নানা বিতর্ক আর নাটকীয়তার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে পিট হেগসেথের নিয়োগ চূড়ান্ত করেছে মার্কিন সিনেট। শুক্রবার সিনেটে অনুষ্ঠিত ভোটাভুটির মধ্য দিয়ে তার নিয়োগ চূড়ান্ত হয়। খবর বিবিসির।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মনোনীত এই ব্যক্তির নিয়োগ চূড়ান্ত হতে নানা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। সিনেটে ডেমোক্র্যাটরা তার ব্যাপক বিরোধিতা করেছেন। তাদের কাতারে শামিল হয়েছিলেন কয়েকজন রিপাবলিকানও। হেগসেথের পক্ষে ও বিপক্ষে ৫০টি করে ভোট পড়ে। ডেমোক্র্যাট ও স্বতন্ত্রদের পাশাপাশি হেগসেথের নিজ দল রিপাবলিকানের তিন সদস্যও তার বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন।

পক্ষে-বিপক্ষে সমান ভোট পড়ায় ফলাফল ঘোষণায় জটিলতা তৈরি হয়। এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সিনেটে ভোট দিতে আসেন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স। জে ডি ভ্যান্স পক্ষে ভোট দেওয়ায় মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে হেগসেথের নিয়োগ চূড়ান্ত হলো।

হেগসেথের পক্ষে ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স টাই-ব্রেকিং ভোট দেন। এর আগে তিনজন রিপাবলিকান সেনেটর মিচ ম্যাককনেল, হেগসেথের বিপক্ষে ভোট দেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ভাইস প্রেসিডেন্টের টাই-ব্রেক ভোটে মন্ত্রিসভার কোনো সদস্যের নিয়োগ চূড়ান্ত হলো। প্রথম ঘটনাটিও ট্রাম্পের শাসনামলেই ঘটেছিল। ২০১৭ সালে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে তার মনোনীত শিক্ষামন্ত্রী বেটসি ডেভোসের নিয়োগ চূড়ান্ত করতে ভাইস প্রেসিডেন্টের ভোট লেগেছিল।

হেগসেথের নিয়োগ শুনানিতে যৌন হয়রানির অভিযোগসহ অতিরিক্ত মদ্যপান এবং বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। ২০১৭ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার মন্টেরেতে এক নারীর সঙ্গে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তিনি বারবার অস্বীকার করেছেন।

ফক্স নিউজের সাবেক টেলিভিশন উপস্থাপক ও বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেগসেথ এখন প্রায় ৩০ লাখ কর্মচারী এবং ৮৪৯ বিলিয়ন ডলারের বাজেট নিয়ে প্রতিরক্ষা বিভাগ পরিচালনা করবেন।

৪৪ বছর বয়সী হেগসেথ ইরাক ও আফগানিস্তানে যুদ্ধ করেছেন। কিন্তু প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে কাজ করার জন্য যে ধরনের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন, তা তার নেই। সাধারণত এই পদে সিনিয়র বেসামরিক কর্মকর্তা, অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ বা উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়।

এর আগে গত বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পরপরই ট্রাম্প তার প্রশাসনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে পিট হেগসেথকে মনোনীত করেন। তবে তার বিরুদ্ধে কর্মক্ষেত্রে যৌন নিপীড়ন, অতিরিক্ত মদ পানসহ বিভিন্ন অভিযোগ প্রকাশ হতে থাকে। এর ব্যাপক প্রভাবও পড়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্বাচনের সময়।

সিনেটে আলাস্কার রিপাবলিকান সেনেটর লিসা মুরকোভস্কি তার বিরুদ্ধে ভোট দিয়ে বলেন, তার অতীত আচরণ প্রমাণ করে যে তিনি এই দায়িত্বের জন্য উপযুক্ত নন। মেইনের সেনেটর সুসান কলিন্সও তার অভিজ্ঞতার অভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তার বিরুদ্ধে ভোট দেন। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক ষ মন ত র

এছাড়াও পড়ুন:

নবীজির (সা.) আদেশ ও সুপারিশের পার্থক্য

নবীজি (সা.) অনেক সময় সাধারণ অর্থে মতামত দিতেন, আদেশ হিসেবে নয়। বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা হতো নবীজির (সা.)সুপারিশ। নবীজির (সা.)আদেশ ও সুপারিশের মধ্যে পার্থক্য ছিল। আদেশ হলো, যা কার্যকর করা অপরিহার্য এবং ব্যতিক্রম করার উপায় নেই। তবে সুপারিশ হলো, কোনো বিষয়ে নবীজির (সা.)আগ্রহ। সুপারিশকৃত বিষয় পালন না করার স্বাধীনতা ব্যক্তির আছে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সাহাবিগণ নবীজির(সা.) সুপারিশও কবুল করে নিতেন।

