১৬ বছর কারাভোগের পর বাড়ি ফিরলেন বদরুল
Published: 25th, January 2025 GMT
আলোচিত পিলখানা ঘটনায় দীর্ঘ ১৬ বছর কারাগারে থাকার পর বাড়ি ফিরেছেন টাঙ্গাইলের গোপালপুরের বদরুল আলম বাদল। জামিনে বের হয়ে গত বৃহস্পতিবার বাড়ি ফেরেন তিনি। ১৬ বছরে নানা পরিবর্তনের কারণে চিরচেনা গ্রামটি অপরিচিত তার। বদরুলের আসার খবরে গ্রামের লোকজন দেখতে ভিড় জমাচ্ছে বাড়িটিতে। তাকে ফিরে পেয়ে খুশি পরিবার ও এলাকাবাসী। তবে ক্ষতিপূরণ, মামলা প্রত্যাহারসহ চাকরি বহাল রাখা দাবি তাদের।
টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার হেমনগর ইউনিয়নের নবগ্রামের মৃত আমজাদ হোসেনের ছেলে বদরুল আলম বাদল। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে বদরুল তৃতীয়। তাদের পরিবারে বদরুলই একমাত্র সরকারি চাকরিজীবী। আর্থিক সচ্ছলতা ফেরাতে সে সময় যোগ দিয়েছিল বিডিআরে। কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি তার। পিলখানার ঘটনায় আসামি হয়ে চাকরিচ্যুত হওয়ার পর পরিবারে নেমে আসে দুর্যোগ।
৪০ দিন বয়সী একমাত্র মেয়ে সোনালী এখন এসএসসি পরীক্ষার্থী। দীর্ঘ ১৬ বছর বাবার আদর থেকে বঞ্চিত সোনালী দীর্ঘদিন পর বাবাকে কাছে পেয়ে আবেগে আপ্লুত, ঘুরছে বাবার হাত ধরে। বাড়িতে আসার খবরে গ্রামের মানুষজন ভিড় করছে বদরুলকে দেখতে।
স্বামী না থাকায় ৪০ দিন বয়সী শিশুকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়েছে স্ত্রী রেখা খাতুনকে। স্বামীর ফেরার আশাও ছেড়ে দিয়েছিলেন। স্বামী ফেরায় খুশি তিনিও। তবে বিনাদোষে কারাভোগ ও বিডিআরের চাকরি ফেরতসহ ক্ষতিপূরণ চেয়ে সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন তার পরিবার।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, একটি টিনের ঘর রয়েছে বিডিআর বদরুল আলমের। ঘরের মেঝে কাঁচা। মেয়েকে নিয়ে টিনের ঘরে থাকতেন স্ত্রী রেখা আক্তার। রান্না ঘরটিও জরাজীর্ণ।
জানা গেছে, ২০০৫ সালে বিডিআরে চাকরি নেওয়া বদরুল ২০০৯ সালে পিলখানায় বিস্ফোরক মামলায় ১৬ বছর কারাগারে থাকার পর জামিনে বের হয়ে বাড়ি এসেছেন গত বৃহস্পতিবার। বিডিআরে চার বছর চাকরির পর বদলির আদেশ হয়েছিল পিলখানা থেকে। শেষ প্যারেড করে ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসার কথা থাকলেও ছুটির কাগজ হাতে না পাওয়ায় ব্যারাকেই থেকে যেতে হয়েছে। পরেরদিনই পিলখানার ট্রাজিডির ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরও দুইমাস পিলখানাতেই চাকরি করেছেন তিনি। পিলখানায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত না হয়েও ঘটনার দুইমাস পর আসামি করা হয় তাকে। হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে আলাদা দুইটি মামলা হয় বদরুলসহ কয়েকশ জোয়ানের বিরুদ্ধে। পরে হত্যা মামলা থেকে ২০১৩ সালে খালাস পেলেও বিস্ফোরক আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে রাখা হয় তাকে। কারাগারে থাকার অবস্থায় ২০১৪ সালে মা আর ২০১৯ সালে মারা যায় বাবাও। বাবা ও মা মারা যাওয়ার সময় তাকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়নি।
নবগ্রামের বাসিন্দা নাসির হোসেন বলেন, “বদরুল খুবই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। চাকরি করে ভাগ্য ফেরাতে চেয়েছিল। কিন্তু পিলখানার ঘটনায় সব শেষ হয়ে গেছে পরিবারের। জেলখানায় তাকে দেখতে যাওয়ার মত কেউ ছিল না।”
বদরুলের মেয়ে সোনালী জানায়, ৪০ দিন বয়সে বাবা জেলে গিয়েছিল। ছোটবেলায় গিয়েছি জেলখানায় বাবাকে দেখতে। কিন্তু বাবাকে ধরে দেখতে পারিনি। বাবাকে কাছে না পাওয়ার বেদনা সেটা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। স্কুলে যখন সহপাঠীদের বাবারা যেত তখন বাবা না থাকার অভাব বুঝেছি। বাবা এখনো আমার কাছে ফিরে এসেছে এটাই বড় পাওয়া। আজ আমি খুব খুশি। তবে বাবার সাথে অন্যায় হয়েছে। মামলা প্রত্যাহার ও ক্ষতিপূরণের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাই।
