পাঠ্যবইয়ে জুলাই অভ্যুত্থানের যথাযথ প্রতিফলন না থাকার অভিযোগ
Published: 25th, January 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা শিক্ষা অনুষদের ড. আব্দুল্লাহ ফারক সম্মেলন কক্ষে শুক্রবার ‘২০২৫ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবইয়ে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান পর্যালোচনা’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে শিক্ষা অধিকার সংসদ। সেমিনারে বক্তারা অভিযোগ করেন, ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবইয়ে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান যথাযথভাবে উপস্থাপন করা হয়নি এবং এনসিটিবিতে বই পরিমার্জনের দায়িত্বপ্রাপ্তরা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষা অধিকার সংসদের আহ্বায়ক ও নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির প্রফেসরিয়াল ফেলো অধ্যাপক ড.
বক্তারা পাঠ্যবইয়ের বিভিন্ন অসঙ্গতির বিষয়ে আলোচনা করেন। তারা বলেন, ২০২৫ সালের পাঠ্যবইয়ে জুলাই অভ্যুত্থান নগণ্যভাবে উল্লেখ করা হলেও বিষয়টি সঠিকভাবে উপস্থাপিত হয়নি। বক্তাদের অভিযোগ, পাঠ্যবইয়ে ইতিহাস বিকৃতি, ছবির মানহীনতা, এবং বিষয়বস্তুর অসঙ্গতি লক্ষ্য করা গেছে।
শহীদ শাহরিয়ার খান আনাসের মা সানজিদা খান দিপ্তী বলেন, "চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস যথাযথভাবে উপস্থাপন করা হয়নি। শহীদ আনাসের চিঠি পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত থাকা প্রয়োজন ছিল, কারণ তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য প্রেরণার উৎস ছিলেন।"
শহীদ একরামুল হক সাজিদের বোন ফারজানা হক অভিযোগ করেন, "পাঠ্যবইয়ে চাপের মুখে কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হলেও, সেগুলো এমনভাবে উপস্থাপিত হয়েছে যেন ভবিষ্যতে এই ইতিহাস মুছে ফেলা যায়।"
জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ড. আতিক মুজাহিদ বলেন, "জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু পাঠ্যবইয়ে এর সঠিক প্রতিফলন ঘটেনি। এটা আমাদের জাতীয় ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি।"
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আহসান হাবীব বলেন, "প্রতিবছর নতুন পাঠ্যবই ছাপানোর প্রয়োজন নেই। ভালো মানের কাগজে বই প্রকাশ করলে কয়েক বছর ব্যবহার করা যাবে। পাঠ্যবইয়ে গুণগত মান বাড়াতে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রয়োজন।"
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সৈয়দা সুলতানা রাজিয়া বলেন, "কারিকুলামের সঠিক পরিবর্তন আনতে প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা। জুলাই অভ্যুত্থানকে ইতিহাসে যথাযথভাবে প্রতিফলিত করতে হলে এটিকে কনটেক্সচুয়ালাইজ করা জরুরি।"
শিক্ষা অধিকার সংসদের আহ্বায়ক ড. নিয়াজ আসাদুল্লাহ বলেন, "পাঠ্যবইয়ে থাকা অসঙ্গতি নতুন কিছু নয়। ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে শুরু হওয়া সংকট এখনও কাটেনি। সঠিক নেতৃত্বের অভাবে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন হচ্ছে না।"
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ড. আতিক মুজাহিদ, শিক্ষা অধিকার সংসদের মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর মাহফুজুর রহমান মানকি, এবং ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি।
বক্তারা দাবি করেন, শিক্ষার মান উন্নয়নে পাঠ্যক্রম সংস্কারে উদ্যোগী হতে হবে এবং আগামী প্রজন্মের জন্য জুলাই অভ্যুত্থানের সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণ করতে হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ ল ই গণহত য প ঠ যবই প ঠ যবইয় উপস থ প
এছাড়াও পড়ুন:
ন্যাশনাল এডুকেশন অ্যান্ড ইনোভেশন সংলাপ অনুষ্ঠিত
বাংলাদেশের শিক্ষা ও উদ্ভাবন খাতে পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে ন্যাশনাল এডুকেশন অ্যান্ড ইনোভেশন সংলাপ-২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌজন্যে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজনটির সঞ্চালনায় আরো ছিল সিটি ব্যাংক পিএলসি।
