আমার বিশ্বাস ক্লাবগুলোর ভুল ভাঙবে’
Published: 25th, January 2025 GMT
বিসিবি পরিচালনা পর্ষদের সভা আজ। এই সভায় গঠনতন্ত্র সংশোধন ও ক্লাবগুলোর দাবির বিষয়ে আলোচনা করে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে চায় বোর্ড। গঠনতন্ত্র সংশোধন কমিটির আহ্বায়ক নাজমুল আবেদীন ফাহিমও আশা করছেন, আলোচনার ভিত্তিতে ইতিবাচক সমাধান হোক। বিপিএলের পেমেন্ট বিতর্ক, খেলার মানসহ নানা ইস্যুতে নাজমুল আবেদীনের খোলামেলা আলোচনা শুনেছেন সেকান্দার আলী।
সমকাল : পাঁচ মাসে আপনারা কতটা এগোতে পারলেন? ফাহিম: অনেক কিছু আছে, যেগুলো দেখা যায় না। আমাদের মাঠের স্বল্পতা, ক্রিকেটের সুযোগ-সুবিধা অনেক কম। সেটা মাথায় রেখে আমরা পূর্বাচলে কিছু কাজ করার উদ্যোগ নিয়েছি। ফতুল্লা স্টেডিয়ামে কাজ শুরু হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেটের কথা বললে এনসিএল টি২০ খুব ভালো লেগেছে। মেয়েদের ক্রিকেটে তিন দিনের ক্রিকেট চালু হলো এ বছরই। ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হচ্ছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন শুরু করার চেষ্টা চলছে।
সমকাল: দেশের গুরুত্বপূর্ণ চারটি ভেন্যুতে একাডেমি ভবন নির্মাণ করার কথা ছিল। সেগুলো কি হচ্ছে?
ফাহিম: এটা নিয়ে আলোচনা চলছে। কক্সবাজারে দুটি স্টেডিয়াম আছে, ওখানে ক্যাম্প করার জন্য দুটি ভবন করতে পারলে খুব সহজে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ও খেলা চালানো যাবে। অনেক সময় খরচের কারণে দীর্ঘ মেয়াদে ক্যাম্প করা সম্ভব হয় না। আবাসন সুবিধা থাকলে খরচ অনেক কমে যাবে। সে ক্ষেত্রে ক্যাম্পের পরিধি বাড়ানো সম্ভব হবে। এখন যেমন সব খেলোয়াড় ঢাকায় আসে অনুশীলন করতে, জেলা বা বিভাগে সে সুযোগ থাকলে, তারা ওখানে থাকবে।
সমকাল : স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে আন্তর্জাতিক মানের হোষ্টেল আছে ভারতে। একই মডেল বাংলাদেশে অনুসরণ করা যায় কি?
ফাহিম: অবশ্যই সম্ভব। আমরা একটু মনোযোগী হলে সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারব। একটা অবকাঠামো আছে, সেগুলোকে একটু মডিফাই করা গেলেই হবে। সেটা করা গেলে খুব সহজে ৫০ থেকে ৬০ জন খেলোয়াড়, ১০ থেকে ১২ জন ম্যানেজমেন্টের লোক থাকার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। আমরা অনেক কম খরচে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালাতে পারব। বিভিন্ন সময়ে আমরা দেখেছি, হোটেলের ভাড়ার কারণে ক্যাম্পগুলো ব্যয়বহুল হওয়াতে ছেলেমেয়েদের বেশি সময় প্রশিক্ষণ দিতে পারি না।
সমকাল : বিপিএলে এবার রান হলেও মানসম্পন্ন বিদেশি নেই। এবার বিতর্কও অনেক। এ নিয়ে কী বলবেন?
ফাহিম: বিপিএলের কয়েকটি ব্যাপার নিয়ে আমাদের শঙ্কা ছিল। যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, সেগুলো নিয়ে এতটা শঙ্কা ছিল না। শঙ্কা ছিল যে উইকেট কেমন হয়। ধন্যবাদ, উইকেট খুব ভালো হয়েছে। খেলোয়াড়দের পেমেন্ট
অনেক ফ্র্যাঞ্চাইজি হয়তো ঠিকঠাক দিচ্ছে না। আমরা দেখেছি, পেমেন্ট নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। মাঠে খেলার স্প্রিট নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এগুলো না হলে আরও ভালো হতে পারত।
সমকাল : এই সমস্যা কি দু-তিনটি দুর্বল ফ্র্যাঞ্চাইজির কারণে?
