বিসিবি পরিচালনা পর্ষদের সভা আজ। এই সভায় গঠনতন্ত্র সংশোধন ও ক্লাবগুলোর দাবির বিষয়ে আলোচনা করে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে চায় বোর্ড। গঠনতন্ত্র সংশোধন কমিটির আহ্বায়ক নাজমুল আবেদীন ফাহিমও আশা করছেন, আলোচনার ভিত্তিতে ইতিবাচক সমাধান হোক। বিপিএলের পেমেন্ট বিতর্ক, খেলার মানসহ নানা ইস্যুতে নাজমুল আবেদীনের খোলামেলা আলোচনা শুনেছেন সেকান্দার আলী।

সমকাল : পাঁচ মাসে আপনারা কতটা এগোতে পারলেন? ফাহিম: অনেক কিছু আছে, যেগুলো দেখা যায় না। আমাদের মাঠের স্বল্পতা, ক্রিকেটের সুযোগ-সুবিধা অনেক কম। সেটা মাথায় রেখে আমরা পূর্বাচলে কিছু কাজ করার উদ্যোগ নিয়েছি। ফতুল্লা স্টেডিয়ামে কাজ শুরু হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেটের কথা বললে এনসিএল টি২০ খুব ভালো লেগেছে। মেয়েদের ক্রিকেটে তিন দিনের ক্রিকেট চালু হলো এ বছরই। ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হচ্ছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন শুরু করার চেষ্টা চলছে।

সমকাল: দেশের গুরুত্বপূর্ণ চারটি ভেন্যুতে একাডেমি ভবন নির্মাণ করার কথা ছিল। সেগুলো কি হচ্ছে?
ফাহিম: এটা নিয়ে আলোচনা চলছে। কক্সবাজারে দুটি স্টেডিয়াম আছে, ওখানে ক্যাম্প করার জন্য দুটি ভবন করতে পারলে খুব সহজে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ও খেলা চালানো যাবে। অনেক সময় খরচের কারণে দীর্ঘ মেয়াদে ক্যাম্প করা সম্ভব হয় না। আবাসন সুবিধা থাকলে খরচ অনেক কমে যাবে। সে ক্ষেত্রে ক্যাম্পের পরিধি বাড়ানো সম্ভব হবে। এখন যেমন সব খেলোয়াড় ঢাকায় আসে অনুশীলন করতে, জেলা বা বিভাগে সে সুযোগ থাকলে, তারা ওখানে থাকবে।

সমকাল : স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে আন্তর্জাতিক মানের হোষ্টেল আছে ভারতে। একই মডেল বাংলাদেশে অনুসরণ করা যায় কি?
ফাহিম: অবশ্যই সম্ভব। আমরা একটু মনোযোগী হলে সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারব। একটা অবকাঠামো আছে, সেগুলোকে একটু মডিফাই করা গেলেই হবে। সেটা করা গেলে খুব সহজে ৫০ থেকে ৬০ জন খেলোয়াড়, ১০ থেকে ১২ জন ম্যানেজমেন্টের লোক থাকার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। আমরা অনেক কম খরচে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালাতে পারব। বিভিন্ন সময়ে আমরা দেখেছি, হোটেলের ভাড়ার কারণে ক্যাম্পগুলো ব্যয়বহুল হওয়াতে ছেলেমেয়েদের বেশি সময় প্রশিক্ষণ দিতে পারি না।

সমকাল : বিপিএলে এবার রান হলেও মানসম্পন্ন বিদেশি নেই। এবার বিতর্কও অনেক। এ নিয়ে কী বলবেন?
ফাহিম: বিপিএলের কয়েকটি ব্যাপার নিয়ে আমাদের শঙ্কা ছিল। যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, সেগুলো নিয়ে এতটা শঙ্কা ছিল না। শঙ্কা ছিল যে উইকেট কেমন হয়। ধন্যবাদ, উইকেট খুব ভালো হয়েছে। খেলোয়াড়দের পেমেন্ট
অনেক ফ্র্যাঞ্চাইজি হয়তো ঠিকঠাক দিচ্ছে না। আমরা দেখেছি, পেমেন্ট নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। মাঠে খেলার স্প্রিট নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এগুলো না হলে আরও ভালো হতে পারত।

