এলএনজি ক্রয়: ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে প্রথম পার্টনার চুক্তি বাংলাদেশের
Published: 25th, January 2025 GMT
তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কেনার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যভিত্তিক আর্জেন্ট এলএনজির সঙ্গে চুক্তি করেছে বাংলাদেশ সরকার। আর্জেন্ট এলএনজি বর্তমানে লুইজিয়ানায় বার্ষিক ২৫ মিলিয়ন টন (এমটিপিএ) এলএনজি উৎপাদন সক্ষমতার অবকাঠামো উন্নয়ন করছে। তারা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে একটি বাধ্যবাধকতাহীন (নন–বাইন্ডিং) চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। তাদের কাছ থেকে বছরে ৫ মিলিয়ন (৫০ লাখ) টন এলএনজি কিনবে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেছেন, “বাংলাদেশ সরকার আজ ট্রাম্পের নতুন এনার্জি এক্সপোর্ট ম্যান্ডেটের ওপর ভিত্তি করে একটা ল্যান্ডমার্ক এগ্রিমেন্ট সাইন করেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হবার পর আমরাই প্রথম দেশ হিসেবে কোনো ডিল সাইন করলাম। ট্রাম্পের ইলেকশন প্রমিজের মধ্যে ‘ড্রিল, বেবি ড্রিল’ এ স্লোগানটা বেশ পপুলার ছিল। সেটা এই এনার্জি এক্সপোর্টকে ঘিরেই।”
তিনি বলেন, “আমাদের দেশে গ্যাসের বিশাল সংকট। ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ, কর্মসংস্থান ইত্যাদির জন্য আমাদের লং টার্ম গ্যাস সাপ্লাই সলিউশন বের করতেই হবে। মিডল ইস্টের বাইরে আমেরিকা একটা ইন্টারেস্টিং অলটারনেটিভ।”
চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন আরো বলেন, “এই চুক্তি শুধু বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান শিল্পভিত্তির জন্য নির্ভরযোগ্য জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিতই করবে না, বরং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের কৌশলগত অংশীদারত্বকে আরো শক্তিশালী করবে। আগামী বছরগুলোতে আমরা যখনই বিভিন্ন ইস্যুতে ট্রাম্প অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের কাছে যাব, আমরা বলতে পারব যে, বাংলাদেশ কিন্তু তার প্রথম পার্টনার ছিল। তার আমেরিকা ফার্স্ট নীতির সাথে আমাদের বাংলাদেশ ফার্স্ট; আর আমাদের জন্য বাংলাদেশের ইন্টারেস্ট ফার্স্ট।”
এদিকে, শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) আর্জেন্ট এলএনজিও এক বিবৃতিতে বিষয়টি জানিয়েছে।
গত সোমবার (২০ জানুয়ারি) ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর এটিই যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম বড় কোনো এলএনজি সরবরাহ চুক্তি। চুক্তির পক্ষগুলোর মতে, এটি নতুন প্রশাসনের জ্বালানিবান্ধব নীতির প্রতি শিল্পের আস্থার প্রতিফলন।
ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প বেশ কয়েকটি নির্বাহী আদেশ দিয়েছেন। এসব পদক্ষেপের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি বিভাগের এমন লাইসেন্স স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করাও অন্তর্ভুক্ত, যা সেই দেশগুলোতে সুপার–কোল্ড গ্যাস রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্রকে অনুমতি দেয়, যেসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নেই।
মূলত, যুক্তরাষ্ট্রের এলএনজি রপ্তানি বাড়ানোর লক্ষ্যে ট্রাম্প এ পদক্ষেপগুলো নিচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের এনার্জি ইনফরমেশন এজেন্সির তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে বিশ্বের বৃহত্তম এলএনজি রপ্তানিকারক দেশ এবং ২০২৮ সালের মধ্যে এর সক্ষমতা দ্বিগুণ হওয়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
