গুম, হত্যা ও আয়নাঘর তৈরি করে ১৫ বছরে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে: সেলিমা রহমান
Published: 25th, January 2025 GMT
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেছেন, গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্ট সরকার মানবাধিকারকে পদদলিত করে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করেছে। দেশের এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়নি। গুম, হত্যা, আয়নাঘর তৈরি করে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে।
আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় বিষন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থা, বাংলাদেশ এই সেমিনারের আয়োজন করে।
সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল লতিফ মাসুমের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক এমপি নাজিমুদ্দিন আলম, বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থার ভাইস চেয়ারম্যান এস এম শামছুল হুদা, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির পরিচালক ইমাম জাফর শিকদার আপন শিশু বিকাশ ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা উম্নত ভিজান মাখদুম পন্নী প্রমুখ।
গত জুলাই আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনে বিএনপির ৫০০ নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে উল্লেখ করে সেলিমা রহমান আরো বলেন, আন্দোলনের ফসল কোন একক দলের নয়। আমরা সবাই মিলে আন্দোলন করে ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায় করেছি। এখন আমরা জাতীয় নির্বাচন চাই। নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে না। আর গণতন্ত্র শক্তিশালী হলেই মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারের সমালোচনা করতে হবে। এতে বিরক্ত হওয়ার কিছু নেই। আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আওয়ামী লীগের দোসররা চেষ্টা করছে নানা জায়গায় ঐক্যে ফাটল ধরাতে। সমালোচনার ব্যাপারে আমাদের সবাইকে আরও সহজ ও সহনশীল হওয়া দরকার। সরকার চালাতে হলে অনেক কথা আসবে।
সাবেক এমপি নাজিম উদ্দিন আলম বলেন, ৫৩ বছর পরেও আমাদের দেশে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা হয়নি। এটা খুবই দুঃখজনক। এখন আমাদেরকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য চিৎকার ও লড়াই করতে হচ্ছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ গণতন ত র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
একটি নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থার পথরেখা
আন্দোলনের রাজনীতি থেকে দল গঠন
১৯৯১ সালে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পরে ২০০৯ সাল পর্যন্ত অবাধ, নিরপেক্ষ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগ দুবার এবং বিএনপি দুবার সরকার গঠন করে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ দুই দল তাদের ক্ষমতার মেয়াদে গণতান্ত্রিক চর্চার উন্নয়নে লক্ষণীয়ভাবে কোনো কাজ করেনি;বরং তারা নিজেদের ক্ষমতাকে সংহত করা এবং বিজয়ীর জন্যই সব—এই রাজনৈতিক সংস্কৃতি চিরস্থায়ী করার জন্য ব্যস্ত ছিল।
বিএনপির কর্মীদের অনেকে দখলদারি ও চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়েছেন। যার ফলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে যে পুরোনো অভ্যাসের মৃত্যু সহজে হয় না। এ ধরনের অভিযোগে অনেককে বহিষ্কার করা সত্ত্বেও এর দৌরাত্ম্য কমানো যায়নি।দ্বিদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে জুলাই গণ–অভু৵ত্থানের পরে আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে বিএনপি দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিএনপির সরকার গঠন করার মতো সম্ভাবনাও অনেকে দেখছেন। সাধারণভাবে জনগণের মনোযোগ এদিকে নিবদ্ধ যে তারা উন্নততর গণতন্ত্রের চর্চাকারী হিসেবে ফিরে আসবে কি না। গণ–অভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র, সরকার ও গণতন্ত্রচর্চা নিয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের অনেক বক্তব্য মানুষের মধ্যে সমাদৃত হয়েছিল। মাঠপর্যায়ে আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতির ফলে ক্ষমতার যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, সে জায়গা দখল করেছেন বিএনপির কর্মীরা। এই শূন্যতার সুযোগ নিয়ে বিএনপির কর্মীদের অনেকে দখলদারি ও চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়েছেন। যার ফলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে যে পুরোনো অভ্যাসের মৃত্যু সহজে হয় না। এ ধরনের অভিযোগে অনেককে বহিষ্কার করা সত্ত্বেও এর দৌরাত্ম্য কমানো যায়নি। স্থানীয় পর্যায়ের মানুষদের মধ্যে এ নিয়ে অসন্তোষ আছে। সাধারণ মানুষের এই অসন্তোষ বিএনপিকে আমলে নিতে হবে।
অধ্যাপক ইউনূস যে সংস্কারপ্রক্রিয়া শুরু করেছেন, ছাত্ররা সেটিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে আরও সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়ে এই সংস্কারপ্রক্রিয়াকে তাঁরা এগিয়ে নিতে চান। এ লক্ষ্যে ছাত্রদের একটি অংশ জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেছে। এটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে যেসব শক্তি ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল, তারা একটি নিজস্ব রাজনৈতিক ধারণা সামনে এনেছে। সেখানে তরুণ প্রজন্ম নিজেদের অবস্থান দৃঢ়ভাবে তুলে ধরতে শুরু করেছে। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে নিজেদের অগ্রণী ভূমিকার জন্য ছাত্ররা শ্রদ্ধা ও গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছেন, বিশেষ করে তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে। পুরোনো রাজনৈতিক ব্যবস্থা যাতে স্থায়ীভাবে গেড়ে বসতে না পারে, সে জন্য তাঁরা যৌক্তিকভাবেই সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। একটি নতুন, আরও ন্যায্য ও সমতাভিত্তিক শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলা নিশ্চিত করতে তাঁরা সত্যিকারের সংস্কার বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনে মানুষের আনন্দ–উল্লাস। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বিকেলে সংসদ ভবন এলাকায়