সমকাল : এই সমস্যা কি দু-তিনটি দুর্বল ফ্র্যাঞ্চাইজির কারণে?
ফাহিম : যেদিকে ইঙ্গিত করা হচ্ছে, সেটা খুব স্পর্শকাতর একটা ব্যাপার। আমি আমার জায়গা থেকে এই বিষয়ে সরাসরি মন্তব্য করতে পারি না। তবে বিষয়গুলোতে আমাদের চোখ আছে। আমাদের দুর্নীতি দমন বিভাগ সব কিছু খেয়াল করছে। এটা সব দেশেই খেয়াল করে। আমরা কোনো প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেব। তবে কোনো কিছু প্রমাণ করা ছাড়া কারও দিকে আঙুল তোলা ঠিক হবে না। আমরা মিডিয়াতে অনেক কিছু দেখেছি, সেগুলোর মতো মন্তব্য করতে চাই না। প্রমাণ ছাড়া কোনো মন্তব্য করলে ভুল হবে।

সমকাল : ক্লাবগুলোর মধ্যে একাত্মতা তৈরি হয়েছে পরিচালক ও কাউন্সিলরশিপ নিয়ে। গঠনতন্ত্র সংস্কার প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করেছে তারা। এ ব্যাপারে আপনারা একমত হতে পারবেন?
ফাহিম: ক্লাবের যারা প্রতিনিধি ছিলেন, তারা তাদের কথা সভাপতিকে বলেছেন। সে পরিপ্রেক্ষিতে সভাপতি হয়তো একটা সিদ্ধান্ত নেবেন। আমাদের যেটা বলা হয়েছিল, আমরা একটা খসড়া প্রস্তাব পেশ করলে, সে পরিপ্রেক্ষিতে আলোচনা হবে। একটা জায়গায় পৌঁছে স্ট্রেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত রিপোর্ট করা হবে। পরবর্তী সময়ে জরুরি কাউন্সিলে আলোচনা হতে পারত। অনেক সুযোগ ছিল আলাপ-আলোচনা করার ও প্রত্যেকের মতামত দেওয়ার। সেটা হলে খুব ভালো হতো। যে কারণেই হোক, সেটা হয়নি। আশা করব, আমরা একটা জায়গায় আসতে পারব কালকের (আজ) সভার মধ্য দিয়ে। গঠনতন্ত্র নিয়ে আমরা একটা সমাধান দিতে পারব।

সমকাল : সবাই ধাপে ধাপে ভারসাম্য আনার পক্ষে। আপনি কী মনে করেন?
ফাহিম : এই কথাতে যুক্তি নেই, তা কিন্তু নয়। আমাদের কথাও তাই। তারা পরিচালকের যে সংখ্যার কথা বলছেন, সেটা যে ঠিক না, আমি তা অনেকবার বলেছি। আলোচনা করলে আমরা হয়তো একটা ভালো জায়গায় আসতে পারি। একটা ভারসাম্য আনতে পারি। আলোচনা করলেই কিন্তু ইতিবাচক সমাধান আসবে। এটা আমাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার না। প্রস্তাবনা কমিটিতে যারা আছেন, সেখানে আমিই একমাত্র ডিকেট- সংশ্লিষ্ট। আমার ক্লাব, জেলা বা বিভাগের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। এদিক থেকে আমাদের পক্ষপাতিত্ব করার অবকাশ নেই। আমরা আলোচনায় বসতে পারলে তারাও মতামত দিতে পারতেন। আমরা তখন যুক্তিসংগত যে কোনো প্রস্তাব গ্রহণ করতাম। আমি আবারও বলছি, যে সংখ্যার কথা তারা বলেছেন, সে সংখ্যা ঠিক নয়।