যদি লুইজিয়ানায় পোর্ট ফোরশনে আর্জেন্ট এলএনজির প্রকল্পটি সম্পন্ন হয়, তবে এর কার্গোগুলো বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি সংস্থা পেট্রোবাংলার কাছে বিক্রি হতে পারে বলে চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ জ্বালানি চাহিদার জন্য দীর্ঘমেয়াদি সমাধান খুঁজছে এবং এলএনজির ব্যবহার বাড়ানোর দিকে জোর দেওয়ার চেষ্টা করছে। তবে, দেশটি মূল্য সংবেদনশীল এবং ২০২২ সালে যখন রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এলএনজির দামের ঊর্ধ্বগতি ঘটে, তখন সস্তা কয়লা ব্যবহারের দিকে ঝুঁকতে বাধ্য হয়।
এর আগে গত বছরের জানুয়ারিতে এলএনজি সরবরাহে ১৫ বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয় কাতার এনার্জি ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এক্সিলারেট এনার্জি। চুক্তির আওতায় তারা বাংলাদেশে বছরে ১ মিলিয়ন বা ১০ লাখ টন এলএনজি সরবরাহ করবে। ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে এই এলএনজি সরবরাহ শুরু করা হবে।
প্রসঙ্গত, কাতার এনার্জি সম্প্রতি ইউরোপীয় ও এশীয় দেশগুলোর কাছে এলএনজি সরবরাহে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। দেশটি সম্প্রতি নর্থ ফিল্ড এক্সপ্যানশন বা সম্প্রসারণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এর মধ্য দিয়ে ২০২৭ সালের মধ্যে কাতারের এলএনজি উৎপাদন ১২৬ মিলিয়ন টনে উন্নীত হবে, বর্তমানে যা ৭৭ মিলিয়ন টন।
ঢাকা/হাসান/রফিক
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এলএনজ র সরবর হ র জন য প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশ বন্ধ করল ইসরায়েল
গাজায় সব মানবিক সহায়তা প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল। রোববার দেশটি হুঁশিয়ার দিয়ে বলেছে, হামাস যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বৃদ্ধির নতুন প্রস্তাব মেনে না নিলে ‘আরও পরিণতি’ ভোগ করতে হবে। তাদের অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি সম্প্রসারণ পরিকল্পনায় রাজি হতে হবে।
বিবিসি জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় দেশটির বিরুদ্ধে ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টার অভিযোগ তুলেছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস। তারা বলেছে, গাজায় ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া নির্যাতনের এক সহজ উপায়, যুদ্ধাপরাধ ও চুক্তির (যুদ্ধবিরতি) ঘোরতর লঙ্ঘন। এই ঘটনায় মধ্যস্থতাকারীদের সহায়তাও চেয়েছে হামাস।
নেতানিয়াহুর দপ্তর এক বিবৃতিতে বলেছে, প্রথম ধাপের বন্দিবিনিময় চুক্তি শেষ হয়েছে এবং হামাস উইটকফের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আজ (রোববার) সকাল থেকে গাজায় সব ধরনের পণ্য ও সরবরাহ প্রবেশ বন্ধ থাকবে।
ইসরায়েলের সঙ্গে হামাসের সম্পাদিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় এক মাসের কিছু বেশি সময় ধরে গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছিল। কিন্তু রোববার সকাল থেকে গাজায় আর কোনো পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশ করেনি। এতে গাজায় হঠাৎ করে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা। সেখানকার মানুষ ময়দা, রুটি যা পারছে তাই খুঁজছেন। যেন সারাদিন রোজা রাখার পর অন্তত ইফতার করা যায়। পণ্য সরবরাহ বন্ধ করায় আবারও না খেয়ে থাকায় শঙ্কায় পড়েছেন গাজাবাসী।
এদিকে আনুষ্ঠানিকভাবে গাজার যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের ৪২ দিনের মেয়াদ শেষ হয়েছে। ইসরায়েল জানিয়েছে, দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে কোনো ঐকমত্য না হলেও, এখনই হামলায় যাচ্ছে না তারা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব মেনে রমজান মাসে যুদ্ধ বন্ধ রাখার বিষয়ে প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছেন নেতানিয়াহু। তবে হামাস গাজার যুদ্ধবিরতির চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে আরও ২৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর ফলে অবরুদ্ধ এই উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা প্রায় ৪৮ হাজার ৪০০ জনে পৌঁছেছে।