ফাহিম : যেদিকে ইঙ্গিত করা হচ্ছে, সেটা খুব স্পর্শকাতর একটা ব্যাপার। আমি আমার জায়গা থেকে এই বিষয়ে সরাসরি মন্তব্য করতে পারি না। তবে বিষয়গুলোতে আমাদের চোখ আছে। আমাদের দুর্নীতি দমন বিভাগ সব কিছু খেয়াল করছে। এটা সব দেশেই খেয়াল করে। আমরা কোনো প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেব। তবে কোনো কিছু প্রমাণ করা ছাড়া কারও দিকে আঙুল তোলা ঠিক হবে না। আমরা মিডিয়াতে অনেক কিছু দেখেছি, সেগুলোর মতো মন্তব্য করতে চাই না। প্রমাণ ছাড়া কোনো মন্তব্য করলে ভুল হবে।
সমকাল : ক্লাবগুলোর মধ্যে একাত্মতা তৈরি হয়েছে পরিচালক ও কাউন্সিলরশিপ নিয়ে। গঠনতন্ত্র সংস্কার প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করেছে তারা। এ ব্যাপারে আপনারা একমত হতে পারবেন?
ফাহিম: ক্লাবের যারা প্রতিনিধি ছিলেন, তারা তাদের কথা সভাপতিকে বলেছেন। সে পরিপ্রেক্ষিতে সভাপতি হয়তো একটা সিদ্ধান্ত নেবেন। আমাদের যেটা বলা হয়েছিল, আমরা একটা খসড়া প্রস্তাব পেশ করলে, সে পরিপ্রেক্ষিতে আলোচনা হবে। একটা জায়গায় পৌঁছে স্ট্রেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত রিপোর্ট করা হবে। পরবর্তী সময়ে জরুরি কাউন্সিলে আলোচনা হতে পারত। অনেক সুযোগ ছিল আলাপ-আলোচনা করার ও প্রত্যেকের মতামত দেওয়ার। সেটা হলে খুব ভালো হতো। যে কারণেই হোক, সেটা হয়নি। আশা করব, আমরা একটা জায়গায় আসতে পারব কালকের (আজ) সভার মধ্য দিয়ে। গঠনতন্ত্র নিয়ে আমরা একটা সমাধান দিতে পারব।
সমকাল : সবাই ধাপে ধাপে ভারসাম্য আনার পক্ষে। আপনি কী মনে করেন?
ফাহিম : এই কথাতে যুক্তি নেই, তা কিন্তু নয়। আমাদের কথাও তাই। তারা পরিচালকের যে সংখ্যার কথা বলছেন, সেটা যে ঠিক না, আমি তা অনেকবার বলেছি। আলোচনা করলে আমরা হয়তো একটা ভালো জায়গায় আসতে পারি। একটা ভারসাম্য আনতে পারি। আলোচনা করলেই কিন্তু ইতিবাচক সমাধান আসবে। এটা আমাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার না। প্রস্তাবনা কমিটিতে যারা আছেন, সেখানে আমিই একমাত্র ডিকেট- সংশ্লিষ্ট। আমার ক্লাব, জেলা বা বিভাগের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। এদিক থেকে আমাদের পক্ষপাতিত্ব করার অবকাশ নেই। আমরা আলোচনায় বসতে পারলে তারাও মতামত দিতে পারতেন। আমরা তখন যুক্তিসংগত যে কোনো প্রস্তাব গ্রহণ করতাম। আমি আবারও বলছি, যে সংখ্যার কথা তারা বলেছেন, সে সংখ্যা ঠিক নয়।
সমকাল : আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থাগুলো নিয়ে কী ভাবছেন? ফাহিম: পুরো দেশকে সম্পৃক্ত করা ছাড়া ক্রিকেটের উন্নতি সম্ভব হবে না। এখানেই পড়ে থাকতে হবে। ঢাকায় যে ক্রিকেট, তা দেশের বড় ক্রিকেট মঞ্চ হিসেবেই থাকবে। পাশাপাশি আমরা চিটাগং, খুলনা, সিলেট, বিশালেও তো এভাবে লিগ করতে পারি। তাতে যেটা হবে, খেলোয়াড়রা বেশি খেলার সুযোগ পাবে, আর্থিকভাবে লাভবান হবে এবং আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হবে। এটা ঠিকঠাক করা গেলে সারাদেশে একই মানের ক্রিকেট চর্চা হবে। সেটা যখন হবে, তখন ক্রিকেটের মান খুবই ওপরে চলে যাবে। শক্তিশালী ক্রিকেট জাতিতে পরিণত হতে পারব।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব প এল গঠনতন ত র সমক ল
এছাড়াও পড়ুন:
দ্রুত ছাত্র সংসদ নির্বাচন চায় ছাত্রদল
২ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলো অনলাইনে প্রকাশিত সোহরাব হাসানের ‘বিএনপি ও ছাত্রদল এমন বিপরীতমুখী অবস্থানে কেন?’ শীর্ষক কলামটি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এটি পড়ে মনে হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নীতিগত অবস্থান সম্পর্কে লেখক সম্যক অবগত নন এবং তাঁর নিবন্ধের উপসংহার অনুমাননির্ভর। এ বিষয়ে ছাত্রদলের অবস্থানটি আরও সুস্পষ্ট করা জরুরি বলে মনে করছি।