সমকাল : আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থাগুলো নিয়ে কী ভাবছেন? ফাহিম: পুরো দেশকে সম্পৃক্ত করা ছাড়া ক্রিকেটের উন্নতি সম্ভব হবে না। এখানেই পড়ে থাকতে হবে। ঢাকায় যে ক্রিকেট, তা দেশের বড় ক্রিকেট মঞ্চ হিসেবেই থাকবে। পাশাপাশি আমরা চিটাগং, খুলনা, সিলেট, বিশালেও তো এভাবে লিগ করতে পারি। তাতে যেটা হবে, খেলোয়াড়রা বেশি খেলার সুযোগ পাবে, আর্থিকভাবে লাভবান হবে এবং আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হবে। এটা ঠিকঠাক করা গেলে সারাদেশে একই মানের ক্রিকেট চর্চা হবে। সেটা যখন হবে, তখন ক্রিকেটের মান খুবই ওপরে চলে যাবে। শক্তিশালী ক্রিকেট জাতিতে পরিণত হতে পারব।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব প এল গঠনতন ত র সমক ল

এছাড়াও পড়ুন:

নেতারা দেশে গণতন্ত্র চান, দলে চান না

অনেক বছর পর মুক্ত পরিবেশে বিএনপি একটি বর্ধিত সভা করতে পারায় নিশ্চয়ই দলের নেতা–কর্মীরা আনন্দিত। এই বর্ধিত সভাটি এমন এক সময়ে হলো, যখন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য লন্ডনে আছেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সেনাসমর্থিত সরকারের আমল থেকে সেখানে অবস্থান করছেন। তাঁরা দুজনই ভার্চ্যুয়ালি যোগ দিয়েছেন এবং দলীয় নেতা–কর্মীদের প্রতি দিকনির্দেশনামূলক বক্তৃতা দিয়েছেন। 

বর্ধিত সভায় বিভিন্ন স্তরের শ খানেক নেতা বক্তৃতা দিয়েছেন। তাঁদের বক্তৃতায় সরকারের সংস্কার ও দলের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের বিষয় উঠে এসেছে। বিতাড়িত আওয়ামী লীগ ও একদা জোটসঙ্গী জামায়াতের কর্মকাণ্ড সম্পর্কেও সতর্ক করে দিয়েছেন নেতারা। আন্দোলনের সময়ে যেসব নেতা নিষ্ক্রিয় ছিলেন, তাঁরা যাতে নতুন করে নেতৃত্বে না আসতে পারেন, মনোনয়নের ক্ষেত্রে যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, সে বিষয়েও আকুতি প্রকাশ পেয়েছে তৃণমূলের প্রতিনিধিদের কথায়। 

তবে বিএনপির নেতারা রাষ্ট্র সংস্কার, নির্বাচন ও রাজনীতির গতিবিধি নিয়ে কথা বললেও দলের সংস্কার নিয়ে কিছু বলেননি। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের সংকটের মূলে দলীয় একনায়কত্ব। অন্তর্বর্তী সরকার অনেক বিষয়েও সংস্কার কমিশন গঠন করেছে; কিন্তু দলে গণতন্ত্র ফেরাতে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। যদিও রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, দলে গণতন্ত্র না এলে দেশেও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। 

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে বিএনপির নেতা–কর্মীরা দৌড়ের ওপর ছিলেন। তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের নামে হাজার হাজার মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। মামলার কারণে অনেক নেতাকে দিনের পর দিন আদালতের বারান্দায় ঘুরতে হতো । 

এখন সেই পরিস্থিতি নেই। কিন্তু মুক্ত পরিবেশে বিএনপিকে নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। একশ্রেণির নেতা–কর্মী চাঁদাবাজি, দখলবাজিতে যুক্ত হয়ে পড়েছেন। কোথাও কোথাও দলের নেতা–কর্মীরা অভ্যন্তরীণ সংঘাতেও লিপ্ত। এটা ভালো লক্ষণ নয়। 

