নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কোটাকোল ইউনিয়নের তিন গ্রামে প্রবেশের একমাত্র রাস্তাটি মধুমতি নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। এতে গ্রামে প্রবেশের রাস্তা না থাকায় কমপক্ষে ১০ হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। 

ভাঙন রোধে কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় বর্তমান শীত মওসুমেও মাঝে মাঝে নদী ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী ভাঙন রোধ ও নতুন রাস্তা নির্মাণের দাবি নিয়ে নদীর পাড়ে সমাবেশ ও মানববন্ধনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ দিয়েও কোনো সমাধান পায়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ বছর বর্ষা মৌসুমে মধুমতি নদী ভাঙনে উপজেলার রায়পাশা, করগাতি ও তেলকাড়া গ্রামে প্রবেশের প্রায় ৪ কিলোমিটার রাস্তা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গ্রামে প্রবেশের বিকল্প রাস্তা না থাকায় ওই তিন গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষের চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ওই এলাকার শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিষ্ঠানে পৌঁছাতে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে। সব থেকে বেশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে ওই তিন গ্রামের অসুস্থ রোগীরা। রাস্তা না থাকায় কোনো ভাবেই অ্যাম্বুলেন্স এমনকি ইঞ্জিন চালিত যানবাহনও গ্রামগুলিতে প্রবেশ করতে পারছে না। 

শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) বিকালে সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় তেলকাড়া গ্রামের ভ্যানচালক ফারুক শেখ, রায়পাশা গ্রামের মসজিদের মুয়াজ্জিন মোশাররফ হোসেন ও করগাতি গ্রামের পাচি বেগমের সাথে। তারা জানান, মধুমতি নদী ভাঙনের ফলে আমাদের ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অবৈধ ভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলনের ফলে ভাঙন বেশী হয়েছে। আমাদের যাতায়াতের কোনো রাস্তা নেই। গ্রামের মেঠোপথ দিয়ে পায়ে হেঁটে চলাচল করতে হয়। আমাদের কোনো স্বজন অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার জন্য কোনো রাস্তা নেই। ফলে সেই অসুস্থ ব্যক্তিদেরকে কাঁধে অথবা কোলে করে প্রায় চার কিলোমিটার পথ নিয়ে যেতে হয়।

 

তারা আরো জানান, নদী ভাঙন রোধের জন্য সরকারের নিকট আবেদন করেও কোনো ধরনের ফল হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে শুধু আশ্বাসের বানী শুনে আসছি। নদী ভাঙন রোধে স্থায়ী কোনো সমাধান হয় নাই। সরকারের কাছে আমাদের একটাই দাবি- এবারের বর্ষা মৌসুমের আগে যেন স্থায়ীভাবে নদী ভাঙন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় এবং অতি দ্রুত যেন এই তিন গ্রামে প্রবেশের একমাত্র রাস্তাটি আবারো নির্মাণ করে দেওয়া হয়। 

নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী শফি উল্লাহ বলেন, “নড়াইল সীমানায় মধুমতি নদী ভাঙন কবলিত যে পয়েন্টগুলো রয়েছে, সবগুলো পয়েন্টের ভাঙন রোধে সরকার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন পাঠানো হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন হলে ভাঙন রোধে ওইসব এলাকায় কাজ করা হবে।”

ঢাকা/শরিফুল/ইমন

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বগুড়ায় নারী হাজতখানায় পরিবারের সঙ্গে পুরুষ আসামির সাক্ষাৎ

বগুড়ায় আলোচিত ১৭ মামলার আসামি তুফান সরকারকে আদালতের নারী হাজতখানায় পরিবারের পাঁচ সদস্যের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে আদালত পুলিশের ২ সদস্যকে প্রত্যাহার ও ৫ সাক্ষাত প্রার্থীকে ৫৪ ধারায় চালান দেওয়া হয়েছে।

সোমবার বিকেলে বগুড়ার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যাহার করা পুলিশের ২ সদস্য হলেন- সহকারী টাউন উপ-পরিদর্শক (এটিএসআই) জয়নাল আবেদিন ও নারী কনস্টেবল ইকসানা খাতুন।

জানা যায়, তুফান সরকার বগুড়া শহর যুব শ্রমিকলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। তিনি বগুড়া শহরের চকসুত্রাপুর এলাকার মজিবর সরকারের ছেলে। তিনি হত্যা, মাদক, ধর্ষণ, ছিনতাইসহ ১৭ মামলার আসামি।

জানা যায়, সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের দ্বিতীয় তলায় নারী হাজতখানার দরজা কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। ভেতরে তুফান সরকার, তার স্ত্রী, ছোট বোন, শাশুড়ি, স্ত্রীর বড় বোন এবং একজন আইনজীবীর সহকারী মিলে গল্প করছিলেন। পরে নারী হাজতখানায় পুরুষ আসামি ঢুকার বিষয়টি জানাজানি হলে আদালত চত্বরে হৈ চৈ পড়ে যায়। পরে দ্রুত তুফান সরকারকে প্রিজন ভ্যানে কারাগারে পাঠানো হয়।

এসময় তুফান সরকারের সঙ্গে দেখা করতে আসা নারী হাজত খানা থেকে ওই ৫ জন সরে যান। পরে তাদের আদালত চত্বর থেকে আটক করে ৫৪ ধারায় চালান দেওয়া হয়।

আটক ৫ জন হলেন, তুফানের শাশুড়ি তাসলিমা বেগম, তুফান সরকারের স্ত্রী আশা বেগম, শ্যালিকা ফেরদৌসি বেগম, শ্যালক নয়ন, তুফানের আইনজীবীর সহকারী হারুনুর রশিদ।

বগুড়া আদালত পুলিশের পরিদর্শক মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, সকালে তুফান সরকারকে বিদ্যুৎ সংক্রান্ত একটি মামলায় আদালতে হাজিরার জন্য কারাগার থেকে আনা হয়। কারাগার থেকে আনা অন্য সব হাজতিকে দুপুরের মধ্যেই প্রিজন ভ্যানে পাঠিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু বাদ পড়ে তুফান সরকার। হাজতখানার চাবি এটিএসআই জয়নাল আবেদিনের কাছে থাকে। তুফান সরকারকে কারাগারে না পাঠিয়ে তাকে নারী হাজতখানায় পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাত করার সুযোগ করে দেয় জয়নাল আবেদিন। আদালতের সবার অগোচরে ঘটনাটি ঘটে।

বগুড়ার পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা বলেন, পুরুষ আসামিকে নারী হাজত খানায় পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগে এটিএসআই জয়নাল আবেদিন ও এক নারী কনস্টেবলকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।  পুলিশের আরও যাদের গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে এক কলেজ ছাত্রীকে আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগ উঠে তুফান সরকারের বিরুদ্ধে। পরে শালিস ডেকে ভুক্তভোগী নারী ও তার মা'কে দোষী উল্লেখ করে মারধর করে এবং মা-মেয়ের মাথা ন্যাড়া করে দেয় তুফান সরকার। সেই ঘটনায় দেশ জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হলে তুফান সরকার গ্রেপ্তার হয়। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