বাংলাদেশের শিক্ষা ও উদ্ভাবনের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা এবং জাতীয় প্রবৃদ্ধির জন্য একটি রূপান্তরমূলক কাঠামো তৈরি করার উদ্দেশ্য নিয়ে এই দিনব্যাপী আয়োজনটি দেশের শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাবিদ, নীতিনির্ধারক, উদ্যোক্তা এবং ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদের একত্রিত করে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান, অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ।
আয়োজনটির উদ্দেশ্য ছিলো শিক্ষা ব্যবস্থার পুনর্গঠনে উদ্ভাবনী দক্ষতার অন্তর্ভুক্তি এবং একটি উদ্ভাবনবান্ধব শিক্ষা নীতি কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় আলোচনার ক্ষেত্র প্রস্তুত করা।
পাঁচটি প্যানেল আলোচনা এবং একটি প্ল্যানেটারি সেশনের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত এই ডায়লগের বিভিন্ন প্যানেলে মূল আলোচ্য বিষয় ছিল শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য একটি কার্যকরি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, দেশের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম, শিক্ষার্থীদের দক্ষতার উন্নয়ন, সামাজিক উদ্ভাবনে গুরুত্বারোপ, এবং উদ্ভাবনীবান্ধব অর্থায়নসহ বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক বিষয়। এই সেশন গুলোয় বিভিন্ন আলোচনা ও প্রস্তাবনার মাধ্যমে বিশেষজ্ঞরা নির্ধারণের চেষ্টা করেছেন কিভাবে দেশের পাবলিক ও প্রাইভেট সেক্টরের সমন্বিত প্রচেষ্টায় একটি উদ্ভাবনীবান্ধব শিক্ষা নীতি প্রণয়ন করা যায়।
প্রধান অতিথি অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, “প্রযুক্তি, বিশেষত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বাংলাদেশের শিক্ষা খাতকে রূপান্তরিত করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের শিক্ষার্থীরা ইতিমধ্যেই রোবটিক্স এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভিত্তিক প্রকল্পে সাফল্য অর্জন করে বিশ্বব্যাপী তাদের দক্ষতা প্রমাণ করেছে। যেসব দেশ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ডেটার যথাযথ ব্যবহার করতে পারবে, তারাই ভবিষ্যতের নেতৃত্বে থাকবে। আসুন, আমরা এই রূপান্তর গ্রহণ করি এবং আমাদের তরুণদেরকে বিশ্ব মঞ্চে প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত করি।”
অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ বলেন, “আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা অত্যন্ত জরুরি। আমাদের শিক্ষা খাতে বাজেট বৃদ্ধি করা, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অতিরিক্ত কর থেকে অব্যাহতি দেওয়া এবং অবকাঠামো ও গবেষণায় বিনিয়োগ করা প্রয়োজন যাতে আমরা আমাদের যুব সমাজের ক্ষমতায়ন করতে পারি। পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অংশীদারিত্ব এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের মতো উদ্যোগগুলো জ্ঞান বিনিময়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি সাহসী সংস্কার ও সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারব যা জাতীয় প্রবৃদ্ধি ও উদ্ভাবনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।”
বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরিফুল ইসলাম এই উদ্যোগের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “বাংলাদেশকে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও উদ্ভাবনী অর্থনীতিতে রূপান্তর করার যেই প্রচেষ্টায় আমরা সবাই কাজ করে যাচ্ছি, ন্যাশনাল এডুকেশন অ্যান্ড ইনোভেশন ডায়লগ-২০২৫, সেই লক্ষ্যে আমাদের এগিয়ে যাওয়ার উদ্যোগকে প্রতিফলিত করে। দেশের শিক্ষা, ব্যবসা, প্রশাসন এবং নীতি-নির্ধারকদের একত্রিত করে, আমরা এমন একটি রোডম্যাপ তৈরি করতে চাই যা তরুণ প্রজন্মের জন্য বিভিন্ন উদ্ভাবনী প্রচেষ্টার বাস্তবায়নের মাধ্যমে নতুন নতুন সুযোগ তৈরি করবে এবং জাতি হিসেবে আমাদের উন্নয়নকে তরান্বিত করবে।”
ঢাকা/হাসান/এসবি