বিএনপি রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্দেশ্যে অনেক আগেই ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচি দিয়েছে। দলের মিত্ররাও এর প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। বিএনপির ৩১ দফায় বেশ কিছু ভালো প্রস্তাব আছে। যেমন তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, এক ব্যক্তির দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হওয়া। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ প্রতিষ্ঠা, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা। এ ছাড়া নির্বাহী বিভাগের ওপর আইনসভার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে আলাদা করা ও নির্বাচন কমিশনসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বায়ত্তশাসনের কথাও আছে তাদের প্রস্তাবে।   

কিন্তু ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবে রাজনৈতিক দল সংস্কারের কোনো কথা নেই। তারা দেশে সংসদীয় শাসনপদ্ধতি চালু করেছে। কিন্তু দলীয় কাঠামোটি পুরোপুরি একনায়কতান্ত্রিক। এটা কেবল বিএনপিতে নয়। ছোট–বড় প্রায় সব দলেই। দলের প্রধানই সব। তিনি যা বলবেন, সেটাই আইন। 

এখানে তিনটি দল—বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্র বিচার করলে আমরা দেখতে পাব, দলের চেয়ে ব্যক্তি বড়। 

বিএনপির গঠনতন্ত্রের ৭ ধারার খ উপধারায় চেয়ারম্যানের কর্তব্য, ক্ষমতা ও দায়িত্বের কথা বলা আছে যথাক্রমে:

১. দলের প্রধান কর্মকর্তা হিসেবে চেয়ারম্যান দলের সর্বময় কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ, তদারক ও সমন্বয় সাধন করবেন এবং তদুদ্দেশ্যে জাতীয় কাউন্সিল, জাতীয় স্থায়ী কমিটি, জাতীয় নির্বাহী কমিটি, বিষয় কমিটিসমূহ এবং চেয়ারম্যান কর্তৃক মনোনীত অন্যান্য কমিটিসমূহের ওপর কর্তৃত্ব করবেন এবং তাদের কার্যাবলির নিয়ন্ত্রণ, তদারক ও সমন্বয় সাধন করবেন। ২. উপরোক্ত কমিটিসমূহের সদস্যদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও চেয়ারম্যান প্রয়োজন বোধে নিতে পারবেন। ৩. জাতীয় নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে উক্ত কমিটির কর্মকর্তাদের দায়দায়িত্ব, ক্ষমতা ও কর্তব্য নিরূপণ করবেন। ৪. চেয়ারম্যান প্রয়োজন মনে করলে জাতীয় নির্বাহী কমিটি, জাতীয় স্থায়ী কমিটি, বিষয়ভিত্তিক উপকমিটিসমূহ এবং চেয়ারম্যান কর্তৃক মনোনীত অন্যান্য কমিটিসমূহ বাতিল করে দিতে এবং পরবর্তী কাউন্সিলের অনুমোদন সাপেক্ষে পুনর্গঠন করতে পারবেন। 

দলের চেয়ারম্যানই যদি সর্বময় কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ, তদারক ও সমন্বয় করেন এবং জাতীয় কাউন্সিল, জাতীয় স্থায়ী কমিটি, জাতীয় নির্বাহী কমিটি, বিষয় কমিটিসমূহের ওপর কর্তৃত্ব করেন, তাহলে অন্য কোনো পদ থাকা না থাকার মধ্যে খুব ফারাক থাকে না।   

জাতীয় পার্টির (এরশাদ) গঠনতন্ত্রে আরও এক ধাপ এগিয়ে বলা হয়েছে ‘জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান পার্টির সর্বপ্রধান কর্মকর্তা হইবেন। তিনি পার্টির ঐক্য, সংহতি ও মর্যাদার প্রতীক। গঠনতন্ত্রের অন্য ধারায় যাহাই উল্লেখ থাকুক না কেন—জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বিশেষ ক্ষমতাপ্রাপ্ত থাকিবেন। এই ক্ষমতাবলে তিনি প্রয়োজনবোধে প্রতিটি স্তরের কমিটি গঠন, পুনর্গঠন, বাতিল, বিলোপ করিতে পারিবেন। তিনি যেকোনো পদ সৃষ্টি ও বিলোপ করিতে পারিবেন। চেয়ারম্যান জাতীয় পার্টির যেকোনো পদে যেকোনো ব্যক্তিকে নিয়োগ, যেকোনো পদ হইতে যেকোনো ব্যক্তিকে অপসারণ ও যেকোনো ব্যক্তিকে তাহার স্থলাভিষিক্ত করিতে পারিবেন।’ 

