খুলনা নগরীতে বেপরোয়া হয়ে উঠছে সন্ত্রাসীরা। প্রায় প্রতি রাতেই কোথাও না কোথাও সংঘাত ও সহিংসতা হচ্ছে। অঘোরে প্রাণ যাচ্ছে মানুষের। সর্বশেষ ‍শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) রাতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হয়েছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অর্ণব কুমার সরকার। এ নগরীতে সন্ধ্যা নামলেই ঘিরে ধরে আতঙ্ক।

অর্ণব কুমার সরকার হত্যাকাণ্ডের পর সন্দেহভাজন হিসেবে তিন জনকে আটক করেছে পুলিশ। তবে, এ ঘটনায় থানায় শনিবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত মামলা দায়ের করা হয়নি। এমনকি হত্যার কারণও জানা যায়নি। 

সোনাডাঙ্গা থানার উপ-পরিদর্শক লাভলী বেগম জানিয়েছেন, খুলনা মহানগর পুলিশ (কেএমপি) অর্ণব হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে।

এর আগে সোমবার (২০ জানুয়ারি) ৯ ঘণ্টার ব্যবধানে পৃথক তিনটি স্থানে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। এতে এক জন নিহত হয়েছেন। এক জনের আঙুল ও এক জনের কবজি বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত চার মাসে খুলনা জেলা ও মহানগরীতে ১১টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। গুরুতর জখম হয়েছেন অনেক মানুষ। প্রতিটি ঘটনায় মাদক বিক্রেতা ও এলাকাভিত্তিক সন্ত্রাসীগোষ্ঠী জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে। কিন্তু, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসছে না। বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ ও হতাশ সাধারণ মানুষ।

সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পুরাতন রেল স্টেশন এলাকায় খুলনা নগরীর ২১ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি মানিক হাওলাদারকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে জখম করা হয়। বিকেলে তিনি মারা যান। সন্ধ্যা ৬টায় নগরীর আযম খান কমার্স কলেজের ভেতরে সন্ত্রাসীরা নওফেল নামে এক যুবককে কুপিয়ে তার আঙুল বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে নগরীর বয়রা শশ্মানঘাট এলাকায় সজীব শিকদার নামে আরেক যুবককে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়।

এর আগের দিন রোববার রাতে ২৭ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহীনকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে সন্ত্রাসীরা। গুলিটি তার ফুসফুসে আটক গেছে। শাহীনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। 

গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর পুলিশের মনোবল ভেঙে পড়েছে। এ সুযোগে পুরনো সন্ত্রাসী ও মাদক বিক্রেতারা এলাকায় ফিরে এসেছে। অনেক সন্ত্রাসী কারাগার থেকে ছাড়া পেয়েছে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে তারা সংঘাতে জড়াচ্ছে। বেশিরভাগ থানায় পুলিশের নতুন কর্মকর্তা যোগ দিয়েছেন। স্থানীয় সন্ত্রাসীদের চিনতে তাদের সময় লাগছে। এছাড়া, সন্ত্রাসী ও মাদক বিক্রেতাদের গ্রেপ্তারে তাদের আন্তরিকতাও প্রশ্নবিদ্ধ। পুলিশের বিশেষ অভিযানে কয়েকজন সন্ত্রাসী ধরা পড়লেও উঠতিরা গ্রেপ্তার হচ্ছে কম। এতে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আসছে না।

নগরবাসীর অভিযোগ, পুলিশ অভিযানের কথা বললেও তেমন তৎপরতা চোখে পড়ছে না। বেশিরভাগ এলাকায় প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি হচ্ছে। সন্ত্রাসীরা অস্ত্রসহ মহড়া দিচ্ছে। পুলিশকে জানালেও তারা আসছে দেরি করে।

নগরীর প্রতিটি এলাকায় পুরাতন মাদক বিক্রেতারা ফিরে এসেছে। অলি-গলি সয়লাব হয়ে পড়েছে মাদকে। মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ এবং পুরনো শত্রুতার জেরে অভ্যন্তরীণ সংঘাত বাড়ছে। ধারালো অস্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে এ কারণেই।

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান বলেছেন, “পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে সন্ত্রাসীরা। তাদের মধ্যে এখন আগের মতো ভয় নেই। এতে অস্ত্রের মহড়া ও হত্যাকাণ্ড বেড়েছে। মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।”

