আন্তর্জাতিক উৎসবে যাচ্ছে নুহাশ হুমায়ূনের ‘২ষ’
Published: 25th, January 2025 GMT
আন্তর্জাতিক উৎসবে যাচ্ছে তরুণ পরিচালক নুহাশ হুমায়ূনের ওটিটি সিরিজ ‘পেট কাটা ষ’র দ্বিতীয় মৌসুম ‘২ষ’। চার পর্বের এই সিরিজটি সাউথ বাই সাউথ ওয়েস্ট (এসএক্সএসডব্লিউ) চলচ্চিত্র উৎসবে জায়গা করে নিয়েছে।
প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান চরকি একটি বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, মার্চের ৭ তারিখ থেকে শুরু হয়ে এই উৎসব চলবে ওই মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত। উৎসবের এপিসোডিক ক্যাটাগরিতে ‘২ষ’ সিরিজের প্রিমিয়ার হবে।
পরিচালক নুহাশ জানিয়েছেন, ‘২ষ’ সিরিজের এই প্রাপ্তিতে তিনি খুবই আনন্দিত। এজন্য সিরিজের কলাকুশলী, অভিনয়শিল্পীসহ পুরো ইউনিটের সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। সবার সহযোগিতা না পেলে সম্পূর্ণ স্থানীয় গল্প ও ঢংয়ে এমন আন্তর্জাতিক মানের কাজ করা সম্ভব ছিল না।
আরো পড়ুন:
ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত সাইফ আলী খান, নিরাপদে আছেন কারিনা
পর্দা উঠছে ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের
জানা গেছে, ‘২ষ’ র গল্পগুলো ফ্যান্টাসি, হরর ও মিস্ট্রি ঘরানার। যেখানে প্রচলিত ভৌতিক ধারণার বাইরে গিয়ে নুহাশ গল্পে দেখিয়েছেন মানুষের অন্তর্গত লালসা ও ক্রোধকে।সিরিজের গল্পগুলো লিখেছেন নুহাশ ও তার মা গুলতেকিন খান। সিরিজের গল্পগুলো হলো ‘ওয়াক্ত’, ‘ভাগ্য ভালো’, ‘অন্তরা’ ও ‘বেসুরা’। এই সিরিজের প্রতিটি গল্পের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা। প্রথম পর্ব ‘ওয়াক্ত’ তে দেখা গেছে পাঁচ জন বন্ধুর পাঁচটি ভিন্ন সময়ে পাঁচ ধরনের পরিণতির গল্প । এরপর ‘ভাগ্য ভালো’ এই পর্বে দেখানো হয়েছে ভাইরাল হওয়া এক জ্যোতিষীর নানা ঘটনা। যেখানে জ্যোতিষীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন মোশাররফ করিম। অতিপ্রাকৃতিক বিবাহিত জীবনের গল্প নিয়ে তৈরি হয়েছে ‘অন্তরা’র গল্প। এই পর্বে অভিনয় করেছেন আফজাল হোসেন ও কাজী নওশাবা আহমেদ। সুর–ছন্দ ছাড়া জন্মানো এক শিল্পীর গল্প উঠে এসেছে ‘বেসুরা’ পর্বে। এতে অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী জয়া আহসান, সুমাইয়া শিমু।
ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকিতে ২০২৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর থেকে প্রচার শুরু হয় সিরিজটি শেষ হয় গত ৯ জানুয়ারি। ‘২ষ’ সিরিজের বিভিন্ন পর্বে অভিনয় করেছেন অ্যালেন শুভ্র, রিজভী রিজু, রেফাত হাসান সৈকত, আবদুল্লাহ আল সেন্টু, রাফায়াতুল্লাহ সোহান, টুনটুনি হামিদ, আদনান আদীব খান, সামিয়া অথৈ, অনিমেষ দাস, স্নিগ্ধা দেবী, আর্নিকা দেবী অর্থি, এরফান মৃধা শিবলুসহ অনেকে।
সিরিজটির প্রযোজক ও চরকির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেদওয়ান রনি জানিয়েছেন, "দুটি সিজনে 'ষ' ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। দেশের কনটেন্ট কীভাবে আন্তর্জাতিক হয়ে ওঠে, তার বড় উদাহরণ নুহাশের এই সিরিজ।" ২০২২ সালে তৈরি হয় চরকি অরিজিনাল সিরিজ ‘পেট কাটা ষ’। ‘এ বিল্ডিংয়ে মেয়ে নিষেধ’, ‘মিষ্টি কিছু’, ‘লোকে বলে’ ও ‘নিশির ডাক’ পর্বগুলোয় সেই ভৌতিক গল্পগুলো দর্শকের কাছে প্রশংসিত হয়।