ছাত্রদল দ্রুত সময়ের মধ্যে ডাকসুসহ সব ছাত্র সংসদের নির্বাচন চায়। তবে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন ও প্রার্থীদের মধ্যে সুযোগের সমতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কিছু সংস্কার অত্যাবশ্যক বলে মনে করে। প্রশাসনিক ও গঠনতান্ত্রিক সংস্কার ছাড়া ছাত্র সংসদ নির্বাচন অর্থবহ বা নিরপেক্ষ হবে না। ছাত্রদল দ্রুত সময়ের মধ্যে ওই সংস্কার নিশ্চিত করে নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়েছে। ছাত্রদলের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে ডাকসু ও জাকসুর ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট সংস্কার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) শুরু থেকেই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য ন্যূনতম সংস্কার নিশ্চিত করে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের দাবি করেছে। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রেও ছাত্রদল প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ও গঠনতান্ত্রিক সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিএনপি ও ছাত্রদলের অবস্থান সমান্তরাল ও সমচিন্তাপ্রসূত। এখানে জাতীয়তাবাদী দল ও ছাত্রদলের মূল ভাবনার মধ্যে কোনো বৈপরীত্য নেই। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি সবিস্তার রাষ্ট্রসংস্কারের আকাশচুম্বী পরিকল্পনার কথা বলেছে, যা জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত করার কৌশল হতে পারে। অন্যদিকে একটি পক্ষ কোনো রকম প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার নিশ্চিত না করেই ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য অযাচিত তাড়াহুড়া করছে, যার ফলে ফ্যাসিস্ট দোসরদের পুনর্বাসনের পথ উন্মুক্ত হবে।
ছাত্রদল ছাত্র সংসদ নির্বাচন চায় না—এটি একটি বিভ্রান্তিমূলক অপপ্রচার বলে আমরা মনে করি। ফ্যাসিবাদের পতনের সময় থেকেই ছাত্রদল নানাবিধ অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রের শিকার। জুলাই–আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে গত ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে যে ৯ দফা দাবি ঘোষণা করা হয়, তাতে ৭ম দফায় দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার কথা বলা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে প্রমাণিত হয়েছে, এই দফাটি ছাত্রশিবিরের নেতাদের প্রেসক্রিপশনে ৯ দফায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এই দফাটি ছিল ছাত্রদলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের হাতিয়ার। আত্মপরিচয়ের সংকট থেকে ছাত্রশিবির ক্যাম্পাসগুলোতে গোপন তৎপরতার রাজনীতি এবং অনুপ্রবেশের সংস্কৃতির বিস্তার করেছে। ছাত্রদলের তুমুল জনপ্রিয়তা, সাংগঠনিক শক্তি এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক কাঠামোর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ভীত হয়ে গোপন তৎপরতা এবং অনুপ্রবেশের মাধ্যমে রাজনীতিতে অভ্যস্ত ছাত্রশিবির ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’ নামে ‘মব কালচার’ তৈরি করে ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করার চেষ্টা করে।
