আমরা বিবেচনায় নেব কি না? এ বিষয়ে আপনার ভাবনা জানতে চাচ্ছি।
সাখাওয়াত টিপু: অবশ্যই পুরস্কার বিবেচনায় নারী-পুরুষ ভেদাভেদ হওয়া উচিত নয়। সত্য হলো—এই বিভাজন প্রকৃতির মধ্যে আছে। তবে আমাদের সমাজ পুরুষতান্ত্রিক সমাজ বলে কথাটা উঠেছে। কিন্তু ১৭ কোটি জনগণের দেশে পুরস্কার পাওয়ার মতো যোগ্য একজনও নারী লেখক নাই, এটা কি পাগলে বিশ্বাস করবে? এটা হলফ করে বলা যায়, বাংলা একাডেমি যাদের পুরস্কার দিয়েছেন, তাদের বিবেচনার বাইরে অনেক নারী ভালো লেখক আছেন। শুধু নারী নয়, এই পুরস্কার প্রশ্নবিদ্ধ আরেক কারণে, বাংলাদেশের অপরাপর জাতিগোষ্ঠীর লেখকরা কেন বাংলা একাডেমির পুরস্কার পাবেন না? তাদের সাহিত্য কি বিবেচনা করা হয়েছে?
রাইজিংবিডি: সাহিত্য পুরস্কারের মানদণ্ড কী হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
সাখাওয়াত টিপু: বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে তাকালে এটা স্পষ্ট হয়। সাধারণত যারা পুরস্কারের বিচারক হন—তাদের নাম আগে প্রকাশ করা হয়। বেশ কিছু নিয়মাবলীও থাকে তাতে—স্বজনপ্রীতি, দলীয় কিংবা নিয়োগকৃত ব্যক্তির সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার থেকে বিযুক্ত রাখা হয়। যাতে পুরস্কার ন্যূনতম নিরপেক্ষ হয়।
রাইজিংবিডি: বাংলা একাডেমি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, এর হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে এই মুহূর্তে ঠিক কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
সাখাওয়াত টিপু: বাংলা একাডেমির বর্তমান নেতৃত্ব দিয়ে ভালো কিছু আশা যায় না। কারণ তারা অতীতের জগদ্দল পাথরের কার্যভার বহন করে চলেছেন মাত্র। গুরুতর সংস্কার ছাড়া বাংলা একাডেমি তার প্রকৃত রূপ ফেরত পাবে না। বাংলা একাডেমির প্রয়োজন সৃষ্টিশীল নেতৃত্ব, যারা অন্তত সারাদেশের সাহিত্যের নানা সৃষ্টিকে দেখতে পান।
তারা//
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এক ড ম র ক
এছাড়াও পড়ুন:
চ্যাম্পিয়নস ট্রফি থেকে ছিটকে পড়লেন মার্শ
একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। দলটা নিশ্চিতভাবেই অন্যতম ফেবারিট হিসেবে যাচ্ছে আসন্ন চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে। তবে ফেব্রুয়ারির ১৯ তারিখ থেকে শুরু হতে যাওয়া এই আসরটির আগে ঝামেলা পিছু ছাড়ছে না অজিদের। দলের নিয়মিত অধিনায়ক প্যাট কামিন্স চোটাক্রান্ত। এই পেস বোলিং অলরাউন্ডারকে নিয়ে সংশয় এখনও কাটেনি। এবার অজিদের জন্য ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে এসেছে অলরাউন্ডার মিচেল মার্শের ছিটকে পড়টা। ব্যাপারটা নিশ্চিত করেছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ)।
মার্শের সামনে সুযোগ ছিল সাদা বলের ক্রিকেটে, আইসিসির সব ধরনের বৈশ্বিক আসর জয়ের অসাধারণ এক মাইলফলক ছোঁয়ার। তবে চোটের কারণে এবার অন্তত সেটা সম্ভব হচ্ছে না। জানা গিয়েছে পিঠের নিচের অংশের চোটে ভুগছেন এই ৩৩ বছর বয়সী অলরাউন্ডার। সুনির্দিষ্ট করে চোটের ধরণ জানায়নি সিএ।
সিএ-এর এক মুখপাত্র বলেছেন, “অস্ট্রেলিয়া জাতীয় নির্বাচক প্যানেল এবং চিকিৎসকরা মিচেল মার্শকে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার চোটের কারণে। পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় থাকা মার্শের শারীরিক অবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয়নি। সম্প্রতি তার পিঠের নিচের অংশে ব্যথা আরও বেড়ে যাওয়ার কারণে নির্বাচক প্যানেল এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে। তাকে পুরোপুরি সেরে ওঠার সুযোগ দিতে পুনর্বাসনের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। মার্শের জায়গায় দলে কে অন্তর্ভুক্ত হবে, তা নির্বাচক প্যানেল বৈঠক শেষে যথাসময়ে ঘোষণা করবে।”
আরো পড়ুন:
তবু আফসোস নেই শরিফুলের
রঞ্জিতে বিরাটের প্রত্যাবর্তনের সাক্ষী হতে রাত ৩টা থেকে লাইন
এদিকে ক্রিকইনফো দাবি করছে মার্শের এবারের ক্রিকেট মৌসুম শেষ। ক্রিকেটভিত্তিক সাইটটি আরও জানায় অস্ট্রেলিয়ান নির্বাচকরা এখন যদি মার্শের পরিবর্তে কোন ব্যাটসম্যানকে বেছে নেন, তাহলে সেটা হতে পারে জেইক ফ্রেজার-ম্যাকগার্ক, যদিও তিনি সম্প্রতি ভালো ফর্মে নেই। তবে তার খেলায় আগ্রাসী মনোভাব রয়েছে, যা মার্শের মতোই। অস্ট্রেলিয়ার স্কোয়াডে ব্যাটিং বিকল্প ইতোমধ্যেই আছে, তাই নির্বাচকরা অলরাউন্ডারও বেছে নিতে পারেন। এমনটা হলে, টেস্ট দলে মার্শের জায়গা দখল করা বাউ ওয়েবস্টার ওয়ানডেতেও ডাক পেতে পারেন।
এদিকে আইপিএলের এবারের মৌসুমে মার্শের খেলা এখন অনিশ্চত। গত নভেম্বরে সৌদি আরবের জেদ্দায় অনুষ্ঠিত মেগা নিলামে তাকে ৩ কোটি ৪০ লাখ রুপিতে দলে নিয়েছিল লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টস।
আসন্ন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ম্যাচটি হবে ২২ ফেব্রুয়ারি, যেখানে তারা মুখোমুখি হবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইংল্যান্ড। এরপর ২৫ ফেব্রুয়ারি তাদের প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ২৮ ফেব্রুয়ারি আফগানিস্তান। এর আগে শ্রীলঙ্কায় দুটি ওয়ানডে ম্যাচ খেলবে অস্ট্রেলিয়া।
ঢাকা/নাভিদ