এর আগে ‘মশারি’, ‘অস্থির সময় স্বস্তির’ নামের সিরিজ নিয়ে ওটিটিতে কাজ করেছেন নুহাশ। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হুলুতে মুক্তি পেয়েছে তার ‘ফরেনারস অনলি’ সিরিজ।
এছাড়াও ‘ইতি তোমারই ঢাকা’, ‘মুভিং বাংলাদেশ’ সিনেমা নির্মাণ করে খ্যাতি অর্জন করেছেন এই তরুণ পরিচালক।
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ঈদের দিনটা কেটে যায় কাজে, নিজের জন্য আর কিছুই থাকে না
জীবনের পড়ন্তবেলায় এসে ঈদের উৎসবকে যখন রোমন্থন করি, তখন স্মৃতির গভীরে হারিয়ে যাই। ছোটবেলায় ঈদ ছিল এক অন্য রকম আনন্দের উৎসব। নতুন জামা বানাতে দরজির দোকানে মাপ দিতে যাওয়া, তারপর নতুন জামা হাতে পাওয়ার পর সেটি লুকিয়ে রাখা, যেন কেউ আগে দেখে না ফেলে! ঈদের দিন সইদের সঙ্গে গ্রামে ঘুরে বেড়ানো, ভাই–বোনদের সঙ্গে স্টুডিওতে ছবি তুলতে যাওয়া—এসব আনন্দের মুহূর্ত আজও হৃদয়ে জাগরূক। মনে হয়, সময় যেন আটকে গেছে, আমি এখনো সেই শৈশব–কৈশোরের রঙিন দিনগুলোর মধ্যেই আছি। কিন্তু যখন বাস্তবতায় ফিরি, তখন সবকিছু বিমূর্ত হয়ে যায়, ধূসর ও বিবর্ণ মনে হয়। মনের অজান্তেই চোখের কোণে জল এসে জমে।
আমাদের ছোটবেলার ঈদ আজকের মতো জৌলুশময় ছিল না। মধ্যবিত্ত যৌথ পরিবারে ছিল আর্থিক টানাপোড়েন, ছিল পরিমিত জীবনের শিক্ষা। দাদা–দাদার ভাইদের বিশাল পরিবারের সদস্যদের জন্য রান্না হতো বড় বড় পাতিলে। ঈদের এক সপ্তাহ আগেই শুরু হতো প্রস্তুতি। পুরোনো শাড়ির পাড় জোড়া লাগিয়ে দরজা–জানালার পর্দা বানানো হতো, সোডা দিয়ে কাপড় ধোয়ার আয়োজন চলত। মুড়ি, চিড়া ও খই সংগ্রহ করে রাখা হতো ঈদের সকালে মলিদা তৈরির জন্য। ময়দার সঙ্গে রং মিশিয়ে কাঁঠালপাতায় গোলা লেপে শুকিয়ে বানানো হতো পিঠা। এত কাজ, এত পরিশ্রমের মধ্যেও ক্লান্তি ছিল না; বরং ঈদের প্রস্তুতিই ছিল এক অন্য রকম আনন্দ।
ঈদের দিন ভোরে সাবান দিয়ে গোসল করে নতুন ছাপা থান কাপড়ের ফ্রক পরার আনন্দ আজও মনে পড়ে। তারপর পরিবারের মুরব্বিদের সালাম করে বয়সভেদে চার আনা থেকে এক টাকা পর্যন্ত ঈদের সালামি পাওয়া ছিল আমাদের কাছে বিরাট প্রাপ্তি! ঈদের সকালের শুরু হতো মলিদা দিয়ে, এরপর গুড়ের পায়েস কিংবা গুড়ের সেমাই। দুপুরের খাবারে থাকত মুরগির মাংস আর আলুর ঝোল, যার স্বাদ আজও স্মৃতির পাতায় অমলিন।
তারুণ্যে পা রাখার পর ঈদের উৎসব বদলে গেল। বরিশালে পড়াশোনার সময় ঈদ পায় নতুন রূপ—সেমাই, ফিরনি, জর্দা, পোলাও–কোরমার ভিড়ে ঈদ যেন ভোজন উৎসবে পরিণত হলো। এরপর কর্মজীবন, বিয়ে ও সংসারের দায়িত্ব এসে ঈদের রং পাল্টে দিল। নারীদের জন্য ঈদ মানে তখন শুধুই স্বামী–সন্তান ও সংসারের তাগিদ।
আজকের ঈদ আর আমাদের শৈশবের ঈদের মধ্যে বিস্তর ব্যবধান। একসময় ঈদ মানে ছিল সীমিত সম্পদের মধ্যেও অপরিসীম আনন্দ। এখন ঈদের বাহারি আয়োজন, নতুন কাপড়–গয়না, খাবারের জৌলুশ বেড়েছে; কিন্তু সেই আনন্দ কোথায় যেন হারিয়ে গেছে! আগে একটা সাধারণ ফ্রকেই যে আনন্দ লুকিয়ে ছিল, এখন অসংখ্য পোশাকের মধ্যেও তা খুঁজে পাওয়া যায় না। কারণ, নারীদের ঈদ শুরু হয় গভীর রাতে—ফিরনি, সেমাই, হালিম, জর্দা, চটপটিসহ বাহারি রান্নার আয়োজন করে। সকালে রান্নার কাজ শেষ হতেই দুপুরের ও রাতের খাবারের প্রস্তুতি নিতে হয়। ফলে ঈদের দিনটাই কেটে যায় কাজে, নিজের জন্য কিছুই আর থাকে না।
অধ্যাপক শাহ্ সাজেদা