খুলনা মহানগর পুলিশের কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার বলেছেন, “পুলিশের স্বাভাবিক হতে সময় লাগছে। এ সুযোগে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে সন্ত্রাসীরা। তাদের নিয়ন্ত্রণে পুলিশের নানামুখী তৎপরতা চলছে। ১২ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা তৈরি করে গ্রেপ্তারের জন্য পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে চার জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রতিনিয়ত অভিযান চলছে। বাকিদেরও শিগগির গ্রেপ্তার করা হবে।”

ঢাকা/নূরুজ্জামান/রফিক

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এল ক য় নগর ত নগর র

এছাড়াও পড়ুন:

দুর্ঘটনায় আহত অভিনেত্রী খুশি, চোখের ওপর পড়েছে ১০ সেলাই

দুর্ঘটনার শিকার হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন ছোটপর্দার অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি। বুধবার সকালে রমনা পার্ক থেকে বাড়ি ফেরার সময় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় তিনি আহত হন। অভিনেত্রীর ছেলে সৌম্য জ্যোতি সমকালকে বিষয়টি জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, বুধবার সকালে আম্মু রমনা পার্কে হাটতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে বাসায় ফেরার সময় গলির মধ্যে একটি অটোরিকশা তাকে ধাক্কা দিলে আম্মু ছিটকে পড়ে যায় এবং তার ঠিক চোখের ওপর জখম হয়। পরে দ্রুত তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সিটি স্ক্যানসহ বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন তিনি আপাতত ভালো আছেন।’

এদিকে কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুর্ঘটনার বিষয়টি জানান শাহনাজ খুশি। সেখানে তিনি বলেন, ‘বেশি না, মাত্র ১০টা সেলাই পড়েছে। এ আর এমন কি বলেন? চোখটা অন্ধ হয় নাই, হয় নাই ব্রেইন হ্যামারেজের মত শেষ অবস্থা! সেটাই তো অনেক বেশি পাওয়া! এ তেমন কিছু না, চোখের উপরের সেনসেটিভ জায়গায় মাত্র ১০ টা সেলাই লেগেছে! আমি যে প্রাণে বেঁচে আছি এ জন্য মহান সৃষ্টিকর্তা কাছে শুকরিয়া আদায় করছি!’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘কিচ্ছু চাই না আমি, শুধু যে মায়েরা/বাবারা ছোট্ট বাচ্চাটার হাত ধরে রাস্তা পার হয়ে স্কুলে আসেন অথবা নানান প্রয়োজনে রাস্তায় যান, তাদের সতর্ক করতে পোস্টটা দিলাম। আমি হয়ত ভেঙেচুরে বেঁচে গেছি। কোন বাচ্চা এ আঘাত নিতে পারবে না! ব্যাটারি চালিত অসভ্য/বর্বর যানবাহনটি এবং তার অসভ্য চালক থেকে সর্বদা সতর্ক থাকবেন। যদিও আমি গলির ভেতরের রাস্তায়, প্রাতঃ ভ্রমণ শেষে অতি সর্তকতার সাথেই একেবারে কিনার দিয়ে হেঁটে ফিরছিলাম! ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে বীরদর্পে চলে গেছে! ওরা মেধাবী যান চালক, কারো জীবনের ক্ষতির তোয়াক্কা করে না! আপনার এবং আপনার সন্তানের দায়িত্ব একান্তই আপনার। আজ চারদিন পরও মাথার অর্ধেকে কোন বোধশক্তি নাই!

সবশেষে তিনি লিখেছেন, ‘জানি না স্বাভাবিক চেহারায় ফিরবো কিনা, সেটা যদিও ফিরি রক্তাক্ত সেই পথে পড়ে থাকা সকালের ট্রমা অনেককাল ভুলবো না! কাতর অবস্থায় বিছানায় পরে থেকে বারবার একটা প্রশ্ন মনে আসছে, এই যে যত্রতত্র কুপিয়ে জখম, ট্রেন-বাস, রিকশা কিংবা প্রাইভেট গাড়িতে দিনেরাতে ছিনতাই। কার কাছে চাইব আমাদের সন্তানদের নিরাপদ পথচলা।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