চেয়ারম্যানের এই ক্ষমতা বহুবার ব্যবহার করা হয়েছে। এ নিয়ে দল ভেঙেছে। অনেক নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু এরশাদ সাহেব যেই গঠনতন্ত্র রেখে গেছেন, সেটা এখনো বহাল আছে। 

আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে সভাপতির দায়িত্ব ও ক্ষমতা প্রসঙ্গে বলা আছে, ‘সভাপতি প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে গণ্য হইবেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কাউন্সিল, জাতীয় কমিটির সব অধিবেশন, কার্যনির্বাহী সংসদ ও সভাপতিমণ্ডলীর সভায় সভাপতিত্ব করিবেন এবং প্রয়োজনবোধে সংগঠনের গঠনতন্ত্রের যেকোনো ধারা ব্যাখ্যা করিয়া রুলিং দিতে পারিবেন। তিনি ১৯ ধারামতে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যদের মনোনয়ন ঘোষণা করিবেন। সভাপতিমণ্ডলীর সহিত আলোচনাক্রমে তিনি বিষয় নির্ধারণী কমিটির সদস্যদের মনোনয়ন দান করিবেন।’

বিষয় নির্ধারণী কমিটির সদস্যদের মনোনয়নের বিষয়ে দলীয় প্রধান সভাপতিমণ্ডলীর সঙ্গে আলোচনা করবেন। কিন্তু কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের মনোনয়নের বিষয়ে আলোচনা করবেন কি না, সেটা বলা নেই। 

আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে কিছুটা গণতন্ত্রের কথা আছে। তারপরও দলটি ৪২ বছর ধরে একনায়কতান্ত্রিকভাবে চলেছে। আর বিএনপি ও জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রেই দলীয় প্রধানকে সর্বময় ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। 

আমাদের নেতারা দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চান কিন্তু দলে গণতন্ত্র চান না। বিএনপি বা আওয়ামী লীগ বড় দল বলে এসব দলের ‘একক কর্তৃত্ব’ বেশি চোখে পড়ে। কিন্তু বাংলাদেশে ছোট-বড় প্রায় সব দলেই একনায়কত্ব আছে। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার আগে যে দলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন, আমাদের বিজ্ঞ রাজনীতিকেরা এই সত্য কথাটি বুঝতে চান না। 

রাজনৈতিক দলের সংস্কার প্রসঙ্গে যখন একই ব্যক্তির দুবারের বেশি দলীয় প্রধানের পদে থাকা উচিত নয় বলে পণ্ডিতেরা মত দেন, তখন সব দলের নেতা তা ‘বাস্তবতাবর্জিত’ বলে নাকচ করে দেন। একই ব্যক্তির সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী পদে থাকা কতটা সমীচীন, সেই বিষয়েও তাঁরা প্রশ্ন তোলা পছন্দ করেন না। কিন্তু একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা হলে যে দল ও সরকার একাকার হয়ে যায়, তা অস্বীকার করবেন কীভাবে? 

আমরা কি ভবিষ্যতে এমন গণতন্ত্র আশা করতে পারি, যেখানে দলীয় প্রধান ও সংসদপ্রধান ভিন্ন হবেন? যিনি প্রধানমন্ত্রী হবেন, তিনি সংসদ নেতার আসনে বসবেন না।  

সোহরাব হাসান প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক ও কবি

[email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নেতারা দেশে গণতন্ত্র চান, দলে চান না
  • দ্রুত নতুন কমিটি চান ক্রিকেটাররা, টাকা কমে যাওয়ায় ক্ষোভ