উল্লেখ্য, গণ–অভ্যুত্থান চলাকালীন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন যে ৭ম দফাটি তাঁরা পরিবর্তন করবেন। অর্থাৎ দলীয় ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করার দাবি করা হবে না। অধিকন্তু ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে মব সৃষ্টি করা, মব সৃষ্টি করে ছাত্রদলের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার ঘটনা ঘটেছে। ছাত্রদলের আদর্শিক ধারার অনুসারী হওয়ার কারণে বৈধ শিক্ষার্থী হওয়া সত্ত্বেও ছাত্রদলের অনেক কর্মীকে আবাসিক হলে সিট দেওয়া হয়নি। ফ্যাসিবাদের আমলে ছাত্রদলকে ক্যাম্পাস থেকে নির্মম নির্যাতন করে বারংবার বিতাড়িত করা হয়েছে। এখনো ছাত্রদলকে ‘সিস্টেমেটিক মার্জিনালাইজ’ করার অপকৌশল দৃশ্যমান। আমরা মনে করি, একটি নিরপেক্ষ ও অর্থবহ ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্রদলসহ সব ছাত্রসংগঠনের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত হবে।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল একটি অর্থবহ ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য ডাকসু গঠনতন্ত্রের পূর্ণাঙ্গ সংস্কার প্রস্তাব পেশ করেছে। এই সংস্কার প্রস্তাবে দায়সারা দাবি না তুলে ছাত্রদল গঠনতন্ত্রের সব খুঁটিনাটি ত্রুটি তুলে ধরে সেগুলো সংস্কার করার বিস্তারিত প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হলো শিক্ষক, প্রশাসক, অ্যালামনাই ও শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করে বর্তমান গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সভাপতি হিসেবে উপাচার্যের একক কর্তৃত্ব কমানোর ব্যবস্থা করা এবং ওই উপদেষ্টা পর্ষদের মাধ্যমে নিয়মিত নির্বাচন আয়োজন নিশ্চিত করার দায়িত্ব অর্পণ করা।
এ ছাড়া এই প্রস্তাবের পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল উপাচার্য বরাবর একটি স্মারকলিপি দিয়ে দ্রুত ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য কী কী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, সেই ব্যাপারগুলো তুলে ধরেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—ফ্যাসিস্টের দোসরদের নিয়ে গঠিত বর্তমান সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সিন্ডিকেট গঠন করা; হল, অনুষদ, বিভাগ, প্রশাসনিক দপ্তরসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সব প্রশাসনিক পদ থেকে ফ্যাসিবাদের দোসর শিক্ষকদের অপসারণ করা। তাঁদের অনেকেই ২০১৯ সালের কলঙ্কিত ডাকসু নির্বাচনে ভোট ডাকাতির সঙ্গে জড়িত।
জুলাই-আগস্টে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা শিক্ষার্থীদের ওপর নারকীয় হামলা করেছে। এ ছাড়া বিগত ১৭ বছরে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা অসংখ্য শিক্ষার্থীকে নির্যাতন করেছে, আবু বকরকে হত্যা করেছে, ছাত্রদল-ছাত্র অধিকার পরিষদ-ছাত্র শক্তি-ছাত্র ইউনিয়ন-ছাত্র ফেডারেশনসহ বিরোধী মতের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে। কিন্তু সন্ত্রাসীদের বিচারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। গত কয়েক বছরে হামলায় নেতৃত্বদানকারী অনেকে এখনো হলে অবস্থান করছে। তাদের বিচারের আওতায় না এনেই ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করলে তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে, গোপনে বা নামে-বেনামে ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসন ঘটবে। কেউ কেউ ইতিমধ্যে বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্মে এবং ছাত্রশিবিরে যুক্ত হয়ে ক্যাম্পাসে প্রভাব বিস্তার করছে।
বিগত ২৯ অক্টোবর, ২০২৪ তারিখে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জাকসু নির্বাচন বিষয়ে ছাত্রসংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সাধারণ সভা আয়োজন করেছিল। ওই সভার আলোচনায় জাকসু নির্বাচনের পূর্বে কিছু জরুরি সংস্কারের দাবি উঠে আসে। দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি কর্তৃক রিপোর্ট প্রদানের পর প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল।