বদরুলের স্ত্রী রেখা খাতুন বলেন, “অপরাধী না হয়েও স্বামীকে কারাগারে রাখা হয়েছে। প্রথম তিন বছর চাকরির অর্ধেক টাকা পেলেও পরবর্তীতে আর কোনো টাকা দেওয়া হয়নি সরকার থেকে। মেয়েকে নিয়ে খুবই কষ্টে দিন পার করেছি, এখনো করছি। মেয়েটা বড় হয়েছে বাবাকে ছাড়া। মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, চাকরিতে বহালসহ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক আমাদের।”
বিডিআর বদরুল আলম বাদল বলেন, “পিলখানার ঘটনার সময় ব্যারাকে থেকেও হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে। এছাড়া চাকরিচ্যুত করা হয়। চাকরি পুর্নবহাল, মামলা হতে অব্যাহতিসহ ১৬ বছরের পাওনাদি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি সরকারের কাছে।”
ঢাকা/কাওছার/ইমন
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র পর ব র ১৬ বছর ব ড আর র ঘটন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
বগুড়ায় নারী হাজতখানায় পরিবারের সঙ্গে পুরুষ আসামির সাক্ষাৎ
বগুড়ায় আলোচিত ১৭ মামলার আসামি তুফান সরকারকে আদালতের নারী হাজতখানায় পরিবারের পাঁচ সদস্যের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে আদালত পুলিশের ২ সদস্যকে প্রত্যাহার ও ৫ সাক্ষাত প্রার্থীকে ৫৪ ধারায় চালান দেওয়া হয়েছে।
সোমবার বিকেলে বগুড়ার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যাহার করা পুলিশের ২ সদস্য হলেন- সহকারী টাউন উপ-পরিদর্শক (এটিএসআই) জয়নাল আবেদিন ও নারী কনস্টেবল ইকসানা খাতুন।
জানা যায়, তুফান সরকার বগুড়া শহর যুব শ্রমিকলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। তিনি বগুড়া শহরের চকসুত্রাপুর এলাকার মজিবর সরকারের ছেলে। তিনি হত্যা, মাদক, ধর্ষণ, ছিনতাইসহ ১৭ মামলার আসামি।
জানা যায়, সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের দ্বিতীয় তলায় নারী হাজতখানার দরজা কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। ভেতরে তুফান সরকার, তার স্ত্রী, ছোট বোন, শাশুড়ি, স্ত্রীর বড় বোন এবং একজন আইনজীবীর সহকারী মিলে গল্প করছিলেন। পরে নারী হাজতখানায় পুরুষ আসামি ঢুকার বিষয়টি জানাজানি হলে আদালত চত্বরে হৈ চৈ পড়ে যায়। পরে দ্রুত তুফান সরকারকে প্রিজন ভ্যানে কারাগারে পাঠানো হয়।
এসময় তুফান সরকারের সঙ্গে দেখা করতে আসা নারী হাজত খানা থেকে ওই ৫ জন সরে যান। পরে তাদের আদালত চত্বর থেকে আটক করে ৫৪ ধারায় চালান দেওয়া হয়।
আটক ৫ জন হলেন, তুফানের শাশুড়ি তাসলিমা বেগম, তুফান সরকারের স্ত্রী আশা বেগম, শ্যালিকা ফেরদৌসি বেগম, শ্যালক নয়ন, তুফানের আইনজীবীর সহকারী হারুনুর রশিদ।
বগুড়া আদালত পুলিশের পরিদর্শক মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, সকালে তুফান সরকারকে বিদ্যুৎ সংক্রান্ত একটি মামলায় আদালতে হাজিরার জন্য কারাগার থেকে আনা হয়। কারাগার থেকে আনা অন্য সব হাজতিকে দুপুরের মধ্যেই প্রিজন ভ্যানে পাঠিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু বাদ পড়ে তুফান সরকার। হাজতখানার চাবি এটিএসআই জয়নাল আবেদিনের কাছে থাকে। তুফান সরকারকে কারাগারে না পাঠিয়ে তাকে নারী হাজতখানায় পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাত করার সুযোগ করে দেয় জয়নাল আবেদিন। আদালতের সবার অগোচরে ঘটনাটি ঘটে।
বগুড়ার পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা বলেন, পুরুষ আসামিকে নারী হাজত খানায় পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগে এটিএসআই জয়নাল আবেদিন ও এক নারী কনস্টেবলকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পুলিশের আরও যাদের গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে এক কলেজ ছাত্রীকে আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগ উঠে তুফান সরকারের বিরুদ্ধে। পরে শালিস ডেকে ভুক্তভোগী নারী ও তার মা'কে দোষী উল্লেখ করে মারধর করে এবং মা-মেয়ের মাথা ন্যাড়া করে দেয় তুফান সরকার। সেই ঘটনায় দেশ জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হলে তুফান সরকার গ্রেপ্তার হয়।