উভয় অবস্থার উদাহরণ পেশ করছি:

ইবনে আবু হাদরাদের কাছে কা’ব ইবনে মালিকের কিছু পাওনা ছিল। মসজিদে তাদের দেখা হলে কা’ব তাঁর পাওনা দাবি করলেন। কথাবার্তার একপর্যায়ে উভয়ের স্বর উঁচু হলো। নবীজি (সা.) ঘর থেকে তাদের কথা শুনলেন। তাঁর কক্ষের পর্দা উঠিয়ে ডাক দিলেন, ‘কা’ব।’ কা’ব (রা.) বললেন, ‘জ্বি, আল্লাহর রাসুল।’ নবীজি(সা.) বললেন, ‘তুমি তোমার পাওনা এইটুকু ছেড়ে দাও।’ ইশারা করে দেখালেন, অর্ধেক কমিয়ে দাও। কা’ব বললেন, ‘আমি তা-ই করছি, আল্লাহর রাসুল।’ এরপর নবীজি(সা.) ইবনে আবু হাদরাদকে বললেন, ‘যাও, এবার তার পাওনা আদায় করে দাও।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪৫৭; মুসলিম, হাদিস: ১,৫৫৮)

আরও পড়ুনমহানবী (সা.) এবং এক কুস্তিগিরের গল্প১০ এপ্রিল ২০২৫

কা’ব (রা.)-এর কাছে নবীজি (সা.)তার পাওনা অর্ধেক কমিয়ে দেওয়ার যে অনুরোধ করেছেন, তা মূলত সুপারিশ ছিল; আদেশ নয়। কা’ব যদিও তক্ষুনি তার অনুরোধে সাড়া দিয়েছেন, তবে সাড়া না দেওয়ার অধিকারও তার ছিল। কিন্তু তিনি নবীজির সুপারিশ কবুল করে নিয়েছেন।

দ্বিতীয়ত উদাহরণটি ঠিক এর বিপরীত।

বারিরা (রা.) ছিলেন দাসী। তাকে মুক্ত করে দিলেন তার মালিক। কিন্তু তার স্বামী তখনও দাস। দাসত্ব থেকে মুক্ত হলে স্ত্রীর অধিকার থাকে বিয়ে বহাল রাখা বা না রাখার। বারিরা (রা.) তার বিবাহ ভেঙে দিলেন।

ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘বারিরার স্বামীকে মুগিস নামে ডাকা হতো। সেই দৃশ্য যেন আমি এখনো দেখছি যে, সে বারিরার পেছনে ঘুরছে আর কান্নামাখা অশ্রু তার দাঁড়ি বেয়ে ঝরছে।’ নবীজি (সা.) আব্বাসকে বললেন, ‘আব্বাস, বারিরার প্রতি মুগিসের ভালোবাসা আর মুগিসের প্রতি বারিরার অবজ্ঞা দেখে তোমার অবাক লাগছে না?’ নবীজি(সা.) বারিরাকে বললেন, ‘যদি তুমি তাকে ফিরিয়ে নিতে!’ বারিরা বললেন, ‘আল্লাহর রাসুল, আপনি কি আদেশ করছেন?’ নবীজি(সা.) বলেন, ‘আমি শুধু সুপারিশ করছি।’ বারিরা বলেন, ‘তাকে আমার কোনো দরকার নেই।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫,২৮৩)

বারিরা (রা.) কিন্তু নবীজির(সা.) সুপারিশ কবুল করেননি। কারণ স্বামীর প্রতি তিনি বীতশ্রদ্ধ ছিলেন এবং তার সঙ্গে তিনি জীবন কাটাতে চাইছিলেন না।

এই ঘটনা থেকে বোঝা যায়, সাহাবিদের অন্তরে নবীজির(সা.) আদেশ ও সুপারিশের মধ্যকার ব্যবধান কত স্পষ্ট ছিল। এমনকি দাস-দাসীদের কাছেও তা ছিল পরিষ্কার।

আরও পড়ুনমহানবী (সা.) এবং এক ইহুদি ছেলের গল্প০৫ মার্চ ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