ছাত্রদল দাবি করেছে, নির্বাচনের পূর্বে কমিটিগুলোর সুপারিশ ও ছাত্রসংগঠনগুলোর দাবি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সংস্কার নিশ্চিত করতে হবে। বিদ্যমান আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে সিন্ডিকেট পুনর্গঠন করতে হবে। জাকসু নির্বাচনের আগে গঠনতন্ত্র সংস্কার করার জন্য ‘গঠনতন্ত্র সংশোধন কমিটি’ গঠন করতে হবে। নির্বাচনের পূর্বে গত ১৭ বছর যারা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ছিল, শুধু সেইসব ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে আলোচনাক্রমে জাকসুর গঠনতন্ত্র যুগোপযোগী করতে হবে। সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের মদদদাতা আওয়ামীপন্থী বহু শিক্ষক এখনো বহাল তবিয়তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বরত আছেন। নির্বাচনকে ফ্যাসিবাদের প্রভাবমুক্ত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে ১৫-১৭ জুলাই সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ওপর প্রত্যক্ষ প্রশাসনিক মদদে ছাত্রলীগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যে নৃশংস হামলা করেছিল, জাকসু নির্বাচনের পূর্বে সেসব নৃশংস কর্মকাণ্ডের প্রশাসন কর্তৃক প্রশাসনিক শাস্তি ও ফৌজদারি আইনের অধীনে বিচার নিশ্চিত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
ডাকসু-জাকসু নির্বাচনের ক্ষেত্রে গঠনতান্ত্রিক এবং প্রশাসনিক সংস্কারের যে প্রস্তাব ছাত্রদল দিয়েছে, তা নিরপেক্ষ ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য অত্যাবশ্যক। এই ন্যূনতম সংস্কারগুলো না করে নির্বাচন আয়োজন করলে ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসন ঘটবে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্ল্যাটফর্মের জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা ক্রমহ্রাসমান। তাই গণ-অভ্যুত্থানের একক কৃতিত্বের দাবিদার এই সংগঠনটি বিদ্যমান ফ্যাসিস্ট কাঠামোর মধ্যে তাড়াহুড়া করে নির্বাচন আয়োজন করতে তৎপর। আমরা মনে করি, এটি আত্মঘাতী পদক্ষেপ হবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাদের নিজেদের পছন্দে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক পদগুলোতে নিয়োগ দিয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এখনো পর্যন্ত ক্যাম্পাসের সন্ত্রাসীদের বিচার, প্রশাসনকে ফ্যাসিস্ট দোসরমুক্ত করা বা গঠনতন্ত্র সংশোধন করার বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখাতে পারেনি। বিচার ও সংস্কারের ক্ষেত্রে প্রশাসনের নির্লিপ্ততা, ধীরগতি এবং ক্ষেত্রবিশেষে অনাগ্রহের কারণেই ছাত্র সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে না। কিন্তু এই দায় ছাত্রদলের ওপর চাপানো কোনোভাবেই সমীচীন নয়।
লেখকের বক্তব্য: বিএনপি ও ছাত্রদল এমন বিপরীতমুখী অবস্থানে কেন?’ শিরোনামের লেখার এক স্থানে বলা হয়েছিল: ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির যে কমিটি গঠন করেছে, তার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাত্রলীগের ব্যানারে কাজ করেছেন আওয়ামী লীগের আমলে। পরে অনুসন্ধান করে জানা গেছে, ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সভাপতি নন, সাধারণ সম্পাদক এস এম ফরহাদ আওয়ামী লীগ আমলে ছাত্রলীগের পদধারী ছিলেন। শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদ্য বিদায়ী সভাপতি সাদিক কায়েম ছাত্রলীগের কোনো কমিটিতে ছিলেন না।
সাদিক কায়েম।
নাছির উদ্দীন নাছির
সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল